পর্ণোগ্রাফিক প্রোফাইল
আইজ্যাক অসিমভের ৩ খন্ডের ফাউন্ডেশন সিরিজ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো ১৯৫১-৫৩ সালে। ফাউন্ডেশনের প্রধান চরিত্র হ্যারি সেলডন " সাইকোহিস্টোরিক্যাল সমিকরন" সমাধান করে গ্যালাকটিক এম্পায়ারের উত্থান- বিস্তার এবং পতনের ভবিষ্যতবানী করেছিলেন।
সাইকোহিস্টোরিক্যাল এনালাইসিসের শর্ত বলছে একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডের সকল মানুষের সামষ্টিক ব্যবহার বিশ্লেষণ করে ঐতিহাসিক বাস্তবতা বিশ্লেষণ করে সে মানবগোষ্ঠীর ঐতিহাসিক বিবর্তনের সম্পর্কে নির্ভুল ভবিষ্যতবানী করা সম্ভব। বৈজ্ঞানিক কল্প উপন্যাসের এই ধারণার সফল প্রয়োগ করেছে কেমব্রিজ এনালাইটিকা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ করে ব্যক্তিনির্ভর প্রচারণা কৌশল প্রয়োগ করে তারা দুটো ভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংযুক্ত মানুষ যৌক্তিক চিন্তাবিবর্জিত একটি জড়পিন্ড যে তার নিউজফিডের বিভিন্ন তথ্যে আলোড়িত- প্রভাবিত-উত্তেজিত এবং বিমর্ষ হয়। উত্তেজনা, ক্ষোভ- আতংক এবং বিষন্নতার নানামাত্রিক প্রয়োগে সেসব মানুষকে সহজেই প্রভাবিত করা সম্ভব।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনী ইশতেহারে কাল্পনিক এবং বাস্তবিক শত্রু-বন্ধু নির্দিষ্ট করা, নানামাত্রার সংকটকে চিহ্নিত করে সেসবের কৌশলগত সমাধানের প্রতিশ্রুতি এক ধরণের প্রতারণামূলক আচরণ হলেও নির্বাচনী ইশতেহার সকল ব্যক্তির জন্যেই একই রকম, এখানে ব্যক্তিগত অনুভুতিকে উদ্দীপ্ত করে প্রতারণার বিষয়টা অনুপস্থিত। সে কারণেই ইশতেহারনির্ভর নির্বাচনী প্রচারণার বিষয়টাকে অপরাধ অপরাধ সব্যস্ত করা হয় নি।
কেম্ব্রিজ এনালাইটিকা প্রমাণ করেছে ব্যক্তির অন্তর্জালিক উপস্থিতি বিশ্লেষণ করে তার প্রত্যাশা চিহ্নিত করে তার আচরণ প্রভাবিত করা সম্ভব। একই প্রক্রিয়ায় আসলে প্রতিটি ব্যক্তির অন্তর্জালিক আচরণ বিশ্লেষণ করে তার বিকৃতি এবং তার অপরাধপ্রবনতাও চিহ্নিত করা সম্ভব।
আমার ব্যক্তিগত অনুমান যদি কোনো প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের কোনো জেলা শহরের সকল ব্যক্তির পর্ণোগ্রাফিক ওয়েবসাইট ভ্রমন এবং সেখানে তাদের দেখা ছবি এবং ভিডিওগুলোর তালিকা করা সম্ভব হয়, শুধুমাত্র জিঘাংসু, অত্যাচার কিংবা নির্যাতনপ্রবন ভিডিও দেখা মানুষদের পরিমাণের সাথে সে জেলার যৌনসন্ত্রাসের পরিমান সমানুপাতিক হবে। যারা এই ধরণের নির্যাতনমূলক যৌনতার দৃশ্য দেখছে, তাদের সবাই যে রাস্তায় নেমে এই ধরণের অপরাধ ঘটিয়ে ফেলবে এমন না, কিন্তু তাদের একটা অংশ প্রাথমিক অসস্তি কাটিয়ে ব্যক্তিগত জীবনেও তাদের প্রত্যাশা পুরণ করতে আগ্রহী হবে।
ধর্ষণ সে অর্থে যৌনকাতর মানুষের যৌনচাহিদা নিবৃতির প্রচেষ্টা না। তারা পর্ণোগ্রাফিক ভিডিও দেখে, রাস্তায় কোনো নারীকে দেশে উত্তেজিত হয়ে হিতাহিত বোধশূন্য হয়ে এমন অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে না। ধর্ষণের সাথে যৌনপরিতৃপ্তির যোগাযোগ কম, বরং একজনকে ভেঙেচুড়ে বিধ্বস্ত করে নিজের ক্ষমতার দম্ভের আত্মতৃপ্তি পাওয়ার বিষয়টা প্রধান। যারা নারী কিংবা দুর্বল প্রতিরোধঅক্ষম মানুষের দেহকে নিজের ক্ষমতা চর্চার উপকরণ হিসেবে ভাবছে, সেই মানুষগুলো ব্যক্তিগত নির্জনতায় রেপপর্ণ দেখছে। এমনটাও সম্ভব যে এই মানুষগুলো অত্যাচারমূলক যৌনতার ভিডিও দেখছে।
