কলি কথা ৩ (কলি-কাতা টু ফুলকলি-পাখির কাকলির কাশ্মীরে)
(ধন্যবাদ মেসবাহ ভাইকে...ঝটিকে তার ভ্রমণ সমাধা করার জন্য। আসলে তিনি লেখার এমন দৌড় না দিলে আমারও লেখা হতো না..)
দিল্লী হইতে কাশ্মীর- সারপ্রাইজ হইলো চৌচিড়:
দিল্লী থেকে কাশ্মীরের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরুর আগে একটু ফ্ল্যাশব্যাক না বললেই নয়। ভ্রমণের শুরু থেকেই বর বেচারা আমাকে সিমলা- মানালির গল্প বলে আসছে। কিন্তু সে ঠিক করেছে কাশ্মীর ভ্রমণ। সারপ্রাইজ দিবে বলে কিছুই বলেনি। কিন্তু ফাঁপড়ের ফেসবুক কি আর প্রেম বোঝে! একদিন ইনবক্সে দেখলাম মেসেজ এসেছে, তোমরা নাকী কাশ্মীর যাও? আমরাও যাচ্ছি..
বলা বাহুল্য যে বন্ধু দম্পতির সাথে কলিকাতায় আহার সাড়লাম, তাদেরই একজন। কোন সন্দেহ নাই মেসেজ পেয়ে মনে একসাথে হাফডজন লাড্ডু ফুটলো..রিপ্লাই দিলাম, "সারপ্রাইজ খোলাশা করার জন্য ধন্যবাদ".. বন্ধুটি চম্পট..আমিও মুখে তালা দিলাম..
দুইদিন পর অফিসে গেলাম। এক সহকর্মী ভরা মজলিশে ঘোষণা দিলেন, এই তোরা নাকী কাশ্মীর যাস..! কোনমতে পালালাম.. বেচারা বর এতো কষ্ট করছে সারপ্রাইজ দেয়ার.তাকে অন্তত নিজে থেকে বলার সুযোগ দিতে চুপ রইলাম.. দিল্লীতে পৌঁছানোর পর সে না বলা পর্যন্ত কিছুই বললাম না।..
এবার ফিরে আসি ভ্রমণে..
দিল্লীর শেষ দিন- কাশ্মীরের পথে ধিনাক ধিনাক ধিন..
দিল্লীর শেষ দিন বলতে শহরটা দেখা। কিন্তু গরমে ভর্তা হয়ে শেষ পযর্ন্ত চলে গেলাম সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা থিয়েটার। সিনেমার নাম, গ্যাংজ অফ ওয়সিপুর.. বাজী রেখে বলতে পারি, তাপদাহ না থাকলে জীবনেও এই সিনেমা দেখা হতো না। যতরকমের গালি আছে হিন্দী ভাষায় সব শেখার জন্য এই একটা সিনেমাই যথেষ্ট। তবে, শেষ পর্যন্ত সিনেমা সম্বন্ধে বলবো, ইন্টরেস্টিং..
দিল্লী শহর ছেড়ে যাচ্ছি..বিরাট হনুমানজিকে টাটা দিলাম। শহরের মোড়েই ঠায় দাঁড়িয়ে হনুমানজি। দুই হাত বুকের কাছে ধরা। প্রতি বৃহস্পতিবার হনুমানজির হাত খুলে যায়, ভিতর থেকে প্রতিয়মান হয় রাম-সীতার উজ্জ্বল মূর্তী..
আবারো দিলাম টা টা.. এলাম পাহারগঞ্জ। যথাসময়ে ট্রেনে চেপে বসলাম। রাজধানী ট্রেন। দেখা হলো সোনালি আর আকাশের সাথে। ওরা যাবে জম্মু পর্যন্ত। ট্রেনও জম্মু পর্যন্তই। স্টেশন থেকে ট্যাক্সি করে যাবো কাশ্মীর-এই হলো প্ল্যান। যেতে যেতে অনেক কথা হলো অন্য দুই বাসিন্দার সাথে। ওখানকার কিছু কথা আগেই দিয়েছি..
http://amrabondhu.com/roopkotha/5239
তারপরও না বললে নয়, ওরা থাকাতে ট্রেন ভ্রমণটা খুব বেশি ভালো হয়েছে..
