স্বপ্নভঙ্গ
আমার মূলত পরিচয় ছিলো যুবকের স্বপ্নটার সাথে। কান্নাটুকু দেখতে হয়েছিলো বলেই, পিছনের স্বপ্ন আর স্বপ্নভঙ্গটুকুও দেখা হয়ে গিয়েছিলো।
স্বপ্নটা যুবকের একার ছিলো না আসলে। একটা যৌথ স্বপ্ন ছিলো যুবকের, আর যুবকের যুবতীর। সুখী দুই ছেলে-মেয়ে। হাসে-খেলে আর সংসার করে টোনা-টুনির। সেখান থেকেই জন্মেছিলো জানি, যুবতীর বুকে স্বপ্নের বীজটা। যুবক হাত ধরেছিলো যুবতীর স্বপ্নের - সংসারে আরো একটা মুখ আসবে। মেয়েটার পরিবার ছেলেটাকে আপন করেনি তেমন করে, কিন্তু নতুন মুখের সেই জণ্ত্রনা হবেনা। সব অনাদর তারা ভুলে যাবে একটা নতুন মুখের দিকে চেয়ে। কিন্তু বড্ড ছেলেমনুষ দুজনেই। জানেনা, একটা স্বপ্ন লালনে কতটা কষ্ট হবে। থোড়াই কেয়ার করলো তারা...স্বপ্নটার বীজ বুনে দিলো।
প্রথম যেদিন জানলো তারা, তাদের স্বপ্নের সফল অঙ্কুরোদগম, যুবতী তার প্রাচীন জীবনের সব কষ্ট ভুলে জড়িয়ে নিয়েছিলো যুবকের শরীর। প্রচন্ড সুখের আবেশে অবশ ছিলো প্রায়...
স্বপ্ন খেলে বেড়ায় দুজনের চোখে। আর স্বপ্নটা মুলত বড় হতে থাকে মেয়েটার শরীরের ভেতর, যুবতী টের পায় বুকের ভেতর। চপল যুবকের হাসিগুলে বেড়ে গিয়ে একশ ওয়াটের উজ্বল আলো। আমি দেখেছিলাম সেই আলোর চিকনাই। অকারন হাসতো ছেলেটা, অকারন লজ্জ্বা পেতো যুবতী। ছেলেমানুষ দুটো আসতে আসতে বড় হচ্ছিলো-- ছেলেটা নিজের অজান্তে ধীরে ধীরে বাবা হিসেবে বেড়ে উঠছিলো যুবতীর ভেতর, যুবতী "মা" হচ্ছিলো নিজের ভেতর।
হাজার হাজার খুনসুঁটি সারাদিন, মাস----
চাকরীর জন্য ছেলেটা শহরের বাইরে। তবু টোনা-টুনির আলাপ থামেনা। ফোনে থাকে সারারাত, তাও কথা ফুরায় না।
মেয়েটা নিজের ভেতর যেদিন স্পষ্ট টের পায়, তার সোনা-মানিক কে, আনন্দে দিশেহারা, ফোন করে তখুনি আসতে বলে ছেলেটিকে - "চলে আয় চলে আয়" ডাক ছড়িয়ে পরে সমগ্র শরীরে যুবতীর...সে "মা" হতে যাচ্ছে-----
"আমার নিজের একটা অংশ আসবে পৃথিবীতে, আমি "মা" হবো "মা"...চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে মেয়েটির..পাগলামী ভেবে বলেনা, তবুও তার হাসিতে সারা দুনিয়া টের পায়, মা হবে মেয়েটা, মা হবে...আর রাতে শোবার ঘরে ছেলেটাকে বলে, "বাবা হবে তুমি"-----যুবক টের পায়, কথাটার অর্থ "মা" হচ্ছি আমি"....হা হা হা।
ছেলে হবে না মেয়ে হবে??
ছেলেটা ভাবে, মেয়ে হলেই ভালো হয়--------তারপর আবার দ্বিধা, "নাহ ছেলেই হোক"..."নাকি?"
মেয়েটা হাসে, বলে, "বাবাই জানেনা, কি চাই তার, আবার শখ বাবা হবার?"
আনন্দের একেকটা স্রোত একেকদিন বয়ে যায়-----সেই সময়টার কথা আমি জানতাম-----ওদের আনন্দ ভালো লাগতো আমার খুব-----
৩১ সপ্তাহে মেয়েটা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলো--------ক্যু ডাকে মায়ের মনে, "মা" হতে যাওয়া মেয়েটা নিজের মাকে ডাকে, "মা".."মাগো"....
দৌড়া-দৌড়ি হাসপাতালে...
হাসপাতালে আত্মীয় স্বজন বলে, বাঁচানো যাবেনা সন্তান টা------মেয়েটারও অনেক কষ্ট----আমি শুনেছিলাম সেই সব আত্মীয়দের কথাও, তখন আমি হাসপাতালেই ছিলাম--------
অপারেশনে মেয়েটি, আমরা বাইরে কয়েকজন চা খাই---------
ওটি থেকে বেরিয়ে আসে ছেলেটি-------চোখে পানি, বলে, আমার একটা মেয়ে হয়েছে-----চোখের পানি দেখে আমরা জানতে চাইতে ভয় পাই, সুস্থ আছে তো দু'জনেই-------তবু কেউ জানতে চায়..
