ইউজার লগইন

প্রিয় সামিউলের বাবাঃ কে এম আজম।

জনাব কে এম আজম, আপনাকে নিয়ে আমি ভীষন চিন্তা করছি আজ অনেক দিন ধরে। অনেক গুলো নিউজ পেপার পড়ছি আজ ক'দিন ধরে। কি যে কষ্টে আমার দিন যাচ্ছে তা আপনাকে বুঝাতে পারবো না। চোখ বন্ধ হলেই আমার মনে হয়, সামিউল যেন আমাকে বলছে! আমার বাবা ভাল আছে তো?

ঠিক সামিউলের মতই আমার একটা ছেলে আছে। আজমাইন, ক্লাস ওয়ানে পড়ে। এমনি গোলগাল মখূবরন, টুকটুকে, সোনাচাঁদ মুখ! জানেন দিনের শেষে চাকুরী ছেড়ে যখন বাসায় যাই, ছেলেটা টুলে দাঁড়িয়ে দরজার ছিটকানী খুলে। বলে, বাবা কেমন আছে? আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, বাবা আজ তোমার বস বকেনিতো? আরো বলে, বাবা গোসল করে এস, আমার অনেক কথা আছে?

ভাই কে এম আজম। আপনার সামিউলও নিশ্চয় আপনার সাথে এমন করতো। আপনি ও আমার মত, সামিউলকে কোলে নিয়ে আদর করতেন বলতেন, আমার গায়ে ঘামের গন্দ - দূরে সরো সামি। আমি ফ্রেস হয়ে আসি, আজ তোমাকে অনেক আদর করবো। আপনিও হয়ত আমার মত সামিকে সারা মুখে আদর করে, শেষ আদরটা করতেন ঠোঁটে! আর এতে সামি যেত রেগে। হাত পা ছুড়ে বলতঃ বাবা, তুমি ঠোঁটে আদর করবে না। আর এতে হয়ত আপনার আদরের মাত্রা আরো বেড়ে যেত। সামি দুই হাত দিয়ে তার ঠোঁট লুকিয়ে রাখতো! বাবা, তুমি আমার ঠোঁটে আদর করতে পারবে না! চ্যালেঞ্জ!

চ্যালেঞ্জ! বিরাট কিছু যেন! দাঁড়ারে সামি, আজ তোর এক দিন কি আমার একদিন! আজ তোকে সরি বলাবোই। এরপর সামি চিত হয়ে শুয়ে পড়ল। সামির মুখ লুকানো! আর আপনার চেষ্টা, যে করে হউক, সামিকে 'সরি' বলাতে হবে। শুরু হল বাবা ছেলের কুস্তাকুস্তি! নানা কসরত করে, সামিকে উল্টা করলেন অনেক কষ্টে। সামি দু, চারটা লাথিও মেরে ফেলল। অনেকটা আমেরিকার রেস্লারদের মত। এক পযায়ে সামি ধরাশয়ি! আপনি দুহাত চেপে সামির ঠোঁটে আপনার ঠোঁট লাগাবার চেষ্টা করছেন, এমন সময় সামি বাঁচার জন্য - কেঁদে দিল। তবুও সরি বলবে না!

আমার মত হয়ত তখন বুকে টনে, কোপালে মুখ রেখে বলতেন, ওকে বাবা, থাম আর কাদিস না - আর করবো না। আই এম সরি! চুপ কর।

কয়েকদিন আগে আমার ছেলের মত এক সকালে আপনার সামিও হয়ত পড়ছিলো - কাঁঠাল নিয়ে ৫টি বাক্য রচনা! কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। আপনি শুধু কাঁঠাল কাঁঠাল শুনছিলেন। আমার মত আপনিও হয়ত বিকালে বাসায় ফিরার পথে এক বিরাট কাঁঠাল নিয়ে ফিরছিলেন। সামিকে আমাদের জাতীয় ফল দেখাতে হবে। আজকালকের ছেলেমেয়েরা কাঁঠাল খায় না, আমাদের জাতীয় ফল ধরে দেখে না! কি দুঃখের কথা!

