ইউজার লগইন

আরিয়েন আকেলিনকে নিয়ে সোনার গাওয়ে এক দুপুর

আগের বার যখন আসে, একে তো খুব ব্যস্ত ছিল। তাছাড়া আমার মনেও ছিলনা মনে হয়। কিংবা মনে থাকলেও ইচ্ছা ছিলনা হয়ত। কিন্তু পরে যখন ভেবেছি খারাপ লেগেছে খুব। এইরকম আমার প্রায়ই হয়। যখন করার কথা তখন করিনা পরে আবার তা নিয়া মন খচখচ করে। আরিয়েন চলে যাওয়ার পর এমন খচখচ মনের ভিতর লেগেই ছিল অনেকদিন। ভেবেছিলাম আর কখনো দেখা হবেনা।

কিন্তু খবর আসল আরিয়েন আবারো বাংলাদেশে আসছে। এইবার বান্ধবী সহ। সপ্তা খানেক থাকবে। আমি এইবার প্রথমেই যোগাযোগ করে ব্যবস্থা করে ফেলি এবং একদিন সময় নিয়ে নিই তাদের নিয়ে ঘুরে বেড়াবার।

আরিয়েন হল্যান্ডের ছেলে। আমার আগের অফিসের সহকর্মী ছিল। আমি অল্প কিছুদিন হল্যান্ড ছিলাম। তখন আরিয়েন ও তার বান্ধবী আকেলিন আমাকে আমাস্টারডাম নিয়ে গেছে। আনা ফ্রান্কের জাদুঘরে নিয়ে গেছে। সিনেমা দেখাতে নিয়ে গেছে। মনে আছে একদিন আমাস্টারডামের এক হোটেলে খেতে খেতে কথা দিয়েছিলাম আরিয়েন আকেলিনকে বিয়ে করে বাংলাদেশে আসলে আমি তাদের নিয়ে বাংলাদেশ ঘুরে দেখাব।

ওদের বাংলাদেশে আসার কথা ছিলনা। ওরা ছুটি কাটাতে মাস খানেকের জন্য থাইল্যান্ড ও মালয়শিয়া ভ্রমন করার পরিকল্পনা করছিল। ওদের কোম্পানির মালিক তাদের সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশে আসতে বলে কোম্পানির বাংলাদেশের অফিসের কর্মীদের ট্রেনিং এর জন্য। এর মধ্যে ঠিক হয় বেসিসেও ওরা আরেকটা ট্রেনিং কোর্স করাবে। এসবের মাঝে এক রবিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আমার সাথে ঘোরার জন্য সময় বের করে।

সকাল নয় টায় ওদের নিয়া ঢাকা ছাড়ি। গন্তব্য সোনার গাও। আকেলিন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার। আমারো ছবি তোলার বিরাট শখ। তার হাতে ক্যাননের এল সিরিজের লেন্স দেখে জুলজুল করে চেয়ে থাকি। আকেলিন মানুষের ভিড়, কাঠাল আশপাশের ছবি তুলে।
ff
সোনার গায়ের পানাম নগর নিয়ে যাই। ওদের ভালো লাগে। ছবি তোলা হয় পুরান শহরের, প্রকৃতির। কিন্তু ঝামেলা বাধায় গরম। শীতের দেশের মানুষ ওরা তীব্র গরমে হাসফাঁস করে। আকাশে মেঘও নাই, সরাসরি সূর্যের কিরণ লাগে গায়ে।
hh
রাস্তায় চলার সময় বিদেশি দেখে বাচ্চা থেকে বয়স্ক হেলো বলে অভিবাদন জানায়। ওরাও জাবাব দেয়। ঘুরতে আসা লোকজন বিদেশিদের সাথে মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি তোলে।

