ইউজার লগইন

শিক্ষা-১

কোনো আলোচনার ভুমিকার প্রয়োজন থাকে না, তবে এই ক্ষেত্রে কিছুটা ভুমিকার প্রয়োজন অনুভব করছি। শিক্ষকতা নিয়ে নিজস্ব খন্ডকালীন অভিজ্ঞতায় বেশ কিছু তরুনের সাথে পরিচয় হয়েছে যারা শিক্ষকতাকে এক ধরণের শিল্পে পরিণত করেছে। তাদের বিষয়-বস্তু উপস্থাপনের ধরনে, তাদের উদাহরণ বেছে নেওয়ার ক্ষমতা এবং শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত এবং অনুপ্রাণীত করার ক্ষমতা দেখে আমি মুগ্ধ।
নিজস্ব শিক্ষাজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আগে অনুপ্রাণীত এবং মুগ্ধ হওয়ার মতো শিক্ষকের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসা হয় নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীদের ভেতরে যারা শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হয়েছে, তাদের সবাই যে শিক্ষক হিসেবে চমৎকার আমার মনে হয় না। তারা পড়ুয়া ছাত্র, নিয়মিত ভালো নম্বর পেয়েছে এবং সে কারণেই শিক্ষক হিসেবে মনোনীত হয়েছে। শিক্ষকতা তাদের আবেগের জায়গা না। এমন শিক্ষকের পেশাগত আবেগ, দায়িত্ব এবং দায়ের মাত্রাগত তারতম্যের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠতে পারে।
আমি অবসর পেলেই শিক্ষা বিষয়ক গবেষণা পড়ি, মূলত নিজের অজ্ঞানতা দূর করতে এবং নিজস্ব অনুধাবন আরও স্পষ্ট করতেই পড়ি। পাঠ প্রদান এবং পাঠ মূল্যায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন ধরণের আলোচনা, পাঠ্যক্রম নির্মাণ এবং পাঠদান প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট করা বিষয়ে স্বল্পকালীন একটা ডিপ্লোমার পর মনে হয়েছে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বহরে-গতরে বাড়ছে কিন্তু আধুনিক কিংবা শিক্ষার্থীমুখী হয়ে উঠতে পারে নি।
ছোটো মানুষ হিসেবে বিদ্যালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার মতো বড় বড় বিষয়াসয় নিয়ে কথা বলা আমার শোভা পায় না। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী এবং খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিজস্ব অনুধাবনের অক্ষমতা এবং শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানবিষয়ক অনুধাবনের অক্ষমতা নিয়ে যা কিছু লিখছি, সেটা শুধুমাত্র সাধারণ অবগতির জন্যেই। ধর্ম-বিজ্ঞান-সমাজ- দর্শণ বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার মতো অবসর আমার নেই।
যদি শিক্ষকের উদ্দেশ্য হয় তার ক্লাশের সবাইকে বিজ্ঞান বিষয়ক প্রাথমিক ধ্যান ধারণা দিবেন এবং শিক্ষার্থী নিজে থেকেই অনুপ্রাণীত হয়ে বিজ্ঞান পাঠে আগ্রহী হয়ে উঠবে- সেক্ষেত্রে শিক্ষকদের নিজস্ব ধ্যান ধারণার সংস্কার প্রয়োজন। মূলত সে জায়গা থেকেই বিভিন্ন বক্তব্য সংকলনের চেষ্টা।

১৯৮৮-৯০ সালে নবম-দশম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞান পাঠ্য বইয়ে বৈজ্ঞানিক কর্মপদ্ধতির একটা রেখাচিত্র ছিলো।

সমস্যা- প্রাথমিক অনুমান, অনুসিদ্ধান্ত-পর্যবেক্ষন-পরীক্ষণ-প্রাথমিক অনুসিদ্ধান্ত পর্যালোচনা- নতুন অনুসিদ্ধান্ত গ্রহন এবং পুনরায় পরীক্ষণ-পর্যবেক্ষণ
scientific-method.jpg