ছেলেটি জানায়, ভালো আছে, কিন্তু বেবিটার ওজন অনেক কম, ৩২ সপ্তাহের বেবি'র ওজন ১ কেজি------
তারপর অনেক কসরতে মেয়ে সন্তান আলো করে আমাদের মুখ----যুবতী অচেতন-----পোস্ট অপারেটিভ রুমে মরফিনের প্রভাবে।
এত কম ওজনের বাচ্চা রাখার ভালো সুবিধা নেই ক্লিনেকে, তাই দৌড়াও ভালো যায়গায়, বারডেমে-------
সন্ধ্যায় জেনে নেই------ভালো আছে সবাই।
একদিন পরে ফোন দেই, যুবক জানায়, ভালো আছে সব। সন্ধ্যায় আবার ফোন------
দুই দিন পরে আবার যাই যুবতীর সাথে দেখা করতে, যুবকের সাথে সময় কাটাতে---
আত্মীয় স্বজন ক্ষনে ক্ষনে মেয়েটাকে বোঝায়, ইমম্যাচিউরড বেবি বড় হলে কত সমস্যা----যুবক জানায়, বেবিটা ভালো নেই। আমিও প্লেইড এ্যলোং।
ঐদিন সন্ধ্যার ফোনেই জানিয়েছিলো যুবক, তার মেয়েটা আর বেঁচে থাকেনি। আজিমপুরে----------মেয়াটা জানেনা----
আমি কিছু সময় কাটাই। যুবতীকের দেখি--"মা" হতে নিচ্ছিলো মেয়াটা-
আমি যুবক কে দেখি, মেয়েটাকে শান্তনা দেয়, নিজের কষ্ট চেপে রেখে..
মায়ের সাথে সৃষ্টিকর্তার এই খেলায়, আর কারো কোনো ভুমিকা নেই। শুধু রাগ হতে পারে আমার..
যুবতী যখন আত্মীয়দের দেখানো ভয় গুলো শুনে বড় বড় চোখে, আমি ইশ্বরের পক্ষ নিতে পারিনা কোনোমতেই কেনো যেনো---
মন খারাপ হয়ে গেল।
দারুন লেখনী , মুগ্ধ হয়ে পড়লাম।
হুমম, মনটা আমারো খারাপ-----তাই শেয়ার করলাম। পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
মা হওয়ার অনুভূতি কেমন সেটা বলে বুঝানো হয়তো সম্ভব না কোনদিনও, তবুও লেখাটিতে মেয়েটির অনুভূতি গুলো পড়ে মনে হচ্ছিলো.... আমার এখনকার অনুভূতি গুলোকে যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি।
কিন্তু, শেষে'র পরিনতি মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। এমনটি যেন কারো জীবনে না হয়।
সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন
অনেক অনেক দোয়া আপনাদের জন্য, অবশ্যই যেনো এমনটা কারো না হয়-------
আর একজন মায়ের অনুভুতি কি হতে পারে, সেটা আসলে আমার বুঝা সম্ভব না, এইজন্য মায়েদের জন্য অনেক শ্রদ্ধা--
অনেক ভালো থাকেন, আপনার পরিনতি আপনার চাওয়ার মত আনন্দের হোক--
আমার মেয়েটাও ৩২ সপ্তাহে জন্মেছিল,আল্লাহর অশেষ রহমতে পরীটা আমার সামনে হেসে খেলে বেড়ায়।মেয়ে টা যখন গর্ভে ছিল তখনও মাকে জালিয়েছে,জন্মের পর তো মায়ের কাছে বেশীক্ষন ছিলনা,কাচের ঘরে বন্দি ছিল অনেকদিন,এখন ও তার নাওয়া খাওয়া দুস্টামি কান্নাকাটি তে অস্থির থাকি,তারপরো মনে হয় ও না থাকলে আমার জীবন তো পুর্ন হতনা,ওর হাসিভরা মুখ না দেখলে আমার দিন কাটেনা।
আপনার পরীটা অনেক কিউট মাশা-আল্লাহ। কোলে নিতে ইচ্ছা করে আড্ডার সময়, কিন্তু জনগনের ভিড়ে চান্সই পাইনা-----:(
হাহা, যে মেয়ে বেশি জালাইছে মাকে, সেই মেয়েটা বেশি আদরের হবে, বেশি আপন হবে...
পরীটা অনেক অনেক ভালো থাকুক, আপনারা সবাই আনন্দে থাকুন--
আমরাও নিত্যই পরীটার হাসিমুখ চাই---
এইসব পড়তে আমার ভালো লাগেনা।তার পরেও কেন জানি পড়া হয়ে যায়...আর চোখ ঝাপসা হয়ে যায়.........