গরমে জান তামাতামা অবস্থা। আমরা বিশ্রাম নেই দীঘির পাড়ে বৃক্ষের ছায়ায়। অনেকেই দেখতে এসেছে জাদুঘর। তার চেয়ে বেশি এসেছে ডেটিং করতে। আরিয়েনদের বোঝাই কেন এভাবে ডেটিং করতে হয় প্রেমিক প্রেমিকাদের। আমাদের এখানে গার্জিয়ানরা সন্তানদের প্রেম এলাও করেনা, তাই লুকিয়ে ওরা এখানে আসে ভালোবাসার মানুষের সাথে সময় কাটাতে। আমরা যখন ফিরছি তখন আরিয়েন জিজ্ঞাস করে, 'তোমারা কি ডেটিং করতে মুখে সাদা লাল রং মেখে আসো যাতে কেউ না চিনতে পারে?' নাতো, আমি বলি, কী হইছে? আরিয়েন ইশারা দেয় একজুটির দিকে। ছেলেটার শ্বেতী রোগে হাত মুখ সাদা। হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরার অবস্থা। আরিয়েন ভাবছে নিজেকে লুকাতে মুখে রং চং মেখে আসছে।
g
ফেরার পথে রমনায় লাঞ্চ করি। পাশ্চাত্যে এক অদ্ভূত নিয়ম। এই রকম দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর খাওয়ার পর যার যার বিল সে দেয়। আমি মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম ওদের ঝারি দেয়ার জন্য। ওরা যদি বিল শেয়ার করতে চায় বলতাম, আমারা তোমাদের মত কিপ্টা না গেস্টকে দিয়া বিল দেয়ার কথা আমরা চিন্তাও করতে পারিনা। খাওয়ার পর অবশ্য ওরা ইউরোপিয়ান নিয়মে যায় নাই। বাংলাদেশের সিস্টেম ভালোমত জেনে নিয়েছে। বিদায়ের সময় আরিয়েন হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে , 'কে যানে আবারো হয়ত দেখা হবে কোথাও'।

পোস্টটি ৮ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

সাঈদ's picture


দারুন সময় কাটায়েছেন ।

পানাম নগরী শীতকালে আরেকবার যাবো ভাবছি, পিকনিক করতে, ফ্যামিল বা আমরা বন্ধু - যেভাবেই হোক, কারণ আমারও ভালো লাগছে পানাম নগরী টা।

হাসান রায়হান's picture


হ্যা, যাওয়া যায়।

সাহাদাত উদরাজী's picture


ওস্তাদ, আপনার বন্ধু ভাগ্য ভাল। (ছবিগুলো এফবিতে আগেই দেখে ফেলেছিলাম!) আপনার তোলা ছবি দেখতেই মন জুড়ায়। আপনার ক্যামেরাটা একদিন আমাকে ধরতে দিয়েন। ওই ক্যামেরা দিয়ে আমি আপনার একটা ছবি তুলবো এবং যথারীতি আমার মোবাইলও তুলবো।

হাসান রায়হান's picture


ঠিকাছে বস।

জ্যোতি's picture


এইখানে কোন কমেন্ট করব না কারণ একবারও আমাদের যেতে বলেন নাই। হিংসিত হয়ে মাইনাস দিলাম। ভুলে লাইক বাটন ক্লিক করছি।

বকলম's picture


রায়হান ভাই, আমার একটা ধারণা আমরা বিদেশীদের আমাদের দেশ সম্পর্কে নেগেটিভ কথা বলতে বেশি পছন্দ করি, তা সত্য মিথ্যা যেটাই হোক। আপনি সত্য কইরা কনতো আমাদের দেশ সম্পর্কে তাগো কয়টা নেগেটিভ কথা কইছেন? একটাতো জানলাম, প্রেমিক প্রেমিকার পার্কে প্রেম করা নিয়া কইলেন। বাকিগুলান?

