অন্যরকম ভ্রমন কাহিনী।
স্টীমারের সাথে পরিচয় জন্ম থেকে থাকলেও সখ্যতা গড়ে উঠে কলেজে পড়াকালীন সময়ে। প্রথম বন্ধুদের সাথে ঢাকার বাইরে ভ্রমন স্টীমারে করে। সেই থেকে প্রায় প্রতিবছরেই একবার করে
নৌপথে ভ্রমন যেন আমাদের অবধারিত হয়ে উঠে। ঢাকা থেকে খুলনা আবার একই স্টীমারে করেই ঢাকায় আসা- মোট ৫৪/৫৫ ঘন্টার ভ্রমন।
একটা সময়ে এক আত্মীয়র সুবাদে প্রথম শ্রেনী পাস এ করে ভ্রমন করেছি , পরে সেই ভ্রমনের নেশায় নিজেরাই খরচ করে একই কায়দায় ঢাকা-খুলনা-ঢাকা ভ্রমন। সেই নেশায় কিছুদিন আগেও ভ্রমন করে এলা নৌপথে ঢাকা - খুলনা-ঢাকা।
ঢাকা থেকে চাঁদপুর হয়ে বরিশাল তারপর ঝালকাঠি, হুলারহাট, বড়মাছুয়া , সন্ন্যাসীঘাট, মড়েলগঞ্জ, মংলা হয়ে খুলনা। আরো কিছু ঘাট স্পর্শ করে যায় , কিন্তু নামগুলো মনে করতে পারছি না এখন।
৩ রাত ২ দিনের এই ভ্রমনে কিছুই করার থাকেনা। হাত পা ছড়িয়ে নদীর দুই ধারের দৃশ্য গুলো দেখতে দেখতে যাওয়া আবার আসা । মাঝে মাঝে ঘাটে থামা, লোকজনের হুড়োহুড়ি করে উঠা ও নামা দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেলে কেবিনে গিয়ে বিশ্রাম।
কখনো সম্মুখের তিন দিক খোলা ডেকে বসে আড্ডা দিতে দিতে সময় কাটানো। নদীর মাঝে জেলে নৌকার চলাচল দেখা , অথবা পাশ কাটিয়ে যাওয়া কোন লঞ্চ বা বার্জের শব্দে সেই পানি কেটে চলার শব্দের ধ্যানের ব্যাঘাত ঘটিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখা।
সকালের নাস্তা সেরে ডেকে এসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে নদীর পাড়ের চিরায়ত দৃশ্য - হয়তো কোথাও পাড় ভেঙে পড়া কিংবা কোথাও সবুজ কার্পেট বিছানো অবারিত ধান ক্ষেত, দূরে জড়াজড়ি করে থাকা গ্রামের ঘর গুলো। তাদের মাঝে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে থাকা নারিকেল কিংবা তাল গাছের মাথা। সেই ডেকেই কেটে যায় বেশ বেলা পর্যন্ত। তারপরে হয়তো উপরে সারেং এর রুমের পাশের খোলা যায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে স্টীমারের পানি কেটে কেটে যাওয়ার সাথে সাথে সময় টা কেটে যায় আড্ডায়, গল্পে , ছবি তুলে।
আবার কখনো বা তাস নিয়ে বসে পড়ি কেবিনে সময় কাটাতে। দুপুরে খাবার পর হালকা ভাত ঘুম দিয়ে আবারো ডেকে গিয়ে বসে নাস্তা সাথে চা বিকেলের হিম বাতাসে । পড়ন্ত বেলার সূর্যের সাথে ছবি তোলা ছবি তোলা খেলা। ম্লান আলোয় নতুন করে পাওয়া সেই একই দৃশ্য - ধান ক্ষেত - সেই গ্রাম। পুরো দেশের এই সমতল ভূমির চিত্র যেন একই রঙে , একই তুলিতে এঁকেছেন কোন চিত্রকর। সেই ছবিতে আলোর প্রক্ষেপে কখনো হয়ে উঠে মায়াবী , কখনো সকরুন কখনোবা লজ্জায় লাল হওয়া কোন গ্রাম বালিকার কপোল।
