গত মঙ্গলবার থেকে আজ...
গত মঙ্গলবার বাসায় ছিলাম, ভেবেছিলাম কসাই কাদেরের ফাঁসির রায় শুনে আনন্দিত চিত্তে অফিসে যাবো, সেখান থেকে বইমেলা, এটাসেটা আরো অনেক কিছু...
গত মঙ্গলবার, ঠিক এই সময়টাতে ভেতরে ভেতরে ফুঁসছিলাম। রাগ ক্ষোভ আর হতাশা আর বিচিত্র সব অনুভুতি কাজ করছিলো নিজের মনের আনাচে কানাচে। নেটে ব্রাউজ করতে করতেই দেখলাম বাঁধনের স্ট্যাটাস, আজকেই (০৫/০২/১৩) বিকাল ৩.৩০ এর সময় শাহবাগে জাদুঘরের সামনে এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ। অফিসে যাবার কথা বলে বেরিয়ে গেলাম বাসা থেকে ২.৪৫ এর দিকেই। শাহবাগে, জাদুঘরের সামনে, পৌছে দেখি কেউ আসেনি। মনে ক্রোধ নিয়ে আর অনলাইন একটিভিস্টদের মুণ্ডুপাত করতে করতে চলে গেলাম ছবির হাটের দিকে, চা খাবার জন্যে। ফিরে এসে দেখি প্রায় ২০/৩০ জন ছেলেপেলে এসেছে। শাহবাগের নিয়মিত প্রতিবাদগুলো যেমন হয়, তেমনই কিছু একটা হবে ধরে নিয়ে পরিচিতদের সাথে হতাশা শেয়ারে ব্যাস্ত হয়ে উঠলাম। এর ভিতরেই দেখি প্লাকার্ড/পোস্টার লেখার কাজ শুরু হয়েছে। যদ্দুর মনে পড়ে, চ্যানেল আই এর একটা ক্যামেরা আর একজন রিপোর্টার আপু উপস্থিত ছিলেন তখন। সেই আপু দেখলাম স্ব-উদ্যোগে প্লাকার্ড লিখতে শুরু করে দিলেন। আস্তে আস্তে সময় গড়িয়ে চললো, আর লোকজন বাড়তে শুরু করলো। প্রমিনেন্ট কেউ উপস্থিত ছিলেন কি না খেয়াল করি নাই। যাই হোক একটা সময় আমরা সবাই দাঁড়িয়ে গেলাম লাইন ধরে। দেখলাম, লাইনটা জাদুঘরের পিজি সাইডের কোনা থেকে পাবলিক লাইব্রেরীর গেট ছাড়িয়ে গেছে। কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে মিছিল করে রওনা দিলাম শাহবাগ মোড়ে। অল্পই পথ, পার হতে খুব বেশী সময় লাগেনাই, কিন্তু এই অল্প সময়েই আরো অনেকেই এসে যোগ দিলেন আমাদের সাথে। সবাই মিলে বসে পড়লাম শাহবাগ মোড় দখল করে। তখনো আমাদের সাথে কোনো মাইক নেই। কিছুক্ষণ পর একটা রিকশার উপরে বেঁধে দু'টো মাইক আসলো, সেই মাইকেও জোর কম। স্লোগান চলছেই। সন্ধ্যা ঘণিয়ে আসলে বেশ কিছু লোকজন আস্তে আস্তে চলে যেতে থাকলেন, আবার অনেক নতুন নতুন মুখ যোগও দিতে থাকলেন। কেউ একজন এসে যারা যারা বসে ছিলেন সবার সামনে একটা করে মোমবাতি ধরিয়ে দিয়ে গেলেন। আরকজনের কাছে শুনলাম, আজ সারারাত এই মোড়টা দখল করে রাখাবেন সাবাই মিলে। এর ভেতরে টিএসসি থেকে মশাল মিছিল আসলো একটা, উনারাও যোগ দিলেন আমাদের সাথে। হাসানুল হক ইনু এসে আমাদের প্রতিবাদে সংহতি জানালেন, যদ্দুর মনে পড়ছে সংহতি জানাতে আসলেন মুজাহিদুল হক সেলিমও। রাত বাড়তে থাকলো, আরো আরো মানুষ এসে যোগ দিতে থাকলেন। সারারাত মুভি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে থাকলো একটা মুভি সোসাইটি...
পরেরদিন সকালে অফিসে এসে হাতের কাজটুকু সেরেই দৌড়ালাম শাহবাগ মোড়ে। গিয়ে দেখি সকালের কড়া রোদের ভেতরে প্রায় হাজার খানেক মানুষ বসে আছেন পুরো শাহবাগ মোড় জুড়ে। বিকেল হতে হ'তে মানুষের সংখ্যা গোনার কিংবা ধারণার আশা ছেড়ে দিলাম। এই দিন চারুকলার একঝাক শিল্পী স্ট্রিট আর্ট শুরু করলেন...
এরপরের দিন থেকে আসলে ট্র্যাক হারিয়ে ফেলেছি। এরকম স্বতস্ফুর্ত আবেগের ট্র্যাক আসলে রাখা সম্ভব না...