জম্মু টু কাশ্মীরের পথে- রনজিতের রথে
ভোরবেলা ট্রেন এসে থামলো জম্মু স্টেশনে। কথা ছিল স্টেশনে নেমেই ট্যাক্সি পাবো..কিন্তু রনজিৎ নামের ড্রাইভারটি ফোনে জানালো, তার একটু দেরি হবে। সেই "একটু" আমাদের জন্য প্রহসন হয়ে রইল। স্টেশনটি ভয়ঙ্কর নোংড়া। কোন মানুষ মনে হয় দেয়ালেঘেরা টয়লেট ব্যবহার করে না। সবাই রাস্তায়!!.. স্টেশনের পাশেই "মল" নিষ্কাশনের খাল...মাছিরা উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে এদিক সেদিক যায়। আমরা ভয়ে দাঁড়াচ্ছি না। নড়াচড়ার উপর আছি..একটা মশা গায়ে পড়লেই কম্মকাবার..
ওদিকে রনজিৎ সাহেবের দেখা নাই..ফোন করছি- কিন্তু অন্যের ফোন থেকে। কারণ জম্মু -কাশ্মীরে অন্য অঞ্চলের সিম চলবে না। নতুন সিম নেয়া আরেক বিশাল হ্যাপা..অতএব এর ওর কাছ থেকে ফোন নিয়ে ফোন করছি.. সেই কাকডাকা ভোরে যে দুই তিনটা লোক ওই এলাকায় এসেছিল, সেটাই বাঁচোয়া..
অবশেষে রনজিত এলো..আল্লাহ সহায় কোন সানি দেওলের ক্লোন আসেনি।
ঝটপট উঠে রওনা দিলাম কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে। ট্রেনে আসতে লেগেছে নয় ঘণ্টা। বাকি পথ যেতে ট্যাক্সিতেও লাগবে নয় ঘণ্টা। তাও ভালো.. চলি তো..
মেঘের ডানায় চড়ে- যাচ্ছি জম্মু ছেড়ে..
পুরোটা রাস্তা এক কথায় অসাধারণ। খালি আমরা উপরের দিকে উঠলাম। পাহাড় ঘিরে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে রাস্তাটা চলে গেছে লাগোয়া পাহাড়ে। মাঝে মাঝেই পথ আগলে বেড়াচ্ছে টুকরো টুকরো মেঘ। আমার আবার বিশেষ মেঘ প্রীতি আছে। চিৎকার দিয়ে উঠছি খুশিতেই। আবার ভয়ও লাগে রনজিৎ সাহেব না আবার ভড়কে যায়। তবে বলতেই হয়, ড্রাইভার সাহেব চালায় দুর্দান্ত। সারাটা রাস্তা চালালো মনযোগ দিয়ে। পথিমধ্যে থামলো এক জায়গায় চা খাওয়ার জন্য।ছুপড়ি এলাকা। চা খেয়েই আবার পথচলা শুরু। যাত্রাপথে রনজিত শুধু বিভিন্ন ফটোসেশনের স্পট নিয়ে কথা বললো..কোন বাড়তি কথা নেই পাপাজির মতো।
আরো উপরে একদম মেঘের কোলে এসে গাড়ি ভিড়লো আরেকটি চা খাওয়ার পয়েন্টে। নাম টাইটানিক ভিউ পয়েন্ট। চা টা খুবই মজার। কলকাতার মতো এদ্দুড়ো দেয়না। অনেকক্ষাণী দেয়। আর ঠাণ্ডার মধ্যে অমন উপাদেয় চা ঠিক বেহেস্তি নেয়ামতের মতোন।
আবার যাত্রা শুরু..
পথিমধ্যে পাহাড়ের চিপায়চাপায় বহু লোভণীয় কটেজ- বাংলো..নিশ্চয়ই হোমড়াচোমড়ারা থাকেন।
উন্নয়নের কাজ চলছে ব্যাপকহারে। সাইনবোর্ড দেখে বোঝা যায়, ভূস্বর্গ শুধারানোর দ্বায়িত্ব পড়েছে বীকন নামের প্রতিষ্ঠানের হাতে..ভালো লাগলো কাজের তোড়জোড় দেখে..
পাহাড় চিড়ে টানেল দেখ; জম্মু-কাশ্মীর করলো এক:..