তারার মিট মিট আলো বারতা নিয়ে আসে সন্ধ্যা। আকাশের গায়ে ফুটে উঠে এক এক করে হাজারো তারার আলোক স্পন্দন। যেন আকাশে তারাদের মিলন মেলা বসেছে । হঠাৎ করেই চোখ যায় আকাশের এক কোন চিকন করে উঠা সলাজ নতুন চাঁদের মৃদু উপস্থিতি। সন্ধ্যা মিলাতে না মিলাতেই ঝুপ করে যেন আঁধার গ্রাস করে চারিপাশ। দূরে দেখা যায় কোন মেঝে নৌকার কুপির একটু আলোর কম্পিত উপস্থিতি কিংবা বাতিঘরের বার বার জ্বলে উঠা কোন লাল বা সবুজ আলোর বোবা নির্দেশ।
রাত নামে, আরো স্পষ্ট হয় তারাদের উপস্থিতি। আকাশে এমন তারা ঢাকা থেকে কখনই দেখিনা। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখি। তারাদের ভিড়ে খেই হারিয়ে ফেলে অনভ্যস্ত চোখ জোড়া। কালপুরুষ কিংবা সাত্বিক - কোন কিছুই না জেনে দেখি সেই হাজার আলোক বর্ষ দূর হতে আসা একচিমটি আলোর অপার্থিব সৌন্দর্য।
তারপর ক্লান্ত হয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে বসি। চারিদিকে অন্ধকার। ডেকে লাইট থাকলেও তা জ্বালানো নিষেধ বলে ডেকেও চেপে ধরে সেই অন্ধকারের অজানা সৌন্দর্য। সাথে নিয়ে যাওয়া সাউন্ড সিস্টেমে গান ছেড়ে দেই কখনও হারিয়ে যাওয়া দিনের গান কিংবা লালনের গান কিংবা রবীন্দ্র সংগীত।
সেই অন্ধকারে ভেসে চলি আমরা। কোন দিক-কূল চিনি না, কোন পাড় ও দেখিনা। তারাদের দেখিয়া দেয়া পথে শুধুই চলছে স্টীমারটি। পানি কেটে কেটে চলার শব্দে , রাত্রের করুন নিরবতায় আর হিমেল বাতাসের আলিঙ্গনে হঠাৎ মনে হয় ভেসে চলেছি আমি , শুধুই ভেসে চলেছি ...
সে এক অপার্থিব অনুভূতি।
বাহ!বাহ! হেভভি ঘুরন্তিস দিছেন।
পরের পর্ব নাই। ফাকিবাজি করি ইদানিং , লিখতে গেলে আঙ্গুল চলে না আর।
দেশে আইলে তোমারে নিয়া যামু আমাগো লগে নেক্সট টাইম।
লঞ্চে করে বরিশাল যাওয়ার শখ আমার বহুদিনের... কিন্তু যাওয়া হয়ে উঠচে না। আপনার লেখা পড়ে আবার চাগাড় দিয়া উঠলো ইচ্ছাটা
ভাই , লঞ্চে করে বরিশাল না গিয়ে স্টীমারে করে খুলনা পর্যন্ত যান , ভালো লাগবে, খরচ ও খুব বেশী না।
আমার লঞ্চে ঘুরা হয় নাই :(
তোর লাইফটাই বৃথা। দেশে আয় , তারপর একটা প্রোগ্রাম করুমনে উইথ মাল মশলা।
ছবির পোষ্টে আসলে কিছু পড়তে ইচ্ছে করে না। কিন্তু আপনার লেখার কারনে পুরো পোষ্টটা পড়লাম।
আমি ধন্য হলুম।
বাহ্!
==========================
একটু কৌতূহল ছিলো; কোন্ কোন্ নদী ধরে গেলেন? নদীতে এতো কচুরিপানা কেন, পানির গভীরতা কম বলে কি?
