ঈদ আনন্দের ফল্গুধারায়...
আমার কাছে ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে আতঙ্ক। ঈদ করতে যাই লক্ষ্মীপুর শ্বশুরালয়ে, যাওয়ার আগের অংশটুকু আতঙ্কের, ৫/৬ ঘণ্টার বাসজার্নির কথা ভেবে দশদিন আগে থেকে অস্থির থাকি। আমার কর্তা জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন খুলনায়, উনার কাছে ৯/১০ ঘণ্টার জার্নিই হলো স্বাভাবিক ব্যাপার, তাই আমার সমস্যা তিনি বোঝার চেষ্টা করেও বোঝেননা। তার একটাই স্বস্তি আমি বমি করিনা।
২৯ রোজায় রওয়ানা দিলাম, বাসস্ট্যান্ড গিয়ে দেখা গেল তিনটা বাস দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু টিকেট নেই। ৩০০টাকার টিকেট বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়, বাসের সুপারভাইজারকেও দেখা গেল মহাআনন্দে টিকিট বিক্রি করছে। তখুনি মালিকপক্ষের লোক চলে আসায় আমরা ন্যায্যমূল্যে টিকেট পেলাম এবং আমার অপার সৌভাগ্য কোনো জ্যাম ছাড়াই পৌঁছে গেলাম।
ঈদের চাঁদ ওঠার পর আমার মন খুব খারাপ হয়ে যায়, আব্বার কথা মনে পড়ে। ফেনীতে চাঁদ ওঠার পর আমরা সব ভাইবোন আম্মাকে ঘিরে বসে থাকি। এখন সবটুকু বেদনার ভার একলা আমাকে বইতে হয়। এই বেদনাটুকু এতো বেশি ব্যক্তিগত যে কারো সাথে শেয়ারও করা যায়না। এবার চাঁদ ওঠার পর পর লন্ডন থেকে আমার ভাতিঝি সামিয়ার ফোন এলো। ওর ঈদের গল্প শুনলাম, মনের সব মেঘ কোথায় যে উড়ে গেল!
ঈদ শুরু হলো ফোনে আম্মার সঙ্গে কথা বলে, তারপর সারাদিন ধরে এক এক করে ছয় ভাই-বোন, ভাবীরা, ভাতিজা-ভাতিজীদের ঈদ শুভেচ্ছা জানানো হলো।
বাবার (শ্বশুর) বাসা এবার কোলাহলমুখর। সাতজন পুরুষ, ছয়জন নারী, ছয়টা ছেলে বাচ্চা, ২টা মেয়ে বাচ্চা মোটমাট ২১ জন সদস্য মিলে হৈ হৈ রৈ রৈ কাণ্ড! সবচে’ সুবিধাজনক অবস্থান আমার। বাবার ছোট ছেলের বউ আমি, চার ভাশুর আর ননাসের আদর , জায়েদের প্রশ্রয়, ভাশুরের ছেলেরা ক্রমাগত ছোটমা, ছোটমা করে যাচ্ছে, ছোটমা, ভাত খাইয়ে দাও, ননাসের বাচ্চারা বলছে, ছোটি মামী গল্প বলো (ওরা ৪ নম্বর মামাকে ডাকে ছোট মামা, আমার বর পাঁচ নম্বর বলে ছোটি মামা, আর তাই আমি ছোটি মামী)। রান্নাঘরে ঢুকলে ছেলেরা ছুটে এসে খামচে ধরে টানাটানি করতে থাকে, ছোটমা কোনো কাজ করবেনা, ছোটমা চলে এসো।
এবার ঈদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আমার ছোট ভাশুর সপরিবারে এখানে ঈদ করছেন। ভাইয়া সৌদিআরবে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন, বুয়েটে পড়ার সময় থেকেই বেশ পরহেজগার, উনি যতদিন পিত্রালয়ে অবস্থান করেন ততদিন মহিলারা কণ্ঠস্বরের ওঠা-নামা এবং মাথায় কাপড় দেয়া নিয়ে তটস্থ থাকেন, ভাইয়া অবশ্য কাউকে কিছু বলেননা, তবু সবাই ভয়ে ভয়ে থাকেন। আমি অবশ্য ব্যাপারটা উপভোগ করি, কারণ ঢাকায় একলা থাকতে থাকতে আমি শব্দ সহ্য করতে পারিনা, একসাথে দুইজন মহিলা জোরে কথা বললেই মাথা ধরে যায়। ভাইয়া থাকায় আরো কিছু সুবিধা পাচ্ছিলাম, আমার স্বামী ভদ্রলোকটি বিকেলে বেরিয়ে গেলে রাত ১০টার আগে ফেরার নামটি করেননা, এবার চাঁদ রাতেও সাড়ে নয়টার বাসায় ফিরলেন (চাঁদ রাতে ১২টার আগে বাসায় ফিরলে নাকি বন্ধুদের কাছে প্রেস্টিজ থাকেনা, স্ত্রৈণ খেতাব পেতে হবে!)।