অবশেষে এলো সেই বিশাল টানেল। প্রায় ২.৫ কিমি লম্বা এই টানেলে ঢুকতেই হিমভাব অনভূত হয়। আঁধার আর আঁধার। এত বড় পাহাড় ভেদি টানেল করাই তো বড় ব্যাপার। তার উপর এমন এলাকায় যেখানে ঠুশঠাশ-ধুশধাশ নিত্ত দিনের ব্যাপার। তবে বুঝতে দেরি হলোনা জম্মু-কাশ্মীরকে যতই এক করা হোক না কেন, শিল্প-সংস্কৃতি-আচার-আচারণে তাদের বেশ ভিন্নতা আছে..এমনও জম্মুবাসী আছে যারা পাহাড় পেড়িয়ে কাশ্মীরে আসেনি..
টানেল ছেড়ে- এবার কাশ্মীরে..
টানেল ছাড়াতেই দৃশ্যপটের বদল। পাহাড়ি এলাকা কমে গিয়ে বেশি দেখা যায় সমতল ভূমি.. সবুজ..স্বচ্ছ..ঠিক যেন রোদ-পরী। এক জায়গায় নাশতা খেতে নেমে সামনে তাকাতেই বোঝা গেল একে ভূস্বর্গ বলার কারণ.. আহা মেঘ- পাহাড়- সবুজের রহস্যমাখা অভিমানী এলাকাটা..
এমনকী পোশাকটাও অন্যরকম সবার.. বর বললো, পাকিস্তানবাসীর পোশাক একদমই এমন..এমনকী আচরণও। একটু রুক্ষ। ভাষাও উর্দূ..যেকোন সাইনবোর্ড উর্দূতেই লেখা..আর আচরণে বলে দেয় তারা সুবিধাবঞ্চিতদের দলে..অথবা হয়তো সুবিধা নিতেও নারাজ..
কারণ, তারাতো বলে, এটা তাদের "ছোটা পাকিস্তান"..
(পরের পর্ব-
শ্রীনগর
সোনমার্গ
গুলমার্গ
হাউজবোট
ডাললেক
আর আকবরের কাণ্ডকারখানা নিয়ে..
অসাধারন বর্ননা ভঙ্গী। ভুস্বর্গ দেখে আসলেন এখন যেখানেই যাবেন সেখানেই নরক মনে হবে। এই সিরিজটা অসাধারন হলো। সামনে নিত্য নতুন ভ্রমনে যান আর এই রকম ভালো ভাল সিরিজ লিখেন।
আরো বাকী আছে কিন্তু..সাথে থাকেন..
এত অল্প ক্যান?
বেশি লেখলে প্যাঁচ লেগে যায়..আপনাদের আর বিরক্ত করবো না..টেনে টুনে পরের পর্বে খালাশ করে দিবো..
খুব ভালো লাগল ভু-স্বর্গ কাশ্মির ভ্রমন। আর একটু বড় করে লিখবেন প্লিজ?
কাশ্মীর তো শুরুই করিনি..আচ্ছা আগামী পর্বে শেষ করে দিবো..

এইবার তো আর যাওয়াই হবেনা ভারত!
আপনার লেখার মধ্যেই তো ভ্রমণের স্বাদটা পেয়ে যাইতেসি
না তোকে ভারত যেতেই হবে..পাপাজির দিব্যি...

আমার লেখার মত পঁচা না


অনেক সুন্দর বর্ণনা
তোমাকে দিয়ে হবে মেয়ে
মোটেই না..


ধন্যবাদ..
বলছেন??
সুন্দর লিখেছেন।
সাথে আছি।
এটা এত্তো ছোট কেনো? যদিও আপ্নের লেখা অনেক গুছানো তবে আগের গুলোর চেয়ে এই পর্বটা বেশ কম!
দারুন করে ঘুরে বেড়ানোর বর্ননা দিয়েছেন। আর ছবিগুলার জন্যে হাহাচৌ'কে থ্যাঙ্কু!
অপেক্ষা করেন, এরপরে একটা পর্ব তো হবেই শুধু কাশ্মীর নিয়ে..বলা যায় না, দুটোও হতে পারে.. হাহাকে ধন্যবাদ পৌঁছে দিলাম...
কাশ্মীর নিয়ে আরেকটু লেখা যায় না?
আর ছবি কই?
লিখবো তো...অফিসের কাজে একটু ব্যস্ত ছিলাম.. সিরিজের "৪" তো আসবেই .."৫"ও আসতে পারে..পুরো কাশ্মীর নিয়ে হবে সেই পরের পর্ব..
সুন্দর লিখেছেন।
সাথে আছি।
পরের পর্ব চলে এসেছে আপু..
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য... 
মন্তব্য করুন