স্মৃতিকাতরতা - ০২
যেদিকেই তাকাইবেন , দেখিবেন গান বাজিতেছে , মুভি চলিতেছে। হউক সে মোবাইলে, ল্যাপটপ কিংবা ডেস্কটপ । ইন্টারনেট হইতে ডাউনলোড করিয়া সকলে চালাইতেছে । আর ডাউনলোড না করিলে সিডি ক্রয় করিয়া গান শুনিবে না হইলে মুভি দেখিবে। এই যুগের ছেলেপুলে সিডি, ডিভিডি এসবের নাম জানিলেও ক্যাসেট/ফিতা ইত্যাদির নাম হয়তো নাও শুনিতে পারে, কিন্তু আমাদের বয়সী কেহ ক্যাসেট বা ফিতা শুনিবে না - তাহা অবিশ্বাস্য । সে অডিও ক্যাসেট হউক কিংবা ভিডিও ক্যাসেট।
আজিকে এই ক্যাসেটের কথা কহিতেই আসিয়াছি। তখন ছিল রেডিওর যুগ। সকলেই শুনিতেন রেডিও। তাহা লইয়া কিছু কথা আগেও কহিয়াছি। বিজ্ঞাপণ তরঙ্গ লইয়া একবার লিখিয়াছিলাম । সে সময় রেডিওর পাশাপাশি চলিতো ক্যাসেট বা টুইন ওয়ান। একখানা বাটন চাপিলে ক্যাসেট ঢুকাইবার চেম্বার খটাস করিয়া খুলিত, তারপর তাহার ভিতরে ক্যাসেট ভরয়া চাপ দিয়া লাগাইয়া প্লে বাটন চাপিতে হইতো।
এখনকার যুগে পরের গান বা আগের গানটিতে কত না সহজেই যাওয়া যায়, >> কিংবা << চাপিলেই পরের গান বা আগের গান চলিতে শুরু করে। ক্যাসেট এর যুগে উহা এত সহজ ছিল না। গান চালানো অবস্থায় পরের গান শুনিতে চাহিলে >> বাটন চাপিয়া ধরিলে কিচির মিচির করিয়া গান গুলি ফরয়োয়ার্ড হইত বটে, কিন্তু তাহাতে নাকি হেড ক্ষয় হইয়া যাইতো বলিয়া অফ করিয়া ফরয়োয়ার্ড বা >> বাটন চাপিয়া করিতে হইতো। তাহাতে দেখা দিত আরেক বিপত্তি। পরের গান খানিক আগাইয়া যাইতো না হইলে উহা জায়গা মত আসিতো না । ফলে আবারো << কিংবা >> বাটন চাপিয়া মনমতো স্থানে আনিতে হইতো। >> বাটন চাপিয়া ধরিয়া রাখিয়া কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করিয়া অতঃপর পরের বা আগের ট্র্যাকে যাইতে হইতো। নিমিষেই তাহা আর যাইতো না, বর্তমানের ন্যায়।
এ তো গেল স্বাভাবিক ভাবে গান শুনিবার কথা। যেটা না বলিলেই নহে, তাহা হইলো তখন বড় উপদ্রপ ছিলো ক্যাসেটের হেডে ফিতা পেঁচাইয়া যাওয়া। গান শুনিতে শুনিতে হঠাৎ করিয়া গান বন্ধ । চেম্বার খুলিয়া দেখি ফিতা পেঁচাইয়া গিয়াছে। অতঃপর সাবধানে টানিয়া ফিতা বাহির করিতে হইতো। কপাল সুপ্রসন্ন থাকিলে না ছিঁড়িয়া বাহির হইয়া আসিতো। না হইলে উহা ছিঁড়িয়া বাহির করিতে হইতো। অতঃপর ছেঁড়া অংশে টেপ লাগাইয়া আবার শুনিতে আরম্ভ করিতে হইতো। তাহাতে গানের কয়েকটি শব্দ বা কয়েকটি লাইন কাটিয়া যাইতো, কিন্তু গান তো শুনিতে পারিতাম।
