যাপিত জীবন ১
ঠিক কবে থেকে জীবন যাপন উপভোগ করতে শিখেছি মনে নেই। কখন থেকে যে বেঁচে থাকাটা অনেক বেশি আনন্দের মনে হয় সেটার হিসেবও জানা নেই। হয়তো ছাপোষা মধ্যবিত্ত বলে এত এত উপলক্ষ্যের ভিড়ে হারিয়ে গেছে সবচেয়ে বড় এই উপলক্ষ্যটা। কিংবা একটু ঘুরিয়ে বললে মধ্যবিত্তের ছাপোষা মনোবৃত্তিতে এটা আসলেই কোনো উপলক্ষ্য নয়। তারপরেও যতদুর মনে পড়ে মধ্যবিত্তের লেবেলে আমার এই যাপিত জীবনের প্রায় প্রতিটি দিনই কোনো না কোনো ভাবে 'আমি মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান' এই বোধটা ক্ষনিক আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে এসেছে। সেই সব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপলক্ষ্য নিয়েই যাপিত জীবন।
শুনেছি পড়াশুনার নাকি শেষ নাই। শিক্ষার বয়স মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। কিসের কি ঘোড়ার ডিম। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেই মাথায় গামছা বেধে নেমে পড়লাম কামলা গিরিতে। সেই যে নেমেছি, আজ কাল প্রায় মনে হয় এ যেন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়ে গেছে। পড়াশুনাটা আর আদৌ আর করা হবে কিনা কে জানে? বন্ধুরা সব একে একে চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। অল্প কিছুদিন পর ওরা ফিরে আসবে বড় বড় ডিগ্রী নিয়ে। আর আমি ছাপোষা, কদিন পর পর ওদের বিদায় দেয়ার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত। আর মাস শেষে ব্যাংকে জমা হওয়া টাকার বিন্যাস নিয়ে হাবুডুবু খাওয়া। মাঝে মাঝে হিসেব মেলে না। তাতে কি? দিনতো চলেই যাচ্ছে। ভালো মন্দ মিলিয়ে। মন্দ না থাকলে ভালো কি ভালো থাকে? তাই মন্দের সাথে সহবাস করেই ভালো বুঝতে শেখার নির্মম প্রয়াস। দিন শেষে রুমের বাতি নিভিয়ে কুন্ডলী পাকিয়ে ঘুমুতে যাবার সময় কোনো অতৃপ্তি বোধ করি না। এই বেশ ভালো আছি, এই বোধের নামই বোধহয় মধ্যবিত্তবোধ।
চাকরীতে ঢোকার পর থেকে একটা নিয়মিত রুটিন হলো, প্রতিদিন রাত আটটার মধ্যে বাসায় একবার ফোন দেয়া। মাঝে মাঝে একটু দেরী হয়ে যায়। তখন আম্মা ছটফট করতে করতে নিজেই ফোন দিয়ে বসেন। এখানেও একটা নিয়ম আছে। আম্মা যদি রাত আটটার পরে ফোন দেন, এর মানে হলো এটা স্বাভাবিক কল। আমার দিতে দেরী দেখে কল দিয়েছেন। এটাকে দুশ্চিন্তার কলও বলতে পারেন। মায়েরা একটু বেশিই দুশ্চিন্তা করে। আর যদি কোনোদিন আটটার আগেই কল করে বসেন, এর মানে মোটামুটি ইমার্জেন্সি কল। এমন একটা কিছু হয়েছে যেটা আমাকে বলার জন্য উনি মুখিয়ে আছেন। প্রতিদিন নিয়ম করে এই কাজটা করতে কখনো ক্লান্ত লেগেছে মনে পড়ে না। বরং দিনের ক্লান্তিটা মুছে যায় হাসিমুখে দুইটা কথা বললে। প্রতিদিন কি আসলেই ফোনে একমিনিট বলার মতন কথা থাকে? আজকে রাতে বাসায় গিয়ে কি কথা বলবো? মজার ব্যাপার হলো এখন ভেবে কিছু খুঁজে না পেলেও ফোন করলেই হড়বড় করে কথা বলতে থাকি। তবে আম্মা মনে হয় আরো বেশি কথা বলেন। ওনার কথা বলার বিষয়ের কোনো শেষ নেই। এই যেমন গতকাল একটা ইমার্জেন্সি কল করলেন, খুব ইন্টারেস্টিং একটা বিষয়ে কথা হলো। আমাদের বাসার ব্যবহারের কাঁচের জগটা ভেঙ্গে গেছে। আব্বা