আপনারা সবাই দোয়া করবেন
কার নামে আজ ঘুমিয়েছিলেম
চোখ খুলে ভাই দেখি,
শত পরীর মেলা বসেছে
রইল না কেউ বাঁকি।।
বউদি ভাবি গিন্নী শালী
আর যারা আছে সব মিলে
গোলাপ রজনী চম্পার সুবাস
নাড়া দিচ্ছে দিলে।।
কোন এক বসন্তের দুপুরে ঘুমিয়েছিলেম, উপরে বর্ণিত ডজন খানের পরীর কলকল ছলছল কলকাকলীতে নিদ্রার হল অকাল মৃত্যু। দরজার পর্দা গলিয়ে চর্ম চক্ষুর দৃষ্টি তাদের উপর নিপতিত হবার সাথে সাথে আমার কবিত্ব জেগে উঠল, লিখে ফেললাম উপরের কটি লাইন।
অতঃপর বের হয়ে লিখিত ক লাইন আবৃতি করাতে কেউ কেউ ভেঙচি কেটে উঠল, যাকে দেয়া হয়েছে তাঁর গন্ধই নেয়া হউক, অন্যদিকে যেন নজর না পড়ে।
এখানে শালীর কথা বলা হলেও আমার শালী ভাগ্য বড়ই খারাপ, একটা মাত্র শালী যদিও ছিল সে কোন দিন আমাকে দুলাভাই বলে নি। এ নিয়ে আমার অনেক আফসোস ছিল। আমি আমার স্ত্রীকেও বলেছিলাম, ও জবাবে বলেছিল, জানি না ও কেন তোমাকে দুলাভাই বলে না। বাঁকি সবাইকে তো দুলাভাই বলে,( আমার বড় ওর চার দুলাভাই) তোমাকে কেন জীবন ভাই বলে?
কোন একটা অনুষ্ঠান উপলক্ষে বাড়িতে অনেক লোকের সমাগম হয়েছিল। অনুষ্ঠান শেষে খালাতো মামাতো চাচাতো, বউয়ের চাকড়ির সুবাদে যারা ওর জুনিয়র সে সব শালী, ভাগ্না ভাগ্নি সব মিলে সঙ্গীত আবৃতি সহ নানা কল কাকলীতে মুখরিত পরিবেশ। আমি কাছে আসতেই সমস্বরে বায়না (দুলাভাই, মামা, খালু, ফুপা) গান শুনান।
আমি সুযোগ মনে করে বললাম, নার্গিস( আমার একমাত্র শালী) যদি দুলাভাই বলে তবে শুনাব, এই বলে ওর দিকে তাকালাম, দেখি ওর চোখ ছলছল করছে।
ও অনেকটা ভাঙ্গা গলায় বলতে লাগল, তোরা সবাই শোন, আমি জীবন ভাইকে কোন দিন দুলাভাই বলিনি তাই উনার অনেক কষ্ট, তোরা বল, আপার বিয়ের পর থেকে যাকে ভাই ছাড়া অন্য কিছু মনেই হয়নি তাকে দুলাভাই বলে কি করে দূরে সরাই, তারপরও উনি যদি খুশি হন, আমি দুলাভাই বলল। আমি ওর কথা শেষ হতে না হতেই বাথ রুমে চলে যাই। কতক্ষন ছিলাম, কি করেছিলাম জানিনা।
তবে শালী ডাক শুনার সাধ আমার অপূর্ণ থাকেনি। উপরে বর্ণিত শালীরা তো আমাকে কোকিলের কন্ঠে দুলাভাই বলে।
তাদের মধ্যে ব্যতিক্রম আমার বন্ধুর বোন,পড়ে হাসপাতালে আমার স্ত্রীর সহকর্মী, ও যেমন হুর পরীর মত সুন্দরী, ওর কন্ঠটাও তেমন সুন্দর, কোকিল কন্ঠি বলতে পারেন। দেখা হলেই দুলাভাই এটা, দুলাভাই ওটা। ওর নাম মুনমুন।
দিন দশেক আগে আমার বউ বলল মুনমুনের ছোট ভাই সেতু মারা গেছে,
চমকে উঠলাম,
কিভাবে?
বলা বাহুল্য ও আমার চেয়ে ২০ বছরের ছোট।
দোয়া পড়লাম,
বউ বলল হার্ট এটাক করে।
আল্লাহ যার আয়ূ যতদিন রেখেছেন, তা তো কেউ খন্ডাতে পারবে না।
গত পরশু মার্চ ০৯, ২০১৪ খ্রীঃ ঢাকা থেকে এসেছি সিরাজগঞ্জে, গাড়ী থেকে নেমে অফিসে ঢুকব, বউ ফোন করে জানাল মুনমুনের ক্যান্সার হয়েছে।
রীতিমত আঁতকে উঠলাম।
আল্লাহ তোমার লীলা বুঝে এ সাধ্য কার??
সাতদিন আগে জোয়ান ভাই গেল, আজ মনে হয় নিজের ডাক পড়েছে।
গতকাল ওর সাথে কথা হয়েছে। কথা তো কিছুই বলতে পারছে না, শুধু কান্না। মাঝে মাঝে শুধু বুঝা যাচ্ছে দুলাভাই দোয়া করবেন।
কাল থেকে আমার চিকিৎসা শুরু হবে।
হ্যাঁ আমি তো দুয়া করব এবং করছি।
আপনারাও সবাই দোয়া করবেন, আমার শালীর জন্য যে আমাকে দুলাভাই হবার সাধ পূর্ণ করেছে।
মার্চ,১২,২০১৪খ্রীঃ
সিরাজগঞ্জ।
ভাল থাকুক সবাই সব সময়।
আলহামদুলিল্লাহ
শুভকামনা থাকলো। ভাল থাকুন সবাই
মন্তব্য করুন