ভাষা
ব্যক্তিপরিসরে নির্ভরতা রাখতে পারি এমন কারো সাথে শাব্দিক যোগাযোগে কিঞ্চিৎ সাচ্ছন্দ্যবোধ করলেও সামাজিক পরিসরে, অপরিচিত, স্বল্পপরিচিত মানুষদের সামনে কিংবা যেসব মানুষের প্রতি আমি আস্থা রাখতে পারি না, তাদের সামনে যেকোনো বিষয়ে মৌখিক শাব্দিক যোগাযোগের ব্যক্তিগত অক্ষমতার কারণে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ভাষা ব্যবহার বিষয়ে আমার আগ্রহ বেশী।
ভাষা আমাদের পরস্পরের সাথে যুক্ত করে, আমাদেরভাবতে শেখায় এবং আমাদের ভাবনা নির্মাণ করে। প্রতিটি ভাষার নিজস্ব ব্যবহারবিধি অনুযায়ী সে ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ ভাবতে শেখে। তার অন্তর্গত জড়তা আমাদের অনুভুতি, উপলব্ধি নিয়ন্ত্রন করে। এমন কি পরস্পর যোগাযোগের সময়ও আমাদের শরীরি কাঠামোর নড়াচড়া নিয়ন্ত্রন করে আমাদের ভাষার লিখিত কাঠামো। যারা বাম থেকে ডানে লিখতে অভ্যস্ত ( বাংলা, ইংরেজী কিংবা জার্মান) তারা হাতের ইশারায় অতীতকে উপস্থাপন করতে চাইলে বাম দিক নির্দেশ করে আর যারা ডান থেকে বামে লিখতে অভ্যস্ত (উর্দু, ফার্সী, আরবি) তাদের হাতের ইশারায় অতীত নির্দেশ করতে ডান হাত ব্যবহার করে। চীনা কিংবা জাপানী মানুষ, যাদের লিখিত ভাষা উপর থেকে নীচের দিকে, তারা অতীতকালকে স্থাপন করে উপরে আর ভবিষ্যত নীচের দিকে। যদি অদ্ভুত কোনো কারণে এমন কোনো ভাষাগোষ্ঠীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় যারা নীচ থেকে উপরের দিকে লিখে, তাদের ক্ষেত্রে অতীত কাল থাকবে নীচে।
উর্দু কিংবা হিন্দি ভাষায় ক্রিয়াপদ এবং সর্বনামে স্পষ্ট নারী পুরুষ বিভাজন থাকলেও কোনো এক অদ্ভুত কারণে বাংলা ভাষায় নারী-পুরুষবাচক ক্রিয়াপদের ব্যবহার নেই। যদিও নারীদের পুরুষের তুলনায় হীন কল্পনা করার ক্ষেত্রে বাঙালীরা হিন্দিভাষীদের চেয়ে উদার এমন কোনো প্রমাণ নেই।
উর্দু গজল সে অর্থে প্রেমের গান না। মানুষের প্রেমের অনুভুতির স্পষ্ট উপস্থাপন- নারী- পুরুষ-ইশ্বর-পার্থিবজগত- যে যেভাবে মোহগ্রস্ত, প্রেমাবিষ্ট, সকল অনুভুতি-আকুতি-উপলব্ধির শাব্দিক উপস্থাপন সেখানে। প্রেমিকের করপুটে তুলে দেওয়া ফুল কিংবা দেবীর পায়ে ফুলের নৈবদ্য- কিংবা একান্ত আরাধনা- পূজা কিংবা প্রেম সবই একই শব্দে প্রভাসিত।
মন্তব্য করুন