স্মৃতিকাতরতা - ০৩
যে দিকে দেখিবেন - সেদিকেই ক্যামেরা । মোবাইলে ক্যামেরা , ডিজিটাল ক্যামেরা, সিসিটিভি'র ক্যামেরা , ওয়েব ক্যাম ইত্যাদি ইত্যাদি ক্যামেরায় সয়লাব । হরদম ছবি তুলিতেছে সবাই। সেই ছবি কত ভাবেই না দেখিতে পাইতেছে সকলে ।
এ যুগের ছোকড়ারা জানেই না আসল ছবি তুলিবার মজা কী। তাহারা হাতের কাছে যাহা কিছু পাক না কেন , খটাস করিয়া ছবি তুলিবে তাহা দিয়া। শুনিয়াছি কেহ কেহ নাকি শৌচাগারের গিয়াও ত্রিশ খানেক ছবি তুলিয়া আসে।
তাহারা জানিলো না ৩৫ বা ৩৬ টি ছবি গুনিয়া গুনিয়া তুলিতে হয়, ছবি তুলিবার পর তাহা আবার নেগেটিভ আকারে বাহির করিতে হয় , উক্ত নেগেটিভ দেখিয়া আবার ভালো ছবি বাছিয়া তাহা ওয়াশ করিতে হয় । এই যুগের ছেলেপুলে 'রিল' ক্রয় করিবার মজা বুঝিলো না। রিল খানা ক্যামেরায় ঢুকাইয়া একটু টানিয়া অপর প্রান্তের ছোট আংটার সহিত লাগাইয়া দিতে হইতো। শুনিয়াছি অনেকেই কিপটামি করিয়া অল্প করিয়া লাগাইতো , যেন উক্ত 'রিল' হইতে বেশী ছবি তোলা যাইতে পারে। তাহার ফলে দেখা যাইতো অনেক সময়, শাটার চাপিছে ঠিকই কিন্তু রিল ঘুরিয়া অপর প্রান্তে যায় নাই আর। কক্সবাজার ঘুরিয়া আসিয়া দেখিতো, তাহার রিল খানি পুর্ব স্থানেই রহিয়া গিয়েছে, ছবি আর উঠে নাই। কোথাও যাইতে হইলে ২/৩ টা রিল ক্রয় করিয়া সাথে লইয়া যাইতে হইতো। ১০০ বা ১১০ টাকা দিয়া কিনিতাম তখন। রিল রাখিবার সাদা কৌটা টা আমার বেশ পছন্দের ছিলো। সেই সময় ১০০ টাকা দিয়া রিল ক্রয় করা বিশাল ব্যাপার ছিলো আমাদের নিকট।
যদিও বা রিল ঘুরে, তথাপি ছবি নষ্ট করা যাইবে না। যেন ৩৫/৩৬ টির মধ্যে সবগুলিতেই ছবি আসে। কোনক্রমে যদি দেখা যাইতো ৩৬ টি ছবি তোলা গিয়েছে, তাহা হইতে খুশীর সংবাদ আর কিছু ছিলো না !!! ক্যামেরায় রিল ভরিবার কালে যেন অধিক আলো না প্রবেশ করে - খেয়াল রাখিতে হইতো। আবার ছবি তোলা শেষ হইলে ঘুরাইয়া ঘুরাইয়া সেই রিল গুলা পুর্বের স্থানে লইতে হইতো। কপাল খারাপ থাকিলে তখন উহা ছিঁড়িয়াও যাইতো আবার। আর সাধারনতঃ উহা ছিঁড়িত না। পুরোটাই ঢুকিয়া যাইতো রিলের বাক্সে। অতঃপর উক্ত রিল এর বাক্স (case) সাদা কৌটায় ভরিয়া পরে স্টুডিও তে গিয়া দিয়া আসিতে হইতো নেগেটিভ বাহির করিবার জন্য।
নেগেটিভ বাহির হইয়াছে ? এইবার উহা আলোর দিকে ঘুরাইয়া ধরিয়া দাঁড়াইলে যে ভূত ভূত টাইপের যে ছবি দেখা যাইতো, উহা দেখিয়াই আন্দাজ করিয়া লইতে হইতো - ছবি কেমন হইবে। তাহার পর চাইলে সকল ছবি অথবা যে কয়টা ইচ্ছা - ওয়াশ করিতে দেয়া হইতো। নেগেটিভ এ ২ রকমের নাম্বার দেখিতাম - 1 অথবা 1A - এরূপ । নাম্বার বুঝিয়া প্রিন্ট করিবার অর্ডার। এরকম গোটা বিশেক নেগেটিভ অদ্যবধি রহিয়াছে আমার আলমিরা তে ।
3R অথবা 4R ছিলো সাধারন মাপ - ওয়াশ বা প্রিন্ট করা ছবির। তবে 3R এ সকলেই ছবি প্রিন্ট করিতো। ইহাতে মনে হয় ৩ ইঞ্চি লম্বা প্রিন্ট করা ছবি পাওয়া যাইতো।
যাহা কহিলাম - তাহা অল্প কয়েকদিন আগের কথা। তাহার পুর্বে নেগেটিভে নাকি পেন্সিল দিয়া আঁকিয়া লইতো। অতঃপর তাহা ডার্ক রুমে লইয়া এসিড মিশ্রিত পানির ভিতরে চুবাইয়া নেগেটিভ হইতে কাগজে ছবি বাহির করিয়া আনিতো। পরে ঐ কাগজ শুকাইতে দিতো। এমন এক ডার্ক রুমে যাইয়া ছবি ওয়াশ করা দেখিবার সৌভাগ্য হইয়াছিল। ডার্ক রুম এ সবুজ রঙের ডিম লাইট জ্বলিতে দেখিয়াছি অবশ্য।