এম পি থ্রি ছিলো না তখন, ইন্টারনেট ছিলো না । গান ডাউনলোড করিয়া শুনিবার ব্যবস্থা ছিলো না। ক্যাসেট ক্রয় করিয়া না হইলে রেকর্ড করিয়া শুনিতে হইতো। নতুন ক্যাসেট বাহির হইলে মহা আনন্দে কিনিয়া আনিতাম। অথবা দোকানে দিয়া আসিতাম রেকর্ডিং করিতে। তখন এলিফ্যান্ট রোডে সুর কল্লোল নামে রেকর্ডিং এর দোকান ছিল, গিতালী নামের আরেক খানা দোকান ছিল বাংলা এবং ক্যাসিকাল গানের জন্য। ইংরেজী গানের জন্য ছিলো রেইনবো । সুর কল্লোলে এখন আজিজ মার্কেটে। তাহাদের সহিত পরিচয় আমার সেই ৯২/৯৩ সাল হইতে। স্থানীয় দোকানে রেকর্ডিং করিতে গেলে হইতো আরেক বিপত্তি। আপনি হয়তো পছন্দ মতন লিস্ট দিলেন রেকর্ডিং করিতে। কিন্তু দোকানদারের কাছে গান সব নাই, সে তখন তাহার ইচ্ছা মতন গান গুলা দিয়া ক্যাসেট বানাইয়া আপনাকে দিবে। অথবা ইচ্ছা মতন গান গুলো বসাইবে। এইসব কারণেই আমি সুর কুল্লোল অথবা গিতালী হইতে রেকর্ড করাইতাম । আর গাউছিয়া মার্কেটের বিপরীতে গানের ডালি হইতে কিনিতাম এইস এম ভি এর ক্যাসেট। গান রেকর্ড করিবার জন্য আরেকটি উপায় ছিল রেডিও তে বাজানো গান রেকর্ড করিয়া রাখা। অথবা ক্যাসেটের রেকর্ড বাটন চাপিয়া কথা বা গান রেকর্ড করা। এইভাবে একদা আমার নানীর কন্ঠে কয়েকটি হিন্দী গান রেকর্ড করিয়া রাখিয়াছিলামএকটি ক্যাসেটে। উক্ত ক্যাসেটখানা অবশ্য হারাইয়া গিয়াছে।
তবে তখন ক্যাসেটের হেডে ময়লা জমিলে শব্দ ভালো আসিতো না, শো শো করিয়া শব্দ হইতো গানের সাথে সাথে। প্রত্যেক ঘরে ঘরে তখন ক্যাসেটের হেড পরিষ্কার করিবার যন্ত্র থাকিতো। সূতির কাপড়ে স্যাভলন বা আফটার সেভ লোশন লাগাইয়া কিছুদিন পর পর হেড পরিষ্কার করিতে হইতো। আর ক্যাসেটের সহিত কাঠ পেন্সিলের ছিলো অন্তরঙ্গ সম্পর্ক । ক্যাসেট ঘুরাইতে কাঠ পেন্সিলের ন্যায় সুন্দর বিকল্প আর কিছু ছিলো না সে সময় । না হইলে আঙ্গুল ঢুকাইয়া ঘুরাইতে হইতো।
এ তো অডিও ক্যাসেট। এরপর আসিলো ভিডিও ক্যাসেট। ভি সি পি বা ভি সি আর। ঘরে ঘরে সে সময় ভি সি পি ভাড়া করিয়া মুভি দেখিতো। গলির দোকান হইতে ভি সি পি ভাড়া করিয়া, সারা রাত জাগিয়া , ৩/৪ খানা ভিডিও ক্যাসেট ভাড়া করিয়া চলিতো ফিল্ম উৎসব। এভাবেই হিন্দী মুভি প্রবেশ করে আমাদের ঘরে ঘরে - ভি সি আর / ভি সি পি এর কল্যাণে। আর ঘরে মুরুব্বী না থাকিল কিংবা কোন গোপন স্থানে ছেলেপুলে আরেক রকমের মুভি আনিতো, সে কথা না হয় নাইই কহিলাম। শুনিয়াছি তখন গ্রামে গ্রামে ভিসিআর দিয়া টাকার বিনিময়ে সিনেমা দেখানো হইতো।
ভি সি আর ভিসিপি তেও ক্যাসেটের ফিতা পেঁচাইত , হেড পরিষ্কার করিতে হইতো। অডিও ক্যাসেটের ন্যায় উহার দৃশ্য টানিতে হইতো।
এখন কত সুন্দর, কত সহজেই সকলে মুভি দেখে। ডিভিডি প্রিন্ট , ব্লু রে প্রিন্ট। সিনেমা তে ঝিরি ঝিরি নাই, আটকাইয়া যাইবার ভয় নাই। কি সুন্দর শব্দ বাহির হয় । আহা !! কোথায় হারাইলো মায়াময় সে সব কষ্টের দিনগুলি !!
ক্যাসেট বানানগুলো একেক জায়গাতে একেকরকম হয়েছে ঠিক করে দেন। পোস্ট পড়ে জাবর কাটলাম কিছুক্ষন। সেই আমলের একটা ক্যাসেটের ছবি দিয়ে দিলাম।
ক্যাসেট বানাম্ভুল ধরায়ে দেবার জন্য ধইন্যাপাতা।
ক্যাসেটের ছবি দেখে আমিও জাবর কাটলাম কিছুক্ষন।
আহা! উক্ত লেখা খানা পড়িয়া নিজেকে বড়ই বড় বড় বোধ হইতেছে!
