ইউজার লগইন

আতকা


সেদিন যখন সুপ্রয় আর রত্নাকে মাতৃমঙ্গল দেখলাম, প্রথমে একটু আবাক হলাম। শেষে নিজে নজে ধরে নিলাম- হয়তো বেড়াতে এসেছে। আবার প্রশ্ন উঁকি মারে! রত্নার পরিবার তো অনেক কঠিন একটি পরিবার, সেখান থেকে সুপ্রয়ের মতো বেকুব কি করে রত্নাকে নিয়ে বের হলো। এইসব কিছু প্রশ্ন সেদিন সর্বক্ষণ আমাকে তাড়িয়ে গেছে তারপরও আমি সুপ্রয় এর কাছে জানতে চাইনি কিভাবে রত্নাকে নিয়ে বের হলো। এতোদূর আসার সাহস জন্মালো কবে?!
সুপ্রয় কে আমি অনেক ভালো করে চিনি। কারণ মহল্লায় আমি একমাত্র তার সাথে মিশি শুধু তাই না আমরা অনেকটা কাল একসাথে পড়ালেখাও করেছি। আভাবের তাড়ানায় কখন যেন ছিটকে গেলো পড়ালেখা থেকে তবু আমার আর তার সম্পর্ক ঠিক ছিলো। রত্নার সাথে তার সম্পর্কের সবকিছুই আমার জানা। রত্নাকে যে সে কতো ভালোবাসে সেটা ও আমি বুঝি, বুঝি কি বুঝতে বাধ্য হয়েছি। আমার কেনো জানি ধারণা ছিলো সুপ্রয় কে দিয়ে প্রেম-টেম হবেনা! সেই সুপ্রয়ই আমার ধারণা পাল্টিয়ে দেখিয়ে দিলো, তাতে আমি খুশি। আমার মনে পড়ে রত্নাকে নিয়ে আমি ঢং করলে সে খুব তেজ নিয়ে বলতো বাংলা সিনেমার মতো- এই এসব বলবি না।

একদিন সন্ধ্যায় সুপ্রয়ের সাথে দেখা। দেখা হতেই বলে-
জানস মেয়েরা খুব খারাপ।
আমি উত্তর দিলাম- জানতাম না, এখন জানলাম। কিন্তু কি হয়েছে? বললো-
রত্নার সাথে সম্পর্ক শেষ, কাল মোবাইল জ্বালিয়ে দিলাম, আর কোনোদিন কথা বলবো না।
আমি নিজের কাছে বললাম, সুপ্রয় তুই পারবি না রত্নার সাথে কথা না বলে!
সেদিন সন্ধ্যায়-ই আমার কাছে ছুটে এসে বললো : বন্ধু কিছু টাকা ধার দে, একটা ফোন কিনবো।


রত্নার বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে। রত্না সুপ্রয়কে জানিয়েছে- হয়তো তাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে নতুবা সে বিষ খাবে।
আমি শুনলাম, শোনার পর সুপ্রয়কে বললাম- তুই কি উত্তর দিলি?
সে বললো- আমি পরিবারে সম্মতি ছাড়া কিছু করতে পারবো না। আর সে যে আমাকে বলছে বিষ খাবে আমি সে কথা তার বউ দি'র কাছে বলেছি আমার বউ দি'কে দিয়ে।
আমি বললাম, তাহলে তুই তোর পরিবার কে বল?
সে জানালো, তার পরিবার সোজা তাকে নিষেদ দিয়ে বলেছে, আপাতত এসব না আর রত্নার পরিবার আমাকে মেনে নেবে না!!

আমি সুপ্রয়ের মুখে কোনো বিষাদ বা কষ্টের ছায়া দেখছি না। আমি অবাক হচ্ছি সুপ্রয়ের এই সহজ করে বলা দেখে। আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না তবু বললাম, তুই যে তাকে ভালোবাসিস? তুই রত্নাকে পাবিনা বিয়ে যদি না করিস, তবে কেনোই ভালোবাসলি? কি পেলি শুধু তো ভিলেন হয়ে যাচ্ছিস রত্নার কাছে?
সুপ্রয় হাসে। তার হাসি দেখে আমার ইচ্ছে করছে তার দাঁত খুলে ফেলতে। নীরব হয়ে আছে সময়। নীরবতা ভেঙে সুপ্রয় আবার বলে - এই যে বল্লি ভালোবেসে কি পেয়েছি? শোন তাহলে, রত্নাকে আমি দু-দু'বার প্রেগন্যাট করেছি। আর কি দরকার? কথাটি বলে বীরের মতো ভাব নিচ্ছে।
সুপ্রয়ের মতো ভীতু, ভদ্র একটি ছেলের মুখের কথাটি শুনে আমি প্রায় নিথর। কেঁপে কেঁপে বললাম এই জন্যে ভালোবেসেছিস?

আমি সুপ্রয়ের কাছ থেকে দূরে যাবার জন্য উঠে দাঁড়াই। আমার মাথা কেনো জানি নত হয়ে গেলো, সুপ্রয়ের বীর বীর ভাবের কাছে? না তার প্রতি ঘৃণা হচ্ছে বলে? আমি চলে যেতে থাকি। তার সাথে আমার দূরত্ব বাড়তে থাকে আর চোখের সামনে ভেসে উঠছে মাতৃমঙ্গলের সেদিন। আমি বুঝতে পারছি, আমার কাছে স্পষ্ট হচ্ছে কেনো তাদের মাতৃমঙ্গল দেখেছিলাম!!

পোস্টটি ৯ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মীর's picture


এটা একটা গল্পই। তবুও বিষয়টা অমানবিক। আবার সমাজ-বাস্তবতা এইগুলাও তো অমানবিক। না হইলে কি গল্পের বিষয়টা এরকম হতো?

পোস্ট পছন্দ হইছে। শুরুতে মাতৃমঙ্গলের কথা বলছিলেন, তবুও ধরতে পারি নাই। এইটা গল্পকারের গুণ।

টুটুল's picture


মীরের সাথেই বলতে হয়... শুরতে মাতৃমঙ্গলের কথা বলছিলেন.. তবু্ও ধরতে পারি নাই..

আপনি এত কম লিখেন ক্যান?

তানবীরা's picture


লেখা ভালো লেগেছে।

সুপ্রয় এর জন্য একরাশ আন্তরিক ঘৃনা

চাঙ্কু's picture


ভালুবাসা ?? আফসুস

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


সুপ্রয় এর জন্য একরাশ আন্তরিক ঘৃণা।

লেখা ভালো লেগেছে।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

অপূর্ব সোহাগ's picture

নিজের সম্পর্কে

জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।