আমার প্রথম প্রেম
ক্লাস এইটে তখন আমি, সন ২০০০ইং। দুষ্টামি কানায় কানায় ভর্তি, তারপরও আমি ভদ্র হিসেবেই পরিচিত ছিলাম। ক্লাসে কেউ প্রেম-ট্রেম করত না, আমিই প্রথম করলাম আরকি।
ঘটনাটা এক প্রকার এইরুপ>>>
আমরা ক্লাসের মেয়ে-ছেলেরা একসাথে বউচি খেলতাম আলাদা আলাদা দল হয়ে ক্লাস শুরুর আগে। সেদিন বৃষ্টি পড়ছিল, বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে খেলতেছিলাম। সেদিনই প্রথম, সেদিনই শেষ বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে খেলা। আমাদের স্কুলের মাঠের পাশে ছিল একটা খাল। আমরা ছেলেরা এক ফন্দি আঁটলাম। মেয়েরা যখন আমাদের ধরতে আসত, আমরা খালে লাফ দিতাম। পানিতে দম থাকে না। তাই আমরা দুই-তিন রাউন্ড এমনিতেই জিতে গেলাম। শেষের রাউন্ডে এসে, দুই জন সাহসী মেয়ে আমাদের মতই পানিতে লাফ দিয়ে বেচে গেল এবং আমি একজনকে ধরতে যেয়ে নিজেই ধরা খেলাম। যাই হোক, ঘন্টা বাজল এবং আমরা ক্লাসে গেলাম। আমাদের ক্লাস টিচার ছিলেন আমাদের ইংরেজি শিক্ষক। তিনি ক্লাসে ঢুকলেন এবং সারা ক্লাসে পানি দেখে চটে গেলেন। সহসা বের করলেন আমরাই ক্লাস ভিজিয়েছি এবং পালাক্রমে আমাদের এরিয়েল পাউডার দিয়ে ধোলাই করলেন। ক্লাস শেষে মেয়েরা আমাদের দোষারোপ করতে লাগল যে, আমাদের কারণে ওরা মার খেয়েছে। মারতো আমরাও খেয়েছি, তাই পাত্তা দিলাম না। ইতোমধ্যে আবিষ্কার করলাম, কেউ ওই মেয়েটা (যে পানিতে লাফ দিয়ে আমাকে আউট করেছিল) এবং আমাকে নিয়ে লাভ-স্টোরি বানিয়ে ফেলেছে। শুনে আমার মন ডুকরে কেঁদে উঠলো। এক মেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি বললাম, "আমি কালো মহিষ পছন্দ করি না।" তারপরও এক সপ্তাহ এক কালো মহিষের সাথে আমার প্রেমের কাহিনী চলতে লাগল। শেষে বললাম, আমি এমন একজনকে ভালবাসি যার নাম 'আ' দিয়ে শুরু এবং 'র' দিয়ে শেষ। ক্লাসে এই ধরণের ডাকনাম-এ কেউ ছিল না। কিন্তু বিধি বাম, ডাকনাম-এ না থাকুক আসল-নাম এ ছিল এবং মেয়ের চাচাতো ভাই যে আমার জিগরী দোস্ত সেই এইটা বের করে ফেলল। শীঘ্রই আমিও জানতে পারলাম, এই নামে কেউ আছে এবং শুরু হল আড়চোখে তাকানো। মেয়েটি দেখতে ছিল ফর্সা, গোলগাল চেহারা। অনেকটা চাকমাদের মডিফাইড ভার্সন।
একদিন আমি তার সাথে কথা বললাম, "তুমি কি স্কুল শেষে আমার জন্য দাঁড়াবে?" সে হ্যাঁ বলল এবং আমি তার হাতে একটা পত্র দিয়ে বাসার দিকে হাটলাম। পরদিন স্কুলে তার সাথে আর কোন কথা হল না এবং আমার দিকে সে বেশি একটা তাকাল না। ছুটির সময় পেছন থেকে ডাক দিল এবং একটা পত্র আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল। আমি পত্রখানা পড়ে খুব উল্লসিত হলাম কারণ উত্তরে হ্যাঁ জেনে কে না খুশি হয়! এইভাবে চলতে থাকল অনেকদিন। আমি তার জন্য কত কবিতা বানিয়েছিলাম কে জানে, সে শুধু উত্তরে লিখত, "ভালোবাসি।" একদিন তার বাসায় দাওয়াত করল তার ভাগিনার জন্মদিন-এর। সেইদিন আমি ১০০ টাকার একটা চকলেট বক্স নিয়ে দাওয়াত-এ হাজির হই ওর বান্ধবীর প্রেমিক-এর সাথে। সেদিনই প্রথম ওর হাত ধরি।
ক্লাস নাইনে ওঠার পর ও পড়ালেখা ছেড়ে দেয়। পত্র আদান-প্রদান হত ওর চাচাতো ভাই এর মাধ্যমে। আমি এসএসসি দিলাম এবং কলেজেও ভর্তি হলাম। হোস্টেল-এ চান্স পেলাম। যাওয়ার আগে ওকে কথা দিলাম, তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করো, আমি অনার্স পাশ করে তোমাকে বিয়ে করব। ওর একটা ছবি ছিল আমার কাছে, লুকিয়ে রেখেছিলাম আমার হোস্টেল-এর আলমারির ভিতরে। আমার রুমে ছিল ৪ জন। কেউ না থাকলে দেখতাম। কলেজ শেষ করে ইউনিভার্সিটিতে উঠলাম। তখন বাসা থেকেই যাতায়াত করতাম। যখন হোস্টেলে ছিলাম তখন আমাদের বাসা আমরা শিফট হয়েছিল। বাসায় এসে পরদিনই যাই ওর চাচাতো ভাই-এর সাথে দেখা করতে এবং জানতে পারি ওর বিয়ে হয়েছে এলাকারই এক ধনাঢ্য ব্যক্তির ছেলের সাথে। শুনে এক শুকনো হাসি দিয়ে কাজ আছে বলে চলে আসলাম।
এরপর একদিন দেখা হয়েছিল, আমি চিনতে পারিনি। আমার সাথে আমার স্কুল জীবনের এর বন্ধু ছিল এবং সে-ই বলল যে দেখ দেখ তোর পাস্ট গার্লফ্রেন্ড যায় ওর বাচ্চা কোলে। ও আমার দিকে তাকিয়ে ছিল, জানিনা চিনতে পেরেছিল কিনা!
ওর-আমার ভালোবাসা সম্পর্কে ক্লাসের সবাই জানত, ক্লাস-টিচার সহ। যাই হোক, এরপর আর পিছন ফিরে তাকাইনি। তবে আজো মনে পড়ে এবং ভালো লাগে ভাবতে যে আমি আমার কথা রাখতে পারিনি কারণ সে রাখতে দেয়নি। আমি কারো সাথে ছলনা করিনি, আমি আমার প্রথম প্রেমকে নিয়েই জীবন পাড়ি দিতে চেয়েছি।
মরমানতিক
(

মন্তব্য করুন