কি অসহায় আমি একবার ভাবো
“আমি বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে, তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে, বুঝতে পারলাম যে, তুমি আসো নাই”- সুন্দর একটা লাইন। বৃষ্টি নিয়ে আজ আর কোন ফ্যান্টাসি করবো না। আমার মতো সরকটওয়ালা মানুষের বৃষ্টি নিয়ে অতো পাগলামী মানায় না। তবে একটা মজার গল্প করার লোভ সামলাতে পারছিনা। গেল রবিবার সকাল থেকে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। ড্রাইভার না আসার কারনে গাড়ি বের করতে পারছিলাম না কিন্তু আমার অফিসে যেতে হবে। বাসা থেকে কারওয়ানবাজার পর্যন্ত একটা রিকশা নিলাম। রিকশা নেয়ার উদ্দেশ্য হল, প্রচন্ড বৃষ্টিতে হুড তুলে, গান শুনতে শুনতে এবং খানিকটা ভিজতে ভিজতে অফিস যাব। ঢং আর কী! কিছুক্ষন যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম, রিকশাওয়ালা রাস্তা চিনেনা। সে কারওয়ানবাজার যাওয়ার বদলে আমাকে নিয়ে মগবাজার ভ্রমণে নেমেছে। মগবাজার, মালিবাগ, শান্তিবাগ, রাজারবাগ, গাবতলা, আমতলা, হাতিরঝিল এমন কোন জায়গা নাই যেখানে সে যাচ্ছে না। একটু পর থেকে আমার মেজাজ চড়তে আরম্ভ করলো এবং আমি বকা দেয়া শুরু করলাম। বকা খেয়ে সে কিছু না বলে চুপচাপ রিকশা চালাচ্ছে। এরপর আমি একজনকে সঠিক রাস্তার লোকেশন জানতে চাইলে দেখি রিকশাওয়ালা উলটা আমার উপর রাগ দেখায়। সে বলে, “আপনি আমার রিকশায় বসে আরেকজনকে রাস্তার কথা জিজ্ঞেস করেন ক্যান? আমি নিজেই তো খুঁজে বের করতেসি। তাই না?” এই ব্যাটার কথা শুনে আমি এত মেজাজ খারাপের মধ্যেও হেসে ফেললাম। অন্য আরেকজনকে রাস্তার লোকেশন জিজ্ঞেস করায় তার ইগোতে লেগেছে। আমি আর কাউকে তাই কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। সে নিজেই খুঁজে খুঁজে আমাকে নয়টার অফিসে এগারটায় নিয়ে গেল এবং বত্রিশটা দাঁত বের করে দাঁড়ায় থাকলো।
আমাদের বাসা ফুটবল জ্বরে আক্রান্ত। আম্মু আর্জেন্টিনা আর আব্বু ব্রাজিল। আম্মু তার দায়িত্ব থেকেই নিয়মিত আব্বুকে জ্বালানো আরম্ভ করেছে। আম্মু প্রথমেই আব্বুকে এট্যাক করবে এইভাবে, “নাইমুরের তো খেলা হয়না”। আব্বু বলবে, “নাইমুরটা কে”? আম্মু বলে, “কে আবার? তোমাদের নেইমার। ব্রাজিলীয়ান বলে নাম হইসে নেইমার। আমাদের দেশে জন্মালে তো নাম নাইমুরই হতো। তাই না”? সেটা শুনেই আব্বু ক্ষেপে যাবে আর আম্মু হাসবে। আমাদের বাসাটা পুরা হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসের মত মনে হয়। আব্বু, আম্মুর ক্যারেক্টার পুরাই হুমায়ুন আহমেদের বাবা- মা’র মত। আমার ধারণা, ময়মনসিংহের লোকজনের ক্যারেক্টার কম-বেশি একই রকম। আমার আব্বুর কথাই বলি। অসম্ভব সহজ- সরল, ভাল একটা মানুষ কিন্তু রাগ বেশি। মানুষকে আদর করতে পারার ক্ষমতা তার মধ্যে অসাধারণ। পরীক্ষায় ফার্স্ট হলেও আব্বু অতো খুশী হবেনা, যতোটা খুশি হবে আমরা যদি কখনো ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে পারি সেটা দেখে। তাকে খুশী করার