ইউজার লগইন

পাহাড়-ঝরনা-ছড়া-মেঘ-কুয়াশা-নদী-ক্ষূদ্র নৃগোষ্ঠী আর রহস্যময় পাহাড় / ঘুরে এলাম বগালেক-কেওক্রাডং-তাজিংডং-নাফাকুম

পাহাড়-ঝরনা-ছড়া-মেঘ-কুয়াশা-নদী-ক্ষূদ্র নৃগোষ্ঠী আর রহস্যময় পাহাড় / ঘুরে এলাম বগালেক-কেওক্রাডং-তাজিংডং-নাফাকুম
--শাশ্বত স্বপন

১ম পর্ব

গত এক বছর ধরে নানাবিধ আলোচনার মধ্য দিয়ে পুরান ঢাকার কয়েকজন বন্ধু বান্দরবানের গহীনে যাওয়ার মহাপরিকল্পনা করে। যাওয়ার আগে হিমালয় বিজয়ী মুসা ইব্রাহীমের যোগ্য শিষ্য সুহৃদ মেহেদী হাসান তালাতের নেতৃত্বে ট্র্র্যাকিং এর বিশেষ প্রস্ততি হিসাবে সবাই তিন মাস ধূপখোলার মাঠে ব্যায়াম করে এবং তারই নেতৃত্বে গত ২৪ শে জানুয়ারী রাতে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে সবাই যাত্রা করে। প্রকৃতির পাহাড়-ঝরনা-ছড়া-মেঘ-কুয়াশা-নদী-ক্ষূদ্র নৃগোষ্ঠী আর রহস্যময় পাহাড় ঘেরা দীঘির অপার সৌন্দর্য হল বান্দরবান। গহীন পাহাড় ঘেরা অরণ্যের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য নানা উপকরণ নিয়ে পাঁচ সদস্যের সুহৃদ, ২৫ তারিখ সকালে বন্ধু হোসেন এর বাসায় প্রাতঃক্রিয়া শেষ করে হাফেজ ঘোনায় রোমা বাস স্ট্যান্ডে চলে আসে। তারপর লোকার গাড়িতে চড়ে রোমা বাজারের পথে নতুন ব্রীজের কাছে ব্রীকফিল্টে নেমে আবার চান্দের গাড়ীতে চড়ে ধূলো-বালি মেখে মুরংগো বাজার হয়ে মুরং, খুরমী উপজাতিদের বসতি আর দু’পাশে পাহাড় আর গিরিখাদ দেখতে দেখতে আঁকা-বাঁকা-উঁচু-নিচু পিচ ঢালা ১০-১২ ফুটের প্রশস্ত রাস্তা দিয়ে মাঝে-মধ্যে গাড়ি কাত হয়ে পড়ি পড়ি অবস্থায় আজরাইলের সাথে যুদ্ধ করে গাড়ি চলছে। মনে করেছিলাম, বাস রোমা বাজারে এসে থামবে। লোকাল চান্দের গাড়িতে উঠে সবাই ভীত ও বিরক্ত ছিল। 1510719_203615573179499_1657754106_n.jpg

গত বছর কেওকাড়াডং বিজয়ে কৈক্ষংছড়ি নেমে সাঙ্গু নদী দিয়ে রোমা বাজারে এসেছিলাম এবং সেটাই ভালো ছিল। তবে এবার সাঙ্গু নদীতে পানি খুবই কম। ছোট ছোট বাচ্চারা হাঁটু জলে নেমে বালু জমিয়ে টিলার মত স্তম্ব বানাচ্ছে। এটা দেখে আমার ছোট বেলার নদীর তীরে জল-বালু খেলার স্মৃতি মনে পড়ল। লম্বা লম্বা নৌকা, বাঁশ এর বড় বড় ভেলা উপজাতি পুরুষরা কোথা যেন টেনে নিয়ে চলেছে। জলের নিচে পাথর এর সাথে বাঁধা পেয়ে জলে ভাসমান ভেলা, নৌকা থেমে থেমে চলছে। সাঙ্গু নদীর জল চিরকাল একদিকে স্রোতমান , ময়লা জমে না। কোন কিছু পঁচে না। তাই সবাই এ জল দিয়ে জীবনের ধারা রচনা করে চলেছে। অবশ্য যেখানে ঝরণা আছে, সেখানকার বাসিন্দারা ঝরণার জল সব কাজে ব্যবহার করে। বাঙ্গালী ও উপজাতি সবাই হাঁটু জলডুবা জলে নৌকা, বাঁশ, স্নান নিয়ে যেন গদ্য কবিতা রচনা করে চলেছে। পাহাড় চেয়ে চেয়ে সব দেখছে। পাহাড়ের উপরে, সাঙ্গুর তীর ঘেঁষে ছোট ছোট টং ঘর দেখা যায়। কোনটা স্থায়ী বসতি কোনটা জুম ফসল তদারকীর জন্য গড়ে উঠেছে। আমাদের অবাক লাগে ঐ জুম টং ঘরে শুধু একটা মানুষ ছয় মাস বা এক বছর পর্যন্ত একাকী বাস করে। পাহাড়, নদী, মানুষ, কুয়াশা ঘেরা প্রকৃতি এত সুন্দর! মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা কি পথ হারিয়ে স্বর্গে চলে এসেছি। ১১টায় রোমা বাজারে এসে সবাই নামলাম। যাই হোক, বরাবরের মত এখানে আসার পরই মনে হয়, এটা আমার দেশ নয়। কারণ দুপুরের খাবার পরই বিজিবি’র কাছে অনুমতির যেতে হয়। আনুসাঙ্গিক নিয়ম মেনে হোসেনের ঠিক করা গাইডকে নিয়ে বগালেক এর পথে যাত্রা শুরু করলাম।