বাস্তবে এমন ধরাবাধা বৈজ্ঞানিক কর্মপদ্ধতির কোনো অস্তিত্ব নেই। পঠন, পর্যবেক্ষণ, তাত্ত্বিক কাঠামো নির্মাণ, পুরোনো ব্যাখ্যাকে নতুন কোনো প্রক্রিয়ায় পর্যালোচনা কিংবা একেবারে নিয়ম করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাওয়া এবং প্রতিদিন অল্প অল্প তথ্য উপাত্ত সংগ্রহে রাখা-
এভাবে তথ্য সংগ্রহের এক পর্যায়ে সংগৃহীত তথ্যকে বিন্যস্ত করার প্রয়োজন থেকেই তথ্যগুলোর ভেতরে এক ধরনের নিয়মতান্ত্রিকতা খোঁজার চেষ্টা থাকে। একই সাথে অন্যান্য মানুষেরা কিভাবে বিষয়গুলোকে ব্যাখ্যার চেষ্টা করছে সে বিষয়েও তথ্য সংগ্রহের কাজ চলতে থাকে। সব মিলিয়ে একটা মানসিক কাঠামো তৈরী হয়।
বৈজ্ঞানিক কর্মপদ্ধতিতে যেভাবে প্রথমেই সমস্যা চিহ্নিত করে সমস্যাকে ব্যাখ্যা করার জন্যে অনুসিদ্ধান্ত থেকে পর্যবেক্ষণ পর্যন্ত একটা কাঠামো দেওয়া হয়েছে - তেমন কাঠামো মেনে বিজ্ঞান গবেষণা চলে না। বরং তথ্য বিন্যাসের পরবর্তী পর্যায়ে যে মানসিক কাঠামোটা তৈরী হয়- সেটার ভেতরে নতুন উপাদান সংযোজন, বিয়োজন এবং পরিশেষে এক ধরণের উপসংহারে পৌঁছানো সম্ভব হলে সবটা গুছিয়ে লিখে নতুন জ্ঞান সংযোজনের কাজটা সমাপ্ত হয়।যেভাবে গবেষনা নিবন্ধে গুছিয়ে লেখা হয়- বৈজ্ঞানিক গবেষণা কোনো পর্যায়েই এমন গোছানো কাজ না।

আমরা যখন বিজ্ঞানকে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করি, তখন বিজ্ঞানকে নির্ভুল, নিয়মতান্ত্রিক একটা কাঠামো হিসেবে উপস্থাপন করি। সংক্ষেপে সকল ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে এমন কাঠামোবদ্ধ উপস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা আছে কিন্তু শিক্ষার্থীরা আদৌ কি বিষয়টা অনুধাবন করতে পারছে?

শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান অনুধাবন শ্রেণীকক্ষের বাইরে খুব বেশী আলোচিত না হওয়া একটি বিষয়। তুলনামূলক গবেষণা বলছে এমন কি প্রথাগতঃ বিজ্ঞান গবেষণার সাথে জড়িত মানুষগুলোর একাংশের বিজ্ঞান অনুধাবন ক্ষমতা ক্ষীণ। নিজস্ব বিজ্ঞান অনুধাবন প্রশ্নবিদ্ধ হলেও বিজ্ঞানগবেষণার সাথে সরাসরি জড়িত মানুষদের বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার অগ্রগতিতে অবদান রাখার জন্যে এই অনুধাবনজনিত দুর্বলতা খুব বেশী বাঁধা তৈরী করে না।