মানুষের ভাবনার বৈচিত্র সীমাহীন। জাপানে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের একাংশ রেপম্যান কমিকের ভক্ত। রেপম্যান কমিকের উপর ভিত্তি করে অন্তত ৪টা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচিত্রও হয়েছে। কামারের কাছে যেমন সকল সমস্যার সমাধান হাতুড়ির একটা বাড়ি, রেপম্যান কমিকের প্রধান চরিত্রের ক্ষেত্রে সকল অপরাধপ্রবন মানুষকে অপরাধনিবৃত করার একটাই সমাধান তাকে ধর্ষণ করা।
ঢাকা শহরে ভাসমান যৌনকর্মীদের একটা অংশ গত কয়েকবছরে বীভৎস সহিংস যৌনতার ভুক্তভোগী হয়েছে, এবং কয়েকজন সহিংস নিপীড়নমূলক সংঘবদ্ধ যৌনতায় খুন হয়েছেন। এদের অধিকাংশই নিছকই নির্যাতিত, তাদের উপর যে অত্যাচার হয়েছে সেটা বিচারের কোনো উৎসাহ পুলিশের নেই। সামাজিক ঘৃণা এবং নিগ্রহের বাস্তবতাটুকু বিবেচনা করলে এটাই অত্যান্ত স্বাভাবিক পরিণতি।
বিটিআরসি, মোবাইলফোন কোম্পানিগুলো নিজেদের ডাটাবেজে সকল গ্রাহকের তথ্যের একাংশ সংরক্ষণ করে রাখে। কোনো একটা প্রতিষ্ঠান এই সকল ডাটা বিশ্লেষণ করে অন্তত অপরাধমুখী কয়েকহাজার মানুষকে চিহ্নিত করতে পারবে। তাদের উপরে নিয়মিত নজরদারি করলে ধর্ষণ হত্যাজনিত অপরাধগুলো নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। অবশ্য সফটওয়্যার পোষ মানানোর একটা বিষয় থাকে। সহিংস যৌনতা কিংবা ধর্ষনজনিত অপরাধে অভিযুক্ত মানুষদের পর্ণোগ্রাফিক প্রিফারেন্স যাচাই করে ধর্ষণপ্রবন মানুষের পছন্দনীয় ট্যাগলাইনগুলো খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
কোনো রকম বিধিনিষেধ না থাকলে এবং পর্যাপ্ত অবসর এবং নির্জনতা পেলে মানুষ পর্ণোগ্রাফিক ওয়েবসাইটে নিজের মানসিক চাহিদার সাথে মানানসই ভিডিও খুঁজে দেখবে। বাণিজ্যিক পর্ণোগ্রাফি ভিডিওগুলোর ট্যাগ লাইন দেখে নিশ্চিত বলা যায় অন্তত মানুষের যৌনআকাঙ্খানিবৃতির উপকরণ এবং পছন্দনীয় যৌনসঙ্গী নির্বাচন বিষয়ক ভাবনাগুলো সরল-স্বাভাবিক ছক মেনে চলে না। যেহেতু সম্ভব- অসম্ভব- অকল্পনীয় সকল বৈচিত্র নিয়েই বাণিজ্যিক পর্ণোগ্রাফিক ছবি নির্মিত হচ্ছে, প্রতিটি ট্যাগলাইনের নির্দিষ্ট কাস্টমার বেইজ আছে।
সেসব ট্যাগলাইনকে কয়েকটা শ্রেণীতে ভাগ করে ফেললে, এবং একই ট্যাগ লাইনের অনেকগুলা ভিডিওকে আলাদা ভাবে নজরদারি করলে বাংলাদেশের কোন কোন আইপি এড্রেস থেকে সেসব দেখা হচ্ছে- সেসবও চিহ্নিত করা সম্ভব।অফ-লাইন দুনিয়ায় কোনো চিহ্ন না রেখে হারিয়ে যাওয়া সম্ভব, বাইনারি দুনিয়ায় খুব বেশী প্রফেশন্যাল না হলে কোনো চিহ্ন ছাড়া বের হয়ে যাওয়া কঠিন।
