বিলাসী (২০১৩) - ৪
বছর খানেক গত হইয়াছে। ছাগুর উৎপাত সহ্য করিতে না পারিয়া ব্লগিং এ ইস্তফা দিয়া ফেসবুকে ফিরিয়াছি। একদিন ফেসবুকে নানান প্রোফাইল ঘাটিতে ঘাটিতে হঠাৎ দেখি মৃত্যঞ্জয়ের ছবি। শাহবাগে বসিয়া শ্লোগান দিতেছে। কপালে "রাজাকারের ফাঁসি চাই" লেখা কাপড় লাগানো , হাত মুষ্ঠিবদ্ধ। কে বলিবে এ আমাদের সেই মৃত্যুঞ্জয়! ধীর স্থির ছেলে এরই মধ্যেই জাত দিয়া একেবারে পুরাদস্তুর আন্দোলনকারী হইয়া গেছে। তৎক্ষণাৎ তাহাকে ফ্রেন্ড রিকোসেট পাঠাইলাম।
আমিও শুনিয়াছিলাম শাহবাগে একদল ব্লগার রাজাকারের ফাঁসির দাবীতে আন্দোলন শুরু করিয়াছে। আশে পাশে অনেকেই গিয়াছে, তদ্যাপি আমি যাই নাই। কী দরকার বাবা !!! গা বাঁচাইয়া চলিতে পারিলেই তো হইলো। নাম ধাম হইয়াছে, টক শোতে যাইতেছি , এখন এই আন্দোলন করিয়া আবার কী না কী ঝামেলায় পড়িতে হয়। আমি ফেসবুকে বসিয়া বসিয়া আন্দোলনকারী দের স্ট্যাটাস দেখিলেই "সাথে আছি" কমেন্ট করিয়া আমার দায় সারিতেছি।
ক্রমান্বয়ে এমন অবস্থা হইলো যে শাহবাগে না যাইয়া থাকা সম্ভব হইলো না। বাধ্য হইয়া একদিন আমিও সেখানে গমন করিলাম। ধীরে ধীরে ভীড়ের ভিতর ঢুকিতে লাগিলাম। অজস্র ছেলে বুড়ো সমবেত হইয়াছে। তারুণ্যের সাথে মিশিয়াছে ষাটোর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তিগণ। কেহ শ্লোগান দিতেছে , কেহ বাদ্য বাজাইয়া গান ধরিয়াছে, কেহ মিছিল করিতেছে। এ যেন নবজন্ম হইয়াছে তারুণ্যের । জন্মভুমির প্রতি তাহাদের এরূপ ভালোবাসা , রাজাকার মুক্ত করিবার এমন প্রত্যয় দেখিয়া আমার রক্ত টগবগাইয়া নাচিয়া উঠিলো। ভাবিলাম - এতদিন না আসিয়া চরম ভুলই করিয়াছি। সেই ভীড়ে মৃত্যুঞ্জয় কে খুঁজিতে লাগিলাম।
মৃত্যুঞ্জয় শ্লোগান দিয়া কাহিল হইয়া ফুটপাতের উপর বসিয়া ছিলো। চেহারা মলিন, কালো হইয়া গিয়াছে রোদে পুড়িয়া, রাত্রিতে না ঘুমাইয়া চোখের নিচে কালো দাগ পড়িয়াছে। ভাবিতেছিলাম যে, দেখিয়া কে বলিবে এই সেই মৃত্যুঞ্জয়। কিন্তু আমাকে সে খাতির করিয়া বসাইল। বিলাসী পাশের দোকানে জল কিনিতে গিয়াছিল, আমাকে দেখিয়া সেও ভারী খুশি হইয়া বার বার বলিতে লাগিল, তুমি না আগলালে সে রাত্তিরে আমাকে তারা মেরেই ফেলত। আমার জন্যে কত মারই না জানি তুমি খেয়েছিলে। কিন্তু আমিতো জানি , সেদিন আমি "আরে কর কী কর কী" বলিয়াই আমার দায়িত্ব পালন করিয়াছি শুধু, কাজের কাজ কিছুই করিনাই।
কথায় কথায় শুনিলাম, আন্দোলন আরম্ভ হইবার দিনই তাহারা এখানে উঠিয়া আসিয়া ক্রমশঃ বাস করিতেছে এবং সুখে আছে। এই ভিড় , কষ্ট , আন্দোলনের মাঝেও তাহারা সুখে যে আছে, এ কথা আমাকে বলার প্রয়োজন ছিল না, শুধু তাহাদের মুখের পানে চাহিয়াই আমি তাহা বুঝিয়াছিলাম।
তাই শুনিলাম, তাহাদের সমাবেশ রহিয়াছে এবং তাহারা সেজন্য প্রস্তুত হইয়াছে, আমিও অমনি সঙ্গে যাইবার জন্য লাফাইয়া উঠিলাম। ছেলেবেলা হইতেই দুটা জিনিসের উপর আমার প্রবল শখ ছিল। এক ছিল সমাবেশ দেখা আর আরেকটা ছিলো শ্লোগান দেয়া। কিন্তু এ পর্যন্ত করা হয় নাই।
আন্দোলনে আসিয়া তাহার সহিতে একাত্ম হওয়ার উপায় তখনো খুঁজিয়া বাহির করিতে পারি নাই, কিন্তু মৃত্যুঞ্জয়কে কাছে পাইয়া আনন্দে উৎফুল্ল হইয়া উঠিলাম। সে শাহবাগ আন্দোলনের একজন মস্ত লোক। আমার ভাগ্য যে অকস্মাৎ এমন সুপ্রসন্ন হইয়া উঠিবে, তাহা কে ভাবিতে পারিত? একাত্ম হইয়া গেলাম তাহাদের সহিত।
কিন্তু শক্ত কাজ, এবং ভয়ের কারণ আছে বলিয়া প্রথমে তাহারা উভয়েই আপত্তি করিল, কিন্তু আমি এমনি নাছোড়বান্দা হইয়া উঠিলাম যে, ঘন্টা - খানেকের মধ্যে আমাকে সাগরেদ করিতে মৃত্যুঞ্জয় পথ পাইল না। শ্লোগান শিখাইয়া দিল এবং সাথে মঞ্চের নিকট নিয়া বসাইয়া দিলো।
শ্লোগান টা কি জানেন? আমার পুরোমুরি মুখস্ত আছে -
ক তে কাদের মোল্লা
তুই রাজাকার তুই রাজাকার
গ তে গোলাম আযম
তুই রাজাকার তুই রাজাকার
স তে সাঈদি
তুই রাজাকার তুই রাজাকার
(চলিবে)
দারুন হইতেছে!
ধন্যবাদ
টাইপো
দারুন বস দারুন
টাইপো ধরিয়ে দেবার জন্য ধইন্যা।
গরজিয়াস!
স্যালুট, বস্!
ধইন্যা ।
মন্তব্য করুন