শিক্ষার্থী, বিশেষত যারা প্রথমবারের মতো কোনো একটি বৈজ্ঞানিক ধারণা সম্পর্কে জানছে, তাদের অনুধাবন, উপলব্ধির সবটুকুই নির্ভর করে শিক্ষক উপস্থাপিত ধারণা আত্মীকরণের উপরে এবং শিক্ষকেরা বৈজ্ঞানিক কল্পনা অনুধাবন দুর্বলতা সেসব শিক্ষার্থীদের উপলব্ধিদের চিরস্থায়ী ক্ষত তৈরী করতে পারে। আমাদের শিক্ষকেরা যে খুব বেশী স্পষ্ট ছিলেন তাদের উপস্থাপনে এমন না, এমন কি আমাদের সময়ে যারা শিক্ষক হয়েছেন, তারাও যে শিক্ষার্থীদের সামনে সহজ-প্রাঞ্জল ভাবে বৈজ্ঞানিক ধারণা উপস্থাপন করতে পেরেছেন এমনটাও বলা কঠিন। যারা প্রথাগত গবেষণার সাথে যুক্ত, সহগবেষকদের সার্বক্ষণিক চাপ, গবেষণানিবন্ধ লেখা এবং সম্পাদনাকালীন সময়ে উত্থাপিত প্রশ্ন এবং সংশয়ের ভিত্তিতে নিজস্ব অনবগতি সম্পর্কে স্পষ্ট একটা ধারণা লাভ করেন, এবং যেহেতু গবেষণানিবন্ধ শেষ পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট ধারণাকে অন্য সকল ধারণার প্রেক্ষিতে নির্মাণ কিংবা বর্জনের একটি সুশৃঙ্খল পর্যায় অতিক্রম করতে হয়, তাই চুড়ান্ত অনুমোদিত গবেষণা নিবন্ধে বৈজ্ঞানিক অনুধাবনজনিত বিভ্রান্তি প্রকাশ্যে আসার সুযোগ কম।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে পরিসংখ্যান নির্ভর গবেষণাগুলোর অর্ধেক অন্তত একটি ধারণাকে ভুল ভাবে উপস্থাপন করছে। এটা নিয়ে গবেষক-শিক্ষক উভয়পক্ষেরই একধরণের অসস্তি থাকলেও প্রথাগত গবেষণা নিবন্ধের মাণ নির্ণয়ের জন্যে ভুল একটি প্রক্রিয়া বেছে নেওয়ার দরুণ এই ভ্রান্তির ব্যপক প্রসার ঘটেছে।

বৈজ্ঞানিক অনুধাবন কর্মরত গবেষকদের জন্যে খুব বেশী গুরুত্বপূর্ণ না হলেও নবীন বিজ্ঞানশিক্ষার্থী কিংবা বিজ্ঞান বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা পেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্যে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানশিক্ষা একদিক দিয়ে ভাবলে নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক কাঠামোতে পর্যবেক্ষণলব্ধ ফলাফলকে উপস্থাপন এবং যাচাই-বাছাইয়ের কৌশলগত বিদ্যা, তত্ত্বের প্রাথমিক অনুমাণগুলোর ভৌতবাস্তবতা এখানে খুব বেশী গুরুত্বপূর্ণ না। পদার্থের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতর কণিকা অবিভাজ্য কিংবা আরও ক্ষুদ্রতর কোনো কণিকাশ্রেণীতে বিভাজ্য হবে কি না, এইসব অতিক্ষুদ্র কণিকাগুলো গোলাকৃতি না কি চৌকাকৃতি, তারা পরস্পরের সাথে কি প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত হচ্ছে- বস্তুর ভৌত পরিচিয় নির্মাণে এইসব প্রাথমিক অনুমানের গুরুত্ব খুব বেশী নেই। বিশেষায়িত ভাষায়, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যে গণিত, এসব বস্তুকণিকাকে অবয়বহীন একটি বিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব এবং বিন্দুগুলোর পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ-বিকর্ষণ কিংবা নিরাসক্তিকে গাণিতিক সমীকরণে উপস্থাপন করার সময় তাদের কল্পিত আকৃতি খুব বেশী বাঁধা তৈরী করে না।

