রাসেল কেন?
ব্লগে আছি অনেকদিন। তবে বেশ কিছুদিন ধরে কেবল আমরাবন্ধুতে থাকায় আগের মতো ব্লগের অনেক কিছুই জানি না, বুঝতেও পারি না। অনেককে চিনিও না। যেমন, সুব্রত শুভকে চিনতাম না। তাঁর লেখাও কখনো পড়িনি। তাঁকে প্রথম দেখলাম আটক হওয়ার পর।
ছোট্ট একটা ছেলে। মায়াময় একটা চেহারা। হেফাজতকে খুশী করতে শুভকে আটক করা হয়। একমাত্র শুভকেই ইউনিভার্সিটি এলাকা থেকে উঠিয়ে এনেছিল ডিবি পুলিশ।
সত্যি কথা বলতে আমি আগে আসিফকেও চিনতাম না। আসিফের নাম শুনি প্রথমবার আটক হওয়ার পর। তবে তাঁর ব্লগে গিয়ে কখনো লেখা পড়িনি। কিছু পড়েছি পরে, ফেসবুকের কল্যানে।
বিপ্লবকে চিনতাম, তবে কখনো হাই-হ্যালোর বাইরে কথা হয়নি। কিন্তু তার লেখা খুব ফলো করেছি বলা যাবে না।
খুব ভাল চিনতাম রাসলেকে। রাসেল পারভেজ। তাঁর লেখার আমি একজন কঠিন ভক্ত। আমি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফোরামে বলেছি, ব্লগে এমন অনেকে আছেন যাদের লেখার মান অনেক প্রতিষ্ঠিত লেখকদের চেয়েও ভাল। আমার অফিসেও বলেছি। এ কথা বলার সময় আমার মাথায় থাকতো রাসেল। সেই রাসেলও এখন জেলে।
রাসেলকে ধরায় আমি হতবাক হয়েছি, বিস্মিত হয়েছি। এটা নিয়ে আমি কিছু খোঁজ খবর নেওয়ারও চেষ্টা করেছি। সরকারি লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। কিছু কাগজপত্র দেখেছি। সব কিছু মিলিয়ে আমাকে কেউ সঠিক জবাব দিতে পারেনি আমার একটি প্রশ্নের। আর সেটি হল, রাসেলকে ধরা হল কেন?
ব্লগারদের ধরা হবে এই সিদ্ধান্ত সরকার নেয় হেফাজতের দাবির মুখে। সরকারের ভয় ছিল ৬ তারিখের সমাবেশ নিয়ে। বিএনপি-জামায়ত চেয়েছিল হেফাজতীরা একটা মঞ্চ বানিয়ে সেখানেই অবস্থান করবে আর এর ধারবাহিকতায় সরকারের পতন হবে। আওয়ামী লীগ সরকারে চেষ্টা ছিল যাতে সমাবেশ শেষ হয়ে যায়। এই নিয়ে দেনদরবার চলেছে।
এই দেন দরবারের অংশ হিসাবে ব্লগারদের ধরার সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি কমিটিও করে দেয়। এই কমিটির প্রধান একজন অতিরিক্ত সচিব। সিদ্ধান্ত ছিল এই কমিটি ঠিক করবে কাদের ধরা হবে। এ জন্য কমিটি একাধিক বৈঠক করে। হেফাজতের সঙ্গেও বৈঠক হয়। এর পর শুরু হয় তালিকা করার পালা।
প্রকাশ্যে একটি তালিকা দেয় আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত নামের একটা সংগঠন। তারা নাস্তিকদের তালিকা শিরোনামে ৫৬ জনের একটি তালিকা দেয়। সঙ্গে ছিল ২৭ জনের আলাদা আলাদা প্রোফাইল। এই ২৭ জন ৫৬ জনের মধ্যেও ছিল। ৫৬ জনের তালিকায় রাসেল ছিল।
হেফাজত মুখে কয়েকটি মাত্র নাম বলেছে, সেখানে রাসেল ছিল না। জামায়াত-শিবিরের বাঁশের কেল্লায় একটি তালিকা আছে ৮৪ জনের। বলা ভাল, এসব তালিকায় অনেকেই আছেন যাদের ধর্ম নিয়ে কখনো কিছু লেখেননি। তারপরেও তাদের নাম দেয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব কিছু মিলিয়ে ১০ জনের একটি তালিকা করে। এই তালিকা দেওয়া হয় পুলিশকে। বলা হয় ধরার জন্য। এই তালিকায় রাসেল ছিল না। তালিকাটি আমার জানা আছে। অথচ বিস্মিত হয়ে দেখলাম রাসেলকে ধরা হল। আরও বলি, রাসেলকে বাসা থেকে ধরেনি। ডেকে নেওয়া হয়েছে।
কিসের ভিত্তিতে রাসেলকে ধরা হল? আমি বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়েছি। কেউ জানে না কেন রাসেলকে ধরা হল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও জানে না। কারণ তাদের তালিকায় রাসেল নেই।
প্রমান দেই। কমিটি ১০ এপ্রিল একটি বৈঠক করেছিল। সেই বৈঠকের কার্যবিবরণীতে স্পষ্ট করে লেখা আছে, ''স্বনাক্তকৃত অভিযুক্ত ব্লগারদের মধ্যে তিনজনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে''। আমরা জানি ধরা হয়েছে চারজনকে। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলছে, স্বনাক্তকৃত তিনজনের কথা। তাহলে রাসেলকে পুলিশ ধরলো কেনো?
