গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রাজনীতি করবে কারা ?
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের দাবী এদেশে অনেক পুরনো। অনেকে মনে করেন এখনি সময় ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের। অনেক ইসলামী চিন্তাবিদও এক সময় ইসলামে রাজনীতি হারামের ফতোয়া দিতেন। তাদের কেউ কেউ পরবর্তিতে নিজেরাই ইসলামী রাজনৈতিক দলের কর্ণধার হয়েছেন।
এদেশে প্রচলিত গণতন্ত্র কি ইসলাম সমর্থন করে? ইসলামী চিন্তাবিদদের উত্তর- না। তাহলে তারা কেন এদেশে ভোটের রাজনীতি করে? তাদের উত্তর "মন্দের সয়লাব রুখতে প্রয়োজনে গণতন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচন করা জায়েজ আছে 'তীব্র প্রয়োজন হারামকে হালাল করে দেয়' মূলনীতির ভিত্তিতে। তারা যদি নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় যায় তাহলে কি তারা গণতন্ত্র রাখবে এই দেশে? তাদের উত্তর হল-না। তারা চায় খেলাফত প্রতিষ্ঠা। তারা বলে,আল্লাহর দেয়া নির্ধারিত পথ খিলাফত প্রতিষ্ঠা ছাড়া মানুষের গড়া মতবাদ গণতন্ত্র দিয়ে কখনোই ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব হতে পারে না।
তাহলে বিষয়টি কি দাঁড়াল। তারা রাজনীতি করে গণতন্ত্রকে ধ্বংসের জন্য। তারা গণতন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় যেতে চায় গণতন্ত্র বদলে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করার জন্য। সুতরাং এমন উদ্দেশ্য নিয়ে যারা রাজনীতি করে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ কি গণতন্ত্রে থাকা উচিত?
এবার মনে করি, দেশটা ইসলামী রাষ্ট্র। এখানে কি এমন কোন রাজনৈতিক দলকে সহ্য করা হবে যার মূল লক্ষ্য হবে ইসলামের ক্ষতি করা? আমরা জানি তা কখনোই সহ্য করা হবে না। তাহলে এখন কেন তাদেরকে রাজনীতি করতে দেয়া হচ্ছে ?
ইসলামী দলগুলো এখন কেন রাজনীতি করছে? এই প্রশ্ন দেশের ১০/১২ টা ইসলামী দলকে করলে ১০/১২ রকম উত্তর পাওয়া যাবে। তারা অনেক ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ করলেও সেটার পক্ষে তাদের যুক্তি- বৃহৎ স্বার্থে করা হয়েছে। অনেকে আবার দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে দায়ী করেন। তো কথা হল, রাজনীতি যদি ইসলাম সম্মত উপায়ে করা না-ই যায় তাহলে সেই রাজনীতি করার দরকার কি?
নাকি ক্ষমতার মোহ-ই তাদের রাজনীতি করার একমাত্র কারণ?
একই কথা দেশের বাম দলগুলোর ক্ষেত্রেও খাটে। তারা কেন রাজনীতি করে ? সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের মানুষের কল্যাণ করতে চায় তারা। তারাও ক্ষমতায় গেলে গণতন্ত্র ধ্বংস করবে। কারণ একই দেশে একই সময়ে গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র চলতে পারে না। তাহলে কি গণতান্ত্রিক দেশে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ থাকা উচিত? সমাজতান্ত্রিক দেশে কি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে ভাল চোখে দেখা হবে?
এদেশে শুধু গণতান্ত্রিক দলেরই রাজনীতি করার সুযোগ থাকা উচিত। বামপন্থী বা ইসলামপন্থী কারোই রাজনীতির সুযোগ থাকা উচিত নয়।
এখন কথা হলো যারা গণতন্ত্রপন্থী। তারা কি আসলেই গণতন্ত্র চর্চা করছে? নাকি ভিতরে ভিতরে সবাই স্বৈরতন্ত্র চর্চা করছে?'একজন শাসককে ক্ষমতায় থাকতে হলে এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হলে তাঁকে প্রতারণা, চতুরতা ও মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে আর সেই সঙ্গে নির্দয়ভাবে প্রয়োগ করতে হবে পশুশক্তি।' ম্যাকিয়াভেলির এই কথাকে মনে প্রাণে গ্রহণ করেননি এদেশে এমন শাসক কি কখনো এসেছিল?