ঈদের দিন যত সালামি দিলাম, তত আবার পেলামও। এবার ঈদে আমি কিছু বোনাস ড্রেস উপহার পেয়েছি। চট্টগ্রাম থেকে শর্মীভাবী নিজহাতে করা একটা ব্লকের শাড়ি পাঠিয়েছেন। শর্মীভাবী আমার কাজিনের বউ, বেশ আদর করেন, ঈদের ঊপহার হিসেবে একটা ড্রেস প্রতিবার দেন, এবারও দিয়েছেন। শাড়িটা বোনাস। বড়াপু একটা ড্রেস দেন, এবার দিলেন দুইটা, আমার কর্তা ড্রেস আর সেন্ডেল প্রতিবারই নির্ধারিত ব্র্যান্ডেরটা নেন, এবার উনার চোখে লেগে বলে অন্য দোকান থেকে বাড়তি একজোড়া সেন্ডেল কিনে দিলেন।
সব আনন্দের সঙ্গেই বোধহয় কিছু দুঃখ জড়িয়ে থাকে। বাবার ছোট মেয়ে স্মৃতি আমাদের আনন্দযজ্ঞে অংশ নিতে পারেনি। ওর মেয়ে ইউসরা আরেকটু বড় না হওয়া পর্যন্ত ওর পক্ষে লং জার্নি করা সম্ভব হবেনা। বেচারি খুলনায় বসে মুঠোফোনে কথা বলে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর চেষ্টা করেছে। আর একজনও ছিলেননা, অবশ্য তিনি বাস করেন সবার হৃদয়ে। মা, আমার শ্বাশুড়ি।
পাঁচদিন পর যখন ফিরছিলাম, টের পেলাম বুকের ভেতরটা খালি হয়ে গেছে। পেছনে পড়ে থাকলো মায়া-মমতায় ভরা বাবার বাসা, সঙ্গে নিয়ে এলাম কিছু স্মৃতি।
ঘটনা সইত্য
আ... চ্ছা ! তা... ই!! কর্তা শুনলে খুশি হয়ে যাবে, ভোট পাইছে...!
রশীদা ঈদতো আরেকটা এসে গেল.. নতুন কিছু পেলাম না।
মজার ঈদ করলেন। ক-ত গিফট পাইলেন! হিংসা। যদিও আমি নিজের টাকায় নিজের জন্য কিছু কেনার সুযোগ পাই নাই এবার। সব গিফট্।
গিফট পেলে আজকাল আর খুশি হতে পারিনা।কারণ ফর্মালিটি...(দীর্ঘশ্বাস!)।
হ। কথা সত্যি।
ভাল্লাগছে।
ধন্যবাদ।
ঈদে মানুষেরা কত আনন্দ করে আর আমার বেলায় সেটা হচ্ছে এখন অতীত।

আহারে, কেন ভাইয়া?
" দেখিস একদিন আমরাও......."
বাহ দারুণ মজায় ঈদ কাটালে দেখছি। কোরবানী ঈদের ছুটিতে ফেনী যাবে?
এতদিন কোথায় ছিলে! কোরবানির ঈদের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তুমি ভালো আছো?
অনেকেই মজার ঈদ করে, বুক ভর্তি হিংসা
যারা দূরে থাকেন, তাদের জন্য আসলেই খুব কষ্ট লাগে। ফেনী ছাড়ার পর আমি টানা দুই বছর প্রতিরাতে ফেনী স্বপ্ন দেখতাম, এখনো মানসিক চাপে থাকলে ফেনী স্বপ্ন দেখি। জন্মভূমির টান বড় কঠিন টান।
উপভোগ্য ঈদ কাটিয়েছেন আপু। আমাদের সঙ্গে আনন্দ শেয়ার করার জন্য ধইন্যা।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
ঈদ ভালোই গেছে...অনেক মজা হইছে দেখা যাচ্ছে
হুম, অনেক মজা...
ইস! কি যে ভালো লাগলো আপনার লেখাটা পড়ে!! এরকম চাঁদের হাট নিয়ে অনেক অনেক ভালো থাকুন।
শুভকামনার জন্য ধন্যবাদ। অনেক ভালো থাকবেন।
চুপচাপ পড়ে গেলাম ........।
টুপটাপ জেনে নিলাম...!
ভাবলাম এন্টি শশুর বাগি টাইপ পোস্ট। পড়ে দেখি না সামলাইছেন।
অঅপনাদের দোয়া (বিনয়)। হা হা হা...
স্মৃতি তা মধুর কিংবা কষ্টের যাই হোক না কেন, স্মৃতিই অনেক সময় আমাদের বাঁচিয়ে রাখে।
ধন্যবাদ, তারার হাসি।
ভারী আনন্দে কেটেছে দেখি বোনটির ঈদ। আসছে ঈদে আরো আনন্দ হোক, শুভ কামনা থাকলো
কেমন আছেন গো ভাইটি?
আপনি বোধহয় এই পোস্ট টা খুজতেছেন
http://www.amrabondhu.com/tanbira/370
মন্তব্য করুন