২২
আমাদের ভেতরে ভন্ডামি, ভড়ং আর নাটকীয়তার লোভ আছে ষোলো আনা। পুরোনো বাংলা নাটক সিনেমার মতো " এই তো দেখি চোখে জানি কি পরলো" ভঙ্গিতে আবেগ অনুভুতির নাটকীয় প্রকাশ নিজেকে আরও একটু সম্ভ্রান্ত প্রকাশের প্রচেষ্টা- উদলা পাছায় মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে কিস্তি টুপির বিজ্ঞাপন আমাদের দিয়েই সম্ভব।
জনআন্দোলনে রাজপথে বলিষ্ঠ শ্লোগানের মতো সফল অনবদ্য কবিতা রচিত হয়। দুর্ভিক্ষ আর অনাহারের পটভুমিতে নির্মিত হয়েছে সুকান্তের শাণিত শ্লোগানের মতো কবিতা ।৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের গর্ভে জন্মেছে হেলাল হাফিজের এখন যৌবন যার মিছিলে যাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময়। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের রাজপথে জন্মেছে রুদ্রের কবিতা। কণ্ঠে কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে। এমন শ্লোগান ধর্মী কবিতায় আত্মউন্মোচনের মতো মগ্নতা নেই, শব্দের কারুকার্য নেই। সকল শ্লোগানেই ব্যক্তিগত দৃঢ় উপলব্ধি উচ্চারণের স্পষ্টতা আছে। সাম্প্রতিক আন্দোলনের প্লাকার্ডে লেখা
হয়নি বলে আর হবেনা আমরা বলি "বাদ দে"
লক্ষ তরুণ চেঁচিয়ে বলে পাপ সরাব হাত দে।
এমন কবিতা জীবনানন্দ লিখে যেতে পারেন নি।
অবিরাম বৃষ্টিতে ঢাকা শহরের ম্যানহোল উপচে পরা নোংরা পানির মতো উথলে ওঠা আবেগের স্রোতের প্রকাশভঙ্গি দেখে নিজেকে নিরাবেগ নিষ্ঠুর মনে হতো।
শেখ মুজিবুর রহমানের মতো বলিষ্ঠ নেতা দীর্ঘদিন বাংলাদেশের জনসমাজে তৈরী হবে না। ৬ দফা আন্দোলন থেকে অসহযোগ আন্দোলনের সম্পূর্ণ সময়টাতে শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে উঠেছিলেন পূর্ব বাংলার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি। তিনিই বাংলাদেশ। তার কণ্ঠে আদতে বাংলাদেশের হুকুম উচ্চারিত হয়েছে। তীব্র অধিকারবোধ নিয়ে অনেকটাই সামন্তপ্রভুর মতো ঐশ্বরিক তার অনন্যসাধারণ হুকুম দেওয়ার ক্ষমতা। শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থেকে শুরু করে গ্রামের কৃষক, সবাই একবাক্যে সেই হুকুম মেনে নিয়েছে। তাদের ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি তুচ্ছ করে শেখের হুকুমে রাজপথে নেমেছে।
রাজনৈতিক নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের সিদ্ধান্তের মৃদু সমালোচনা করা যায় কিন্তু তাকে অগ্রাহ্য করা কিংবা তাকে বাতিল করে বাংলাদেশের অভ্যুদ্দয়ের ইতিহাস নির্মাণ করা অসম্ভব। শেখ মুজিবুর রহমানের সমালোচনা মূলত শাসক হিসেবে তার ব্যর্থতার সমালোচনা। তার নির্মম মৃত্যু বাংলাদেশের
স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা হিসেবে তার অবদানকে সাময়িক মলিন করলেও শাসক হিসেবে তার ব্যর্থতা পরবর্তী শাসকদের ব্যর্থতার তুলনায় তুচ্ছ। সুতরাং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তার ব্যর্থতা যতটা পর্বতপ্রমাণ ছিলো- ৪৭ বছর পরে সেই ব্যর্থতা শুধুমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তার প্রশাসন পরিচালনার অদক্ষতার খতিয়ান।
মন্তব্য করুন