র্যানসমওয়্যার ও সচেতনতা শর্টকাটে
কম্পিউটার কি?
কম্পিউটার হল দুনিয়ার সবচেয়ে বোকা জিনিষ। আপনি যেইভাবে বলবেন ঠিক সেইভাবে কাজ করবে।
হাল আমলের নতুন সাড়া জাগানো কম্পিউটার থ্রেট হল র্যানসমওয়্যার। ভাইরাস, ওয়ার্ম, এ্যাডওয়্যার, ম্যালওয়্যার, রূটকিট ফেলে এখন আমরা র্যানসমওয়্যারের যুগে। আগে মানুষ বিনোদনের জন্য ভাইরাস লিখে ছেড়ে দিত এরপর মজা দেখত। কিছু হ্যাকার টাকা পয়সার ছোট বড় চুরি চামারী করে। আর কিছু হ্যাকার ডিফেন্স ইনফরমেশন সংগ্রহ করে। এটা হয় বিভিন্ন দেশের সরকারী যোগসাজসে। মানুষ বাড়ার সাথে সাথে এখন মানুষের চাহিদা বেড়ে গেছে অনেক গুন সেই সাথে বেড়েছে টেকনোলজির পরিধি। ব্যাঙ্ক একাউন্ট হ্যাক করা এখন বেশ কষ্ট সাধ্য আর ধরা পড়ার সুযোগ অনেক বেশী। তাই আবিষ্কার হয়েছে র্যানসমওয়্যারের।
এখন প্রশ্ন হল এটা কি জিনিষ আর কাজ করে কিভাবে?
ছোটবেলা আমরা শুনতাম অমুক কে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বা অপহরণ করা হয়েছে, অস্ত্রের মুখে আটকে রাখা হয়েছে। ছাড়িয়ে আনতে হলে টাকা দিতে হবে। র্যানসমওয়্যার হল কম্পিউটার সিস্টেমের অপহরণকারীর ব্যবহৃত অস্ত্র আর তার মালিক হল অপহরণকারী। এখানে আপনার কম্পিউটার কে জিম্মি করে টাকা আদায় করা হবে। এটা যেকোন ভাবে আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ করতে পারে। ইমেইল এ্যাটাচমেন্ট হিসাবে, সাইট ব্রাউজিং, অনলাইন স্ট্রিমিং, যেকোন কিছু ডাউনলোডের সাথে, সিডি/ডিভিডি, ইনফেক্টেড যেকোন ইউএসবি স্টোরেজ থেকে। সাইজ কয়েক কিলো বাইট থেকে কয়েক মেগা বাইট হতে পারে।
এখন আসি এটা কিভাবে কাজ করে। এই প্রোগ্রাম গুলো সাধারণত অন্য কোন ডাটা ফাইল বা প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত অবস্থায় কম্পিউটারে প্রবেশ করে। প্রবেশ করার পর অন্য প্রোগ্রাম ইন্সটল করার সময় নিজ থেকে তার ইন্সটালেশন ট্রিগার করে। যার কারনে ইউএসি তে কোন সমস্যা হয় না। অনেক সময় ইউএসি কে পুরোপুরি বাইপাস করে ইন্সটল হয়। ইন্সটল হওয়ার পর পুরো কম্পিউটারের ক্রিডেনশিয়াল সহ সার্বিক তথ্য তার লেখকের / মেকারের নির্ধারিত সার্ভারে প্রেরণ করে পরবর্তী কাজের জন্য অপেক্ষা করে। সার্ভারে প্রাপ্ত তথ্য দেখে তার মেকার ভিক্টিম কম্পিউটারের ডাটা এনক্রিপশনের জন্য নির্দেশ দেয়। যা ডিক্রিপ্ট করার জন্য দরকারী প্রাইভেট কী / চাবি তার নিজের কাছে রেখে দেয়। অনেকে আবার এর সাথে পুরো কম্পিউটার লক করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কম্পিউটারে থাকা গান / ছবি / মুভিতে হাত দেয় না অনেক সময়। এইসব এনক্রিপ্ট করা সময়ের ব্যাপার। তারা টার্গেট করে বিভিন্ন ডকুমেন্টস ও অন্যন্য জরুরী ফাইল। কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর র্যানসমওয়্যার তার সেট করা বার্তা দেখায় যে কম্পিউটার এখন তাদের কব্জায়। আগের অবস্থায় ফিরে পেতে হলে টাকা দিতে হবে। টাকা কিভাবে দিতে হবে তার একটা লিংক দিয়ে রাখে পাশে। এই সময় ফাইল একসেস করতে গেলে হয় সেগুলো খোলা যায় না বা উল্টাপাল্টা দেখায়। আর সিস্টেম লক হয়ে গেলে কম্পিউটার বুট হয়ে সোজা তাদের সেট করা লক স্ক্রিনে এসে বসে থাকে আর সেই একই বার্তা দেখায়।
যদি কম্পিউটার আক্রান্ত হয় তাহলে কি করতে হবে?