শর্ষের ভিতরেই ভূত থাকায় এদেশে কোন ধরনের রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হবে না কখনো। করলেও তা টিকবে না বেশিদিন। এক দল নিষিদ্ধ করলে আরেক দল বৈধ করে দিবে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এদেশে বারো ভূতের রাজনীতি চলছে। যে যেভাবে পারছে ক্ষমতায় যাবার রাজনীতি করছে। নীতি, আদর্শ সব জলাঞ্জলি দিয়ে যে কোন উপায়ে ক্ষমতার কাছাকাছি বা ক্ষমতায় যাবার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত সবাই।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে। চলমান গণতান্ত্রিক ধারায় যাদের আস্থা নেই। যারা মনে করে এ পদ্ধতিতে প্রকৃত অর্থেই মানুষের মুক্তি আসবে না। যারা ক্ষমতা চায় না, চায় মানুষের কল্যাণ- তারা কি রাজনীতি করবে না ?
এদেশে ভাল মানুষের রাজনীতিতে আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক আস্থার সংকট। এ কারণেই নির্বাচনে ভাল লোক দাঁড়ালেও তারা হেরে যায় খারাপ লোকের কাছে। যদিও দোষ দেয়া হয় সাধারণ মানুষের যে, তারা ভাল লোককে ভোট দেয়নি। অথচ ভাল লোকরা যে আস্থাভাজন হয়ে উঠতে পারেনি সে কথা কোথাও বলা হয় না।
আমি মনে করি, যারা প্রকৃত অর্থেই মানুষের কল্যাণ চায় তাদের উচিত আগে জনমানুষের আস্থাভাজন হওয়া তারপর রাজনীতিতে আসা। তো আস্থাভাজন হতে হলে তাদের কী করতে হবে? রাজনীতি ছাড়াও মানুষের কল্যাণে কাজ করা যায়-এটা যদি তারা আদৌ বিশ্বাস করে থাকে, তাহলে তারা সমাজ সংস্কারের জন্য কাজ করতে পারে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে। কিংবা অন্য কোন উপায়ে মানুষের মনে এই বিশ্বাস তৈরি করতে পারে- হ্যাঁ এরাই পারবে দেশের প্রকৃত কল্যাণ সাধন করতে।
ক্ষমতায় যাওয়া ছাড়া দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব নয়, মানুষের কল্যাণ করা সম্ভব নয়। -এই কথার অন্তরালে আসলে লুকিয়ে থাকে নিজের উন্নয়ন এবং কল্যাণের শ্লোগান। তাই যে কোন উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়াই হয়ে ওঠে আরাধ্য। মানুষের কল্যাণ চুলায় দিয়ে তারা মেতে ওঠে ক্ষমতায় যাবার অসুস্থ প্রতিযোগিতায়। নিজেদের ভাল মানুষ বলে যারা দাবী করেন, যারা মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করেন বলে দাবী করেন তাদের কি সময় থাকতে এই অসুস্থতা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত নয়?
সবগুলো ধর্ম এর মূল হলো রাজনীতি। রাম - রাবণ লাগছে সিংহাসন নিয়ে। মুহামমদ রাজ্য জয় করেছেন, যুদধ করেছেন, মানবতার কল্যানে মারামারি কেন? বুদধ সিংহাসন ত্যাগ করেছেন, যীশুরও চেষটা ঐ দিকেই ছিল।
সুতরাং একটা বাদ দিয়া আর একটা হবে না। না খাইতে পাইয়া আরব থেকে ভারত আসবে আর বলবে ইসলাম ধর্ম এর জন্য আসছি।
রাজনীতি কথাটা দিয়ে জনগনের আর কোন লাভ নেই। কথাটা এখন জননীতি করলে যদি রাজাদের উপকার কম হয়ে জনগনের কিছু উপকার হয়
কাউকে তার মতবাদের জন্য নিষিদ্ধ করা কোন কাজের কথা না,
কিছু নিষিদ্ধ করলে তাদের প্রতি আগ্রহ বাড়ে বৈ কমে না।
আর গণতন্ত্র ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করতে পারে কি? এই অধিকার কি তার আছে?
জনগণ কিছু না চাইলে কোন মতবাদই কখনো সারভাইব করতে পারবে না।
আর বাংলাদেশ কি আদৌ কি সত্যিকার অর্থে গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র হতে পেরেছে? ৫ বছর পর পর কিছু মিথ্যাবাদির দল কিছু ফাঁপা আশ্বাসের বিনিময়ে আমাদের ভোট কিনে ক্ষমতায় যায়, কেবলই নিজেদের পকেট ভারি করবে বলে।
প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরও তো জানা
মিজান ভাই, খুব ভাল বলেছেন। এদেশের ভন্ড নেতাদের দিয়ে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, খেলাফত--কিছুই হবে না।
পড়ুন আমার এ লেখাটাঃ উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ
মন্তব্য করুন