আগামীকাল, ১৬ জানুয়ারির হরতাল আমি সমর্থন করি
হরতাল মানে বিড়ম্বনা। হরতাল মানে নাশকতা। হরতাল মানে উন্নয়ণের পথে অন্তরায়। এমন করেই বাংলাদেশের শহুরে মধ্যবিত্তরা জনগণের আন্দোলন সংগ্রামের প্রকাশভঙ্গীকে বিচার করেন। অথচ সভ্যতার ইতিহাসে গৌতম বুদ্ধের পর সবচাইতে জনপ্রিয় শান্তিকামী মানুষ হিসাবে পরিচিত মহাত্মা গান্ধীর পরিকল্পণাতে "হরতাল" নামের আন্দোলন শুরু হয় বৃটিশ বিরোধে মানুষকে একাট্টা করতে। প্রতিবাদের প্রকাশভঙ্গী হিসাবে আমাদের বাংলাদেশেও হরতালের গ্রহণযোগ্যতা ছিলো গতোশতকের আশির দশক পযর্ন্ত। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় হরতালে যখন আমরা রাজপথে ভাংচূড় করছিলাম তখন সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষ-সরকারী কমর্চারী কিম্বা প্রিভিলেজ্ড মধ্যবিত্তরাও বাড়ি থেকে শাবল-কোদাল-দা নিয়ে এসে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সেনাহুমকীর মুখে দিনআনিদিনখাই গোত্রের রিকশাওয়ালা ভাইয়েরাও বস্তিতে বস্তিতে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।
হরতাল মানে অসহযোগ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধানকে সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য ১৯৯৫ সালে বিরোধী দল আওয়ামী লীগের ডাকে সরকারের সাথে অসহযোগের ২৬ দিনের কথা আওয়ামী নেতৃত্ব ভুলে যেতে পারে কিন্তু সাধারণ মানুষ কোনোদিন ভুলতে পারবে না। প্রায় পুরো দশকব্যাপী আন্দোলনের পর নব্বইয়ের ছাত্র-গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার হটিয়ে দিয়ে মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলো নিজেদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বকারী সরকারের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার; কিন্তু ৯১-৯৬-২০০১ কিম্বা ২০০৮ সালে পাল্টাপাল্টি নির্বাচিত হওয়া আওয়ামী-বিএনপি-জামাত-জাতীয় পার্টি শক্তির অসততা আর ছদ্ম-স্বৈরাচারীপনায় ক্রম ক্রমে তারা প্রথমে রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়েছে, তারপর রাজনৈতিক ক্ষমতাসীনদের দেখিয়ে দেওয়া পথে সুবিধা আদায় করতে চেয়েছ। সবশেষে রাজনৈতিক প্রভাবে সমাজের অভ্যন্তরে দুর্নীতির বীজে অংকুরোদগম হয়েছে প্রবল ভাবে। সামাজিক জীব মানুষ এখন জানে যূথবদ্ধতা কোনো কাজের কৌশল না, যূথবদ্ধ মানুষ মিলে যাদের প্রতি আস্থা রাখতে চায় বা অতীতে আস্থা রাখতে চেয়েছে তারা বিশ্বাসঘাতকতাকে অপরাধ হিসাবেই বিচার করে না আর।
কিন্তু দোষটা কী হরতালের!? নাকি এই সব বিশ্বাসঘাতক রাজনৈতিক দলের? বিদ্যুতের দাম বাড়লে কার ক্ষতি হয়? নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাম বাড়লে কাদের সংসারে হাহাকার জাগে? রাজনৈতিক হানাহানি-সন্ত্রাসে কাদের জীবন বিপর্যস্ত হয়? সাধারণ মানুষ...যারা রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার অপব্যবহার না করে বরং শান্তিকামী হওয়ার ভান করে তারাই কি ক্ষতির ভার বহন করে না!? অথচ সরকারের সাথে তাল মিলিয়ে চলাটারেই নিরাপদ ভেবে নেয়ার মানসিকতা গড়ে উঠেছে ধীরে ধীরে। যারা রাজনৈতিক দল সমর্থন নিয়ে এখনো সংশয়ে আছে বা এখনো সামাজিক নৈতিকতার মূল্যবোধকে মান হিসেবে চর্চা করে তাদের সাথে রাজনৈতিক দলসমূহের দূরত্ব দিনে দিনে বাড়ছে। কেবল রাজনৈতিক দলের সাথেই না অনেক সময় দূরত্ব তৈরী হচ্ছে রাজনৈতিকতার সাথেও।