খাসা হচ্ছে এই সিরিজখানা।
অভিবাদন জানিবেন।
অভিবাদন জানিলাম
কত কি মনে করাইলেন। রেডিও শোনার সেই দিনগুলি কি যে অপূর্ব!! এখনকার পোলাপান কিছুই বুঝলো না। আহা!
আর ক্যাসেট কেনার সেই আনন্দ এই যুগ কেড়ে নিলো। সিডি তো লোকে কিনে না তেমন। ভিসিআর এ সিনেমা দেখা ছিলো আরেক উত্তেজনা। এই যুগে আন্দ আর কই!!! ইন্টারনেট সব খেয়ে ফেললো। ফিলিং গুড স্ট্যাটাসই দেওয়া যায় কিন্তু ফিলিংগুলা তো হারিয়েই যাচ্ছে।
ভাগ্যিস অভিজ্ঞতাগুলি আমারও আছে।
ক্যানো ইকোনো বলপেন।
ইকোনো বলপেন থেকে পেন্সিলে বেশী সুন্দর ঘুরানো যেত । পেন্সিল টা বেস্ট।
আপনে তো অভিজ্ঞ লুক
যথারীতি জবাব গায়েব
ভেবেছিলুম এই পয়েনটখানা আমি লিখিব, কিনতু বিধি বাম
আগে আমি আপনার ফ্যান ছিলাম, এই সিরিজের পর হইতে এসি হয়ে গেলুম
বাহ্ । আমার বেডরুমে একটা এসি লাগানো দরকার
ফিতা প্যাচ লেগে গেলে কেটে স্কচটেপ দিয়ে জোড়া দেয়া।
ফিতায় স্কচটেপ কত যে লাগিয়েছি আপু
একটা ক্যাসেটের দাম ছিল ৩৫ টাকা। যদি ৪৫ মিনিটের হয় তবে ৯০ টাকা। তখন টিভি দেখাই ছিল কষ্ট সাধ্য তায় আবার সিনেমা দেখা ভিসি আর বা ভিসিপিতে। আহা সেই টাই ভাল ছিল। কষ্ট সাধ্য প্রাপ্তিতে সুখ বেশি।:(
আসলে, সেটাই ভালো ছিলো, সেই সব দিন ।
vai floppy disk drive er sriti kotha likhien na. koto dukkher din jey silo, shei dinguli
আরেকদিন হবে
সন্ধ্যা সাড়ে সাত বা আটটার সময় ছিল সৈনিক ভাইদের জন্য অনুষ্ঠান দূর্বার। আর রাত ১১টায় অনুরোধের আসর। যে আসরে প্রায় প্রতিদিন বাজানো হতো ---বাতায়নে কেন এসেছিলে সেই দিন উত্তাল তরংগ অঙে নিয়ে -----খুব ভাল লাগতো গান টা এখন আর পাই না।
এখন এফ এম রেডিও শুনবেন, আরজে দের উদ্ভট উচ্চারনে ভরা অনুষ্টান
পুরাই অস্থির!
থ্যাঙ্ক্যু
দিলেন তো পুরনো কথা মনে করিয়ে!
ছাত্রজীবনেও আমারও অনেক ছাত্র ছিল, সেই উপার্জনের একটা মাসিক বাজেট ফিক্সড ছিল বই কেনা আর ক্যাসেট রেকর্ডিং এর জন্য। গানের ডালি, সুরমেলা, গিতালী, রেইনবো- কত জায়গা থেকে রেকর্ডিং করিয়েছি! ক্ল্যাসিক্যাল থেকে শুরু করে ব্যান্ড সবই ছিল তালিকাতে, ২০ বছর আগের পুরনো ক্যাসেটগুলোও অনেক যত্ন করে রেখে দিয়েছি।
আমিও টিউশনি করায়ে সেই বেতন দিয়া অন্ততঃ একটা ক্যাসেট কিনতাম
জব্বর হইছে!
বেগম বাজারে " অস্থির ফিল্ম " দেখান হইত ভি সি আর এ দম বন্ধ করা গুমোট বন্ধ ঘরে। সেই ঘরে ট, ভি থাকতো , সেখানে ভি সি আর থাকতো না। সেটা থাকতো অনেক দূরে , পুলিশের চোখের অন্তরালে
অনেক জায়গাতেই হইতো এরাম দম বন্ধ করা গুমোট বন্ধ ঘরে , এমনকি নিজের ঘরে দেখার সময়েও
মন্তব্য করুন