বিলাসী (২০১৩) - ১
পাকা ২ ঘন্টা বসিয়া ব্লগ লিখিতে যাই । আমি নই, কয়েকশত জন। যাহাদেরই বাটী কিংবা অফিস এরুপ আইটি পল্লী তে তাহাদের সকলকেই এরুপ করিয়া ব্লগ লিখিতে হয়। ইহাতে লাভের অঙ্কে শেষ পর্যন্ত একেবারে শূন্য না পড়িলেও, যাহা পড়ে, তাহার হিসাব করিবার পক্ষে এই কয়টা কথা চিন্তা করিয়া দেখিলেই যথেষ্ট হইবে যে , সকাল বিকাল ৪ ঘন্টা বসিয়া থাকিয়া ব্লগ লিখিতে হয় তাহাই নহে, ঢেড় বেশী - বারে বারে কানেকশন কাটিয়া যায়, আন্তর্জালের গোলাকার চাকতি ক্রমাগত ঘুরিতে দেখিয়া , মশক দংশন সহিয়া, একনাগাড়ে বসিয়া ব্লগে যাইতে হয় সে দুর্ভাগা বালকদের মা-সরস্বতী খুশি হইয়া বর দিবেন কি, তাহাদের যন্ত্রণা দেখিয়া কোথায় যে তিনি মুখ লুকাইবেন, ভাবিয়া পান না।
তাহার পরে এই কৃতবিদ্য ব্লগারের দল বড় হইয়া একদিন ব্লগেই বসুন, আর ফেসবুকেই যান —তাঁদের চার-ঘন্টা ব্লগিং এর তেজ আত্মপ্রকাশ করিবেই করিবে। কেহ কেহ বলেন শুনিয়াছি, আচ্ছা, যাহাদের লেখার জ্বালা, তাহাদের কথা না হয় নাই ধরিলাম, কিন্তু যাঁদের সে জ্বালা নাই, তেমন সব ভদ্রলোকেই বা কি সুখে ব্লগ ছাড়িয়া পলায়ন করেন? তাঁরা বাস করিতে থাকিলে ত ব্লগিঙের এত দুর্দশা হয় না!
কিন্তু থাক এ-সকল বাজে কথা। ব্লগে যাই—দু’ঘন্টার মধ্যে এমন আরও ত দু’তিনখানা ওয়েব সাইট পার হইতে হয়। কোন সাইটে দেখি কোন নায়িকা কাহার সহিত ভাগিল, কাহার সংসার পুড়িলো, কে মা হইতে চলিলো , এইসব খবর লইতেই সময় যায়, কিন্তু আসল যা কাজ — দরকারী মেইল করা, ব্লগে যাইয়া কমেন্ট করা —এ-সকল দরকারী কাজ করিবার ফুরসতই মেলে না।
*জনৈক ব্লগারের ডায়েরি হইতে নকল। তার আসল নামটা কাহারও জানিবার প্রয়োজন নাই, নিষেধও আছে। ব্লগ নামটা না হয় ধরুন, ন্যাড়া।
আমাদের ব্লগের একটি ছেলের নিক সঙ্গে মাঝে মাঝেই ব্লগে দেখিতাম । তার নাম ছিল মৃত্যুঞ্জয়। আমাদের চেয়ে সে বয়সে অনেক বড়। সব সময় ব্লগে আসিতো , ছাগু খেদাইতো। মুক্তিযুদ্ধের কথা, প্রগতিশীল ধ্যান ধারনার কথা, ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লিখিতো । কবে যে সে প্রথম ব্লগে আসিয়াছিলো, এ খবর আমরা কেহই জানিতাম না—সম্ভবতঃ তাহা প্রত্নতাত্ত্বিকের গবেষণার বিষয়—আমরা কিন্তু তাহার ব্লগটিকেই চিরদিন দেখিয়া আসিয়াছি। তাহার অন্য ব্লগে যাইবার ইতিহাসও কখনো শুনি নাই, ফেসবুকে যাইবার খবরও কখনো পাই নাই। মৃত্যুঞ্জয়ের বাপ-মা ভাই-বোন কেহই ছিল না; ছিল শুধু শহরের একপ্রান্তে একটা প্রকাণ্ড আম-কাঁঠালের বাগান, আর তার মধ্যে একটা পোড়ো-বাড়ি, আর ছিল এক জ্ঞাতি খুড়া। খুড়ার কাজ ছিল, ভাইপোর নানাবিধ দুর্নাম রটনা করা—সে গাঁজা খায়, সে গুলি খায়, এমনি আরও কত কি! তাঁর আর একটা কাজ ছিল বলিয়া বেড়ানো—ঐ বাগানের অর্ধেকটা তাঁর নিজের অংশ, নালিশ করিয়া দখল করার অপেক্ষা মাত্র। অবশ্য দখল একদিন তিনি পাইয়াছিলেন বটে, কিন্তু সে জেলা-আদালতে নালিশ করিয়া নয়—উপরের আদালতের হুকুমে। কিন্তু সে কথা পরে হইবে।