নতুন একটা জগ কিনে আনলেন। একটা কিনলে একটা ফ্রী এই দৌরাত্ন্যে জগের সাথে একটা টেবিল ঘড়ি ফ্রী পাওয়া গেল। ঘড়িতে এলার্ম দেয়া যায়। আমাদের বাসায় ইতিমধ্যে দুইটা এলার্ম দেয়ার যোগ্য টেবিল ঘড়ি আছে। একটা আব্বা ব্যবহার করে। আরেকটা ছোট বোন। আমার ছোট ভাই দাবী করে বসলো তার নাকি এই টেবিল ঘড়িটা খুব দরকার। (প্রসঙ্গত বলে নিই, ঠিক এই মুহুর্তে তার ঘুমানো ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। কলেজ বন্ধ। নতুন ইয়ারের ক্লাস শুরু হতে দেরী আছে।) কিন্ত ইদানিং নাকি আমার ছোট বোনের টেবিল ঘড়িটা ঠিক মতন সার্ভিস দিচ্ছে না। তাই আম্মা তাকে বললো এটা যেন মুমু (আমার ছোট বোনের নাম) কে দেয়া হয়। ব্যস লেগে গেল লংকা কান্ড। আমার ছোট ভাই রেগে মেগে আগুন। তার কথা আম্মা নাকি সবসময় সব কিছু মুমুকে দিয়ে দেয়। তাকে কিছু দেয় না। এবং ক্ষেপে গিয়ে সে দুপুর থেকে আম্মার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। আম্মা আমাকে ফোন করে তার এই বিশাল সমস্যার কথা জানালো। এবং এর সমাধান চাইল। আমি এত দূরে বসে সমস্যার সমাধান করবো কি? হিংসায় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিলাম। আমিও হয়তো ওদের সাথে ঘড়ির ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে একটা লড়াই করতে পারতাম। তা না এই জঙ্গলময় শহরে বসে রিমোট সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে আম্মার ফোন কেটে ছোট ভাইকে ফোন দিলাম। আমার ফোন পেয়ে আমি কিছু বলার আগেই বেচারা থতমত খেয়ে বললো "ভাইয়া দিয়ে দিছিতো। আমার লাগবে না।" আমি হাসতে লাগলাম আর আরো একবার মনে হলো এটাই বোধহয় মধ্যবিত্তবোধ।
চলবে
...আমরা বন্ধুতে রাকিবের পয়লা পোষ্টে আগে স্বাগতম জানাইলাম, তারপর পোষ্ট পড়তাছি...
ধইন্যা বিলাই ভাই।
শুভ পোস্টিং!
ডায়রি পড়তে বেশ লাগে। চলুক।
ছা-পোষা কথাটা বেশ কয়েকবার এসেছে লেখায়। রাকিবকে তো "একলা"ই জানতাম। ছা মানে ছানাপোনা আসলো কোত্থেকে!
এই জগটা ভেঙে ফেলতে বলো ভাইকে। তাহলে আরেকটা ঘড়ি আসবে তার জন্য।
ছা-পোষা মানে কি আসলেই আপু ঐ রকম নাকি? ছানা-পোনা পোষা? আমি আজকা জীবনে প্রথম জান্লাম..
ছা মানে তো সন্তান (নাকি ভুল জানি?)। যেমন মা তার তেমনি ছা- প্রবচন আছে না একটা!
....ছা মানে তো জানি, কিন্তু এই ছা যে ছা-পোষার বুৎপত্তি, সেডাই জান্লাম....মানে, সব সময়তো শুইনা আসছি, ছা-পোষা কেরানী....ব্যাবসায়ীদের ক্ষেত্রে বা অন্য কোনো পেশাদারীর ক্ষেত্রে তো ইউজ করেনা...কিন্তু তাদের কি ছা নাই?
আসলে এডো হইল প্রতিকী। ছা পোষা মানুষের জীবন যাপনের মতন কইরা বোঝাইতে, আটটা পাচটা অফিস, এর বাদে ঘরে গিয়া বাচ্চা কোলে নিয়া কান্না থামানো এডো মিলাইয়া প্রতিকী। মধ্যবিত্তের একটা ছবি কইলেই এই ধরনের বোঝা যায়। এই আর কি।
আমিতো ভাই একলাই। তয় ছাপোষা মনোবৃত্তিযে আছে এইডা সত্যি। ছোট ভাইবোন গুলাতো আমার পিঠে চইড়াই মানুষ হইছে। আমার ছা এর মতন। তাই মনে হয় আমার মইধ্যেও এই বোধ জন্ম নিছে।
রাকিবের বিশ্লেষণ এক্বেবারে যথাযথ।
....মানে হৈলো, পরিবারে, রাকিব বড় হৈয়া গেছে (দু:খ করতে মন চাইলে কৈরা নে), আর বাকীরা এখনো তাদের সময় উপোভোগ করতাছে....