কোনো অপরাধ ঘটলে পুলিশের প্রথম কাজ হয় আসামী ধরার নাটক করা। এজন্য তারা সংখ্যাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। অনেককে ধরতে পারলে ক্রেডিট পায়। রাসেল কি তাহলে সংখ্যা বাড়ালো? নাকি এর পেছনে অন্য কিছু আছে? অন্য কেউ?
পাদটিকা: ব্লগার সংক্রান্ত বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সব তৎপরতা থেমে গেছে ৬ তারিখের পর। এ ব্ষিয়ে সরকারের কোনো নির্দেশনা নেই। ফলে এদের কি হবে কেউ পরিস্কার করে বলতেও পারে না। এ কারণে জামিন নিয়েও এখন অনিশ্চয়তা। সরকারের তরফ থেকে যতদিন পরিস্কার সংকেত না আসবে ওরা এভাবেই থাকবে?
আমাদের কি হেফাজতের সঙ্গে চূড়ান্ত সমঝোতা পর্যন্ত বসে থাকতে হবে? ঋক আর লিপি সেই অপেক্ষায় থাকবে?
কী বলবো মাসুম ভাই, কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
রাসেলের জায়গায় নিজেকে ভাবছি আমি।
ঋক-এর জায়গায় রোদ্দুর-সমুদ্দুর।
আমাদের জীবনটা এত অনিশ্চয়তায় ভরা কেন ?
স্বাধীন দেশে কীভাবে বাঁচবো আমরা ?
আইনের প্রতি, রাষ্ট্রের প্রতি, সরকারের প্রতি,
রাজনীতির প্রতি ভরসা কি কোনকালেই করতে পারবো না ?
এ ব্যাপারে গণজাগরণ মঞ্চের কোনও নড়ন-চড়নইতো দেখছিনা...
সেটাতো অবাক হয়েছিলাম, এখন আর হচ্ছি না ।
চরম হতাশ, বিরক্ত, ক্ষুব্ধ
যে চারজনকে ধরলো তাদের মধ্যে রাসেল ভাই ছাড়া ২ জনের লেখা খুবই কম পড়েছি । কিন্তু সেসব নিয়ে মন্তব্য নেই । রাসেল ভাই যে কত ভালো লেখক সেটা সবাই জানে, আমি যতটা দেখেছি উনাকে তাতে সবসময়ই মনে হয় অসাধারণ এক মানুষ তিনি । উনাকে কেন ধরা হলো !!!!!! কেন অকারনে একটা মানুষ, তার পরিবার এভাবে কষ্ট পাচ্ছে !!! আইন আসলে কোন নিয়মে চলছে ?
আইনকে ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনীতির জন্য
অন্যদের লেখা পড়া হয়নি, কিন্তু রাসেল ভাইয়ের কিছু লেখা পড়েছিলাম, চমৎকার লেখেন উনি। আমারও একই প্রশ্ন – উনি কেন? আর ব্যাপারটা কোন দিকে যাচ্ছে? কেমন যেন ঘোলাটে লাগছে সবকিছু!