বুড়িগঙ্গা ধরে মেঘনা , তারপর কোন কোন নদী যেন, তারপর কীর্তন খোলা দিয়ে বরিশাল, তারপর আরো কি কি নদী , তারপর পশুর নদী দিয়ে রুপসা তে গিয়ে খুলনায় ল্যান্ড। সবা নদীর নাম কইতে পারলাম না। স্যরি।
বর্ণনার মুন্সিয়ানায় মুগ্ধ... দৃশ্যপটে ভেসে ওঠা প্রতিটা মুহূর্ত .. আহা বেড়ানোর আগ্রহটা চেপে বসলো
ঘুরে আসেন বস এই শীতে, দারুন লাগবে আশা করি।
দারুন ভ্রমন তারচেয়ে সুন্দর বর্ণনা।
ধন্যবাদ কর্মী ভাই/বোন।
চলেন বেড়ায়ে আসি একবার।
ফুটুক দেইখ্খা ছুডো বেলার কথা মনে পড়লো। এখন আর লঞ্চে যাওয়া হয়না। স্মৃতি এখন ছবি ......
আহা । সময় করে বেড়িয়ে আসুন , ভালো লাগবে।
স্টীমার - লঞ্চে জীবনেও চড়িনাই, আম্মায় কয় ১০ মাস বয়সে নাকি একবার চড়ছিলাম..
আফসুস রৈয়া গেছে, একবার চড়তে হবে..আবার এইদিকে সাঁতার পারিনা..
আপনি তো উড়তেও জানেননা , তাই বলে প্লেনে চড়েন নাই ???
অনেক আগে স্টীমারে / লঞ্চে চড়ে গ্রামের বাড়ি যেতাম... চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে চাঁদপুর কিংবা ঢাকা সেখান থেকে লঞ্চ কিংবা রকেটে (ছোটবেলাতে রকেট বলতে স্টীমাররেই চিনছিলাম, হয়তো অবাকও হয়েছিলাম এটাতে করে আবা চান্দে ক্যামনে যায়) চড়ে পিরোজপুর, সেখান থেকে নৌকা করে গ্রামের বাড়ির ঘাট (বাড়ির পাশের খালে পানি না থাকলে দুই তিন কিলো দূরে নেমে পায়ে হাঁটা).......
আজকাল তো আর যাওয়াই হয় না আর গেলেও এতো সময় কোথায়... বাসে দশ ঘন্টাতেই চলে যাওয়া যায় আর সেই বাসটাও বলতে গেলে একদম বাড়ির সামনে গিয়ে থামে... ইস...
ছবিটা দেখে সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেলো... চমৎকার বর্ণনা...
স্টিমারের ভ্রমনের জন্য সময় বের করে ঘুরে আসুন, দেখেন ভালো লাগবে।
ধন্যবাদ ভাই।
চম?কার বিসলেশন...দেশে গেলে স্টীমারে ঘুরার ইচছা আছে...লোভ লাগিয়ে দিলেন... অনেক দিন পর মনে হইলো ভালো কিছূ পড়লাম। ধন্যবাদ সাইদ ভাই।
ঘুরে আসতে পারেন , খারাপ লাগবে না।
ধন্যবাদ ভাই।
একটা অনুরোধ থাকবে... যেখানেই যান, পরিবেশের দিকে খেয়াল রাখবেন... যেখানে সেখানে পলি ব্যগ ও ড্রিঙ্কস এর বোতল ফেলবেন না...আসলে কোন কিছু না ফেলাই ভাল... কস্ট করে ডাস্টবিন এ ফেলুন বা ময়লা যেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয় এমন জায়গায় ফেলুন... আমরা সধারনত ময়লা ফেলার জন্য নিজেরা ব্যগ সাথে নেই, সব একত্র করে পরে ডাস্টবিনে ফেলি... আশা করি ভ্রমন বিলাসীরা মনে রাখবেন...
আমরা নিজেদের আনন্দের জন্য যেন পরিবেশ ধ্বংস করে না ফেলি...
ভ্রমন শুভ হোক...
ছবিগুলো কি আপনার তোলা???
আমাডের সাইটে প্রকাশের জন্য দেয়া যাবে ফটোগুলো???
দিতে পারেন , সাথে সৌজন্যতা উল্লেখ করে দিয়েন।
মন্তব্য করুন