বিলাসী (২০১৩) - শেষ পর্ব
অবশেষে একদিন আন্দোলনের সহিত মিশিয়া গেলাম। সবাই বলাবলি করিতে লাগিল, হ্যাঁ, ন্যাড়া একজন গুণী লোক বটে। এত দ্রুত আন্দোলনে মিশিয়া যাইতে দেখিয়া সকলে বাহবা দিতে লাগিলো।
শ্লোগানের মাঝে মাঝে চোখাচোখি হইলে বিলাসী একখানা স্মিত হাসি দিতো। আসল কথা হইতেছে আমরা যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্য একাত্ম হইয়াছি। খাইয়া না খাইয়া দিন-রাত প্রজন্ম চত্বরে পড়িয়া রহিয়াছি।
আমাদের এরূপ অবস্থা যখন চলিতেছে ঐদিকে মৃত্যুঞ্জয়ের খুড়ো গেল গেল সব গেল বলিয়া কলরব করিতেছে। তিনি সমাবেশ ডাকিয়া সকলকে বুঝাইতে লাগিলেন ইহা নাস্তিক দের মিলনমেলা, শাহবাগে সকল প্রকার খারাপ কাজ হইয়া থাকে। ছেলে-মেয়ে একত্রে মিলামিশা করিতেছে, উহারা গাঞ্জা মদ খাইতেছে । এখানে কেহ ধার্মিক নহে। খুড়োর কথায় কেহ কেহ সায় দিয়া কহিলো - তাহা হইলে শাহবাগ বন্ধ করিতে হইবে বৈকি ! । এরূপ তো চলিতে দেয়া যায়না। দেশ জাতি ধর্ম সব উচ্ছন্নে যাইবে। ৪২ বছর আগের বিষয় নিয়া রাস্তা বন্ধ করিয়া এরূপ তো চলিতে পারে না ।
আন্দোলন আরম্ভ হইবার পর নানা ঝামেলা শুরু হইতে লাগিলো। নানান দলের লোকজন আসিয়া নানা তর্ক করিতো, তাহাদের কথা মানিতে বাধ্য করিবার চেষ্টা করাইতো। এসব দেখিয়া অনেকেই দূরে সরিয়া গিয়াছিলো। মৃত্যুঞ্জয় কে ইহা নিয়া কিছু কহিলে বলিতো - করুক গে , আমাদের তো অত কিছু চিন্তা করিবার দরকার নাই।
ওদিকে মৃত্যুঞ্জয় এর খুড়ো "নাস্তিক নাস্তিক" বলিয়া তোলপাড় করিয়া ফেলাইতে লাগিলো। দ্বারে দ্বারে ঘুরিতে লাগিলো ইহাদের কে নিবৃত্ত করিবার জন্য। শুনিলাম নাস্তিকদের তালিকা করিয়া তিনি সমাজের দ্বারে দ্বারে বিলি করিতে লাগিলেন। তাহার প্রথমেই ছিলো মৃত্যুঞ্জয় এর নাম। মৃত্যুঞ্জয় নাস্তিক বিবাহ করিয়া নাস্তিক হইয়া গিয়াছে - এই যুক্তিতে তাহার নাম রহিয়াছে তালিকায়। সকলে তাহাকে এমতাবস্থায় গা ঢাকা দিয়া থাকিতে উপদেশ দিলো।
সকলের উপদেশ অগ্রাহ্য করিয়া মৃত্যুঞ্জয় বরাবরের মতন শাহবাগে আসিতো, এসব তালিকা কে সে অগ্রাহ্য করিতো। সকলের সাথে গলা মিলাইয়া শ্লোগান ধরিতো। বিলাসী তাহাকে নিষেধ করিলেও সে শুনিতো না, কহিতো - আমার রক্তে সহিত মিশিয়া রহিয়াছে, তুমি বুঝিবা না। বিলাসী বুঝিতো - সমাজে , রাষ্ট্রে তাহার খুড়োর ন্যায় লোকের কদর বেশী। তাহার কথা সকলে শুনিবে। বিলাসী জানিতো - সবকিছু নস্টদের অধিকারে চলিয়া গিয়াছে। ইহারা ধর্মের নামে , সমাজের নামে তারুন্য কে দমিয়ে রাখিতে চায়, সত্য কে চাপা রাখিয়া দিতে চায়। ইহারা কুৎসা রটাইয়া সমাজ হইতে একদা বিচ্ছিন্ন করিয়া দিয়াছিলো তাহাদের দুজন কে। খুড়োদের ন্যায় কালসাপের পক্ষে সবকিছুই সম্ভব।