আমারও একই প্রশ্ন
পুলিশের অবস্থা হইলো "স্যার ধরছি" কারে ধরছে ... ক্যান ধরছে... সেটা মনে হচ্ছে তাদের কাছে কোন গুরুত্বপূর্ণ না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বলছে ১০ জনকে ধরতে হবে... কোন ১০ জন সেটাও মনে হয় জরুরী না... সংখ্যাটাই জরুরী হয়ে পরেছে... যেটা ব্লগারদের মধ্যে আরো বেশী আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
তালিকা তো আছে। সুতরাং ভয়ের কথাই
রাসেলের নাম দেখে আমিও অবাক হয়েছি অনেক।
আমি হতবাক
আমি অবাক হয়েছিলাম আহমাদ মোস্তফা কামাল ভাইর নাম দেখে। রাসেল সম্পর্কে পরে জেনেছি। বিপ্লব ভাইকে ভাল ভাবেই চিনি। ওনার রিসেপশনে গিয়েছিলাম। সুব্রতকে চিনি না। তবে চিনি বা না চিনি, যতবার ওনাদের কথা ভাবি এত রেগে যাই যে প্রেসার বেড়ে যায়। এ রকম আর কতদিন চলবে?
এতো কষ্ট আর মন খারাপের কথা কাকে বলি! আর বলেও লাভ কি?
কি হবে আর কবে হবে? কবে জানবো কিছু? কবে কাটবে কুয়াশা?
ঢাকায় থাকাকালীন রাসেল ভাইয়ের সাথে কয়েকবার মুখোমুখি হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। আমি সেরকম কোন কাজের ব্লগার কখনোই ছিলামনা, তারপরও ব্লগের সুপরিচিত মুখগুলোর সাথে কিছুটা পরিচয় তখন ছিলই, রাসেল ভাই তারমধ্যে অন্যতম। যদিও তার সাথে সেভাবে কখনো কথা হয়নি। কিন্তু আমার এখনও তাঁর হাসিখুশী মুখটি চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ভাসছে। এমন একজন মানুষের এমন করুণ অবস্থা আসলে মেনে নিতে পারছিনা, নিজের একজন সহযোদ্ধা চলে যাওয়ার মতই কষ্ট অনুভূত হচ্ছে মনের ভেতর।
যারা মারপিট করছে, জনজীবন সন্ত্রাসগ্রস্ত করে তুলছে, ঘর জ্বালাচ্ছে, তালা বন্ধ করে ঘর কে জতুগৃহ করে তুলছে, মা বোনরা যেসব ভেড়ি দের জন্য নিরাপদ নয় সেই সব জানোয়ার দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্চে আর কলমচিরা জেলে! বাহ! সোনার বাংলা!
আর এগুলো বেলেবেল অফেন্স -- কোন উকিল ওদের জন্য এগিয়া আসছে না ?
টিনের চালে কাক -- পুরো বাংলা নির্বাক ?
কুয়াশা কবে কাটবে ? কবে জানতে পারবো রাসেল ভাই'র অপরাধ কি ? সরকারের এ হীন আচরণের কারণই বা কি ? উত্তর কার কাছে পাওয়া যাবে ? আমার ধারণা শাহাবাগ এখন কেপচার্ড হর্স, আর রান করবেনা বা করলেও তা হবে কেপ্টরের ইচ্ছে মতো । এ ক্ষেত্রে আমরা কি কিছু করতে পারিনা ? সিনিয়র ভাইদের দিকে চেয়ে আছি । আশার কোন আলো জ্বালুন । আমরা হীণবলরা সাথে আছি ।
@শওকত মাসুম, ধন্যবাদ আপনার চমৎকার এই লেখার জন্য। এফবিতে শেয়ার দিচ্ছি...
