বির্বণ দিনরাত্রি
মন মেজাজ প্রচন্ড মাত্রায় খারাপ। দুই দিন থেকে যেন জীবন যাত্রার গতিও থেমে গেছে। শুধু আফসোস করছি আর বলছি, পারল না মেসি এবারো পারল না। এত কাছে এসেও পারল। আগে যদি কখনো মন খারাপ হত তো রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা বইটা পড়তাম। এই বই অসম্ভব ক্ষমতায় আমার মন ভালো করে দিত। কিন্তু এই মেসি আর্জেন্টিনার ব্যাপারটায় গুরু রবীন্দ্রনাথও ফেল। বইটা নিয়ে বসার মত সাহসও নাই। আমার ত শুধু মন খারাপ কিন্তু শুনলাম অনেকে নাকি আত্নহত্যা করছে আবার দেশের অনেক জায়গায় নাকি দাঙ্গা হাঙ্গামাও হয়েছে। ব্যাপারটা অনেকটা হাস্যকর হলেও সত্য যে বিপরীত গোর্ধাধের এই দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি যত না ভালবাসা তার চেয়ে ঐ দেশের খেলোয়ারদের দুই পায়ের প্রতি আমাদের ভালবাসা অনেক বেশী। শুনেছিলাম নব্বইয়ের দশকে নাকি আমাদের দেশেও এই ফুটবল খেলা সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল। দলের অবস্থাও অনেক ভাল ছিল। মোহামেডান আবহানীর খেলা হলে রীতিমত যুদ্ধ বেধে যেত। কিন্তু কালের বির্বতনে কী কাতর অবস্থা এই ফুটবলের। আমাদের যুগে ক্রিকেট জনপ্রিয় তবু এবার যেন এতেও অবনতির হাওয়া বইতে শুরু করছে। খেলা নিয়ে এতটা আবেগী আগে কখনো ছিলাম না কিন্তু এবার ত দেখছি না হয়েও আর পারলাম না।
আমি যখন খেলায় হেরে শোকের মাতমে আছি তখন গাজায় অনেক লোকজন শহীদ হচ্ছে। এই বিষয় এখন আর আমায় টানে না। এর সম্ভবত দুইটা কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, হয়ত মৃত্যু দেখতে দেখতে আর শুনতে শুনতে আমার অনুভূতি নষ্ট হয়ে গেছে না হয় মৃত্যু শব্দটার আভিধানিক অর্থটাই ভুলে গেছি। দিত্বীয়ত, এত বছর ধরে চলে আসা একটা যুদ্ধ নিষ্পত্তি করতে বিশ্ব বিবেকবানদের যে বাহানা তার প্রতি তাকিয়ে এই বিশ্বের লোকেদের নিজের মত একটা মানুষ বলতে লজ্জাই লাগে। ধরে নিয়েছি এই পৃথিবীতে এভাবে মরে যাওয়াটা স্বাভাবিক। আবার দেখছি কিছু লোক ফেসবুকে বয়ান দিচ্ছে এদের জন্য মনবতা দেখিয়ে কিভাবে টাকা পাঠানো যায়? এবং তা নিয়ে খুব চিন্তিত। আমি মানবতার বিরুদ্ধেও না আবার এদের সাহায্যের বিরুদ্ধেও না। আমাদের দেশেই কত লোক, বাচ্চা, শিশু আছে অনাহারে। তাদের এক বেলা খাওয়ানোর বা ইফতার করানোর উদ্যোগ দেখলাম না। এগুলো কী মনবতার গন্ডির মধ্য পড়ে না? আবার অনেককেই দেখলাম ঈদে পথ শিশু হাতে কাপড় তুলে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন দিনভর। এদেরকে আমার স্যালুট। এরা দেশে বেঁচে থাক, এরা বাঁচলেই দেশ বাঁচবে।
সবকিছুর পরে এটাই সত্য যে, দিনের পরে রাত আসবে। এই রাত কখনো হবে চিরায়ত অমবস্যার কালো আধারে নিমজ্জিত আবার কখনো হবে পূর্ণিমার আলোয় উদ্ভাসিত এবং এটাই সৃষ্টির আদি কাল থেকে এখনো সত্য। আমি এখান থেকে গলা ফাটিয়ে কান্না করেও যুদ্ধ থামাতে পারব না কিংবা রাগ করে, অভিমানে আত্নহত্যা করে মেসিকেও জেতাতে পারব না। যার যার কাজ তাকেই সমাধা করতে হবে। তাই, আজকাল আর এই বিশ্ব বিবেকের দিকে তাকিয়ে নিজের চোখের জল ঝরাই না। ভাবছি, এখন থেকে এই জল ঝরাব শুধু নিজের জন্য। এই স্বার্থপর দুনিয়া যা করে থাকে!