জন্যই মাঝে মাঝে আমি তার সাথে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলি। যেমন, খিদা লাগলে বলি, “ভাত খাইসুইন? না খাইবাইন? আমি কইল ওহন খায়ালবাম”। আবার কোন কাজ করতে হলে বলি, “আমার এই কামডা এহন করন নাগসাল”। আব্বু হাসে সাথে সাথে আমিও। তবে আমি এই ভাবে কথা বললে আম্মু খুব বিরক্ত হয়। চোখ- মুখ কুচঁকে তাকায়, যার অর্থ, এত বাজে করে কথা বলছো কেন? আম্মুকে রাগানোর জন্যও মাঝে মাঝে বলি, “কিবা আসুইন? তুমার শইলডা বালা”? আমার বোনদেরতো আবার নানারকম পাইরাম। তারা এভাবে কখনো কথা বলেনা। আর আমি আমার ওদায়া যাওয়া জীবনে হীরাঝিলের চা বা পড়শী হোটেলের লইট্টা ফ্রাই খাওয়ার আনন্দ নিয়ে আসার আশায় এই কমেডিগুলা সারাক্ষণ করতে থাকি।
বিশ্বকাপের একেকটা ম্যাচ শেষে আমাদের দেশের জনগণ সেই ম্যাচ নিয়ে যেভাবে পোস্টমর্টেম করে সময় ব্যয় করে, ঐ সময়গুলো যদি তারা খেলে বা অনুশীলন করে ব্যয় করতো তাহলে বাংলাদেশ আজকে নির্ঘাত বিশ্বকাপে খেলার জন্য কোয়ালিফাই করতো। একেকজন এমনভাবে মন্তব্য করতে থাকে যে শুনে মনে হয়, মেসি বা নেইমারের এদের কাছ থেকে কোচিং নেয়া উচিত।
প্রতিটা মানুষের মধ্যেই পাগল, শিশু এবং পশুত্ব বিরাজমান। এই তিনটার যথাযথ সংমিশ্রণ যেমন একজন মানুষকে পরিপূর্ণ করে তোলে, তেমনি এর মধ্যে কোন একটার আধিক্য তাকে শেষ করে দিতে পারে। যেমন, আমার জন্মদিনে কেউ উইশ না করলে কিংবা করতে ভুলে গেলে আমি এত বুড়া বয়সেও মন খারাপ করি। আরো বেশি মন খারাপ করি, জন্মদিনে আম্মু পোলাও রান্না না করলে। আমার মধ্যে আরেকটা হাস্যকর ব্যপার হচ্ছে, আমি যাদেরকে খুব ভালবাসি তাদের কাছে আমার কমপ্লেইনের কোন সীমা নাই। এর মধ্যে আম্মু এক নাম্বার। আম্মুর সাথে আমি সবচেয়ে বেশি রাগ করি কিন্তু সে ছাড়া আমার দুনিয়া অন্ধকার। তাকে আমার কাছে “কমপ্লেইন বক্স” মনে হয়। মনে হয়, এখানে কমপ্লেইন করলে আমার সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। ছোটবেলায় যখন নানুর কাছে থাকতাম, তখন খালামণি বা সিমি খালা কোন কারনে বকা দিলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতাম কখন আম্মু আসবে আর আমি ওদের নামে নালিশ করবো! আমার এই অভ্যাসটা এখনো যায় নাই। হয়তো ভালবাসার মানুষগুলোকে আমি খুব বেশি বিশ্বাস করি।
প্রেম- ভালবাসার ক্ষেত্রে আমি মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী। “মানুষ একবার জন্মে, একবার মরে, বিয়ে একবারই করে আর ভালোও একবারই বাসে” এই টাইপের প্যান্দানী মার্কা ডায়ালগ দিতে গিয়ে অনেক সময় অনেকের টিটকিরির শিকার হই। তাইতে অবশ্য আমার মজাই লাগে। কি আর করা! আমি তো পারিনা অন্য অনেকের মতো একটা সম্পর্ক থেকে বের হওয়ার দুই মাসের মাথায় আরেকটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে। থাক। যে যা করে আনন্দ পায়, সুখী হয়; সে তাই করে বেঁচে থাক। প্রত্যেকটা মানুষের অধিকার আছে নিজের জীবনটাকে গোল্লা আইসক্রিম বা কাটা মশলায় গরুর মাংস খাওয়ার মতো আনন্দময় করে তোলার।