আর এডমিনকে সবিনয় অনুরোধ করি, যতটুকু জানি, রাসেল 'আমরা বন্ধুতে' লিখতেন। রাসেলের জন্য এই সাইটে প্রথম পাতায় একটা ট্যাগের মত করা যায় কি? যেখানে রাসেলকে নিয়ে সমস্ত লেখাগুলো থাকবে? আপনাদের বিবেচনায় আমার কোনো লেখা থাকার প্রয়োজন বোধ করলে সেটা হবে আমার জন্য আনন্দের...।
এক কথায়, রাসেলকে ধরার কারণ ব্লগের বন্ধুরূপী শত্রুরা।
এখন কেউ নিরাপদ না, এমন কি আপনিও না। সাবধানে ভাল থাকেন।
~
হ
ডটু রাসেল ভাইয়ের লেখা আমি আমারব্লগ ডট কমে দেড় বছর ধরে পড়েছিলাম। উনাকে ধর্ম সংশ্লিষ্ট কোন পোষ্ট দিতে দেখি নাই। এইধরনের কমেন্টও দিছে কিনা জানি না। উনার পোষ্টগুলো রাজনৈতিক। বিভিন্ন ইস্যুতে ইনি সমালোচনা করতেন তাঁর যুক্তি দ্বারা। অনেকে প্রতিবাদ করত অনেকে সমর্থন দিত। উনার পোষ্টগুলো দেখে বেশ বুঝা যায় উনি একজন রাজনীতি সচেতন লোক। আমার মাথায় আসে নাই উনাকে কেন ধরছে। উনাকে এরেস্ট করার একটা মানে পাওয়া যেতে পারে- "বিরুদ্ধ মত দমন"
স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে আমার মত প্রকাশের অধিকার আছে। আমার রাজনীতি নিয়ে বলার অধিকার আছে। এখন যদি আমি আমার দৃষ্টিতে খারাপ এমন কাজের সমালোচনা করি তাইলে কি আমাকেও এরেস্ট করা হবে?
সরকারের হেন কাজে আমি হতাশ
আমি সরকারের এমন কাজের সমালোচনা করছি...
এই একটা লোক যাকে সন্মান না করে পারা যায় না। "আমরাবন্ধু" তে অনেক আগে রেজিষ্ট্রেশন করি, কিন্তু আজকে আবার লগইন করলাম মাসুম ভায়ের পোস্টের কারনে! সবাই কিভাবে ডটু রাসেলকে মূল্যায়ন করবে আমি জানি না, তবে এই লোকটার লেখা ও কমেন্ট পড়া ছাড়া আমার ব্লগিং জীবনটার ৯৯ ভাগই আবর্জনা। অনেককেই সবকূল রক্ষা করে চলতে দেখেছি, কিন্তু উনাকে আমি কোনদিন আপোষ করতে দেখি নাই! বাকী তিনজন সম্পর্কে আমার তেমন ধারনা নাই, তবে আমি এটা নির্দ্বিধায় বলব, বাংলা ব্লগিং এর ইতিহাসে এর থেকে খারাপ সময় আর আসে নাই যখন ডুটু রাসেলের মত লোককে জেলের মাঝে মন খারাপ করে বসে থাকতে হয়! প্লিজ উনাকে বাইর করে আনার জন্য কিসু করেন।
এখন তিন বানরের যুগ চলছে।
কিছু দেখা যাবে না;
কিছু শোনা যাবে না,
কিছু বলা যাবে না।
ডটু রাসেলের ইসলাম-বিরোধী (ইসলাম-বিদ্বেষী না) লেখা আমি পড়েছি, কিন্তু সেসব পড়ে তার জন্য আমার কোনদিন ঘৃণা আসেনি, বরং মনে হয়েছে তার উপসংহার আর আমার উপসংহার একই না হলেও এই লোকটা একটা মানুষ বটে, কি চিন্তার পরিধি, কি তার অনুভব ক্ষমতা, কি সংবেদনশীল মনোভাবনা, কি চমৎকার লেখনি, তার কিছু লেখা বাদে অলমোস্ট সব লেখাতেই প্রচন্ড ধীসম্পন্ন, মানবিক গুণসম্পন্ন এক আলোকিত মানুষের পরিচয় পাওয়া যায়, তার প্রকাশভঙ্গি আমরা অপছন্দ করতে পারি, কিন্তু তার চিন্তার ক্ষমতাকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। ডটু রাসেল অনেকসময়ই গালি দিয়েছে, ব্রাত্য রাইসুকে তার খোঁচানোর পোস্টগুলা তো লিজেন্ডারি, সেসবও পড়েছি কিন্তু তবুও তাকে কোনদিন অপছন্দ করতে