র্ভতি পরীক্ষার নাকি দিনকাল ফিক্সড হয়ে যাচ্ছে। প্রস্তুতি ত দেখছি এখনো যথেচ্ছাই! এই সব ছাই পাশ লেখাপড়ার চেয়ে জীবনানন্দ দাশের রোমান্টিক কবিতা পড়াই ভালো। অন্তত আজন্ম মনে রং লেগে থাকবে আর প্রাণটাও বেচে থাকবে চরম র্ফুতিতে। কিন্তু আমার মত নিম্ন মধ্য বিত্ত ঘরের ছেলেদের সেই পিচ্চি কাল থেকেই স্বপ্ন দেখতে হয় চৌদ্দ প্রকারের। বড় হয়ে এই করব, সেই করব, ভাতের জায়গায় রুটি খাব, দুধের জায়গায় দই! কী বিরক্তিকর আজগুবি কথা র্বাতা। আসলে আমাদের স্বপ্নগুলো এই রকম না হলেও এর চেয়ে উচু লেভেলের আর হয় না। ক্ষুধা যে আষ্টে পৃষ্টে জড়িয়ে গেছে। এত সহজে মাথা থেকে তা নামবে কেন? তো যথেচ্ছাই চলছে এই অর্কমা স্বপ্ন র্চচা! তবু এ র্চচাই চালিয়ে যেতে হয় কারণ দিন শেষে আমাদের এই স্বপ্নের পরিধি ঐ ভাতের হাড়িতেই।
আজগুবি গালাগাল ত আর কম করলাম না! শেষে কথা একটাই আল্লাহ এবার যেন আমার একটা হিল্লে হয়। দেশের মুখ উজ্জল দূরে থাক, বাপের মুখে যেন হাসি ফেরে। বাকি সব থাক দিনের সপ্তম প্রহরে !!
একশো কোটি মানুষের দেশ থেকে একটা দল বের হয় না তো আমরা
বাংলাদেশের মানুষ আর্জেন্টিনা বা Brazil বাদে অন্যদেশ চিনে না ফু্টবলে।
এদেশে ফুটবল বলতেই ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা !। এদেশে এই দুই দলের সদস্যরা একে অন্যের ব্যাপারে এত উত্তেজিত যে, এই দুই দেশের সীমান্ত রক্ষা বাহিনীও একে অন্যের ব্যাপারে এতটা না।
শুভকামনা অনেক অনেক!
ধন্যবাদস্ !!
আমাদের দেশে ফুটবল এখনও শহর-গ্রাম নির্বিশেষে জনপ্রিয়। প্রান্তিক মানুষের খেলতে পারা ও খেলা উপভোগের সুযোগের দিক থেকেও ফুটবলকে এখনও এক নম্বরে রাখতে হয়। তবে এটা ঠিক জনপ্রিয়তা কমেছে, ঠিক ফুটবলের নয়; ফুটবলকেন্দ্রিক জাতীয় আয়োজনগুলোর। এ ব্যর্থতা আমাদের ব্যবস্থাপকদের।
আমাদের ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ, আমরা ক্রিকেটই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলি। ক্রিকেটকেন্দ্রিক অর্থনীতি, ব্যবসাবাণিজ্য ও তার অন্যতম কারণ। কিন্তু অজপাড়াগাঁয এখনও ফুটবল সম্ভবত এক নম্বরে আছে।
......................
শুভেচ্ছা।
একদম সত্য কথা! গ্রামে স্কুলের মাঠে এখনো যখন ফুটবল খেলি তখন মাঠের চারপাশে র্দশকদের সারি দেখতে পাই, মাঝে মাঝে হাত তালির শব্দও শুনি। যা ক্রিকেটে কোন দিন দেখি নি !!
কাল আবার মালয়েশিয়ার প্লেন ক্র্যাশ হয়ে সব মানুষ মারা গেছে।
দুঃসময় হয়ত শুধু দুঃসংবাদ দিতেই বড্ড পছন্দ করে। তা না হলে এত এত মৃত্যু ভিড়ে আরেকটা এত বড় ধাক্কা কেন আসবে?
মন্তব্য করুন