আজকের লেখাটা খানা- খাদ্যে ভরপুর করে ফেললাম। সারাদিন রোজা রেখে, খেতে তো আর খুব একটা পারিনা তাই আমার মতো পেটুক লোকের খানা- খাদ্যের কথা চিন্তা করাই শেষ ভরসা। খাবার নিয়ে লাস্ট একটা গল্প করে আজকের লেখার ইতি টানবো। আমি খুব বেশি কিছু রাঁধতে না পারলেও, রান্না করতে এবং রান্না করে মানুষকে খাওয়াতে ভালবাসি। আর রান্নার এক্সপেরিমেন্ট করতেও আমার বেশ লাগে। তো আজকের এক্সপেরিমেন্টাল একটা রান্নার এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করি। পুডিংতো সবাই দুধ আর ডিম দিয়ে বানায়। আজকে আমার মনে হল, দুধ আর ডিমের সাথে পাকা আমও মিশিয়ে দেই। ফ্রুট পুডিং বানাই। তো, যেই ভাবা সেই কাজ। দুধ আর ডিমের সাথে পাকা আম মিশিয়ে বসিয়ে দিলাম চুলায়। একটু পরে আর যাই কই। পাকা আমের বিশ্রী গন্ধে বমি আসার উপক্রম। এমন বাজে গন্ধ যে রান্না ঘরেই আর কেউ ঢুকতে পারছেনা। বিশ্রী গন্ধের কারনে খাবারটা চুলা থেকে নামানোর সাহস পর্যন্ত করতে পারছিলামনা। এই অবস্থায় বাসায় এলো আব্বু। ঘরে ঢুকেই গন্ধে নাক- মুখ কুঁচকে এর কারন জানতে চাইলে আম্মু সঙ্গে সঙ্গেই আমার নামে একগাদা নালিশ করলো। সব ঘটনা শুনে আব্বু বলে, “বাহ! আমার মেয়ে রান্না করছে বলেই না এত্তো সুন্দর গন্ধ! এরকম গন্ধ কি তুমি রান্না করলে বের হয়? সবই তো ঠিক ছিল শুধু আমটাই একটু সমস্যা করে ফেললো। এটাতো আর ওর দোষ না, আমটারই দোষ”।
এই হলো আমার পরিবার আর এই হলো আমার বাসা।
আবার কিউট সুইট পোষ্ট, আই লাইক ইট!
সিরিয়াসলি? না গুল গাপ্পা?
তোমার লগে চাপা পিটায়া লাভ কি?
আসলেই ভালো হইছে লেখা!
থ্যঙ্কু থ্যঙ্কু
আইছে থ্যাঙ্কুওয়ালা!
সুস্বাদু মজারু লেখা, এত্তগুলা ভাল্লাগছে। এরকম একটা সিরিজ স্টার্ট কইরা দাও..
তোমার কমেন্টও আমার এত্তোগুলা ভাল্লাগসে। রোজা রাখি আর চোখের সামনে খাওয়া সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করে।
"সরকটওয়ালা" শব্দটা বুঝলামনা । আর আপনি যে কতো অসহায় তারও কোন হদিস পেলাম না ! আমাদের "প্রিয়" কি কারণে অসহায় বোধ করবে খুঁজে পেলামনা। লেখা বরাবরের মতো ফাসকেলাশ ! ভাল থাকুন ।
অতিরিক্ত ভালবাসার কারনে অসহায় ফিল করি মাঝে মধ্যে। মনে হয় এত্তো এত্তো ভালবাসা আমি ডিজার্ভ করিনা। এর চেয়ে একটু কম ভালবাসলেই মনে হয় ভাল হতো।
আমি ব্রাজিল সাপোর্ট করি না। আর্জেন্টিনা ভালোবাসি। কিন্তু নেইমারকে আমার ভালো লাগে। বাচ্চা একটা ছেলে কি দারুণ ফুটবল খেলে!আর ব্যাথা পেলো বলে মায়াও লাগছে।
আপনি দারুণ লেখেন। পড়তে খুবই ভালো লাগে।
থ্যাঙ্ক ইউ আপু। সবসময় আপনি আমাকে দারুন দারুন সব কমেন্ট দিয়ে এনকারেজ করেন। থ্যাঙ্ক ইউ ফর দ্যাট।
আর নেইমার বাচ্চা ছেলে হলে কি হবে ওরও কিন্তু বাচ্চা আছে।

পাকা আমের সামান্য পালপ দিলেতো ভাল হওয়ার কথা। গন্ধ হলো কেন বুঝলাম না
আমিতো সামান্য পালপ দেই নাই আপু।
একগাদা দিয়ে ফেলছি।
তবে কালকে দই- বেগুন রান্না করেছিলাম। খেতে খুব মজা হইসে। 
মন্তব্য করুন