শৈশব
“শৈশব" বড়োই মধুর সময়। আমাদের মধ্যে খুব কম মানুষই পাওয়া যাবে যারা তার শৈশব ফিরে পেতে চায় না। মানুষের জীবনে এটিই সবচেয়ে মূল্যবান, রঙিন, স্বপ্নময়, নিষ্পাপ, দুশ্চিন্তামুক্ত, আনন্দঘন সময়। ছোটবেলার মধুময় স্মৃতি বুকে বয়ে নিয়েই আমরা বড়ো হয়ে উঠি। এই সময়টায় দুনিয়ার কোনো জটিলতাই আমাদের স্পর্শ করতে পারে না। দুনিয়ার ভেজাল থেকে আমরা ১০০ হাত দূরে থাকতে পারি। কিন্তু আস্তে আস্তে বড়ো হওয়ার সাথে সাথে যতো সব জটিলতায় জড়িয়ে পড়ি।
আমি কিন্তু আমার মতো কিছু-সংখ্যক মানুষের কথা বলছি যাদের জীবনে শৈশব, কৈশোর, যৌবন ও বার্ধক্য পর্যায়ক্রমে আসে। তাদের কথা কি আমরা ভাবি যারা জন্মের পর থেকেই জড়িয়ে পড়ে জীবনযুদ্ধে, জীবনের মৌলিক জিনিসগুলোও যাদের কাছে সহজলভ্য নয়? সুবিধাবঞ্চিত এইসব শিশু আমাদের বাড়ির বাবুইসোনাদের মতোই এক একটা হীরার টুকরা, কিন্তু কয়লা দিয়ে ঢাকা। তাই চোখে পড়ে না এইসব গুপ্তধন; দিনের পর দিন মাটিচাপাই থেকে যায়।
১. খাদ্য: পর্যাপ্ত খাবার ছাড়া কতোটা সময় আমরা আনন্দে কাটাতে পারব? হয়তো একদিন বা দুইদিন। কিন্তু মাসের পর মাস যদি না খেয়ে থাকাটাই নিয়তি হয়, তাহলে? ভরপেট খাওয়া কাকে বলে, যদি সেটা সারা জীবনই অজানা থেকে যায়, তাহলে?
২. বস্ত্র: ঈদে নতুন জামা না পেলে কয়জন মন খারাপ করবে না? হয়ত জামার পরিবর্তে অন্য কিছু দামী জিনিস, যেমন: নতুন মোবাইল, আইপ্যাড বা ল্যাপটপ পেলেই সে কষ্ট ভোলা যেতে পারে।
৩. বাসস্থান: বাসায় একটানা থাকতে থাকতে বোর লাগে তাই জরুরি হয়ে উঠে ভ্যাকেশন। কিন্তু মাথার ওপরের এই আশ্রয়টুকুই যদি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে?
৪. চিকিৎসা: এটার প্রয়োজনে আমরা এখন দেশের চেয়ে বিদেশই বেশি ভালো পাই। দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর থেকে আস্থা উঠে গেছে। আমাদের বাবুইসোনাদের গা গরম হলেই ছুটে যাই নামীদামী ডাক্তারের কাছে। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বল করাটাই ভালো। কিন্তু কী হবে, যদি আমাদের আশেপাশে ১০০/২০০ মাইলের মধ্যেও যদি কোনো চিকিৎসাব্যবস্থা না থাকে? তাহলে হয়তো প্রকৃতির লতাপাতাই ভরসা।
৫. শিক্ষা: শিক্ষা আমাদেরকে আলোর পথ দেখায়, মানুষ হতে শেখায়। কিন্তু মানুষ হয়েই জন্মেছে, তার আবার নতুন করে মানুষের মত মানুষ হতে হয় কেন? তার মানে কি এই যে, আমরা মানুষ হয়ে জন্মাই তারপর বড় হওয়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে মনুষ্যত্ব হারাই?