রাকিবের লেখা অনেক শক্তিশালী...কোনো রোকম আলাদা টোন ছাড়াই পাঠক আটকাইয়া রাখে...নিয়মিত লিখলে ভালো হয়....
হ পরিবারের বড়, মাঝে মাঝে একটু দুঃখতো হয়ই। কি আর করা। হইল না একটা লাগাম ছাড়া জীবন। তয় যা আছে এডাও ভালো। ভালৈ আছি।
শেষ প্যারায় এট্টু বেশি কইয়া ফালাইলা। লেখার চেষ্টাতো নিয়মতি করিই। সময় পাই না সেভাবে, এইডা হইল সমস্যা।
পয়লা পোষ্ট মোবারক রাকু।
ধইন্যা, কিন্ত মন খারাপ ইমো কেন? এডিতো বুঝলাম না।
মন খারাপের কারন আমার মনের কথা গুলান কেমনে বুইঝা লিখা দিলা এইটা নিয়া টেনশনে আছি।
হা হা হা হা তাই নাকি? ভালোতো। আসলে আমাদের সবারই জীবনের গল্পে কম বেশি মিল থাকেই। একারনেই বোধহয় এমন মনে হয়।
চলুক।
দিন শেষে রুমের বাতি নিভিয়ে কুন্ডলী পাকিয়ে ঘুমুতে যাবার সময় কোনো অতৃপ্তি বোধ করি না।---- চরমভাবে সহমত।
সহমত না হইয়া কুনু উপায় আছে নাকি? ঘুমানোর শান্তি হইল সবচেয়ে আগে। অতৃপ্তি নিয়া ঘুমাইলে পৃথিবীরে বিষময় লাগে। বাঁইচা থাকাটাই ঝামেলা মনে হয়।
তোমারে ধইন্যা।
দিনলিপি ভাল লাগে...শেষের দিকে বেশি মজা পাইছি, শুরুতে অনেক ফিলোসফি, দিনলিপিতে ফিলসফি ভাল লাগে না
হি হি হি ফিলোসফি!!!! এইডা আবার কি? খায় না মাথায় দেয়? খিক খিক খিক।
তয় কোনো কোনো দিন যদি মাথার ভিত্রের চিন্তা গুলা ফিলোসফিকেল হয় তইলে কইলাম আমার কোনো দোষ নাই। 
দিনলিপিতে ফিলোসফি আসলেই খুব খারাপ জিনিষ। আর দিমু না।
ভাল্লাগছে।
ধইন্যা মুকুল ভাই।
পাশ করার পর চাকরির জন্য ছোটাছুটি করতে হবে ,ভাবতে তো এখনই ভয় লাগছে
ভয়ের কিছু নাই। সময় হইলে সব আস্তে আস্তে ঠিক হইয়া যায়। তোমাগো টেনশন আরো কম। টেনশন নিও না ভাই।
এইরকম গল্পগুলি ভালো লাগে। জীবনের গল্প সবসময় প্রিয় আমার
জীবনের গল্প শুনলেই মনে হয় নিজের গল্প।
এই জন্য মনে হয়।
বাহ। লেখা ভাল হইছে। নিয়মিত লেখেন।
অনেক ধন্যবাদ মাসুম ভাই।
লেখা ভাল্লাগছে ।
ধন্যবাদ বিমা ভাই।
লেখাটা বড়ই সুখাদ্য হইছে
রাকু জেডা আছো কিরাম ?
ওরে নাজুপা, ভালা ভালা। সবডিরে দেখা যায় আবার। ভালো লাগতেছেরে। লেখা ভালা পাওয়ার লাইগা ধইন্যা।
লেখা ভাল হইছে..
স্বাগতম
লেখায় নিজেকে দেখলাম
ধন্যবাদ টুটুল ভাই। লেখার কোন জায়গায় নিজেরে দেখলেন?