৮০/৮১ সালের দিকে যখন ঢাকায় নতুন নতুন স্টুডিও শুরু হইলো, তখন মা আমাদের কে লইয়া স্টুডিও তে গিয়ে ছবি তুলিতেন কয়েক মাস পর পর। ৪ কোনা একখানা বাক্স, উপর হইতে তাকাইয়া দেখিতো ক্যামেরাম্যান। আমাদের ২ পাশে বিকট আলোর ব্যবস্থা , পিছনে তাজমহল এর ছবি অংকন করা । তাহার সম্মুখে বসিয়া আমরা ছবি তুলিতেছি। অথবা পিছনে পর্দা দেয়া, আমরা সম্মুখে বসিয়া । সেই ছবির মাপ ছিলো আলাদা । তাহা সাদা কালো ছবি হইয়া আসিতো আমাদের হাতে।
সাদা কালো ছবি হইতে পরে রঙীন ছবি , তাহার পর ডিজিটাল। এখন বিশেষ প্রয়োজন না হইলে প্রিন্ট করিতে হয় না ছবি। মোবাইলে দেখি, কম্পিউটারে দেখি - চারিদিকে শুধু ছবি আর ছবি।
এত ছবির ভীড়ে সেই ছবি আর নাই। তাই পুরনো এলবাম খুলিয়া দেখি মাঝে মাঝে । আমার বাবার দাদার ছবি আমার বাবা সংগ্রহে রাখিয়াছিলেন, সেই আমলের ছবি হইতে আমার ভাগ্নে ভাগ্নির ছবি - এলবাম খুলিয়া দেখি।
[প্রিয় তানবিরা আপু কে লেখাটি উৎসর্গ করিলাম, যে না খোঁচাইলে এই পর্ব আর লেখা হইতো না]
আমার কাছে এখনও আছে সেই কোডাক ক্যামেরা। আহা কি সেই ছবি তোলার আনন্দ। ডেভেলপ করতে লাগতো ২৫ টাকা,ছবি ওয়াস করতে ১০ তারপর কমে হল শেষ পর্যন্ত ৭ টাকা। এর কম হলে সেই ছবি বেশি দিন টিকত না। ফিল্ম কিন্তে লাগতো ১১০ কি ৯০ টাকা।
সেই সময় ছবি তোলা মানে খালি টাকার হিসাব করতে হত।
আহা! আরেকখানা চমত্কার স্মৃতিজাগানিয়া লেখা! গরজিয়াস!
অসাধারণ বস অসাধারণ।
শুধু স্টুডিও আরো আগে থেকেই ছিল বস, আমার বাবা মায়ের বিবাহ পরবরতী সাদা কালো ছবি আছেতো। কাতান শাড়ি পরা আর অনেক সেই বিয়ের গয়না পরা আর বাবা স্যুট পরা সাথে
জোশ লেখা!
সবাইকে ধন্যবাদ। চার চারটি কমেন্ট পেয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে এই লেখা। এইজন্য আবারো ধন্যবাদ ।
মজা নেন তাই না সাঈদ ভাই? কমেন্টা সংখ্যা যাই হোক, লেখাটা আসলেই চ্রম হইসে। সুপার্লাইক।
মজা আর কই নিলাম ভাই।
চমত্কার স্মৃতিজাগানিয়া একটা লেখা
পথিক নিজের কাজ করিয়া যাও
ফলের আশা কভু না করিও
আসলে বলতে চেয়েছি , শুধু আমার লেখায় না, ব্লগেই কমেন্ট এত কম !!
ভাল ছেলেমেয়রা পড়াশোনা করে আর দুষটুরা ফেবু। ভালোরা অলওয়েজ সংখ্যায় কম
আপনে নিজেওতো বিদ্যালয়ে আসেন না ধরতে গেলে
শুনিয়াছি কেহ কেহ নাকি শৌচাগারের গিয়াও ত্রিশ খানেক ছবি তুলিয়া আসে।
অবসর সময়ে এলবাম ঘেটে ছবি দেখার আলাদা আনন্দ।
লেখা অনেক ভাল লাগল।
শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ আপু ।
এই অভিজ্ঞতা আমার হইছিলো সেন্টমার্টিন ঘুরে এসে।
আপনে একটা জিনিস! কেমনে এত্তকিছু মনে রাখেন?সব এক্কেরে খাপে খাপ মিলে যায়। নীচতালার উনার বিরানী খেয়ে প্রতিভা তো খুলতেছে দিন দিন
নীচতালার উনার বিরানী খেয়ে প্রতিভা তো খুলতেছে দিন দিন
নিচতলার বিরানীর প্রতি আপনারা এত জেলাস কেন ? একা অসহায় যুবক বলে একটু পাঠায়। আপনাদের দিলে পেয়ার মহব্বত কিছুই নাই দেখি। আপনারাও কি ডাকতে পারতেন না ?
মন্তব্য করুন