প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ এবং প্রাকৃতিক নানাবিধ বিধিকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রাথমিক অনুসিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করা- প্রয়োজনে অনুসিদ্ধান্তগুলোর প্রয়োজনীয়তা এবং সত্যতা নিশ্চিত হতে আরও কিছু পর্যবেক্ষণপ্রক্রিয়া কিংবা কৌশল উদ্ভাবন- বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনার শুরুতেই প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের এই পরিধিটুকু স্পষ্ট করা প্রয়োজন। আমরা বিজ্ঞান বিষয়ে যা কিছু বলছি কিংবা পড়ছি সবটুকুই আদতে পর্যবেক্ষণ ব্যাখ্যা করার জন্যে প্রাথমিক কিছু অনুমাণকে যথার্থ ধরে নিয়ে সেসব অনুমানের যৌক্তিক বিধিবদ্ধ সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া।
সকল যৌক্তিক অনুমাণই সঠিক হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই, ক্ষেত্রবিশেষে সেসব অনুমাণ ভ্রান্ত প্রমাণিত হতে পারে, এমন ভ্রান্তি নতুন পথের সূচনা করতে পারে কিংবা পুরোনো অনুসিদ্ধান্তগুলোকে অযথার্থ প্রমাণিত করতে পারে। এভাবেই প্রতিনিয়ত বিজ্ঞান অগ্রসর হচ্ছে।
ব্যক্তিগত বিশ্বাস কিংবা সামষ্টিক সামাজিক অনুমানের সাথে বিজ্ঞানের বৈরিতা নেই। বিজ্ঞান শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণ সম্ভব প্রাকৃতিক বিধি বিষয়ে নিয়মতান্ত্রিক পর্যালোচনা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নির্দিষ্ট নিরপেক্ষ মতামত দেয়।
আবার বিজ্ঞানই সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে সক্ষম এমন কট্টর দার্শণিক অবস্থান গ্রহনও শিক্ষার্থীদের ভুল বার্তা দেয়। শিল্পের সুষমা, নান্দনিকতা, ব্যক্তিগত সৈন্দর্য্যবোধ, সামাজিক সামষ্টিক দার্শণিক কাঠামোর ভেতরে থেকে নিজের অস্তিত্বের স্বরুপ অনুসন্ধান এবং স্বার্থক জীবনযাপনের তৃপ্তি খুঁজে নেওয়ার কিংবা সেই ভাবনাকাঠামো থেকেই নিজস্ব সকল সংশয় ও প্রশ্নের জবাব খুঁজে নেওয়া কোনোভাবেই আপত্তিকর না।

বৈজ্ঞানিক ভাবনার বিবর্তন কিংবা সংশ্লেষণের ধারাবাহিক পদ্ধতি সম্পর্কে পপার কিংবা ফেয়ারবেন্ডের অনুসারীদের ধারণা একেবারেই সীমিত।একটি মাত্র ভ্রান্তির কারণে দীর্ঘদিনের তত্ত্ব সরাসরি ছুড়ে ফেলে দেওয়ার মতো নির্মোহ নন কেউই। চর্চিত বিশ্বাস কিংবা অনুমানকে বিদ্যমান তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে নাকচ করার মানসিক ঔদার্য্য সকল বিজ্ঞানীর নেই। দীর্ঘদিন গবেষণারত বিজ্ঞানীরাও মাঝেমাঝে নিজস্ব বিশ্বাসজনিত কারণে বিজ্ঞানভাবনার ভুল পক্ষে দাঁড়ান, ভ্রান্ত বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে রাখেন। জনপ্রিয় অথচ ভ্রান্ত ধারণার অনুসারী মানুষেরা মৃত্যুবরণ করলে পরবর্তী আধুনিকতম মতামতের অনুসারীরা সংখ্যায় বাড়ে।