বিবিসির একটা ডকুমেন্টারি দেখছিলাম,যেখানে উপস্থাপিকা তুরস্কের একটি বাণিজ্যিক যৌনতাবিপণনকেন্দ্রের কর্মীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলো, সেখানে একজন কর্মী জানানো এই বাণিজ্যিক যৌনতয়াবিপণনকেন্দ্রে যৌনসেবা নিতে আসা মানুষদের একদলের ফ্যান্টাসি তাদের কন্যার সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করা। তাদের কয়েকবার এই ধরণের ভূমিকায় অভিনয় করতে হয়েছে। বাংলাদেশেও কন্যাশিশুকে ধর্ষণ করা কয়েকজন বাবাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ইন্টারনেট ঘেঁটে নির্জনে নিজের যৌনকামনা নিবৃতির বিকল্প খুঁজে নেওয়া অপরাধমূলক কর্মকান্ড না। রাষ্ট্র যদি এমন ব্যক্তিগত অভিলাষপুরণের পথটাতেও টহল পুলিশ বসায় সেটা ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। যদিও অপরাধের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রনে প্রাতিষ্ঠানিক "নজরদারি"র জন্যে মহল্লায় দারোয়ান আর টহল পুলিশ হাঁটছে। মহল্লা সমবায় সমিতি নিজেরাই রাস্তায় কলাপসিবল গেট লাগিয়ে নিজেদের বন্দী করে রাখছে। সামাজিক নজরদারি, বৈধ এবং স্বীকৃত রাষ্ট্রীয় নজরদারি বিষয়ে আমাদের খুব বেশী আপত্তি নেই। এই ধরণের বৈধ নজরদারির সরঞ্জাম আমাদের ভেতরে এক ধরণের নিরাপত্তাবোধ জাগ্রত করে।
পেডোফাইল শনাক্তকরণ এবং দরিদ্র দেশগুলোতে অবাধ ইন্টারনেটের কারণে তৈরী হওয়া শিশুকেন্দ্রীক পর্ণোগ্রাফী বাণিজ্য নির্মুল করতে ৫৬টা দেশের সাইবার পুলিশ এক সাথে কাজ করছে। তারা মোটামুটি তাদের দেশের সকল নাগরিকের পর্ণোগ্রাফিক প্রিফারেন্সের তথ্য ধারণ করছে।বাংলাদেশ সেসব দেশের অন্তর্ভুক্ত না যদিও বৈশ্বিক পেডোফাইল ড্রাইভে বাংলাদেশের অন্তত একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। ।
বাংলাদেশে স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ( অনুর্ধ ১৮) যারা আসলে শিশু, তারা ধর্ষিত হচ্ছে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে আমাদের সারা দেশের নাগরিকের পর্ণোগ্রাফিক প্রিফারেন্সের হালনাগাদ তথ্য নেওয়া দরকার এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি করা জরুরি-শিশুরা সবচেয়ে দুর্বল অংশ হিসেবে তারাই এই ধরণের ক্ষমতাচর্চায় সবচেয়ে বেশী নিরাপত্তাহীন।
রাম-শ্যাম-যদু-মধু নিজের মতো পর্ণোগ্রাফি দেখুক, আমার ব্যক্তিগত আপত্তি নেই। তাদের প্রতি আমার সহানুভুতি কিংবা ঘৃণাবোধ নেই। কিন্তু যদি এই রাম-শ্যাম-যদু-মধু-রহিম-করিমদের একটা অংশ শুধুই রেপ-পর্ণ দেখে, শুধুই সহিংস যৌনতার ভিডিও দেখে, যদি চাইল্ডপর্ণোগ্রাফির ভোক্তা হয়, তাদের আমি সাম্ভাব্য অপরাধীর তালিকায় তুলে রাখবো। যদি সমাজে এমন অসংখ্য মানুষের অস্তিত্ব থাকে যারা সহিংস পর্ণোগ্রাফিক কনটেন্টে আসক্ত এবং চাইল্ডপর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত মানুষদের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখার কোনো কৌশল থাকলে আমি অন্তত সোশ্যাল লিবার্টি পার্সোন্যাল স্পেস কিছুটা ছাড় দিতে রাজি।
ভালো একটা আইডিয়া,![Smile Smile](https://www.amrabondhu.com/sites/all/modules/smileys/packs/Roving/smile.png)
লেখাটা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে পড়লে
ভালো একটা কিছুর শুরু হতে পারে।
মন্তব্য করুন