মৃত্যুঞ্জয় নিজে রাঁধিয়া খাইত এবং আমের দিনে ঐ আম-বাগানটা জমা দিয়াই তাহার সারা বৎসরের খাওয়া-পরা চলিত এবং ভাল করিয়াই চলিত। ব্লগে যেদিন দেখা হইয়াছে, সেই দিনই দেখিয়াছি মৃত্যুঞ্জয় সুন্দর সুন্দর লেখা লিখিয়া তাহা ব্লগে উপস্থাপন করিতো। তাহাকে কখনো কাহারও সহিত যাচিয়া আলাপ করিতে দেখি নাই—বরঞ্চ উপযাচক হইয়া কথা কহিতাম আমরাই। তাহার প্রধান কারণ ছিল এই যে, দোকানের খাবার কিনিয়া খাওয়াইতে গ্রামের মধ্যে তাহার জোড়া ছিল না। আর শুধু ছেলেরাই নয়। কত মেয়ে কতবার যে গোপনে তাহার সহিত পিজা হাটে গিয়াছে, শপিং করিয়া বিল ধরাইয়া দিয়াছে তাহা বলিতে পারি না। কিন্তু ঋণ স্বীকার করা ত দূরের কথা, ছেলে তাহার সহিত একটা কথা কহিয়াছে এ-কথাও কেহ ভদ্র-সমাজে কবুল করিতে চাহিত না — মৃত্যুঞ্জয়ের ছিল এমনি সুনাম।
অনেকদিন মৃত্যুঞ্জয়ের সহিত দেখা নাই। একদিন শোনা গেল সে মর-মর। আর একদিন শোনা গেল, আরেক ব্লগ পাড়ার এক নাস্তিক বুড়া মাল তাহার চিকিৎসা করিয়া এবং তাহার নাস্তিক মেয়ে বিলাসী সেবা করিয়া মৃত্যুঞ্জয়কে যমের মুখ হইতে এ-যাত্রা ফিরাইয়া আনিয়াছে।
অনেকদিন তাহার অনেক লেখা মারিয়া পত্রিকায় দিয়া দিয়েছি নিজের নামে , অনেক সুনাম কামাইয়াছি তাহার কারণে, তাই মনটা কেমন করিতে লাগিল। একদিন সন্ধ্যার অন্ধকারে লুকাইয়া তাহাকে দেখিতে গেলাম। তাহার পোড়ো-বাড়িতে প্রাচীরের বালাই নাই। স্বচ্ছন্দে ভিতরে ঢুকিয়া দেখি, ঘরের দরজা খোলা, বেশ উজ্জ্বল একটি প্রদীপ জ্বলিতেছে, আর ঠিক সুমুখেই তক্তপোশের উপর পরিষ্কার ধপধপে বিছানায় মৃত্যুঞ্জয় শুইয়া আছে, তাহার কঙ্কালসার দেহের প্রতি চাহিলেই বুঝা যায়, বাস্তবিক যমরাজ চেষ্টার ত্রুটি কিছু করেন নাই, তবে যে শেষ পর্যন্ত সুবিধা করিয়া উঠিতে পারেন নাই, সে কেবল ওই মেয়েটির জোরে। সে শিয়রে বসিয়া পাখার বাতাস করিতেছিল, অকস্মাৎ মানুষ দেখিয়া চমকিয়া উঠিয়া দাঁড়াইল। এই সেই বুড়া নাস্তিকের মেয়ে বিলাসী। তাহার বয়স আঠারো কি আটাশ ঠাহর করিতে পারিলাম না। কিন্তু মুখের প্রতি চাহিবামাত্রই টের পাইলাম, বয়স যাই হোক, খাটিয়া খাটিয়া আর রাত জাগিয়া জাগিয়া ইহার শরীরে আর কিছু নাই। ঠিক যেন ফুলদানিতে জল দিয়া ভিজাইয়া রাখা বাসী ফুলের মত। হাত দিয়া এতটুকু স্পর্শ করিলে, এতটুকু নাড়াচাড়া করিতে গেলেই ঝরিয়া পড়িবে।
(চলিবে)
বেশ ভাল হইছে সাঈদ ভাই।
ধন্যবাদ ।
আহা! আরেকখানা সিরাম সিরিজ হপে!
ম্যালা দিন পর।
এপেটাইজার চখাম আছিলো। মেইনডিশ আর ডেজার্টের অপেক্ষায় থাকলাম।

আম্মো অপেক্ষায় থাকলাম
" এতদিন কোথায় ছিলেন ?" আজকাল দেখিনা যে ?
জটিল
আগের গুলোর চেয়ে এইটা বেশি জোসিলা হবে। স্টার্টিং তো মারাত্নক হইছে । প্লিজ দায়সারা ভাবে ছাইরা দিয়েন না সিরিজটা
দায়সারা ভাবে ছাড়লাম কবে ?
এদিক সেদিক না যেয়ে সিরিজটা শেষ কইরেন জলদি । ব্যপক ভালো লাগলো ।
এদিক সেদিক মানে ? কোন কোন দিক গেলাম ?
প্রথম পর্বখানা ভাল লাগিয়াছে
পিরিতো হইলাম ।
শরৎ বাবু ফিরে এলেন কি ! খুবই ভাল পেলাম । ধন্যবাদ ।
শরৎ বাবু আত্মহত্যা করতো এইটা দেইখা।
যাক, তিনি কথা রাখিলেন
সব আপনাদের কৃপায়
নাস্তিক ব্লগার? এখনও ধরে নাই? অসুস্থ তাকে কী
আরে পুলিশ গুলাও নাস্তিক ।
মন্তব্য করুন