ইউজার লগইন

একটা ছাতা ঠিকানাবিহিন ( প্রেমের প্রচ্ছদ মন রঙ্গে আঁকা)

আজকাল ভীড় একদম সহ্য হয় না । সহ্য হয় না মাঝ রাতে চাঁদের সৌন্দর্য্য । তাই আজকাল আর রাত জাগি না। রাত মানেই এখন যেন সরল অংকের ফলাফল শুধুই ঘুম । মাঝে মাঝে শুধু একটা গান শুনি তাও আবার খুব হাল্কা ভলিউমে " আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে" আগে অবশ্য রাতে বিরহ বেহালা শুনতাম আর অপেক্ষা থাকতাম । অপেক্ষায় থাকতম, অনেক অপেক্ষা করতাম ওর জন্য । মনের ভিতর বাস করা একটা মেয়ের জন্য । অবশ্য আপনরা জানেন না সে কথা, বলতে, বলতে একটু লজ্জা হচ্ছে । তার নামটা হচ্ছে সূর্য্য মুখী সুকণ্যা । আসলেই এস যেন আমার স্বপ্নের কন্যা । সে প্রায়ই আসে, প্রায়ই আসে খুব গোপনে ।
তার সাথে দেখা হওয়ার বিষয়টি খুব মজার । একদিন রাতে স্বপ্নে দেখলাম একটা অজানা মেয়ের সাথে রিকশায় করে বাড়ি ফিরছি। ঐ দিন সকালেই একটা বইয়ের জন্য থানা সদরে গিয়েছিলাম । বইটা পেয়ে গেলাম, বই কিনে দেখি পকেট পুরা ফাঁকা অ একটা কানাকড়িও নেই । এতে অবশ্য আফসোস করার কিছুই নেই , কারণ আমি ৫ কিলো হেটে থানা সদরে এসেছি এবং এটাও জানি বই কেনার পর হয়ত দু'চার টাকা থাকতে পারে । দু'টাকায় একাপ চা খাবো এরপর আবার ফিরে যাবো। কিন্তু বিধি বাম আমার আর চা খাওয়া হল না । থানা সদর থেকে পা বাড়ালাম গ্রামের দিকে । প্রায় দুই কিলো চলে এসেছি চারদিকে শুধু সবুজ ধানের ক্ষেত মাঝখানে এই সড়ক যেন একটা মস্ত সাপ । হাটছি আর ভাবছি হত রাতের স্বপ্নের কথা, মনে মনে হাসি পেয়ে গেল, জানেন এখানে শব্দ করে হাসলে কারও আপত্তি থাকবে না । হাটতে হাটতে এলোমলো ভাবতে ভাল লাগে, এতে করে একটা উপকার হয়, পথ ক্লান্তা দর হয় । অবশ্য একজর সারথী থাকলে ভাল হতো গল্প করে করে পথ শেষ করা যেত। একটা ব্যাপার অবশ্য লক্ষ্য করেছি একা থাকলে পুরানো স্মৃতি হাতড়ে বেড়াতে ভাল লাগে । আহা ! কষে এক যেন একটা ব্রেক করে দিল আমাকে, এতক্ষণ ছাইপাশ ভাবতে ভাবতে খেয়াল করিনি সারা আকাশ জুড়ে মেঘ যে এখুনি ফেঁটে পড়বে । ঐ তো শিরিষ গাছটা ওখানে আমাকে পৌছাতে হবে। ইস! কেন যে ছাতাটা নিয়ে আসলাম না । ওহ ছাতা কথা মনে করিয়ে দিলেন , আমার ছাতাটা আমার মতই নিরুপায় তার দুইটা বাহু ভেঙ্গে গেছে, ছাতাটার উপরে তিনটা পট্টি আছে অবশ্য কিন্তু ঐ গুলা ছাতার কাপড় না, আমার পুরাতন লুঙ্গীর কাপড়, বলেন এমন ছাতা নিয়ে কি বের হওয়া যায়?
দাড়িয়ে আছি শিরিষ গাছের নীচে । বাতাস যেন বৃষ্টির পানি গুলো কে আমার দিকে ছুড়ে মারছে । শার্টের ভিতরে বইটা ডুকিয়ে আকঁড়ে ধরে আছি, আমি ভিজে যাই তাতে ক্ষতি নাই কিন্তু এই বইটা ভিজে গেলে আমার আর পরীক্ষা দেওয়া হবে না, ভাবতে চোখে জল এসে গেল । বৃষ্টির পানি আর চোখের পানি যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে । চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, হে প্রভু গরীবেরসাথে এ কি আচরণ? তুমি কি কিছুই বোঝ না ? এমন সময় একটা মটর কারের বাশিঁ বেজে উঠল, কে যেন কাঁচের জানালার ফাঁক দিয়ে ডাকছে, " এই যে, এই যে মিষ্টার আপনাকে বলছি, ভিতরে আসুন " লজ্জার কথা আমি কখনও মটর কারে চড়িনি, মটর কারে কিভাবে ঢুকতে হয় তাও জানি না, আমি না শোনার ভান করে মাথা নীচু করে দাড়িয়ে রইলাম। আবার সেই কণ্ঠ " এই যে আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন না, ভিজে যাচ্ছেন তো, আসুন আপনাকে পৌছে দেব"। আমার মাথাটা আরও নীচু হয়ে গেল, জানেন শিরষ গাছটায় পিঠ ঠেকিয়ে বসে পড়লাম । আমি যেন কিছুই শুনতে চাছিলাম না ।
একটা গরম হাত এসে যেন আমাকে টেনে নিয়ে গেল, মাথার উপর একটা রঙ্গীন ছাতা । এখন আমি একটা ছোট্ট্র রুমের ভিতর, চলমান রুম । সেই হাতটা আমাকে একটা তোয়ালে দিল, এই যে মিষ্টার নিন শরীর মুছে নিন । আমি যেন কোন কথা না বলে মাথা মুছতেছি ।এবার আমি আবার হাল্কা শব্দ করে বললাম আমার বই ? মেয়েটি মিষ্টি স্বরে বলল আপনার বই উনি জীবিত আছে, চিন্তার কিছু নেই । মটর কারটা ছুটে চলছে আঁকাবাঁকা পথটা ধরে বাহিরে বৃষ্টি আছড়ে পড়ছে জানালার কাঁচে। ইস ! একটু ঠান্ডাও লাগছে না । এবার আবার সেই কন্ঠ হ্যালো আমি সুর্য্য মূখী সুকণ্যা বলে হাতটা বাড়িয়ে দিল, আমি কি করব বুঝতে পারছি না, ছেলে মানুষ হলে না হয় হ্যান্ড শেক করতাম, উনি তো মেয়ে মানুষ । সূর্য্যমুখি হাত নামিয়ে বলল আচ্ছা আপনার নাম কি , বৃষ্টিতে ভিজছিলেন কেন ? এবার মুখ খুললাম আমার নাম জমির উদ্দিন, বললাম ছাতাটার অবস্থার কথা, সাথে বললাম পকেটের অবস্থা । আমার বই ? আবার বই কেন ? আমি নামব, আমি বাড়ীর কাছে চলে এসেছি । ও আ্ছা । এবার মটরকারটা মেয়েটার নির্দেশে থেমে গেল । এবার বললাম দরজটা একটু খুলে দিবেন ? মেয়েটি দরজাটা খুলে দিল আর বলল এই নিন আপনার বই, আর এই ছাতাটা আপনার জন্য বাকি পথটা যাবেন । আমি কথা বলতে যাব এমন সময় দরজাটা বন্ধ করে দিল আর মটর কারটা চলতে শুরু করল। মটর কারটা চলে যাওয়ার পর মনে হল, হায় আমি একি দেখলাম, এইত সেই মেয়ে, যাকে গতকাল স্বপ্নে দেখেছিলাম । হে হে তাই তো নাম যেন কি বলল ? ওহ মনে পড়েছে সূর্য্য মুখী সুকণ্যা ।

