জাদুকরদ্বয়ের গল্প
শুরুতেই বলে দেই এইটা একটা বাজারি গল্প। বাজারি গল্প মানে হল, এমন একটা লেখা যেটা কারো আদেশ, অনুরোধ, উপরোধে লেখা। এই ধরণের লেখাগুলা সাধারণত খুব দ্রুত লেখা হয়, তাই যে লিখে তার মাথায় তাড়া থাকে আর একটা প্যাটার্ন অনুসরণ করতে গিয়ে লেখকের নিজের চিন্তার প্রতিফলন খুব একটা বেশি ঘটেনা। কিন্তু, তাও মাঝে মাঝে এই ধরণের লেখাগুলাও লেখকের কথার বুননের কারণেই হোক অথবা গল্পের কাহিনীর কারণেই হোক, পাঠকপ্রিয় হয়ে ওঠে। যেহেতু আমি এমন কোন লেখক নই যে অনেক গুছিয়ে- কথার পর কথা সাজিয়ে পাঠককে গল্পের ভেতরে নিয়ে যাবে কিংবা কোন হৃদয়গ্রাহী গল্প লিখবে; কাজেই যারা সাহিত্যপ্রেমী তারা এই লেখা পড়ে সময় নষ্ট করবেন না। এখানে কোন সাহিত্যের গলি- ঘুঁপচিতে বিচরণ নেই, নেই কোন শব্দের খেলা। আর যারা আড্ডাবাজ, তাদের জন্যেও এই পোস্টটা না। এখানে আড্ডাবাজির কোন সুযোগ নেই। যা থাকবে, সেটি হতে পারে আত্মোপলব্ধি, নিজের কাছে নিজের প্রশ্ন- নিজেই তার উত্তর খোঁজা। কিন্তু, যেহেতু লেখাটা জাদুকরদের নিয়ে, কে জানে, তাদের জাদুর ইন্দ্রজালে হয়ত আপনারাও আটকে যাবেন মায়ায়..
গল্পটা দুইজন জাদুকরকে নিয়ে। দুইজনই আমাদের অনেক পরিচিত।
প্রথমজনের গল্পটা বলি। ইনার দায়িত্ব অর্থনৈতিক। আমরা কখনো কিছু চাওয়ার আগেই কিভাবে কিভাবে যেন বুঝে যান, কোন জিনিসটা আমাদের প্রয়োজন। তাই দেখা যায়, ঈদ- পহেলা বৈশাখে কিছু বলার আগেই নতুন পোষাক, মাস শেষের আগেই স্কুল- কলেজের মাসিক ফি, একটু বড় হলেই সামর্থ অনুযায়ি কম্পিউটার/ মোবাইল নিয়ে আসেন। সারাদিন তার সাথে দেখা হয় না, কিন্তু রাতে তার ফেরাটাই একটা উৎসবের উপলক্ষ্য হয়ে থাকে নিত্যদিন। রোজই তিনি কিছু না কিছু নিয়ে আসবেন। কোন জিনিসটা তার পছন্দের কিংবা তার নিজের আর্থিক কোন সমস্যা কিনা, এসব কোনদিন আমাদের বুঝতে দেন না, কিন্তু আমাদের অসুবিধাগুলা কিভাবে যেন টেলিপ্যাথিকভাবে বুঝে তার সমাধান করে ফেলেন। কোনদিন কোন বিষয়ে আমাদের নিষেধ না করেও কোন এক ঐন্দ্রজালিক উপায়ে আমাদের বুঝিয়ে দেন তার দ্বিমত। একাধিকবার তার মতের বিরুদ্ধে কোন কিছু করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে আবার নতুন করে কিছু করতে গেলেও মুখ ফুটে কোনদিন উচ্চারণ করেন না, এই কাজটা কোরো না। কেবল কোন কিছু পছন্দ না হলে জাদুর টুপি থেকে খরগোস/ পায়রার মতন একটার পর একটা ঘটনা আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন যেন আমাদের বুঝতে সহজ হয় কোন পথে গেলে আমাদের ভালো।
