ইউজার লগইন

অজানা পরিচয়ে

“বেবুন পিঠা খাবি?”
“না”
“সিংগারা খাবি?”
“না।”
“আচার খাবি?”
“বলছি তো, খাবো না!!! আর আমাকে বেবুন বেবুন করছেন কেন? আমার নাম বেবুন না।”
“বাবা রাগ করছস? তোর বাপের উপর রাগ করছস?। কতদিন বাদ তোরে দেখতাছি।”

আমি লোকটার চোখে দিকে তাকালাম। তাতে পানি এসে গেছে। বুঝতে পারছি না কি করবো। আমি নিশাদের বাড়ির প্রাচীরে বসে আছি, নিশা জানলার কাছে এলেই গান ধরবো। এই উটকো ঝামেলার জন্য পারছি না। মাথা ঘুরিয়ে নিশার জানালার দিকে তাকালাম। মেয়েটা চলে এসেছে। আমি গলা ঝেড়ে গান শুরু করলাম, “মাই নেম ইস শিলাআআআ”...”বেবুন, জানিস তোরে আমি কত খুজছি। কোনঠেও পাই নাই।”
মেজাজ চড়ে গেল। নিশা দেখছে তাই আবার চেষ্টা করলাম, “শিলা কি জাবানীইইই...” “ তোর জইন্য আমার অনেক মন পুড়ায় বাপ।”
“তেরে পাস না আউউউউউ...” “পান খাবি বাপ? খয়ের দিয়া পানা বানাই দি?”
“বললাম তো পান খাবো না!!! কথা কানে যায় না???”
দড়াম করে নিশার জানালা লাগানোর শব্দ পাওয়া গেল। মাথায় আগুন ধরে গেছে। প্রাচীর থেকে লাফ দিয়ে নামলাম।
লোকটা রাস্তায় বসে কাঁদছে। সাদা টুপি মাথা থেকে পড়ে গেছে, ধুলো লাগছে সাদা পাঞ্জাবীতে । শুভ্র দাড়ি বেয়ে টুপ টুপ করে চোখের পানি পড়ছে।
এই ধরণের বয়স্কদের কান্নায় কিছু একটা আছে। আমার রাগ চলে গেল। নিত্যান্ত অপরিচিত হওয়া সত্ত্বেও তার পাশে গিয়ে বললাম,
“সিংগারা খাবো, সাথে এক কাপ লেবু চা।”
লোকটা চোখে পানি নিয়েই চা আনতে চলে গেলেন। আমি উলটো দিকের গলি থেকে একটা সিংগারা আর চা এনে খেতে লাগলাম।
“ও আল্লাহ!! এগুলা আইলো কোত্থাইকা!??
“কেনো? আপনিই তো এনে দিলেন। এনে বললেন আপনিও এক কাপ খাবেন। তাই আবার আনতে গেলেন।”
লোকটাকে বিভ্রান্ত দেখালো। চিন্তিতভাবে চায়ে চুমুক দিয়েই মন ভালো হয়ে গেল তার।
“তোরে দ্যাইখা মন জুড়ায় গো বাপ। তুই কত তাল ধরতি মেলায় যাওনের লাইগ্যা।”
আমি চুপ চাপ চা খেয়ে যাচ্ছি।
“তোর মায়ে কইছিল তোর জন্যি শনপাপড়ি আনতে। আনতি পারি নাই বাপ। কই ছিলি তুই?”
চা শেষে সিগাঙ্গারায় কামড় দিলাম।
“তুই রাগ করছস বাজান? কতদিন বাড়িত আসিস না”
আমার সিংগারা শেষ হয়েছে। আমি উঠে পড়লাম। তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“চাচা, আমি আপনার ছেলে বেবুন না। তবে আপনি আমাকে বেবুন বলে ডাকতে পারেন। রাগ করে বলছি
না। সত্যিই বলছি। আপনি চাইলে আপনার ছেলেকে খোজার চেষ্টা করতে পারি।”
ভদ্রলোক খনিক চেয়ে রইলেন। তারপর কান্তভাবে ধীরে হেটে চলে গেলেন।
আমি নিশার বাড়ি অর্থাৎ নিজের বাড়ির পথে হাঁটা ধরলাম। আমার স্ত্রী নিশা। বেসুরে গলার গান শুনে নিশ্চয় অনেক ক্ষেপেছে। ক্ষেপানোর জন্যই গাওয়া।
এই ভদ্রলোকের জন্য মততা লাগছে। মানুষ হারিয়ে যায়। কেউ মেনে নেয়, কেউ অন্য কারো মধ্যে তাকে খুজে ফেরে। কিন্তু ঠিক তাকে কি পায়, যাকে হারিয়ে ফেলেছে?
আমার পরিচয় যে কেউ হতে পারে। পবন , আকাশ কিংবা তার হারিয়ে যাওয়া বেবুন। কি যায় আসে।

পোস্টটি ৫ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

জয়'s picture


ভালো লেগেছে।
শেষ কথাগুলো অসাধারণ।

শাহরিন রহমান's picture


Smile ধণ্যবাদ

তানবীরা's picture


ভাল লেগেছে Laughing out loud

শাহরিন রহমান's picture


Smile

নিঃসঙ্গ একাকিনী's picture


সত্যিই অন্যরকম এবং সুন্দর

শাহরিন রহমান's picture


Smile

সামছা আকিদা জাহান's picture


ভাল লাগলো Smile

শাহরিন রহমান's picture


Smile

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

শাহরিন রহমান's picture

নিজের সম্পর্কে

আমার লেখার জগতটাকে খিচুড়ি বলা যেতে পারে। কবিতা, গান আর নিজস্ব কিছু চিন্তাভাবনা + ভালোবাসার মেশেলে একটা অনুভুতিময় জগৎ। প্রিয় পাঠক, আমার খিচুড়ি Type লেখার জগতে আপনাকে সুস্বাগতম।