মধ্যবিত্তের

সব কিছুই চেনা
হ মধ্যবিত্তের সব কিছুই সব মধ্যবিত্তের চেনা।
লিখা ভালো লাগলো;
ধন্যবাদ কাঁকন। আমাকে স্বাগতম জানাইলেন না?
স্বাগতম; হাত-পা খুলে টাইপ করে যান;
স্বাগতম। ভালো লাগলো
ধন্যবাদ নজরুল ভাই।
আমার-ও সামনাসামনি কথা বলতে মাঝে মাঝে অস্বস্তি বোধ হলে-ও ফোনে কথা বলতে তীব্র ইচ্ছে হয়।
স্বাগতম!
হমম ঠিক বলছেন। এর মানে বোধহয় চোখের দিকে তাকিয়ে সবসময় সব কথা বলা যায় না।
আপনাকে ধন্যবাদ আশরাফ ভাই।
আমার কথা... আমাদের কথা...
হমম। আমাদেরই কথা।
আমারো একি কাহিনী, লিখব নে একদিন ...
ব্লগ জুইড়া সব শালা দেখি ছাপোষা। একটাও কি বড়লোক নাইরে।
পছন্দ করলাম
ধইন্যা মানু ভাই।
১. ৩ সপ্তাহ বাদে আপনে পয়লা পোস্ট করছেন!!

২. আমার আম্মাও প্রতিদিন একবার কইরা ফোন করেন। কোনদিন মিস হইলে, বেশিরভাগদিনই দেখা যায়, আমিও আর ফোন করি না। পরদিন মা'র সে কি ঝাড়ি!!
৩. "একলা একলা লাগে", এইটা মুখ ফুইটা বলতে পারতেছেন না? ওক্কি.. আন্টিরে আম্রা কমুনে.. আপনেরে একটা বিয়া দিয়া দিতে!!!
সবশেষে, পয়লা পোস্টে স্বাগতম জানানির নিয়ম রক্ষার্থে "এবিতে স্বাগতম।"
স্বাগতম জানানোর লাইগা ধইন্যা। পোষ্ট পইড়া কুন জায়গায় তুমার মনে হইল আমার একলা একলা লাগতেছে? আবার কুন জায়গায় মনে হইল যে আমি মুখ ফুইটা কইতে পারতাছি না?
আমার বিয়া নিয়া আম্মা আমার চেয়ে বেশি আগ্রহী। সো নো টেনশন।

আহা!! পুরা পোস্ট জুইড়া খালি একলা একলা থাকার হাহাকার!! সবাই বাসায় আর আপনে একলা এইখানে চাকরি-বাকরি কর্তাছেন!!
আপসুস!!!
পড়লাম।
কিছুই বলার নাই। কারন, সবই জানা ঘটনা।
স্বাগতম। আমার আগে এসেও আমার পরে পোষ্ট দিলে!
আবারো ফাঁকিবাজী কমেন্ট। নাহ তোমারে নিয়া পারা গেল না। যেই একখান ঘটনা এইখানে লেখলাম সেইটা পোষ্ট দেয়ার আগের দিনের ঘটনা। তুমি জানলা কইত্তে মিয়া?
আমিতো ভাই ধুমধাম পোষ্ট দিতে পারি না, এইডাতো তুমি জানোই। তারপরেও কেম্নে কেম্নে জানি লেইখা ফালাইছি যথেষ্ট তাড়াতাড়ি।
পোষ্ট পড়ে খুবই ভালো লাগছে। সব মায়েরা বোধ হয় এমনই হয়। ঘড়ির কাঁটায় হিসেব দেখে। আমার মাও সময় পার হবার সাতে সাথে অস্থির হয়। প্রত্যেক বেলায় পোন করে খেয়েছি কিনা, কি খেলাম, কোথায় গেলাম।
ওরে আইলসা.. নতুন পোস্ট দেন। সেই কবে একটা দিয়া হাওয়া!!!
চলবে?!!! চলতেছে না তো!~!!
খুব ভালো লাগছে লেখা টা । (বুইড়া আঙ্গুল )
স্বাগতম
আমার ফোন পেয়ে আমি কিছু বলার আগেই বেচারা থতমত খেয়ে বললো "ভাইয়া দিয়ে
দিছিতো। আমার লাগবে না।" আমি হাসতে লাগলাম আর আরো একবার মনে হলো এটাই বোধহয়
মধ্যবিত্তবোধ।
খুব আরাম নিয়ে পড়লাম। নিজেকে ফিরে পাই চেনা চেনা লাগে তাই
অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
মন্তব্য করুন