আরেকজন জাদুকরের সাথে আমাদের বেশি ঘনিষ্ঠতা। তিনি কিভাবে যেন সবকিছুই আগে আগে টের পেয়ে যান। তাই তিনি জানেন, কার কোন খাবারটি পছন্দ, কার কখন মন খারাপ, কে কোন রাতে দু:স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে ভয় পেয়ে জেগে উঠছে। তাই তিনি আগে আগেই সবসময় প্রস্তুত। মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে উঠেও তাই দেখা যায়, তিনি পাশে বসে আছেন। আর হাসিমুখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। নিজে অসুস্থ হয়ে বিছানাবন্দি; তাও কেউ যদি অসুস্থ হয়, সাথে সাথেই তার অসুস্থতা গায়েব আর আমাদের জন্যে তার জাদুর কাঠি তৈরি। কখনো কিছু লাগলে তাকে বলো। জাদুর থলি থেকে নিমেষে বেরিয়ে আসবে ফুল- পাতার মতন। সেটা এবার নার্সারি ক্লাসের সার্টিফিকেটই হোক কিংবা কোচিং সেন্টারের ফেয়ারওয়েলের ক্রেস্ট। চাইতে দেরি, হাতে আসতে দেরি হয় না কখনো।
আমাদের কখনোই জানা হয় না, তাদের কার কি পছন্দ। কিন্তু তারা ঠিকই জানেন আমাদের কি পছন্দ। তাই তো এখনো দেখা যায় অনেক দিন পর পর বাসায় গেলে জাদুকরদের একজন এই উচ্চমূল্যের বাজারেও ইলিশ মাছটা নিয়ে আসেন আর আরেকজন অনেক দিন আগে বাসায় কচু খাওয়া হয়ে গেছে, তার থেকে একটু অংশ ফ্রিজে রেখে দেন বাসার বাইরে থাকা ছেলেটার খেতে পছন্দ বলে। আমরা জানি না, কিন্তু এই জাদুকরেরা জানেন পরষ্পরের পছন্দ কি। তাই এক জাদুকরের জন্মদিনে আরেকজন মনে করিয়ে দেন, এস.এম.এস করার কথা। আর, বাবা দিবসে জাদুকরের পছন্দ বডি স্প্রে উপহার দেওয়ার কথা।
শুরুতেই বলেছিলাম, এইটা একটা বাজারি লেখা। কেন? কেননা, গতদিন “ছুটির দিনে”তে বাবা দিবস নিয়ে লেখা পড়তে পড়তে মা বললেন, তোমরা কিছু লিখতে পারে না আমাদের নিয়ে? আমি হেসে উড়িয়ে দেই। বলি, “হু”! মুখ ফুটে বলতে পারি না, তোমাদের নিয়েও লিখি, আগেও লিখেছি। আজ আবারো লিখবো। মা’য়ের অনুরোধে যে লেখা সেটা সংজ্ঞানুযায়ি বাজারি হলেও, জাদুকরি ছোঁয়ায় এটা আমার লেখালেখি জীবনের সবচেয়ে সন্তুষ্টির লেখা। কেউ মানুক আর না-ই মানুক।
চমত্কার একটা লেখা তবে শুরুর কথাগুলি আরেকটু কম হলেও চলতো।
অনেক দিন পর এবির পাতায়
মুক্ত বয়ানের লেখা পড়ে
ভালো লাগলো খুব। ভালো থাকুন।
অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্যে।
আপনার পরামর্শ মাথায় থাকলো। ভবিষ্যতে সংশোধন করে নেব।
আপনিও ভালো থাকুন।
অনেক দিন পর বন্ধুর অসাধারন লেখা পড়ে মুগ্ধ!
অনেক অনেক শুভকামনা দুই জাদুকরকেই।
তোমার লেখাগুলাও পড়ে পড়ে মুগ্ধ হই। কিন্তু সেই মুগ্ধতা আর জানানো হয় না।
ভালো থাইকো।
বাবা-মা কে নিয়ে যেকোন লেখা, অনুভূতি সবসময়ই মুগ্ধ করে । মনটাকে সিক্ত করে ।
কবি
ভালো লেখা পড়ে ভাল লাগল। ভালো থেকো।
জাদুকরদ্বয় ভালো থাকুক।
দারুন
মুগ্ধ
জাদুকরদ্বয় ভালো থাকুক।
লেখাটার মাঝামাঝি এসে বুঝতে পেরেছি সাব্জেক্ট, কিন্তু তোমার উনাদের নিয়ে তোমার উপস্থপনা মনছোয়াঁরে ভাইয়া। অনেকদিন পর লেখো কিন্তু এমনি দারুন লেখাতেই না হয় ভরিয়ে তোলো।
অসাধারন লেখা পড়ে মুগ্ধ!
অনেক অনেক শুভকামনা দুই জাদুকরকেই।
মন্তব্য করুন