কি জমির ভাই হাতে ছাতা নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছেন? উফ ! খেয়াল কররিনি, এতক্ষণ ভাবনার অতলে থেকে বৃষ্টিতে ভিজতেছিলাম, ছাতা ফুটিয়ে এবার ভিজতেছি কষ্টের বৃষ্টিতে । এমন একটা আশ্চার্য বিষয় জানানো হল না উনাকে, উনি জানতে পারলেন না আমার সাথে উনার গত রাতে দেখা হওয়ার বিষয়টি । জীবনে প্রথম মটর কারে চড়া, জীবনে প্রথম স্বপ্নে দেখার ব্যাক্তির সাথে বাস্তবে দেখা হওয়ার কথা ।
এটাই ওর আর আমার সাথে ১ম এবং শেষ দেখা । এরই মাঝে কত বর্ষা এলো আর গেলো জানেন, প্রতিটি বর্ষায় আমি তাকে তন্ন তন্ন করে খুজেছি, খুজেছি জানাতে আমার স্বপ্নের কথাটি বলতে, খুজেছি তার দেওয়া ছাতাটি ফেরত দিতে । আমি জানি ওর সাথে কখনও দেখা হবে না, যদিও বা বেচেঁ আছি একই পৃথিবীতে...।
তাই মাঝে মাঝে একট লাইন বলতে ইচ্ছে হয় খুব শব্দহীন লাইন " একটা ছাতা ঠিকানা বিহিন, একটা মানুষ সঙ্গীহীন .

পোস্টটি ৬ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মডারেটর's picture


গ. "আমরা বন্ধু" তে শুধু নতুন লেখাই প্রকাশিত হবে। পুরনো লেখা রিপোস্ট করা যাবে না। অন্য কোনো কম্যুনিটি ব্লগে প্রকাশিত লেখা এবিতে প্রকাশ নিষিদ্ধ। এবিতে প্রকাশিত কোন লেখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে অন্য কোনো কমিউনিটি ব্লগে প্রকাশ করা যাবে না। ব্যক্তিগত ব্লগ এবং পত্রিকা এই নিয়মের আওতার বাইরে।

উক্ত কারনে পোস্টি ব্লগের প্রথম পাতা থেকে সরানো হলো। নতুন লেখা পাবো আশা করছি আপনার থেকে।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.