মনুষ্যত্বের পথেই তবে সরাসরি আসি। আশেপাশে ফুলের মত নিষ্পাপ অনেক শিশু কষ্টে আছে। এখন তাদের খেলার সময়, জীবনের মৌলিক চাহিদা নিয়ে ভাবার সময় নয়। ঠিক আমাদের ঘরের আদুরে শিশুদের মতোই তারাও একটু আদর পেলে নিজেদের জীবনটা গুছিয়ে নিতে পারে। আর তাদের চাহিদাগুলোও কিন্তু আমাদের চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য ।
কতো রকমের বিলই তো প্রতিমাসে পে করি আমরা। এসো না, বন্ধুরা, আমরা একসাথে হয়ে তাদের শৈশবের বিলটা পেমেন্ট করে দিই। তাদের শৈশবটাকে ধরে রাখি নিজের শৈশবটাকেই চিরস্মরণীয় করে রাখতে।
তবে কোনো অনাথাশ্রম নয়, আমরা গঠন করব পরিবার, যেখানে এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা ফিরে পাবে তাদের অমল শৈশব, যেখানে তাদের মৌলিক চাহিদার পাশাপাশি অফুরন্ত ধারায় পাবে অভিভাবকের যত্ন,আদর-ভালোবাসা আর প্রাণভরে দুষ্টুমি করার মতো প্রশ্রয়। অনাথ হয়ে নয়, বরং আমাদের সন্তান হয়ে বড়ো হবে তারা। ঘরের বাবুইসোনাটার মতোই তাদের হাসিটাও আমাদের মন ভরিয়ে দেবে।
এই বিষয়টি মাথায় নিয়েই দূর পাহাড়ে রাঙামাটি জেলার চন্দ্রঘোনায় প্রায়বিলুপ্ত এক আদিবাসী সম্প্রদায় খিয়াংদের পল্লীতে পূর্ণিমা খিয়াং-এর ছোট্ট মাটির বাড়িতে দশটা বিচ্ছু নিয়ে শুরু হয়েছে অনন্য এক পরিবার গঠনের যাত্রা। এই পরিবারটির
নাম ওয়াশো লম্ ফাউন্ডেশন, সংক্ষেপে যা ডাব্লিউএলএফ নামে পরিচিত। খিয়াং ভাষায় ওয়াশো লম্ মানে আলোর পথ বা আলোর দিশারী।
পূর্ণিমার মাতৃছায়ায় এই শিশুরা বেড়ে উঠছে তার নিজের গর্ভজাত সন্তানদের সাথে একই খাবার খেয়ে, একই বিছানায় ঘুমিয়ে। সাধারণ খাবার খেয়ে, সাধারণ পোশাক পরে, সাধারণ বিছানায় ঘুমিয়ে, পাশের পাহাড়িকা স্কুলে পড়ে পূর্ণিমার অসাধারণ ছায়ায় অনন্য হয়ে বেড়ে উঠছে দুরন্ত এই শিশুরা, কমপ্লান না খেয়েই। ওদের বেড়ে ওঠা যে ঠিকমতোই হচ্ছে, সেটা বোঝা যায় পূর্ণিমার কাছে প্রতিদিন আসা অজস্র নালিশের মধ্যে দিয়ে। পাড়া-প্রতিবেশীর নালিশ আসা বন্ধ হলেই বুঝতে হবে, কোথাও কোনো সমস্যা হয়েছে।
আমি নিজের চোখে তাদেরকে কখনো দেখিনি। তাদের কথা শুনেছি আমার বন্ধুতালিকায় থাকা আনিস মাহমুদের মুখে আর প্রত্যক্ষদর্শী নজরুল ইসলামের লেখা থেকে। শিগগিরই হয়তো আমারও যাওয়া হবে সেখানে। আর সেই উত্তেজনায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারছি না।
পাহাড়ের ক্ষীণতোয়া যেমন সমতলে নামতে নামতে প্রশস্ত হয়, সর্বব্যাপী হয়, আমি জানি, একদিন ডাব্লিউএলএফ তার ক্রমবর্ধমান ব্যাপ্তি দিয়ে ঝরনা-নদী-সমুদ্রের মত বিশাল হয়ে উঠবে।
খুব চমৎকার প্রাণবন্ত লেখা। আর নজরুলের লেখা থেকে অনেককিছু জানা গেলো অনন্য এই উদ্যোগ সম্পর্কে। শুভকামনা রইলো।
ধন্যবাদ
বাহ, স্বাগতম হে মানবতা ...
পড়ে ভাল লাগল অনেক,
অসংখ্য শুভকামনা ওদের জন্য।
ধন্যবাদ
আরি,
বলতে ভুলে গেছিলাম!
এবি তে সুস্বাগত।
আবারও ধন্যবাদ । এবি র সাথে অনেকদিন ধরেই আছি কিন্তু লিখালিখি করতে সাহস হয়নি কখন। সবাই এত ভাল লিখে সেখানে আমার চুপ থাকাই সেফ ।
ভীষণ অভিমানী কইন্না রে স্বাগতম!
সুন্দর লিখা
ধন্যবাদ :
এই দেখলেন তো ভুল ইমো দিয়ে ফেলছি । এর জন্যই সাহস হয় না । লজ্জা পাবার ইমো হবে
এগিয়ে যাক ওয়াশো লম্ ফাউন্ডেশন!
এবিতে স্বাগতম! লেখা চলুক!
ধন্যবাদ
মেঘের আড়াঁলে লুকিয়ে ছিল প্রতিভা.. !!!
ভাল লাগল বেশ ।
ধন্নবাদ
শুভ কামনা রইল।
ধন্যবাদ
টু এবি।
লেখা ভালো লেগেছে। ফাউন্ডেশনের ব্যপারে আরো বিস্তারিত জানতে চাই।
What is WLF
"The journey of a thousand miles starts with a single step." - Lao Tsu
WLF is the abbeviation of Waasow Lomm Foundation. Waasow Lomm means the path to enlightenment in the near-extinct Khyang language.
WLF is a universal home for children who are deprived of the basic bill of rights. WLF is not an orphanage. Orphans, in general, are seen as an isolated segment of the society and they live on pity and they hardly have access to the opportunities and benefits that are earmarked for the mainstream population.
WLF does not only provide the children with food, lodging, clothing, education and healthcare that any other hostel or orphanage provides, the children also find their lost childhood. Every child is seen as unique and WLF focuses on supporting children in a way so that their creative energy gets the outlet and their lives become meaningful to them and to the civilisation.
WLF started its jouney in a humble way with nine children:
1. Michael Khyang
2. Mary Khyang
3. DIpali Khyang
4. Sohel Khyang
5. Thui Hla Khyang
6. Umong Khyang
7. Benson Khyang
8. Simpson Khyang
9. Ashiq Khyang
10. Hena Khyang
Profile of each child will be uploaded gradually.
Since the home is incepted in a Khyang locality at Chandraghona in the hill district of Rangamati, primarily all the children came from Khyang community but WLF is open for all... regardless of ethn
স্বাগতম!
ধন্যবাদ
মন্তব্য করুন