ইউজার লগইন

আমি ফিরে যেতে চাই...

ইদানিং বৃষ্টিটা দেখাই হলো না। দেখা হয়েছে হয়তো কিন্তু ঠিক মতো উপলব্ধি করা হলো না।
অথচ একটা সময় বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাস্তায় বৃষ্টি পড়া দেখতাম।
কি সুন্দর সেই দৃশ্য। বৃষ্টির ফোঁটা রাস্তায় পড়ে। আবার গাছের পাতায়ও পড়ে।
বৃষ্টি পড়ার শব্দ।
পাকা রাস্তায় মাটির গন্ধ পাওয়া যেতো না।
খুব ইচ্ছে করতো তখন মাটির গন্ধ শুকবার। কিন্তু উপায় কই?
উপায় নাই।
দিন দিন সব কিছু যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। ইদানিং কেনো জানি মনে হয়, কাজ করে হয়তো সময়টাকে হয়তো নষ্ট করছি।
কিন্তু কাজ তো করি ভবিষ্যতটাকে সুন্দর করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে।
মানুষ সবসময় ভবিষ্যতের জন্য কাজ করে, কষ্ট করে। কিন্তু সেই ভবিষ্যতটা কবে আসবে? সেই জন্মের পর থেকে ভবিষ্যতের চিন্তা কিন্তু ভবিষ্যতটা আর আসলো না।
সেদিন রাস্তায় বৃষ্টির ভেতর একটি বাচ্চা ছেলে হাত বাড়িয়ে আমার কাছে টাকা চাইল। ওর চুল থেকে পানি বেয়ে মুখ হয়ে থুতনি থেকে টপ টপ করে নিচে পড়ছে। আমি ওকে মিটি মিটি হাসি দিয়ে প্রশ্ন করলাম, বৃষ্টিতে ভিজতে কেমন লাগছে রে? ছেলেটি হাসে আর বলে, ভালো লাগে স্যার। তারপর বললাম- পানি কী বেশী ঠান্ডা? ছেলেটি বলে- হ স্যার। ঠান্ডা।
তারপর পকেট থেকে ৫টাকা বের করে দিলাম।
এরপর মনে হলো হয়ত আমাকে খুশী করার জন্য ছেলেটা এমন উত্তর দিলো। নাইলে নাগরিক জীবনে বৃষ্টিতে ভেজা তাদের কাছে খুব একটা আনন্দের হওয়ার কথা না।
আমার যেমন সিএনজিতে বসে ছেলেটার বৃষ্টিতে ভেজা ভালো লাগছে ঠিক তেমনি ছেলেটারও আমার সিএসজি বসাটাকে ভালো লাগছে। এটাই হিউম্যান সাইকোলজি।
সবসময়ই নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস ও পাড়েতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস মনে হবেই।
এইতো পরশুদিনই মনে হয়- বিকেলে ঝড় হলো। বসুন্ধরার ইষ্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া হাউজে তখন আমি। কাঁচের ভেতরে থেকে বৃষ্টি দেখছি। ইচ্ছে করছি একটা উড়াল দেই। অনেক দূরে চলে যাই এই বৃষ্টির তোড়ে। আমি হারিয়ে যাই নির্মল প্রকৃতির বুকে। হারিয়ে যাই শান্তির কাছে। আর যে ভালো লাগে না। প্রতিদিনের ব্যস্ততা আমাকে ঘুন পোকার মতো খাচ্ছে।
লেখালেখি-তো বন্ধই হয়ে গেলো। আর যে লেখা হচ্ছে না। ভাড়াটিয়া লেখকের মতো দিন যাচ্ছে। নিজের জন্য একটি লাইন লিখবো। নিজের ভেতরটাকে আবার একটু দেখবো সেই সুযোগটাই হচ্ছে না।
কেমন যেনো যান্ত্রিক একাকিত্ব আমাকে খেয়েই যাচ্ছে। চারিপাশে এত মানুষ তাও মনে হয় আমি একা। একা বেদনাটা অনেক কঠিন?
মনে হয়, এই যে বৃষ্টি ভালো লাগছে কাউকে যদি বলতে পারতাম- বৃষ্টিটা কত্ত সুন্দর দেখেছ?
এই প্রশ্নটা করারও মানুষ নাই। কিংবা অনুভূতির কথা শেয়ার করারও একটা মানুষ যদি পাশে থাকতো!!
কেউ নেই। আশেপাশে কেউ নেই..
এই যান্ত্রিক শহরে মানুষগুলোও যান্ত্রিক হয়ে গেছে। যান্ত্রিকতা ছাড়া কিছুই ভাবা যায়।

কিন্তু আমি যে ফিরতে চাই। আমার সেই বেলায়!
যে বেলায় আড্ডা দেয়া যেতো।
যে বেলায় বৃষ্টি দেখা যেতো।
যে বেলায় সুন্দর সকালটায় এক কাপ চা খেতে খেতে উপভোগ করা যেতো।
যে বেলায় শেষ বিকালের হিমেল হাওয়া অনুভব করা যেতো।
যে বেলায় কোন শ্যামলা মেয়ে আমার হাতে হাত রেখে সূর্য ডোবা দেখতো।
যে বেলায় আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ দেখে মনটা হাহাকার করে উঠতো।
যে বেলায় মাথায় গল্প কিলবিল করতো।

আমি যে ফিরে যেতে চাই।

আমি ফিরতে চাই আমার সেই সুন্দর বেলায়...

আমি ফিরতে চাই আমার অবাক হওয়ার বেলায়...

পোস্টটি ১০ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

তানবীরা's picture


সেই জন্মের পর থেকে ভবিষ্যতের চিন্তা কিন্তু ভবিষ্যতটা আর আসলো না।

আমার মতো অনেকেই ভাবেন দেখছি Smile

লেখাটা আমার বেশ ভালো লেগেছে। Big smile

লীনা দিলরুবা's picture


মনে হয়, এই যে বৃষ্টি ভালো লাগছে কাউকে যদি বলতে পারতাম- বৃষ্টিটা কত্ত সুন্দর দেখেছ?
এই প্রশ্নটা করারও মানুষ নাই। কিংবা অনুভূতির কথা শেয়ার করারও একটা মানুষ যদি পাশে থাকতো!!
কেউ নেই। আশেপাশে কেউ নেই..

আপনার তো কঠিন অবস্থা। সমবেদনা Smile

শামান সাত্ত্বিক's picture


অনেকদিন পর।

আমি ফিরতে চাই আমার অবাক হওয়ার বেলায়...

- নতুনভাবে ফিরে আসুন।

শওকত মাসুম's picture


অনেকদিন পর দেখলাম। কেমন চলছে?

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.