হায়ার সেকেন্ডারী স্কুল শিক্ষা সমাপনী যোগ্যতার অংশ হিসেবে বৈজ্ঞানিক কর্মপদ্ধতি অনুধাবন এবং নিয়মতান্ত্রিক বিশ্লেষণে প্রকৃতিকে জানা ও বোঝার বিষয়টি আবশ্যিক শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচিত হলেও কি প্রক্রিয়ায় একজন শিক্ষার্থীর বৈজ্ঞানিক অনুধাবন যাচাই করা সম্ভব সেটা নিয়ে খুব বেশী আলোচনা নেই। বাজের কমিটির সামনে বক্তব্য উপস্থাপন করতে গিয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিখ্যাত বিজ্ঞানীরাও বিজ্ঞান শিক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক কর্মপদ্ধতি অনুধাবনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। নিরাসক্ত নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উপস্থাপিত তথ্য যাচাই বাছাই করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা তৈরী হলে সেটা গণোতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম সহায় হতে পারে এমন মতামত পোষণের পরও দেখা যাচ্ছে বৈজ্ঞানিক শিক্ষা কিংবা কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে আদর্শিক কিংবা প্রক্রিয়াগত মতৈক্য অনুপস্থিত। সে তুলনায় বাংলাদেশ অনেক বেশী এগিয়ে। এখানে শিক্ষাসমাপনী যোগ্যতায় একত্ববাদ, তাওহীদ, ঈশ্বরের প্রতি অটল আস্থা ও বিশ্বাস এবং নানাবিধ ধর্মকেন্দ্রীক মূল্যবোধ অর্জনের তালিকা যুক্ত হলেও নিরাসক্ত তথ্য যাচাই বাছাই কিংবা যৌক্তিক প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার যোগ্যতা কোনো শিক্ষাগত অর্জন বিবেচিত হচ্ছে না। টেকসই গণতন্ত্রের জন্যে সাধারণ নাগরিকদের বক্তব্য বিশ্লেষণ, তথ্য যাচাই বাছাই করে সঠিক এবং ভুল তথ্য আলাদা করতে পারা কিংবা বিদ্যমান ব্যবস্থার ভেতরে থেকেই শ্রেয়তর অংশটুকু বেছে নিতে পারার যোগ্যতা খুব বেশী প্রয়োজনীয় গুণ নয়। সার্বজনীনতা কিংবা সর্বময়মঙ্গল ধারণাকে ভিত্তি ধরে নিয়ে নেওয়া যেকোনো সিদ্ধান্ত বৈষম্যবিরোধী, নাগরিকজনকল্যানমুখী হতে বাধ্য। তেমন জনকল্যানমুখী রাজনৈতিক অভিমুখ বাদ দিয়ে নিষ্পেষণমূলক, একদেশদর্শী জবরদস্তির গণতন্ত্রের প্রতি সদলবলে আস্থাস্থাপনের নজির দেখে নিশ্চিত বলা যায় শিক্ষিত মানুষেরা তাদের ডিগ্রীর ভারে অনুমাণ করে তাদের যাচাই-বাছাই অনেক বেশী নিরাসক্ত-নিরাবেগ, তবে আদতে আশৈশব চর্চিত অনায়াস সরল বিশ্বাসের বাইরে নিজস্ব বাছাই বেছে নেওয়ার ভিন্ন কোনো প্রক্রিয়া তারা অনুসরণ করেন না।
রাষ্ট্র বিজ্ঞানশিক্ষা বিষয়ে উদাসীন, সমাজে বৈধ অবৈধ প্রযুক্তি ব্যবহারের চল থাকলেও বিজ্ঞানসম্মত প্রাযুক্তিক উদ্ভাবনের দিকে নজর কম। ডিজেল ইঞ্জিনের গাড়ী চড়ে সরকারী কর্মকর্তা যখন পানি দিয়ে চালানো মোটর সাইকেলের প্যাটেন্ট নিয়ে গভীর আলোচনা করেন, স্পষ্ট বুঝা যায় কার্যকারণ সূত্র বিষয়ে সরকারী কর্মকর্তার খুব বেশী স্পষ্ট ধারণা নেই। বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণায় অর্থবরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া সরকারী কমিটিতে যেসব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আছেন, তাদেরও অধিকাংশের বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনার যোগ্যতা নেই। সম্পূর্ণ অকারণেই প্রযুক্তিবিদদের এই দেশে বিজ্ঞান বিষয়ে গ্রহনযোগ্য মতামত দেওয়ার যোগ্য মনে করা হয়। প্রতিষ্ঠান হিসেবে বুয়েট যেমনই হোক, তারা নিজস্ব শিক্ষার্থী বাছাইয়ে কঠোর পরীক্ষাপদ্ধতি গ্রহন করে। সেই প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ পেলেই মানুষ ভালো বিজ্ঞান জানবে এমনটা হওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই, তারপরও এই দেশে বিজ্ঞান বিষয়ক মতামত দেওয়ার জন্যে প্রযুক্তিবিদের শরণাপন্ন হয় মানুষ।
শিক্ষাপাঠ্যক্রম নির্মাণ, শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই বাছাই এবং মূল্যায়নের জন্যে প্রযুক্তিবিদ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, জনপ্রিয় লেখক, কবির উপস্থিতি থাকলেও - যাদের জীবন ও জীবিকা হলো শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করা- তেমন শিক্ষা গবেষক, শিক্ষা ইনস্টিটিউটের নির্দিষ্ট একটি কমিটি কিংবা বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি সেখানে অনুপস্থিত। এই আলোচনায় আমার অংশগ্রহনও আদতে বহিরাগত হিসেবে মন্তব্য জানিয়ে যাওয়া

পোস্টটি ৭ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

সাহাদাত উদরাজী's picture


সরকার শিক্ষা ব্যবস্থায় সিদান্ত নেই কি করে তা জানতে ইচ্ছা হয়, যদিও আপনার লেখায় কিছু বুঝতে পারলাম। শিক্ষা বিরাট ব্যাপার, জাতীয় স্বার্থ জড়িত।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.