ইউজার লগইন

কাঠবিড়ালির দিনযাপন

আমার যা ভাল লাগে না তা আমি কোন সময়ই করি না। এমন কী কেউ যদি আমার অপছন্দের কাজগুলো করে তাও সহ্য করতে পারি না। তবু ক্ষমতা আর দম্ভের পূজারী এই দুনিয়াকে অস্বীকার করা যায় না। আজকাল চোখ বুজে থাকার চেষ্টা করছি; কিছুই দেখিনি বলে কিছুই হয় নি, কাকের কাছ থেকে শেখা এই নিয়মে ভিত্তি করেই দিন যাপন করছি। দুর্বলের কাছে অনিয়মের প্রতিবাদ করার চেয়ে শত নিয়ম পালনের দোহাই দেয়াটাই শ্রেয়, তাই করছি আর কি! মাস খানেক হয় মানিকগঞ্জে আসছি। নিরব, নিথর, শান্ত, ছোট শহর। ছোট বলতে ত্রিশ মিনিট হাঁটলেই শহরের এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে যাওয়া যাবে। এখানে মানুষের কোলাহল নেই, যানযটের মত উদ্ভট যন্ত্রণার বালাই নেই, বিশ্রী রাজনৈতিক ঝামেলারও খুব একটা প্রধান্য নেই, নেই ঢাকার মত ধূলিবালির এত বাতাসও। সব মিলে ভালই।

কলেজ বন্ধ, তো খেয়ে ঘুমিয়ে আর ক্রিকেট দেখেই দিন যাচ্ছিল। চারদিকে শুধু বাংলাওয়াশ বাংলাওয়াশ ধ্বণি। এত বছর পরে পাকিস্থানের বিপক্ষে জয়, তাও এমন র্দুদান্তভাবে, ভাবতেই ভালো লাগে। দুই দিন আগে মাশরাফির দেয়া একটা সাক্ষাত্‍কারে পড়েছিলাম অন্য টিমের খেলোয়ারেরা বাঙালি ক্রিকেটারদের কী চোখে দেখত এবং কেমন আচরণ করত। সব মিলে সব দলের বিরুদ্ধেই কেমন যেন একটা বিদ্বেষজনক মনোভাব তৈরি হচ্ছে। জিনিসটা অবশ্যই খারাপ তবু দিনকে দিন যেন তা বেড়েই চলছে। মনে হচ্ছে ঘোরতর অন্ধকারের দিকে ছুটে যাচ্ছি।

কাল আবার নেপালে ঘটে গেল এক বিধ্বংসী ভূমিকম্প। ছোট্র, সুন্দর এই দেশটাকে ছিড়ে ফেড়ে দিলে গেল। আনেক দিন পরে পাওয়া আমার আনন্দময় মুর্হূতগুলো বিষাদের বেদনায় যেন মিলিয়ে যাচ্ছিল যখন একের পর এক এত মৃত্যু সংবাদ শুনছিলাম। আজ বিকাল পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার লোকের মৃত্যু সংবাদ প্রকাশ করেছে বিবিসি। নেপালের এই বিশাল দূর্যোগের ছবিগুলো দেখতে গিয়ে মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল। ছোট, বড়, মধ্যবয়সী মুখগুলো যাদের বেঁচে থাকার কথা ছিল আরো অনেক বছর তারা লাশ হয় পড়ে আছে ধ্বংসস্তূপের নিচে। টুইটারে দেখলাম ইউনিসেফ এউএসএ নেপালের শিশুদের জন্য রিলিফ ফান্ড গড়তে ডলার চেয়ে সাহায্য আবেদন করেছে আগ্রহীদের কাছে। ইউনিসেফ ইউকে'ও একই কাজ করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী আজ নেপালের বিষয়ে সিধান্ত নিতে মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক ডেকেছেন। আজ আবার দেখলাম বাংলাদেশ সরকার সেনাবাহিনীর একটা মেডিকেল টিম পাঠিয়েছে নেপালে আহতদের সাহায্য করার জন্য, সাথে রিলিফও দেয়া হয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে একটা ধন্যবাদ দেয়া উচিত। এক জাতির র্দুদিনে অন্য জাতি এগিয়ে আসবে এটাই ত এই বিশ্বায়নের যুগে কাম্য, শান্তি স্থাপনের র্বাতা। সত্যি কথা বলতে, সব দেশের এই রকম সহযোগিতা পূর্ণ আচরণ দেখে সত্যিই অনেক ভালো লাগছে। এই রকম বিশ্বই ত আমরা চাই।