বাসায় ফিরে সামিকে নিয়ে বসছেন, আয় বাবা কাঁঠাল খা! সামির কি অভিমান, কাঁঠাল আবার খাবার ফল হলো! আপনি হাসছেন আমার মত - দু'একটা কোষ খেয়ে দেখ সামি। আমার মত মুড়ীতে মেখে দেখ, ভাল লাগবে। জানিস সামি, আমরা ছোট বেলায় কাঁঠাল দিয়ে সকালের নাস্তা করতাম। কে কত বেশী খেতে পারে, এমন প্রতিযোগিতা হত। সামি হাসে, কোন ফাঁকে, সামি কাঁঠালের কোষ মুখে দিয়েছে! আপনি দেখছিলেন, বলছেন না কিছু। আগে খেয়ে নিক! ৫টি কোষ খেল সামি, এবার আপনার পালা। কি রে সামি, কাঁঠাল কেমন লাগলো? দুস্ট আদরের সামি হাসে, প্রান জুড়ায়। আজ ওকে জাতীয় ফল সারা জীবনের জন্য চিনিয়ে দেয়া হল।

ভাই কে এম আজম, এমন অনেক কথা, অনেক স্মৃতি আপনার হৃদয়ে, মাথায় জমে আছে। সামিউলের মুখের দিকে তাকিয়ে হয়ত আপনি সব মেনে নিয়েছেন। সামিউল বাবার শুন্যতা যেন না দেখে সে জন্য আপনি হয়ত আপনার অনেক দুঃখ, কস্ট ভূলে মেনে নিয়েছেন, যাক না সময়। যদি সে ফেরে!

সামিউলের মুখের দিকে তাকিয়ে আপনি হয়ত ভাবছিলেন, সবদিন তো মানুষের সামান যায় না। মানুষকে বুড়ো হতে হয়, এক সময় মরতেও হয়। আপনি হয়ত সামির মুখের দিকে তাকিয়ে এমনই ভাবছিলেন, একদিন তো এ রুপ-যৌবন শেষ হবে, একদিন তো এ ভুল বুঝার দিন শেষ হবে। তবুও যদি সে সামির জন্য থাকে!

না, আপনি তাকে ফেরাতে পারেননি! আপনার সব চিন্তা মিছে হল, আপনার সব আশা গুড়োবালি হলো। আপনার সবচেস্টা ব্যর্থ হল। সামিকে আপনি যেভাবে মানুষ করতে ছেয়েছিলেন তা হল না।

তবে আপনার আদরের সামি আপনার জন্য অনেক কিছু করে গেল! সামি জান দিয়ে আপনাকে সারা জীবনের জন্য মুক্ত করে গেল। সামি প্রান দিয়ে আপনাকে একটা বিবেকহীন, হৃদয়হীন এক নিমর্ম পশুর হাত থেকে চিরদিনের জন্য উদ্বার করে গেল। আপনাকে আর সইতে হবে না মানষিক যন্ত্রনা, দেখতে হবে না ফর্ষার আড়ালে লুকিয়ে থাকা কালো ভয়াল মুখ!

সামিউল, বাবা আমার। তুমি যেখানেই থাক, ভাল থেকো। আকাশের তারা হয়ে আমাদের মাঝে মাঝে দেখে যেও! তোমার বাবা আজম সাহেবের মত আমরা বহু বাবা আছি এ নরাধমে। তোমার মত ফুটফুটে শিশুদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমরা কাটিয়ে দিচ্ছি আমাদের দিনরাত, আমাদের জীবন-যৌবন। জেনেও আছি চুপ, বুঝেও থাকি নিরব। যদি সে ফেরে! যদি আজমাইন, ইয়াসির, ইফতি, জুয়েল সহ নাম না জানা হাজারো শিশুদের আমরা বড় করে দিতে পারি, মরেও আমাদের জীবন সার্থক হবে।