রাজনীতির সাথে বিরোধের সূত্র ধরে মানুষের মানবিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর অন্তর্কলহ কিম্বা আন্তর্কলহতে ঘটা খুন-জখম-হত্যা নিয়ে একধরনের পৈশাচিক আনন্দও লাভ করে এইসব মানুষেরা। যেনো এই খুন-জখমকে তারা বিচারনামা ভাবতে শুরু করেছে। রাজনৈতিকতা বিরোধী গোত্রের মানুষেরা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সাথে বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা অনুভব করে না। ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে একজন বিশ্বজিতের মৃত্যু ঘটলে তারা যতোটা আহাজারী শুরু করে একইদিন বিরোধী দলের আরো প্রায় তিনজন রাজনৈতিক কর্মীর হত্যায় তাদের আদৌ তার ধারেকাছের কোনো অনুভূতি তৈরী হয় না।
যাই হোক, মানুষের এই ধরনের অনুভূতিসমূহের জন্য মানুষেরা যতোটা দায়ী তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতাকেন্দ্রীক সাংস্কৃতিক চর্চা। কিন্তু এই দায়ভার দিয়ে পুরো রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের বিরোধীতার মতোন জাজমেন্টাল দৃষ্টিভঙ্গী থাকাটা যে বিপদজনক সেটা আমরা আওয়ামী-বিএনপি'র পাল্টাপাল্টি ক্ষমতা দখলের ইতিহাস দিয়েই বুঝতে পারি। মানুষের ফ্রাস্ট্রেশন আর নিস্পৃহতাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক দলগুলোতো তাদের আখের ঠিকই গুছিয়ে নিচ্ছে। জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধি করছে সুযোগ পেলেই। বিদ্যুতের রেট বাড়ানো হচ্ছে ব্যবসায়িরা দাবী জানালেই; অথচ রেন্টাল বিদ্যুতের ব্যবসায়িরা জ্বালানী তেলে দেয়া ভর্তুকীর সুবিধাটুকু ঠিকঠাক ভোগ করছে। তাদের জন্য জ্বালানী আমদানী বেড়ে গেছে, বেড়ে গেছে ভর্তুকীর মোট খরচও। ব্যবসায়িদের জন্য তৈরী হওয়া সংকটের দায় চাপানো হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের কাঁধে।
জ্বালানী তেলের দাম বাড়লে বাড়ে বিদ্যুতের দাম। বিদ্যুতের দাম বাড়লে বাড়ে ফসলের উৎপাদন খরচ। ফসলের উৎপাদন খরচ বাড়লে কৃষকের লাভ হয় না। মাঝখান দিয়ে ফড়িয়া ব্যবসায়িরা পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার অযুহাতে বাড়িয়ে দেয় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম। বাড়ে সাধারণ মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক দূর্ভোগ। কিন্তু এর প্রতিবাদে কোনো দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলনের পরিকল্পণা নেই অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের। এমতাবস্থায় দেশের বেশকিছু বামপন্থী দলের ডাকে আগামীকাল ১৬জানুয়ারি হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে।
আমি এই হরতাল সমর্থন করি। আমার অধিকারের দাবীতে আহ্বান করা এই হরতালে ক্ষমতার দাপট দেখানো সরকার কর্ণপাত না'ও করতে পারে। এই হরতালে পিকেটিঙের জন্য দলগুলির পর্যাপ্ত লোকবল না'ও থাকতে পারে; তবুও আমি কাল সরকারের সাথে অসহযোগ জানানোর এই হরতালের সমর্থন প্রত্যাশা্ করবো সাধারণ মানুষের কাছে।
সাধারন মানুষের অধিকার রক্ষায় হরতাল খুব কম হয়।
দেশের প্রগতিশীল বাম গনতান্ত্রিক শক্তির হরতালে সমর্থন দিলাম।
দাম বাড়ার যন্ত্রণায় জীবন অচল হয়ে যাচ্ছে। কিছু করেই বোধ হয় আর চলনসই হবে না সাধারণ মানুষের জীবন।
সবাই যদি এই হরতালকে জোরালোভাবে সমর্থন করতো!
কি লাভ!
বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ ছাড়া আর কারও সত্যিকার অর্থে হরতাল করে দেখানোর সামর্থ্যই নাই। হতাশাজনক।
সহমত!
আজকের হরতালে পুলিশের মরিচের গুড়ার স্প্রে ব্যবহার আমাকে ক্রোধান্বিত করেছে।
এখনই দেখলাম খবরে,
কি ভয়ংকর ব্যাপার!
(
মন্তব্য করুন