*
চারুকলার প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী যারা এখন ছবির হাটে বসেন, তারা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে একটা ১০০ ফুট বাই ৬০ ফুট মাপের পতাকা বানিয়েছেন। যেইটা এখন পিজি আর বারডেমের মাঝে রাস্তার উপর পতপত করে উড়ছে
*
প্রজন্ম চত্ত্বরের আশেপাশের বিলবোর্ডগুলো ঢেকে দেবার জন্যে বিশাল বিশাল ব্যানার তৈরী করেছেন চারুকলার প্রাক্তন শিল্পীরা। যেগুলো একেকটা প্রিন্ট করতেই অনেক অনেক খরচ, সেগুলো নিজ দায়িত্বে নিখরচায় প্রিন্ট করিয়ে আনছেন তারা।
*
এই প্রতিবাদ জমায়েতে যারাই আসছেন, তাদের ভেতর পিওর আবেগটা বুঝা যাচ্ছে তাদের চোখমুখ দেখলেই। বাবা-মা'রা শিশুদের নিয়ে আসছেন। কেউ কেউ অফিস শেষ করে আসছে ৭টা ৮টার দিকে। থাকছেন অনেক রাত পর্যন্ত।
*
মুলমঞ্চে যারা দিনরাত ভুলে স্লোগান দিচ্ছেন বা থাকছেন, তাদের খাবার-পানির ব্যাবস্থা করছেন কেউ।
*
চারুকলার একদল তরুণ আম্মা জাহানারা ইমামের ৬০ ফিট বাই ৪০ ফিটের এক প্রমান সাইজের প্রতিকৃতি তৈরী করছেন।
*
আমার জানামতে আজকেই আম্মা জাহানারা ইমামের শেষ চিঠিটা যতজনকে পারা যায় বিলি করবার একটা অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন চারুকলারই একদল প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী।
_______________
দেখতে দেখতে সাতটা দিন পার হয়ে গেলো... আমার কাছে মনে হচ্ছে সাত মাস পার হয়ে গেছে এই গণজাগরণের... যতদিন চলবে এই সমাবেশ, ততদিনই আছি। হয়তো কোনো কাজ করতে পারবো না, সেই মেধাটা নেই। কিন্তু, নিজের উপস্থিতির কারণে যদি একজন লোকও বেশী হয় সেটাই আমার কাছে অনেক গর্বের...
এসো ভাই এসো বোন
গড়ে তুলি আন্দোলোন!
ছবি কৈ?
শেষ লাইনটার সাথে সহমত জানাতেই লগিন করা!
ভাল থাকুন।
একটা দিনও থাকতে পারি না শাহবাগে না গিয়ে। থাকতে পারা উচিতও না। সব কাজের চেয়ে গুরুত্বপূর্ন কাজ হওয়া উচিত এখন শাহবাগে উপস্থিত থাকা।
আজ যখন দৌড়ে আসছিলাম শাহবাগে এসে দাঁড়াব বলে, বইমেলার সামনে এক আন্টি জোনে ডাক দিয়ে বললো,'দাঁড়াও, এখনি দাঁড়াও।' আমি বললাম, এক মিনিট বাকী আছে, আমি দৌড়ে বড় পতাকাটার পাশে গিয়ে দাঁড়াব।
ভাবতে এত ভালো লাগছিলো যে প্রত্যেকটা মানুষ কত ভালোবাসা ধারণ করে আছে!
সবারই এই মুক্তির মিছিলে থাকা উচিৎ কিন্তু আমরা যারা কামলা খেটে পেট চালাই তারা সব সময় থাকতে পারিনা। কাজের ফাঁকে ফাঁকে গিয়ে কিছুক্ষণ থেকে আবার চলে আসি কর্মক্ষেত্রে। আপনারা যারা দিন রাত উপস্থিত থাকছেন তাদেরকে জানাই অভিনন্দন!
শ্যালুট কমরেড!
পড়লাম,
...।
একাত্তর দেখিনি, ২০১৩ দেখছি।
৭১ দেখিনি , ১৩ পেয়েছি ।
আপনেও তাইলে ইতিহাসের অংশ
থ্যাঙ্কু লেখার জন্যে, সামনে ছবি সহই পাবো আশা করি। কত্তো কিছু দেখতেছো, জানতে পারছো, এই খুটিনাটিগুলাও তো জানাতে পারো লেখা/ ছবি দিয়ে দিয়ে
নিজের উপস্থিতির কারণে যদি একজন লোকও বেশী হয় সেটাই আমার কাছে অনেক গর্বের...
এতটা সুন্দর ভাবে গুছিয়ে এই সময়টা নিয়ে লেখা কথাগুলো অনেক অনেক ভাল লাগলো।
আমারও ইচ্ছে করে অনেক, ভাবনাগুলোকে সাজাতে পারি না।
আপনাদের লেখা পড়েই মন ভাল হয়ে যায়।
এই লেখাটায় বেশ কিছু ছবি থাকা উচিত ছিল।
মন্তব্য করুন