তবুও মৃত্যুঞ্জয় থামিয়া থাকিতে পারে নাই। একদা সে বরাবরের মতন আন্দোলনে আসিয়াছে, সেথা হইতে তাহার বাড়ীতে যাইয়বার পথে তাহাকে পুলিশ ধরিয়া লইয়া যায়। পুলিশ ধরিয়া তাহার কম্পিউটার, মোডেম সকল কিছু জব্দ করিয়া লইয়া যায়। তাহাকে রিমান্ডে লইয়া যায় পুলিশ।
পরদিন শুনিলাম বিলাসী তাহার মুক্তির জন্য তোরজোড় করিতেছে । অনেকের সহিত দেখা করিয়া যাহ সম্ভব চেষ্টা করিতেছে। তাহাদের অভাবের সংসার । যাহা ছিলো সব বিক্রি করিয়া মৃত্যুঞ্জয় এর মুক্তির জন্য উকিলের পিছনে টাকা ঢালিতেছে।
মৃত্যুঞ্জয়কে পুলিশ ধরিবার পর হইতে আমরাও নিরাপদ দূরত্বে চলিয়া আসিয়াছি। এখন আর শাহবাগে যাইনা। ফেসবুকে বসিয়া আমরা মৃত্যুঞ্জয় এর মুক্তি চাহিয়া স্ট্যাটাস দিতেছি, ইভেন্ট করিতেছি। ব্লগে ব্লগে রক্ত গরম করিয়া পোস্ট দিতেছি কিন্তু মৃত্যুঞ্জয়ের মুক্তির ব্যাপার সম্মুখে আসিলেই পলায়ন করিতে দ্বিধা করিতেছি না।
খুড়ামশাই ষোল আনা বাগান দখল করিয়া অত্যন্ত বিজ্ঞের মত চারিদিকে বলিয়া বেড়াইতে লাগিলেন, ওর মত নাস্তিকের যদি সাজা না হয়, ত হবে কার? পুরুষমানুষ অমন একটা ছেড়ে দশটা করুক না, তাতে ত তেমন আসে-যায় না—না হয় একটু নিন্দাই হ’তো। কিন্তু, নাস্তিক কে বিয়ে করতে গেলি কেন ? নিজে জেলে গেলো , আমার পর্যন্ত মাথা হেঁট করে গেল।
গ্রামের লোক একবাক্যে বলিতে লাগিল, তাহাতে আর সন্দেহ কি! নাস্তিক -পাপ! বাপ্রে! এর কি আর প্রায়শ্চিত্ত আছে!
যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবী হইলো আস্তিক নাস্তিক প্রমাণ করিবার আন্দোলন।
[সমাপ্ত। ইহা একটি স্যাটায়ার। জিবিত বা মৃত ব্যাক্তি বা কোন ঘটনার সহিত ইহার মিল খুঁজিয়া পাইলে তাহা নিতান্তই কাকতাল এবং পাঠকের নিজস্ব ভাবনা । তাহার জন্য লেখক কে দায়ী করা যাইবে না]
সত্য সহজ
আবার সময় সময়
সত্য বড়ই কঠিন ও রূঢ় ও বটে।
জম্পেশ একটা সিরিজ শেষ হইয়া গেল।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।
আমরাতো ধর্ম পরীক্ষা নিয়া বিজি
হ ।
শেষ করে দিলেন!
আমি শেষ করি নাই, শেষ হইয়া গেল ।
শেষ লাইনটি কি ঠিক হলো ? আমারতো মনে হয় যুদ্ধাপরাধীর ফাসির দাবী আসলে আমাদের প্রাণ প্রিয় সরকারকে ধোয়া তুলসী প্রমাণ করার অনন্য আন্দোলন । এখন মিডিয়ায় পদ্মা সেতু নাই, দূই আবুল নাই, শেয়ার বাজার, ডেসটিনি, বিসমিল্লা গ্রুপ নাই। হল মার্কে আরো লোন দেয়ার কথা বলছে বড় আবুল । আগামী ভোটে আপার জয় ঠেকায় কার সাধ্যি !
আপনার এরকম মনে হবার কারণ কী ? জানতে পারি ?
যে কারণে আপনি " যুদ্ধাপরাধীর ফাসির দাবী হইলো আস্তিক নাস্তিক প্রমান করিবার আন্দোলন" মনে করলেন, সে একই কারণে এবং যেহেতু লাখ লাখ মানুষের প্রতিবাদে ফুসে উঠা আন্দোলনটিকে সরকার কূট কওশলে ক্যশ করে নিজদের সামপ্রতিক তাবত অনাচার হাইড করে নিত পারলো সে আন্দোলনটিকে সরকারের পাপ মুক্তির অনুঘঠকরুপে কেউ চিন্হিত করতেওতো পারে ?
সমসাময়িকতার বিচারে অসাধারণ একটা লেখা হয়েছে যার আর একটা অংশ আসা দরকার ছিল।
বুঝছেন ?
মন্তব্য করুন