বয়ে চলা জীবন কাব্যের পান্ডুলিপি ১০
অনেকেই ছোট বেলায় অনেক কিছু হতে চায়। সব নামকরা ব্যক্তিগণ দেখা যায় ছোট বেলায় হতে চেয়েছিলেন খেলোয়াড়, বড় হয়ে হলেন বৈজ্ঞানিক । আমি নামকরা কেউ নই তাই এরকম কোন ঝামেলাও নাই। আসলে ছোট বেলায় কী যে হতে চেয়েছিলাম, তাও জানিনা। তবে নেভি অফিসার দের সাদা ড্রেস দেখে ৭ম শ্রেনীতে থাকতে নেভি তে যোগ দেবার ইচ্ছা হয়েছিল একবার। কী ধব ধবে সাদা !!!
কোন ইচ্ছা বা লক্ষ্য না থাকলেও স্কুলে থাকা অবস্থায় খাতা ভরে ফেলতাম আঁকা ঝোকা করে । গ্রাম, নদী, গাছপালা , আকাশ - এগুলোই ছিলো আঁকার বিষয়বস্তু। বরাবরই এই প্রকৃতি আমারে টানে । প্রাণহীন এই ইট কাঠের খাঁচায় দম বন্ধ হয়ে আসে ।
এইস এস সি পরীক্ষার পর চারুকলায় ভর্তির জন্য ভেবেছিলাম । কিন্তু হয়ে উঠেনি। তুমুল স্ট্রাগল করছি, জানিনা সামনে কী - সেই সময়ে বাসা থেকে আপত্তি জানানো হল । বলা হল চারুকলায় পড়লে না খেয়ে মরতে হবে । তাই চারুকলায় পড়ার চিন্তা বাদ দিয়ে ভর্তি হলাম কমার্সে। বি কম। টাকা রোজগারে নামতে হবে । ২০ বছর বয়স থেকেই কামলাগিরি শুরু করলাম।
কামলা দিতে গিয়ে বুঝলাম, ক্যারিয়ার নামক বিষয়টাই আসলে সব। টাকা কথা বলে। টাকা না থাকলে সকলে করুণা করবে । প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে টাকা ছাড়া আর কিছু চিন্তা করা যাবে না। জীবনটা বড় অদ্ভুত। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজের জীবনের, দেহের বোঝা নিজেকেই টানতে হবে।
কিন্তু এই প্রাণহীন শহরে দম বন্ধ হয়ে আসতো বলে তখন থেকেই সময় পেলেই, টাকা জমিয়ে ঢাকার বাইরে ছুটেছি। ৯৫ সালে প্রথমবার কক্সবাজার যাই। ৯৬ সালে সুন্দরবন । এরপর আর বাঁধতে পারেনি কেউ। তবে সবচেয়ে বেশী গিয়েছি কক্সবাজার। সাগর আমাকে সারাক্ষন যেন ডাকে।
প্রথাগত জীবন আমার কোনদিনই ভালো লাগে নাই। আর সবার মতন বিয়ে কর, সন্তান নাও একসময় মরে যাও - এই নিয়ম মানতে ইচ্ছা হয় নাই। নিজের মত করে চলতে চেয়েছি । পারিনি। নিজের মতন করে বাঁচা হয়ে উঠেনা। এখানে প্রতিটি পদে পদে, প্রতিটি সময়ে কম্প্রোমাইজ করতে হয় - কখনো সময়ের সাথে, কখনো পরিবারের সাথে কখনো নিজের সাথে। মধ্যবিত্ত জীবনের বড় দুর্বল দিক এটা। নিজের মতন করে কিছুই হয়ে উঠেনা।
মনের আনন্দে ঘুরি দেশের আনাচে কানাচে। এখনো সময় পেলে বের হয়ে পড়ি। সুন্দর জায়গা গুলো ক্যামেরায় ধরে রাখি। তাই বলে আমি ফটোগ্রাফার নই। আমি সুন্দরের পূজারী। যা কিছু সুন্দর, তা আমাকে আকৃষ্ট করে - তা সে ছবি হউক বা কবিতা বা গান কিংবা কোন জায়গা কিংবা কোন তৈলচিত্র ।
কথাগুলো হঠাৎ লিখতে ইচ্ছে হোল। অনেকদিন কিছু লিখা হয়ে উঠেনা । কী ই বা লিখবো । একটা আফসোস রয়ে গেল - না হতে পারলাম ব্লগার , না ফটোগ্রাফার, না ট্রাভেলার না বিশাল ধনী বা প্রভাবশালী ।
আলাদাভাবে হয়তো দেখা হবে না জীবনের কার্নিশ।
প্রথাগত জীবন ভালো লাগেনা, তার মানে এই না যে আপনার জীবন অপ্রথাগত ...
যেভাবে নিজের মত চলতেছেন তাও বা কম কি ..... অনেকে তাও পারেনা
এভাবেই সবাই নিজের মত চলতে চলতে, নিজের মত করে জীবনের মানে খুজে নেয় হয়তো .......
হয়তো ।
ভাববেন না উপদেশ দিচ্ছি। অনেক ভাল আছেন। নইলে এত সুন্দর লিখতে পারতেন না। সুন্দর মন না থাকলে সুন্দর লেখা হয় না। সন্তুষ্ট চিত্তই সকল সুখে সুখি। আর সব কিছুই তো চলে প্রথাগত। যেমন আপনার ট্রায়াল বেলেন্স। ভাল থাকবেন। সুখী হউন।
সেইটাই। প্রথার বাইরে যাওয়া যায়না সহজে। আর ট্রায়াল ব্যলান্স মিলে নাই এখনো, মিলানোর চেষ্টায় আছি।
সুন্দর ভাবে নিজের কথাগুলো বলা!
