বিট্রিস পটারঃ ১৪৪তম জন্মদিনের অগ্রিম শুভেচ্ছা
মুখে সোনার চামচ নিয়ে জন্মেছিলেন বিট্রিস পটার ২৮ জুলাই, ১৮৬৬ সালে বৃটেনের কেন্সিংটনে। ছেলেবেলা কেটেছে তাঁর অসীম নিঃসঙ্গতায়। মা হেলেন বিট্রিস পটার আর বাবা রুপার্ট পটারের সামান্য মনযোগ পাননি বিট্রিস। তাঁকে পুরোপুরি দেখাশোনা করতেন নার্স মিসেস ম্যাকেঞ্জি। মা-বাবার সাথে তাঁর দেখা হত মাঝে মাঝে গুড নাইট বলার জন্য। বাইরে যাওয়া পড়ত মিসেস ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে পার্কে হাঁটতে যাবার সময়।এ ছাড়া তাঁর সমস্ত সময় কাটত বাড়ির ৩য় তলায়। নার্সের কাছে গল্প শুনতেন পরীদের। তাঁর কল্পরাজ্যের দুয়ার এরকম সময়েই খুলে যায়।
পনেরো বছরের বিট্রিস
ভিক্টোরিয় যুগের রীতি মাফিক অভিজাত বলে তাঁকে স্কুলে পাঠান হয়নি, বাড়িতে গভর্ণেস মিসেস হ্যামন্ড পড়াতেন। তিনি পটারকে বই পড়া আর পরিবেশের উপর আগ্রহী করে তোলেন। সারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন বলে পটার হয়ে ওঠেন অসম্ভব লাজুক, অনেক সময় মানুষের সামনে তোতলাতেন। ছয় বছর বয়সে ভাই উইলিয়াম বাট্রাম পটার জন্মানোর পর খেলার একজন সঙ্গী পেয়ে যান তিনি। দুই ভাই-বোনের আগ্রহ জন্মায় ছবি আঁকা আর পরিবেশের ওপর। মূলত বাট্রামের উৎসাহে পটার লেখালেখি ইত্যাদি করেন। ভাই বাট্রামও চিত্রশিল্পী হন। দুই ভাই বোন তাদের নার্সারীতে নানা ধরণের পশুপাখি নিয়ে একাকীত্ব ভরিয়ে তুলতেন।
বিট্রিসের লেখা চিঠি
বাসার শিক্ষিকারা তাঁর ছবি আঁকার হাতের কথা মা-বাবার কাছে তুললে পরে তাঁরা আরো ভাল ছবি আঁকার শিক্ষক নিযুক্ত করেন। ২৪ বছর বয়সে বিট্রিস নিজে অর্থ উপার্জনের আশায় একটি কার্ড কোম্পানীকে নিজের আঁকা কিছু খরগোশের ছবি পাঠান। ঐ সংস্থা তাঁকে ৬ পাউন্ডের একটি চেক প্রেরণ করে এবং আরো অর্ডার দেয়। তাঁর ২৭ বছর বয়স যখন, একটা অসুস্থ বাচ্চাকে চিঠিতে গল্প লিখে পাঠান, সেই সাথে ছবি। গল্পগুলো বাচ্চাটার এতই পছন্দ হয়, বিট্রিস ঠিক করেন এটাকে বই আকারে বের করবেন।
১৯০২ সালে পিটার দ্য র্যাবিট বইয়ের প্রথম প্রকাশ
একজন পরিচিতের মাধ্যমে ফ্রেডরিখ ওয়ার্ন এন্ড কোং –এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং সেই থেকে তাঁকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। পঞ্চাশটিরও বেশি ভাষায় তাঁর শিশুতোষ বই বিক্রি হয়েছে। বিট্রিস পটার শুধু ছোটদের বইয়ের লেখিকাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন মাইকোলজিস্টও। তাঁর মামা চেষ্টা করেছিলেন তাঁকে রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনে ছাত্রী হিসাবে ভর্তি করতে, নারী বলে তাঁর আবেদন অগ্রাহ্য হয়। বিট্রিস ছত্রাকের ছবি এঁকেছিলেন প্রচুর, যা এখনও গবেষণার কাজে ব্যাহৃত হয়। এই ছবিগুলো আর্মিট লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে। তিনিই প্রথম বলেছিলেন-লাইকেন হল ছত্রাক আর সমুদ্র শৈবালের মধ্যেকার সিম্বায়োটিক সম্পর্ক। ১৮৯৭ সালে তাঁর একটি পেপার মামা স্যার হেনরী এনফিল্ড রস্কো পড়েন লিনিয়ান সোসাইটিতে, কেননা তখন মহিলারা সেখানে যোগ দিতে পারত না। ১৯৯৭ সালে এই সোসাইটি তাঁর কাছে মরণোত্তর দুঃখ প্রকাশ করে। লন্ডন স্কুল অফ ইকনোমিক্সে তিনি একাধিকবার লেকচার দিয়েছিলেন। ১৯৪৩ সালের ২২ ডিসেম্বর এই মানুষটির জীবনাবসান ঘটে।
ব্যক্তি জীবনে বিট্রিস পটার ভালবেসেছিলেন নর্মান ওয়ার্নকে, মা-বাবার অমতে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বিয়ের কিছু পূর্বে নর্মান মারা যান। ভগ্নহৃদয় বিট্রিস লন্ডন থেকে চলে যান এবং ৪০ বছর বয়সে একজন আইনজীবিকে বিয়ে করেন। তাঁর মৃত্যুর পর প্রায় সমস্ত সম্পত্তি পরিবেশ সংক্রান্ত গবেষণার কাজে দান করেন।
পরিণত বয়সে বিট্রিস পটার
প্রিয় বিট্রিস পটার, আপনার নশ্বর দেহ পৃথিবী থেকে চলে গেছে আজ থেকে ৬৭ বছর আগে। কিন্তু আপনি বেঁচে আছেন আপনার কর্মের মধ্য দিয়ে। আমার ছোটবেলার বিরাট এক আনন্দের ভাগ আপনার সৃষ্টিকে ঘিরে। আপনার ১৪৪ তম জন্মদিনে আমি আমরা বন্ধুর পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই শুভেচ্ছা।
আগে পড়লাম গল্প... আর এখন তার রচয়িতার কথা...
অনেক ভালো লাগলো
আপনার অনুবাদের হাত কিন্তু চমৎকার
পোস্টটা প্রিয়তে রাখলাম
সুন্দর!
জানা ছিল না। জেনে ভাল লাগল।
পিটার দ্য র্যবিট বইটা আছে আমার কাছেঘ মাঝে মাঝে আমার বাচচাকে পড়ে শোনাই। আজ এর রচয়িতার তথ্য পড়ে ভালো লাগলো।
আপনাকে অভিননদন।
পোষ্টটা প্রিয়তে রাখলাম। অদিতির কাছে আশা আরো বেড়ে গেলো। কীপ আপ দি গুড ওয়ার্ক অদিতি
আসলেই কামেল মহিলা যে!
শুধু নামটাই জানা ছিল বিট্রিস পটার, না, জানা বলাটা বোধ হয় ঠিক হচ্ছে না.. শুধু নামটাই শোনা ছিল বিট্রিস পটার, সাথে দু'একটা গল্পের কথা, কিন্তু তাঁর সম্পর্কে এত কিছুই জানতাম না। আজ জানলাম। ধন্যবাদ।
জুলাই ১০ এর পর আগস্ট ১০ চলে গেলো। এখন আগস্ট ১৫। কৈ আপনি???
অদিতি'রে অনেকদিন পর দেখে দারুন ভালো লাগছে...

:কোক: এটা খেয়ে এবার সুন্দর একটা লেখা দাও দিকিনি বাপু!!
অদিতি আপু কেমন আছেন? আপনাকে দেখে খুব খুশি লাগছে।
মন্তব্য করুন