ধর্ম এবং সামাজিক সংহতি
ধর্ম মানে বিশ্বাস। বর্তমানে নাস্তিক শব্দটি বহুল প্রচলিত হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবীতে ধর্ম ব্যাতিত কোন মানবসমাজ আজও লক্ষ্য করা যায়নি। তবে হ্যাঁ,পৃথিবী ব্যাপী একাধিক ধর্ম পরিলক্ষিত হয়েছে । কোনটি একেশ্বর বা কোনটি বহুঈশ্বরবাদী ।
ধর্ম এবং সামাজিক সংহতি: এক্ষেত্রে দুই ধরনের মতামত রয়েছে । কেউ কেউ বলেছেন ধর্ম সামাজিক সংহতির অনুকূল, আবার কেউ কেউ বলেছেন ধর্ম অনুকূলে নয় বরং প্রতিকূল।
*১) অনুকূল : ধর্ম সমাজের সংহতি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । কেননা,একই ধর্মের অনুসারীরা একই উপাসনালয়ে একত্রিত হয় এবং একই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে । ফলে,তাদের মধ্যে এক ধরনের পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক এবং আন্তরিকতাবোধ তৈরী হয়। ধর্ম মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর করতে পারে । কেননা,জাতি,বর্ণ,ভাষা ইত্যাদি ধর্ম অস্বীকার করে। অর্থাৎ একই ধর্মের মানুষ - সে যে জাতি, বর্ণ বা ভাষার হোক না কেন তারা সবাই একে অপরের প্রতি ধর্মীয় বন্ধনে একত্রিত। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের ঈশ্বর বা অতিপ্রাকৃত শক্তি এক্,ধর্মগ্রন্থ এক,ধর্মপ্রচারক এক এবং ধর্মীয় ক্রিয়াকাণ্ডও এক। তদুপরি ধর্ম ইহলৌকিক এবং পরলৌকিক জীবনকে সমান গুরুত্ব দেয় বলে একই ধর্মের অনুসারীরা একই সমাজে সংগঠিত হওয়ার আকর্ষণ অনুভব করে। এর মাধ্যমে ধর্ম সহজেই সামাজিক সংহতি রক্ষায় অবদান রাখে ।
*২) প্রতিকূল : ধর্ম কি সবসময় সামাজিক সংহতির অনুকুলে? অনেকেই এমন প্রশ্ন তুলেছেন । তারা বলেছেন,ধর্ম সামাজিক সংহতি রক্ষার চেয়ে সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে। কেননা ধর্ম মানুষকে নানা ধর্মগোষ্ঠীতে বিভক্ত করে। বিশেষ করে একই রাষ্ট্র বা সমাজে একাধিক ধর্ম থাকার অর্থ হলো একাধিক ধর্মগোষ্ঠীর অস্তিত্ব। এই সব ধর্মগোষ্ঠী অনেক সময় একে অপরের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে একমত হতে পারে না এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও সুযোগ সুবিধা বন্টনের ক্ষেত্রে সুবিচার রক্ষা নাও হতে পারে। অর্থাৎ ধর্ম বিবাদ বা গোলযোগের সৃষ্টি করতে পারে। (মধ্যযুগের ইউরোপে খ্রিস্টধর্মকে শাসন ও শোষণের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কেননা তখন রাষ্ট্র কর্ণধার দাবি করতেন,তিনি ঈশ্বরের পক্ষ থেকে দেশ চালাচ্ছেন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বেশি নাকি চার্চের ক্ষমতা বেশি তা নিয়েও ছিল তদানীন্তন ইউরোপের সমাজে দ্বন্দ্ব । এ কারণেই হয়তো ধর্মের প্রতি অনেকে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে।