পারিনি, কারন এসব কিছুর ভিতরে তার মধ্যে একটা অসম্ভব চমৎকার মানবিক মানুষ দেখেছি, মানুষকে নিয়ে তার ভালবাসা দেখেছি। আমারব্লগে সবাই তার বিরুদ্ধে গিয়েছিল, পাকিস্তানি মাত্রই ঘৃণার পাত্র এই উপসংহার তাদের, পাকিস্তানেও যারা নির্যাতিত সামরিকদের হাতে, যেমন নির্যাতিত হয়েছিল আমাদের ভাই-বোনরা, এরাও নাকি ঘৃনার পাত্র এসব ঘৃণাবাদীদের মতে। রাসেল সে ফতোয়া অস্বীকার করেছিল, আমার সাথে তার সে বিষয়ে অমিল ছিল কিছুটা, কিন্তু তবুও তিনি কি অসীম দৃঢ়তার সাথে সবার গোষ্ঠীবদ্ধ আক্রমণকে প্রতিহত করেছিলেন, তাকে একজন নাস্তিক হওয়া স্বত্ত্বেও "ছাগু" উপাধি দিয়েছিল, কিন্তু তিনি তাঁর পজিশানে অনড় ছিলেন। সচলায়তনে লিখতেন তিনি একসময়, স্বাভাবিক ভাবেই এরকম প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্লগারের ভার তারা সইতে পারেনি, হিমুর চক্ষুশুল হলেন রাসেল, সচলায়তনের ব্লগাররা বুঝতে পারছিলেন রাসেলের সাথে অন্যায় হচ্ছে, তবুও হিমুর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাসেলের পক্ষে বলার মুরোদ তাদের অনেকেরই গড়ে উঠেনি সে সময়ও এবং এখনো, বিশেষ করে যারা সচল ছাড়া অন্যকোথাও ব্লগিং করেন না নিজেদের এলিটিজমের কারনে, তারা তাদের পরীক্ষা দিয়ে পাস করে ব্লগিং-এর অর্জন করা সুবিধাটা শুধু শুধু রাসেলের পক্ষে বলে হারাতে চাচ্ছিলেন না। রাসেলের চারিত্রিক দৃঢ়তা প্রকাশ পায় যখন তার আর হিমুর ক্যাচালকে কেন্দ্র করে অন্য অনেকে হিমুর সাথে তাদের আগের ঝগড়ার বোঝাপড়া করার তালে ছিল, রাসেল তাদের একজনকে সরাসরি বলেছিল, "আপনি নিজের ঝগড়া নিজে করেন, আমার সাথে হিমুর ক্যাচালের সময় এসে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করবেন না, আমার ইস্যু আমি নিজেই দেখছি।" যখন প্রচন্ডভাবে কেউ চতুর্দিক থেকে আক্রমণ হয়, অন্য সবাই যখন চুপচাপ দৃশ্য দেখে, তখন সামান্য খড়খুটোর সাহায্যও মানুষ অকাতরে নেয়, অথচ সেরকম সময়েও রাসেল কোন অন্যায় আচরনের সাহায্য নিতে রাজি না, তার সাথে হিমুর ইস্যুকে কেন্দ্র করে অন্য কেউ পুরানো ঝাল মিটিয়ে নিক, যাতে রাসেলর সুবিধা হত, সে প্রস্তাবেও রাসেল রাজি হোন নি। চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং অপরিসীম সেল্ফ-এস্টিম ছাড়া এরকম সম্ভব না। রাসেলের কোন গোষ্ঠী ছিল না, তিনি একা লিখতেন, একা চলতেন, অনেকের সাথে তাঁর জানাশুনা ছিল, কিন্তু তাঁর লেখায় কোনদিন কোন ধরণের কম্প্রোমাইজ আসেনি। গোষ্ঠীতে অভ্যস্ত মানুষের ব্যক্তিত্ব কিছুটা হলেও খর্ব হবেই, তার চিন্তার খোলা প্রকাশ রুদ্ধ হবে, গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যক্তিসত্ত্বা বিলীন হবে খানিকটা, রাসেল এসব কিছু থেকেই উর্ধ্বে ছিলেন।
রাসেলকে পুলিশের আসামীর মত হাজির করা দেখে খুবই দুঃখ পেয়েছি। তার আশ মুক্তি চাই।
এখন তিন বানরের যুগ চলছে।
কিছু দেখা যাবে না;
কিছু শোনা যাবে না,
কিছু বলা যাবে না।
মন্তব্য করুন