মনটাই খারাপ হইয়ে গেল...।
আমারো লিখতে ভালো লাগে না ভাই, তবু কেনো যেনো লিখছি---
কষ্ট, কষ্ট....
কষ্ট--
দোস্তো তুমার পাও দু'টা একটু আগায় দাও। কদমবুছি করমু...
ধুরু ফ্রেন্ড, কি যে কও----
শুনলাম নয়া চাকরীতে জয়নাইছো? পার্টি-মার্টি কবে?
কিছুই বলতে পারছি...
ভয় ধরলো মনে
ভয় আর যাদের হয়, কষ্ট তাদের--
........আল্লাহ তাদের এই ভার বহনের শক্তি দান করুন ।
আল্লাহ তাদের এই ভার বহনের শক্তি দান করুন ।
লেখাটা পড়ে থমকে গেলাম। আল্লাহ তাদের ধৈর্য দিক। আর কারো জীবনে এমন ঘটনা না ঘটুক।
হ্যা, ধৈর্য্য আর সাহস জোগানো ছাড়া আর কিছু করারও তো নাই ঐ মায়ের....কত কষ্টে সে ভুলবে কে জানে?
আর কারো জীবনে না আসুক...
একটা আনন্দের লেখা দাও ভাই
জি আপু, আনন্দের সময়ে একটা আনন্দের লেখা দিবো?
আপনার দিন কেমন কাটতাছে? অপনা মজা পাইতাছে?
আমিও নুশেরার মতো বললাম, একটা আনন্দের লেখা দেন।
হ্যা, দিবো, কিন্তু দুখের সময়ে একটা দুখের লিখা লিখলাম আরকি, কেমন আছেন মাসুম ভাই?
মন বিষন্ন করা লেখা
আমি জানি কাঁকন।
অনেক দিন পরে আবার রেগুলার দেখতাছি, ব্যাস্ততা কমছে মনে হয়?
বছর দেড়েক আগে আগে আমার বোনের ফুটফুটে একটা বাচ্চাকে কবরে শুইয়ে দিয়ে এসেছিলাম। বয়স তার বোধহয় ৩০-৩১ সপ্তাহ হবে। কত মিনিট নিঃশ্বাস নেবার সুযোগ পেয়েছিল পৃথিবীর বায়ুতে আমরা কেউ জানি না। অপারেশান থিয়েটারের হৈ চৈ থামতে না থামতেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছিল সে। মিষ্টি মেয়েটিকে আর সপ্তাহখানেক মায়ের গর্ভে রাখলে বাচতো। কিন্তু তার মা বাঁচতো না। মাকে বাচাতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তাকে ত্যাগ করতে। ওই পরীটার চেহারা আর কেউ দেখেনি, কেবল আমি কবরে শুইয়ে দেবার সময় সাদা কাফন সরিয়ে দেখেছিলাম। কি মিষ্টি নিষ্পাপ মুখটা ঝাকড়া চুল মাথায় নিয়ে ঘুমিয়ে আছে। এখনো চোখে জল ভর করে মনে পড়লে।
এতটুকু বাবুটা, লাল টুকটুকে, নাকে অক্সিজেন নলটাও কত সরু----একটা জীবন্ত মানুষ, কিন্তু কি অসহায়....
নিজে কান্নার সুযোগ পায়নি, কিন্তু এক মায়ে কতখানি কান্না রাইখা গেছে-----
কারো যেনো এই কষ্ট না পেতে হয়..
মন খারাপের হাত ধরে এখন বসে আছি।
আমরা এমন মন খারাপ করতে চাইনা---
........................................................
কিছু বলার থাকেও না...
মানুষ হিসেবে অপছন্দ করলেও ওরিয়ানা ফাল্লাচ্চির "হাত বাড়িয়ে দাও" [মূল নাম মনে নাই, অনুবাদ- আনু মোহাম্মদ] বইটা আমার খুব পছন্দের।
আপনার গল্পটা পড়ে বইটার কথা মনে হলো।
লেখাটা জোশ হইছে। জোশ। যদিও শেষটা খুব কষ্টকর
ওরিয়ানা ফাল্লাচি? পড়িনাই....আছে নাকি আপনার কাছে, থাকলে দিলে পড়তে পারতাম, আমি বই ফেরৎ দেই(বেশির ভাগ সময়ই)....
সন্দেশ বা সংহতি ২ টা প্রকাশনীতেই আছে বইটা । অসাধারণ একটা পিস । দাম বেশি না - ৬০ মনে হয় ।
সহজ প্রাপ্য নাকি বইটা?
আমি ইশ্বরের পক্ষ নিতে পারিনা কোনোমতেই কেনো যেনো---
ইশ্বর কখনো কখনো প্রয়োজনের চেয়েও নিষ্ঠুরতা করে বৈলা মনে হয়....
.........................
কিরে, তোর খবর কি? সব চুপচাপ যে?
ঈশ্বরে বিশ্বাস নাই এই কারণেই।
মন খারাপ করা একটা লেখা।
ইশ্বরের সব সিদ্ধান্ত ভালো লাগেনা-----এইরকম কিছু জিনিষ----
মন্তব্য করুন