হাসান রায়হান's picture


খেইপা গেলেন নাকি? বানাইয়া পজেটিভ কইতে গিয়া বেইজ্জতি হওনের চাইতে যেইটা বাস্তব সেইটা বলা কি উচিৎ না? ওদেরতো চোখ কান আছে তাছাড়া যেইখানে যায় সেইখানের অবস্থা নিয়া জাইনা শুইনাই আসে।

আমার যেই কথা নিয়া আপনের মনে হইল আমি বিদেশীগো কাছে নেগেটিভ কথা কইছি, সেইটা আসলে আসছিল প্রেম বিয়া এইসব নিয়া পশ্চিমা এবং আমাগো মধ্যে কালচারের পার্থক্য নিয়া আলোচনা। আমাগো কালচারে মুরুব্বিগো লুকাইয়া আমরা প্রেম করি। এইটাই আমাগো এইখানের বাস্তবতা। এই যে কালচারে ভিন্নতা এইটা জানাইয়া বিরাট নেগেটিভ কথা বইলা ফেললাম? তাতেই আপনে শরমিন্দা হইলেন? ওকে, আপনেই আমারে শিখায় দেন। আপনেই তাইলে উপদেশ খয়রাত করেন আমার পজিটিভ কী কওন উচিৎ ছিল। এইটারে লুকাইয়া কী পজেটিভ কথা কইলে আপনে খুশি হইইতেন।

বকলম's picture


ক্ষেপিনাই অচিনদা, দুস্ক পাইছি এই যা। আমাদের অনেক কিছুই হয়তো ভালা না, তাই বইলা বিদেশীগো সেইটা আঙ্গুল দিয়া দেখানোটারে নিজের জন্য অসন্মানজনক মনে করি। নো হার্ড ফিলিংস বস।

মীর's picture


পানাম নগরী দুর্দান্ত জায়গা। ছবিগুলোও হইসে সেরকম। তিন নম্বর ছবিটা বেশি লাইক করলাম। হাসান ভাইকে ধইন্যা।

১০

হাসান রায়হান's picture


আপনারেও অনেক ধন্যবাদ।

১১

সামছা আকিদা জাহান's picture


ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য। আমি কখনও যাইনি পানাম নগরে। তবে সোনারগাও এ গিয়েছিলাম ছোট বেলায়।

১২

হাসান রায়হান's picture


ধন্যবাদ।

১৩

মুকুল's picture


হল্যান্ডের লুগ্জন ছয় ফুটির কমে আমি এখনতরি দেখি নাই। হোক ছেলে কি মেয়ে!

১৪

লীনা দিলরুবা's picture


পানামের চেনা দৃশ্যের বাইরের ছবি দিয়েছেন বলে ভাল লাগলো।

১৫

হাসান রায়হান's picture


ছবিই তুলতে পারিনাই। যা গ্রম!

১৬

শওকত মাসুম's picture


আইডিয়া খারাপ না, মুখে রঙচঙ মাইখা ডেট করতে যাওয়া। আহারে সেই বয়সে এইটা জানলে লাভ হইতো। তাইলে আর ধরা খাইতাম না।

১৭

নুশেরা's picture


আমি মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম ওদের ঝারি দেয়ার জন্য। ওরা যদি বিল শেয়ার করতে চায় বলতাম, আমারা তোমাদের মত কিপ্টা না গেস্টকে দিয়া বিল দেয়ার কথা আমরা চিন্তাও করতে পারিনা। খাওয়ার পর অবশ্য ওরা ইউরোপিয়ান নিয়মে যায় নাই।

দাওয়াতে গিয়া অচিন্দার ঝাড়ি খাইতে হয় সেইরম কিছুই করা যাবে না, ইয়াদ রাখলাম। Big smile

তিন নাম্বার ছবিটা বেড়াছেড়া সুন্দর হইছে।

১৮

নীড় সন্ধানী's picture


তিন নাম্বার ছবিটা বেড়াছেড়া সুন্দর হইছে

তিন নম্বরের মেয়েটা বেড়াছেড়া সুন্দর! Glasses Smile

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

হাসান রায়হান's picture

নিজের সম্পর্কে

অথচ নির্দিষ্ট কোনো দুঃখ নেই
উল্লেখযোগ্য কোনো স্মৃতি নেই
শুধু মনে পড়ে
চিলেকোঠায় একটি পায়রা রোজ দুপুরে
উড়ে এসে বসতো হাতে মাথায়
চুলে গুজে দিতো ঠোঁট
বুক-পকেটে আমার তার একটি পালক
- সুনীল সাইফুল্লাহs