ধূসর গোধূলিঃ আপন ভূবনে ফেরা
অনেকদিন পর নাহিদকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসলো শিউলি। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ছুটির অভাবে দু’জন একসাথে আসা হয়নি বহুদিন। শ্বশুরবাড়ি থেকে একা একা বাবার বাড়িতে হুট করে আর আসা হয়না শিউলির। এবার ঠিক হয়েছে নাহিদ চলে গেলে ও বেশ কয়েকদিন থেকে যাবে এখানে। দীর্ঘদিন পর ভাই বোনদের কাছে পেয়ে খুব খুশি। অয়নকে নিয়ে আশপাশটা ঘুরে এসে শিউলি দেখে মা চাল ভিজিয়ে ঢেকিতে গুড়া করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কাছাকাছি আসতেই বকুল আর অয়নের দুষ্টুমি শুরু হয়ে যায়। অয়নকে দেখেই বকুল ক্ষেপাতে শুরু করে-
-এই পুচঁকি, আবার বান্দরের মতন লাফাইতে কই গেছিলি?
-এই ছোটু, তুই আমারে পুচঁকি কইলি ক্যান? বলেই বকুলকে ধরার জন্য পিছু পিছু দৌড়াতে থাকে অয়ন। শিউলি ওদের দিকে তাকিয়ে হাসে। ও জানে, পুচঁকি বললে অয়ন ক্ষেপে যায়, তাই বকুল সুযোগ পেলেই ওকে ক্ষেপায়।
দৌড়াতে দৌড়াতে যেই বকুল বলে- আমি বিভা’পুদের বাড়ি যামু, তুই কি আমার লগে যাবি? ব্যাস! সব রাগ শেষ। ছোটদি আমারে নিয়ে যা, বলে বকুলের পিছে পিছে বিভাদের বাড়ির দিকে ছুটতে থাকে অয়ন। বকুল ও অয়নকে দেখে অবাক হয় বিভা।
-আরে, অয়ন ভাইয়া যে! কি খবর?
-বিভা’পু, মা তোমারে যাইতে কইছে। বকুল বলে
-আইচ্ছা যামুনে, তোমরা কি খাবা কও। সপরি খাবা?
-হ খামু, অয়ন বলে
-প্রভা, বকুল আর অয়নরে গাছ থেইক্যা ভাল দেইখা কয়ডা সপরি পাইড়া দে। বিভা প্রভাকে ডেকে বলে। প্রভা বাঁশের লাঠি দিয়ে বেশ কিছু পেয়ারা পেড়ে দেয়। বকুল আর অয়ন বাড়িতে ফিরে চলে।
-প্রভা, কয়ডা ভাত রাইন্ধ্যা রাখিস বলে বিভা ওদের সাথে মাষ্টারবাড়ির দিকে হাঁটতে থাকে ।
জামাই আসায় সালমা বেগমের ব্যাস্ততা যেন বেড়ে যায়। জামাইকে ভাল মন্দ খাওয়ানোর চিন্তাতো তাকেই করতে হবে। মাষ্টার সাব তো ব্যাস্ত তার স্কুল আর লাইব্রেরী নিয়া। লোকজন দিয়ে পিঠা তৈরির জন্যে চাল ভাঙ্গানো, মন্টুকে দিয়ে পুকুর থেকে মাছ ধরানো, মুরগি ধরে জবাই করানো – এসব কাজ সালমা বেগমকেই তদারকি করতে হয়। বকুলের পিছনে বিভাকে আসতে দেখে কিছুটা স্বস্তি পায় সে!
-বিভা আইছস! শিউলির জামাই আইছে, অনেক কাম, আমি একলা পারতাছি না তাই তরে আইতে কইছি।
-কন চাচি, কি করতে হইব
-কয়ডা চাউল গুড়া করতে হইব, আমি চাউল ধুইয়া ভিজাইয়া রাখছি ।
বিভা পাকের ঘরের এক কোণে পাতা ঢেঁকিতে চাল গুড়া করতে লেগে পড়ে।
বাড়ি ফিরে অয়ন দেখে মন্টুমামা জাল নিয়ে কদমতলা পুকুরের দিকে যাচ্ছে। ও মামার পিছন পিছন ছুটে যায়। এই পুকুরটার কোন জান নেই। এটাতে অনেক ধরনের মাছ জিয়ানো হয়েছে। রুই, কাতলসহ আরও কয়েক ধরনের মাছ। মাছগুলো যাতে পুকুর থেকে বেরিয়ে যেতে না পারে তাই জান আটকে দেয়া হয়েছে। মন্টুমামা দুই হাতের মধ্যে জাল সাজিয়ে পুকুরের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষণ, হঠাৎ ডানদিকে পানির উপরে মাছের ঘাউ লক্ষ্য করে জালটি ছুড়ে মারে সে। ও দেখলো চমৎকার গোল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে জালটা। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর জালের উপরের অংশে বুদবুদ দেখার সাথে সাথে মন্টুমামা ঝাঁপিয়ে পড়লো পানিতে। ডুব দিয়ে জালটির চারদিকে আটকে দিতে থাকলো। মন্টুমামা পানির উপর ভেসে উঠতেই ও জিজ্ঞেস করে- মামা, বড় মাছ পড়েছে? মাথা নেড়েই পানিতে ডুব দেয় মামা, তারপর আবার, আবার। একসময় হাতদুটো দিয়ে কিছু একটা চেপে ধরে জালসহ এগিয়ে আসতে থাকে পাড়ের দিকে। পানির উপরে উঠে আসেতেই অয়ন দেখে মন্টুমামার দুই হাতের মধ্যে বড় একটা রুই মাছ!