ভাল থাকুন ভাই কে এম আজম। আপনিই একজন গর্বিত পিতা, সামিউলকে ফেলে আপনি চলে যাননি।

সাহাদাত উদরাজী
০৩/০৭/২০১০ইং,
udraji@gmail.com

(আমার এ লিখটি সচলায়তনে প্রথম প্রকাশ হয় (০৩/০৭/২০১০ইং), সচলায়তনে অতিথি হিসাবে আমার প্রথম প্রকাশিত লেখা। লিখাটি আমারা বন্ধু ব্লগে প্রাইভেট করে রেখে দিলাম, যদি সচলায়তনে হারিয়ে যায়। হা হা হা)
http://www.sachalayatan.com/guest_writer/33394

পোস্টটি ১৩ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মীর's picture


আপনার প্রাইভেট করে রাখা একটা লেখা পড়ে ফেললাম। এইটা যদি দোষ হয় তো আমি খু-উ-ব স্যরি। লেখাটা খুব বেশি মন ছুঁয়ে গেল। আজমাইনরা বেঁচে থাকুক তাদের বাবা-মা সব্বাইকে সঙ্গে নিয়ে। তাদের জন্য অজস্র শুভকামনা।

সাহাদাত উদরাজী's picture


ধন্যবাদ মীর ভাই,
আসলে এ লেখটা 'আমরা বন্ধু' তে দেয়া উচিত ছিলো!
সচলায়তনের কঠিন লেখকদের মনোযোগ পাই নাই।
ভুলে ভরা দুনিয়া।

তানবীরা's picture


এটা আপনার জন্যে

http://www.amadershomoy.com/content/2010/07/02/news0597.htm

সাহাদাত উদরাজী's picture


ধন্যবাদ বোন তানবীরা, অফিস থেকে আমাদের সময়ে যেতে পারছি না। বাসায় গিয়ে দেখবো।
ভাল থাকুন।

সাহাদাত উদরাজী's picture


ধন্যবাদ বোন তানবীরা,

হাসান নামক এক ভদ্র লোক লিখেছেন "ঢাকায় এক ভদ্রমহিলা এক সকালে হন্তদন্ত হয়ে থানায় ঢুকে অভিযোগ করলেন যে, তাঁর দামী নেকলেসটা খুঁজে পাচ্ছেন না। বিকালে ফিরে এসে তিনি বল্লেন যে, নেকলেসটা তাঁর বালিশের নীচে পাওয়া গেছে। আশ্চর্য্য হয়ে পুলিশ বল্ল,"তা কি করে হয়? আমরা তো এই চুরির অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৮জনকে গ্রেপ্তার করেছি।"

নারী কিংবা পুরুষ নয়! দুনিয়ার সব বিবেকহীন, নিষ্টুর মানুষের প্রতি ঘৃণা!

সাহাদাত উদরাজী's picture


বোন তানবীরা, আমাদের সময় পড়তে পারলাম না। আমার কোন কম্পিউটার এ বিজয় ফন্ট নাই। বিজয়ের ধারে কাছে আমি যেতে চাই না। হা হা হা । অভ্র নিয়ে আছি।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

সাহাদাত উদরাজী's picture

নিজের সম্পর্কে

নিজের সম্পর্কে নিজে কি লিখব! কি বলবো! গুনধর পত্নীই শুধু বলতে পারে তার স্বামী কি জিনিষ! তবে পত্নীরা যা বলে আমি মনে করি - স্বামীরা তার উল্টাই হয়! কনফিউশান! ----- আমি নিজেই!! ০১৯১১৩৮০৭২৮ udraji@gmail.com

বি দ্রঃ আমি এখন রেসিপি লেখা নিয়েই বেশী ব্যস্ত! হা হা হা। আমার রেসিপি গুলো দেখে যাবার আমন্ত্রন জানিয়ে গেলাম। https://udrajirannaghor.wordpress.com/

******************************************
ব্লগ হিট কাউন্টার


Relaxant pills