দিনেক কয়েক পরে আমাদের রাজধানী ঢাকার মেয়র নির্বাচন হবে। ঢাকার কথা মনে আসতেই কাঠমুন্ডুর কথা স্মৃতিতে চলে আসে। আমি জানি না ৮.৫ মাত্রার কোন ভূমিকম্প যদি হয় আর তার উত্‍স ঢাকার এক দেড়শ কিলোমিটারের মধ্য হয় তবে ঢাকায় কোন দালান থাকবে কিনা। আমাদের সরকারের টাকায় খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা নীতি র্নিধারকেরা জানেন। তারা জেনেই শুনেই ঢাকার বুকে গড়ে ওঠা শত শত দালানের অনুমোদন দেন আর টেবিলের নিচ দিয়ে একটা কিছু করেন। আমার মনে হয় এই উল্লুক প্রজাতির লোক গুলোর নিজের জীবনের প্রতিও কোন মায়া নেই। বাছাধনেরা, এই প্রলয়ংকর ভূমিকম্প যদি একবারে এসেই যায় তবে যারা টেবিলের নিচ দিয়ে দিচ্ছ আর নিচ্ছ তোমারা দুই গন্ড মূর্খের দলই মরবে আর সাথে মারবে আরো শত নগরবাসীকে। মেয়র নির্বাচনের কথা বলছিলাম, এবারের মার্কার মত তাদের প্রচার প্রচারণার ধরণও আমার কাছে হাস্যকর লাগছে। জানি না এখন পর্যন্ত কেউ তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার উপরে পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন কি না। আর দিলেই বা কী? তার পরবর্তী কর্ম সুফল যে খুব ভালো হবে তারই বা নিশ্চয়তা কী আছে? আজকের কালের কন্ঠে না প্রথম আলোতেই যেন দেখলাম, বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলকে আজ থেকে ২০ বছর আগে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে অথচ আজ পর্যন্ত ভূমিকম্প পরিমাপক রিখটার স্কেলই সরকার রংপুরে দিতে পারল না!

এত সব চিন্তা করে কী লাভ, এসব চিন্তা করে ঘুম নষ্ট করার বহু লোক আছে। তার চেয়ে আমি বরং ঘুম থেকে একটু সকাল সকাল জেগে উঠব, দু একটা রবীন্দ্র সংগীত বাজাব, তারপর সকালের নাস্তা, একটু বই পত্রের ধূলোবালি পরিষ্কার, তারপর দুপুরের খাবারের পরে ঘুম। আহা কী শান্তি, কী শান্তি বলে তৃপ্তির ঢেকুর হবে। তারপর সন্ধ্যার আধারে এক কাপ গরম তপ্ত চায়ের কাপে হাত চেপে ধরে একটু উষ্ণতা নিয়ে শুরু হবে নীরব শহরের গলিপথ ধরে আমার মৌন যাত্রা। বর্ষায় বৃষ্টি দেখব, মৃদু রৌদ্রে হাঁটা দেব দক্ষিণে, শীতে জড়সড় জীবনযাপন। অবসরে রবি বাবু গান শোনাবে; গল্প শোনাবে রবি বাবু , সুনীল, শরত্‍, বঙ্কিম, হূমায়ুনরা। এই তো, আর কী? এটাই তো জীবন, এসবই তো আমাদের অচল শহরে প্রাণের গতি। আর কী চাই?

স্বপ্ন দেখা এই রকম একটা জীবন পেলে খারাপ হবে না কিন্তু....

জাকির
১৩ বৈশাখ, ১৪২২ বঙ্গাব্দ।

পোস্টটি ১৪ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

তানবীরা's picture


সবাই আছে আছে যার ব্যক্তিগত লাভের আশায়। অপরিনামদর্শী একটা জাতি

জাকির's picture


তাই ত দেখছি। লোভ, পাপ, মিথ্যা আর মৃত্যুর খেলায় মত্ত সব লোকেরা। সবই তো ব্যক্তিগত লাভের উদ্দেশ্যে।

আরাফাত শান্ত's picture


ভালো থাকেন।

চাঙ্কু's picture


ঢাকায় ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকায় বিল্ডিং বলে মনে হয় কোন জিনিস থাকবে না Sad

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.