মন্টু মাছ নিয়ে এলে সালমা বেগমের ব্যস্ততা যেন আরও বেড়ে যায়। শিউলি আর বকুল এসে হাত লাগায়।
বিকাল বেলা শিউলি নাহিদকে নিয়ে বেড়াতে বের হয়। বাড়ির পূর্ব দিকের বড় রাস্তাটা শিউলির খুব পছন্দের। বড় চওড়া রাস্তা, রাস্তার দু’পাশে বড় বড় গাছ, চারিপাশটা বেশ ফাঁকা। বিয়ের আগে বকুল আর অয়নকে নিয়ে বিকেল বেলা, কখনো কখনো সন্ধ্যার পর জোছনা রাতে তিন ভাই বোন মিলে এই রাস্তায় হাটতো। জোছনায় চারিদিকটা আলোকিত হয়ে থাকতো। সেই দিনগুলো কত সুন্দর ছিল!
বিয়ের পর এই প্রথম নাহিদকে নিয়ে এদিকটায় আসলো শিউলি। নাহিদ গ্রামেরই ছেলে, চাকরির সুবাদে শহরে থাকতে হয় কিন্তু গ্রামের প্রতি একটা ভালবাসা সবসময়ই মনের মধ্যে বিরাজ করে। ওদের গ্রামটাও সুন্দর কিন্তু শিউলিদের বাড়ির এ পাশটা যেন ছবির মত সুন্দর। যে দিকে তাকায় চোখ জুড়িয়ে যায়!
নাহিদ আর শিউলি পাশাপাশি হাঁটতে থাকে, রাস্তার দু’পাশটা পানিতে থৈ থৈ করছে। একটা ফাঁকা জায়গা দেখে ঘাসের উপর দু’জনে বসে।
-তুমি জানো এই জায়গাডা আমার অনেক পছন্দের।
-জায়গাটা আসলেই অনেক সুন্দর।
-আমরা জোছনা রাইতে দল বাইধা এইহানে হাঁটাহাটি করতাম। খালের ঐ পাড় থেইক্যা মালতিরাও আসতো। আমগো বাড়ি থেইক্যা ঐ খালের পাড়, এর মধ্যেই হাটতাম। কত গল্প আর দুষ্টামি চলত! এহন মনে পড়লে খুব খারাপ লাগে।
-হুম, প্রেম করার জন্যেও চমৎকার জায়গা, নাহিদের চোখে দুষ্টুমি।
-কি ব্যাপার সাহেব, আপনার মতলবখানা কি? বলে নাহিদের দিকে ঘুরে তাকায় শিউলি।
নাহিদ একবার চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বাম হাতটা ঘাড়ের উপর দিয়ে শিউলিকে কাছে টানার চেষ্টা করতেই ও হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলে, এই হচ্ছেটা কি? প্রেম করার আর জায়গা পাওনা না? মুখে কপট রাগ।
নাহিদ শিউলিকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলে- নিজের বউর সাথে প্রেম করতে আবার কাউকে ট্যাক্স দিতে হবে নাকি?
-তাই বইলা যেখানে সেখানে?
-এমন সুন্দর পরিবেশে যদি কারও প্রেম না আসে, তাহলে সে তো প্রেমিকই না।
-তাই বুঝি? তো সাহেব এত্তদিনে আপনার প্রেমের স্বাদ একটুও মেটেনি?
-শোন, যারা প্রেমিক তাদের প্রেম কখনো শেষ হয় না
-আচ্ছা! দেখা যাবে।
বেশ কিছুক্ষণ পর অয়নের গলা শুনে দুজনেই বাড়ির দিকে তাকায়। অয়ন হাঁপাতে হাঁপাতে কাছে এসে বলে-
-বড়দি, মা তোমারে ডাকছে।
-কেন রে?
-আমি কি জানি? মা তোমারে ডাকতে কইলো।
আচ্ছা চল, বলে দুজনেই উঠে পড়ে।
চলবে...
ধূসর গোধূলি - প্রথম পর্ব
ধূসর গোধূলি - দ্বিতীয় পর্ব
ধূসর গোধূলি - তৃতীয় পর্ব
এই সিরিজটা প্রথম থেকে পড়ে আসতে হবে। ভালো লাগসে এই পর্বটা।
ধন্যবাদ
জোশতো...
চলুক...
শেষ হউক, তারপর ভালোমত মন্তব্য দিমু...
এই পর্বটা ভালো লাগছে, অন্যগুলো পড়ে নিতে হবে।
এই পর্বটা ভালো লাগছে, অন্যগুলো পড়ে নিতে হবে।
ভালো লাগলো।চলুক। গ্যালারিতে বসলাম ।
চলুক....
চলুক !!
আপ্নে ভাল লেখেন।
কিন্তু গল্পে গ্যাপ আরেকটু কম দিলে ভাল হয়।
জোশ
মন্তব্য করুন