নিয়মিত লেইখেন ভাইয়া!
দিন দিন অলস হয়ে যাচ্ছি, লেখা হয় না ।
ছোটবেলায় কটকটিওয়ালা অনেক খাতা বই এর বিনিময়ে সামান্য ছোট টুকরা দিত তাই তখন মনে মনে ছাইতাম বড় হয়ে কটকটিওয়ালা হব আর ইচ্ছা মত খাবো। সেটা আর হওয়া হয় নাই। কিন্তু এটুকু বুঝেছি স্বাধীন জীবনের মজাই আলাদা। অনেক আরাম, শান্ত'র মত সেইরাম আরাম।
ভাল লাগ্লো আপনার লেখা। চালিয়ে যান।
ঠিক। একা জীবনের মজা আলাদা ।
নিজের কথা এত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন দেখে ভাল লাগল। কোন জড়তা নেই ,নেই বাহুল্য এটাই আপনার লেখার বৈশিষ্ট্য।
ধন্যবাদ আপু।
ব্লগার আর ফটোগ্রাফার অলরেডি ভালোই হইয়া গেছেন,
মনের বাকি ইচ্ছাগুলাও আস্তে আস্তে পুরা হইয়া যাইবো ইনশাল্লাহ!
দু কলম লিখলেই লেখক হওয়া যায়না । দুটো কী চাপলেই ব্লগার হওয়া যায়না। ক্যামেরা টিপলে ফটোগ্রাফার হওয়া যায়না ।
এর জন্যই জীবনে আর কিছু হইতে চাই না ... এই বেশ ভালো আছি
যা হইছেন কম না। চালায়ে যান।
ছোটবেলায় রাজশাহী নিউমার্কেটের মেট্রো কনফেকশনারীর মালিক হতে চেয়েছিলাম তাহলে ফ্রী ফ্রী গ্লাস কেক, ফানটা খেতে পারতাম এই আশায়। আরেকটু বড় হওয়ার পর বইপত্রের মালিক হতে চেয়েছিলাম তাহলে দোকানের সব বই পড়ে ফেলতে পারবো এই আশায়।
কিন্তু যা জীবনে যা হয়েছে বা হচ্ছে তা কোনদিনও হতে চাই নাই।
একটা সময় যাবার পর আর কিছু হতে চাওয়ার ইচ্ছা টা চলে গেছিলো। কোন মতে বেঁচে থাকতে পারলেই হয় - এই ভেবেই দিন গেছে। এখন আর কিছু হবার ইচ্ছা নাই।
প্রাসঙ্গিক একটি লিখা http://www.amrabondhu.com/aajad/4867
আপনারই জন্য...
এই লেখা পড়েছি তো , কমেন্টও করেছি । থ্যাঙ্কু আবার শেয়ার দেবার জন্য ।
আমার ইচ্ছা ছিলো আর কিছুই না, পাইলট হওয়ার। কিভাবে কোত্থেকে এ ইচ্ছা মাথায় চেপেছিলো জানি না কিন্তু অনেকদিন পর্যন্ত ইচ্ছেটা আমায় তাড়িয়ে নিয়ে বেড়িয়েছিলো মনে আছে।
পাইলট হইলে আপনার লেখা থেকে বঞ্চিত হইতাম তখন।
আপনার সাথে আমার বেশ মিল আছে দেখছি। আমারও ছুডুবেলায় চারুকলায় ভর্তির ইচ্ছা হয়েছিল, বাসার সবাই মিলে মাথা থেকে সেই ভূত তাড়িয়েছে। আর্কিটেক্ট হবার ইচ্ছা আছিল, হওয়া হয়নি কারণ বাসার সবাই চাইলো আমাকে ডাক্তার বানাবে, শেষ পর্যন্ত তাও হওয়া হয়নি। কিছুই হতে পারিনি, তাই আফসোসের আর শেষ নেই!
আপনার শেষ কথাডা খুব মনে ধরছে-
বাহ আমাদের তো অনেক মিল
যা চাই তা পাই না, আর যা পাই ভুল করে পাই!
ভাবি যে চাওয়াটাই ছেড়ে দিবো, চাইলেই হারাই। তাই যা আসে তাতেই মানিয়ে নেবার চেষ্টা করে যামু! (ইচ্ছেগুলোরে কেবল দারুন করে দুমড়ে নষ্ট করে ফেলতে পারলেই কেল্লা ফতে করতে পারতাম )
দারুণ বলেছেন। ইলিশ নিয়ে লিখতে শুরু করেছিলাম। আলসেমি তে আর লেখা হয় নাই। দিন দিন অলস হয়ে যাচ্ছি ।
ইলিশ নিয়ে ব্লগটা লিখে্ন, সাথে কিছু তথ্য, আপনার চলতি পথে আর কি কি দেখলেন জানলেন মজার/বিরক্তিকর - ইত্যাদি মিলিয়ে অবশ্যই চমৎকার ব্লগ হবে সেটা।
বিয়ে করতে পারতেছেন না সেইটা বলেন, না আংগুর ফল টক
হ, চাচী বুঝছে
মন্তব্য করুন