আক্রান্ত হলে প্যানিক করার কিছু নেই। এটা অন্যান্য ম্যালওয়্যারের মতই একটা প্রোগ্রাম। সেই ভাবেই ট্রিট করতে হবে। সো ফার বাজারে বের হওয়া র্যানসমওয়্যারের জন্য অনেক রিমুভ্যাল কিট বের করেছে সফোস, ক্যাসপার্স্কি, নর্টন, মাইক্রোসফট সহ আরও অনেকে। তাদের সাইট থেকে কিট নামিয়ে ইন্সট্রাকশন ফলো করে দূর করতে পারবেন। র্যানসমওয়্যার দূর হওয়ার পর সবচেয়ে কাছের রিস্টোর পয়েন্ট থেকে ডাটা রিস্টোর করে নিন। ফাইল আবার আগের মত হয়ে যাবে যদি ঐ সময়ের মধ্যে রিস্টোর পয়েন্ট ক্রিয়েট হয়ে থাকে। না হলে ডিক্রিপ্ট করার সফটওয়্যারের সাহায্য নিন। এক্ষেত্রে সময় লাগবে অনেক।
তাহলে র্যানসমওয়্যার থেকে বাঁচার উপায় কি?
প্রিভেনশন ইজ বেটার দেন কিউর। এই কথা সবসময় মনে রাখবেন। অপরিচিত মেইল খুলবেন না। স্প্যাম মেইল দেখলেই চেনা যায়। সোজা ডিলিট। ফ্রী আইফোন লেখা দেখে চোখ মুখ বন্ধ করে ঝাপিয়ে পড়বেন না সেই লিংকে। দেয়ার ইজ নাথিং কল্ড ফ্রী লাঞ্চ। একই কথা সব সোস্যাল সাইটের জন্য। মেয়েটা সবার সামনে এই কাজ করল লেখা আর একটা ছবি দেখে ক্লিক দিবেন না। দিলেই শেষ। ডাউনলোড করা ফাইল আগে ভালো করে চেক করবেন এর পর চালাবেন। দুই নম্বর এ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করবেন না। প্রায় ১০ ভাগ কেইসে এই জিনিষ দেখা গেছে। ডার্ক ওয়েব বা তা সংক্রান্ত সফটওয়্যার নিয়ে ঘাটাঘাটি করবেন না। ওটা আপনার জন্য কোন কাজের জিনিষ না। আরও বড় বিপদে পরবেন। যেহেতু প্রতিদিনই ম্যালওয়্যার মেকাররা তাদের প্রোগ্রাম আপডেট করে তাই আপনিও আপনার সিস্টেম আর এ্যান্টিভাইরাস আপডেট রাখবেন। ফাইল ডিক্রিপশনের ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে আজই সিস্টেম রিস্টোর পয়েন্ট চালু করুন সব ড্রাইভে। যাতে কিছু হলে পুনরায় ফিরে যেতে পারেন। আলাদা কোন পোর্টেবল ড্রাইভে বা ক্লাউডে দরকারী ফাইল সমূহের কপি সেভ করে রাখুন। সর্বোপরি আপনার সচেতনতাই আপনার একমাত্র রক্ষাকবচ।
বস্, যারা নিয়মিত উইন্ডোজের সিকিউরিটি আপডেটগুলা ইনস্টল করে, তারা
এই ক্ষেত্রে কতটুকু ঝুঁকির মুখে আছে?
মীর ভাই সেফেস্ট কম্পউটার হল যে কম্পিউটার এখনও এ্যাসেম্বল করা হয় নাই
নিয়মিত আপডেট করলে ঝুঁকি ৯০-৯৫% কমে যাবে। এইসব কাজ যারা করে তারা আর ১০ টা প্রোগ্রামারের চেয়ে একটু বেশী বুদ্ধিমান হয়। খুঁজতে খুঁজতে হয়ত কোন লুপ হোল বের করে ফেলতেই পারে। তবে সেইটার সম্ভাবনা খুব কম। বেটার হল সব সিকিউরিটি আপডেটেড রাখা। ব্রাউজারে এডব্লক ব্যবহার করা সবসময়। আর যেহেতু উইন্ডোজ এখনও সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেম তাই এর জন্য ম্যালওয়্যার বেশী লিখা হয়। আপনি বেটার হয় সব কিছুর আলাদা একটা ব্যাকআপ রাখেন। র্যানসমওয়্যার এ্যাটাক না হলেও যদি এমনি হার্ডওয়্যার ফেইল করে তাহলে ঝামেলা হবে না।
থ্যাংকস্ শাতিল ভাই, জটিল একটা বিষয় সহজভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য। য়ু আর আ গুড ম্যান
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব টা এতো বিশাল আঁকার ধারন করতেসে যে এইখানের কোন কিছুকেই আসলে হ্যাক প্রুফ করা সম্ভব হবেনা কারন অনেক অনেক প্রোগ্রাম জড়িত! একটারে আটকাইবেন তো আরেকদিক দিয়ে ধুকবে! এমন অনেক কিছু ব্যবহার করি আমরা যা আমরা কন্ট্রোল-ও করি না!
কথা আসলে এইটাই আর আল্লাহ আল্লাহ করা যেন কেউ...
মন্তব্য করুন