নানা গাছ-গাছালী, বিশেষ করে লম্বা লম্বা ঘাস জাতীয় গাছের ফাঁকে ফাঁকে সরু ঢেউ খেলানো বন্ধুর পথে পিঠে মালসমেত দশ কেজির ব্যাগ নিয়ে বগালেকের পাহাড়ে উঠছি। বন্য কাশফুলের দুই সারি পথে চলতে মনে হল, দু’পাশে ফুল নিয়ে মানুষ যেন দাঁড়িয়ে আমাকে ফুলেল শুভেচ্ছা দিচ্ছে, আমি যেন হোমড়া-চোমড়া কিছু একটা। এক ঘন্টা ধরে একা একা হাঁটছি। খুব ক্লান্ত, পা আর চলতে চায় না। সবার আগে আমি, অথচ সবার আগে থাকার কথা গাইড আর মেহেদীর । আমাদের ব্ল্যাক বেল্টধারী শওকতের অবস্থা খারাপ। তাই ওকে সাহায্য করার জন্য দু’জনেই পিছনে। আমার ডান পাশে গিড়িখাত, অনেক ঢালু আর নিচু, মাঝে মাঝে বাঁশঝাড়। শীতের প্রকৃতি বলে পাতা শূণ্য অনেক গাছপালা দেখা যায়। কুয়াশা ঘেরা দূরের পাহাড় আর টিলা। ঢেউ খেলানো পাহাড় আর টিলা যেন আকাশে হেলান দিয়ে আছে। যেন, কোন ছবিকরের আঁকা পাহাড়ী চিত্র । নিজের অজান্তে রবীন্দ্র সংগীত বেজে উঠল মনে, গাইতে শুরু করলাম, আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় পাহাড় ঘুমায় ঐ...। কিভাবে এ পাহাড়গুলো সৃষ্টি হল, খুব জানতে ইচ্ছা হয়। শওকত আর দাঁড়িওয়ালা পুলিশ সাজেন্ট এক বাক্যে বলে দেয়, আল্লা বানাইছে, কিন্তু ওদের কথায় আমি স্বস্তি পাই না। আমি প্রাগঐতিহাসিক কাহিনী আর ভূতত্ত্ব জানতে চাই।

1743460_203615756512814_467348109_n.jpg মাঝে মাঝে চোখে পড়ে কাঁটা গাছের গোড়া, পাহাড় কাঁটার চিহৃ--এবারের ভ্রমনে নির্বিচারে পাহাড় আর গাছ কাঁটার দৃশ্য দেখেছি। আগামী বছর যদি এবারের তোলা ছবির সাথে মিলিয়ে দেখি, হয়তো অবাক হতে হবে। এক বগালেক ও আশেপাশে যেভাবে পাহাড়, গাছ কেঁটে তথা প্রকৃতি ধ্বংশ করে বসতি আর জুম চাষ করা হচেছ তাতে আগামী দশ বছরে বগালেকের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। ২৭০০ ফুট উপরে উঠে দীঘিতে গোসল সেরে বিকাল-গোধূলী-সন্ধ্যা-পূর্ণিমার রাত এ পাহাড় ঘেরা লেকের রূপ উপভোগ করে সিয়াম দিদির বিখ্যাত হোটেলে ডিম ঝোল,আলু ভর্তা, ডাল, পাহাড়ী শিম বিচির তরকারী দিয়ে জুম চালের আঠালো ভাত খেয়ে ঘুমাতে গেলাম। গত বছর উত্তরের কটেজে রাত্রি যাপন করেছিলাম। 1621999_203615806512809_425314029_n.jpg

এবারও সেই বাঁশ, বাঁশের তৈরী বেঁড়া, দরজা, ছাদ, পাটাতন আর বেত এর দড়ি দিয়ে নিপূণ উপজাতীয় প্রাকৃতিক অতিথি নিবাস এ মহাক্লান্তির ঘুম এর রাজ্যে হারিয়ে গেলাম বিছানা যাবার দশ পনের মিনিটের মধ্যেই। ২৬ তারিখ সকালে কেওক্রাড়াডং এর পথে ঝিরি পথ দিয়ে শুরু হল পদ যাত্রা। চিংড়ি ঝরণা থেকে পানি নিয়ে চলতে চলতে দার্জিলিং পাড়ার মাইদুং দিদির দোকানে চা পান করে দুপুর দেড়টায় কেওকারাডং এ পোঁছলাম। এই পাহাড়ের মালিক লালা মামার নতুন করে গড়া ঘরের দোতলার বারান্দায় গত বছরের টাঙ্গিয়ে রাখা ‘ কেওকাড়াডং-এ আমরা সুহৃদ’-- ব্যানার দেখে আমরা বিস্মিত! 1514960_203614749846248_387152332_n.jpg

পোস্টটি ৯ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

শাশ্বত স্বপন's picture

নিজের সম্পর্কে

বাংলা সাহিত্য আমার খুব ভাল লাগে। আমি এখানে লেখতে চাই।