____বস্তুতঃ ধর্ম নয় বরং মানব চরিত্র এবং অর্থনৈতিক স্বার্থই সামাজিক শোষণের মূলে। ধর্ম হচ্ছে একটি জীবন আদর্শের নাম। ব্যক্তি বা গোষ্ঠি ধর্মকে যদি হীন স্বার্থে কাজে লাগায় তাহলে ধর্মের দোষ কোথায়?? বিজ্ঞানের অন্যতম আবিষ্কার এটম বোমা যা মানব কল্যাণে ব্যবহৃত হতে পারে। কিন্তু মানব জাতির ধ্বংস সাধনে এটমের ব্যবহার করলে মানুষই হবে দায়ী - বিজ্ঞান বা এটম নয়।
প্রকৃত ধর্মানুসারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সমাজে ভেদাভেদ করতে পারেনা। আরো বলা প্রয়োজন,ধর্মকে যদি কেউ হীন উদ্দেশ্য ব্যবহার করে তাহলে ঐ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকেই তার দায়ভার নিতে হবে। এজন্য ধর্মকে দায়ী করা বোকামি।
ধর্ম নিরপেক্ষতা সাম্প্রদায়িকতা নিরসনের পূর্ণ নিশ্চয়তা দেয় না। প্রকৃতপক্ষে, আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণেই সৃষ্টি হয় যত বিভেদ,দ্বন্দ্ব। আর্থিক বৈষম্য এবং ক্ষমতার অসম বন্টনের ফলে সমাজবদ্ধ মানুষদের মনে সৃষ্টি হয় বিভেদ সংঘাতের,ধর্মের কারনে নয়। ধর্মের কারণে হলে একই ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে সংঘাতের সৃষ্টি হতো না।
সুতরাং ধর্মকে যদি হীন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা না হয় তাহলে ধর্ম সামাজিক সংহতি রক্ষায় অনুকূল শক্তি হিসেবেই কাজ করে ।
কী বলতে চাইলেন যদিও পরিস্কার নয় তবুও
১। বলছি কয়টা সমাজ ব্যবস্থা দেখেছেন? ধর্ম ছাড়া বহু সমাজ আছে। সমাজ চলে আইন, নীতি, নৈতিকতা দ্বারা ধর্ম দ্বারা নয়
২। উপসনালয় ছাড়াও বহু জায়গা আছে যেখানে মানুষ এক সাথে হয়, সম্প্রীতি সৌহার্দ্য বিনিময় করেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, রমনার বটমূল, শহীদ মিনার, সাভার স্মৃতিসৌধ উল্লেখযোগ্য
৩। এ ধরনের কিছু লেখার আগে অনেক পড়বেন আর চোখের কাজল আর চশমা খুলে নিয়ে লিখবেন তাহলে কিছু নিরপেক্ষ চিন্তা মাথায় খেলার সুযোগ পাবে।
সৌদি আরবের মুসলিম যেমনভাবে ধর্ম পালন করেন, ইরাকের বা তুর্কীর মুসলিম সেভাবে করেন ঠিক একজন কোলকাতার বাঙালি যা করেন, কাশ্মীরি কিংবা মাদ্রাজী হিন্দু তা করেন না
এখানে আমি বলতে চেয়েছি ধর্মের কাজ এবং ধর্মের কার্যক্রম । ধর্ম এর বিবর্তন বলতে চাই নি কিংবা ধর্মের সংগাও দিতে চাইনি । আপনার মন্তব্য এর জন্য ধন্যবাদ
"সুতরাং ধর্মকে যদি হীন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা না হয় তাহলে ধর্ম সামাজিক সংহতি রক্ষায় অনুকূল শক্তি হিসেবেই কাজ করে ।"
মুশকিল হ্ল কি জানেন, ধর্ম্ বেশিরভাগ সময়ে হীনস্বার্থে ব্যব্রিত হয় । পৃথিবীতেি যত মতবাদ প্রচারিত হ্যেছে, ব্লা হয়ে থাকে, সবগুলুই মানব ক্ল্যাণের জন্য । দূর্ভাগ্যের বিষয় হল, সবগুলুই মানুষের অক্ল্যানে ব্যব্রিত হইয়ে আসছে শুরু থেকে ।
মন্তব্য করুন