ডোম(শেষ পর্ব) সংগৃহীত ও কাল্পনিক
আমরা নিজেরা একটু ভালভাবে যদি ভেবে দেখি যে এ ঘটনাটাই যদি আমার সাথে ঘটতো তবে আমাদের কী অবস্থা হতো। হুজুরের বাড়ীতে এসে হুজুরের সাথে দেখা করার সাথে সাথে হুজুর বললেন কিরে অনেক ভয় পেয়েছিস, না ভয়ের কিছু নাই। তোর কিছু হবে না। এবার তার বিস্ময় আকাশে ঠেকল। হুজুর কি করে এসব জানল। তার হঠাত মনে পড়ল বুজুর্গ ব্যক্তিরা আগে থেকেই সব জেনে যায় কার কাছে শুনে ছিল মনে নেই তবে এমন শুনেছিল।
সে হুজুরকে বলল, এখন আমার কি করা উচিত। তোর কিছু করতে হবে না। নে এ পানি পড়াটা নিয়ে যা ছেলেটিকে তুই খাওয়াবি। চাইলে তুই নিজেও খেতে পারিস। পানি পড়া নিয়ে ছেলেটিকে নিজে খাইয়ে দিল এবং নিজেও কিছু খেল।
মাস খানেক ভালই চলল। একদিন তার (ডোম) শরীরটা তেমন ভাল লাগছিল না। তাই একটু সকাল সকাল অর্থাত বিকেল বেলায় সে বাড়ি চলে আসে। এসে ঘরে ঢুকে সে যা দেখে তা কল্পনার ও অতীত। যে ছেলেটি তার সাথে থাকত সে ছেলেটি বিছানার উপর পড়ে আছে কিন্তু মৃত। মৃত তবে তার শরীর কোমর থেকে দ্বিখণ্ডিত। রক্তে সাড়া বিছানা ভিজে কিছু রক্ত নীচে পড়ছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় যে, ছেলেটিকে সে অফিস যাবার সময় দেখে গেছে, সে ছেলেটি খুন হল, অথচ বাড়ি কোন লোক জানল না, জানলে অবশ্যই এখানে কোলাহল হত। থানায় খবর যেত। আর থানায় খবর গেলে সে অবশ্যই জানত। বিশ্ময়ে আকাশ যেন তার মাথায় ভেঙ্গে পড়বে। কি আর করা তড়িৎ বাড়ির লোকজনকে ডাকতে গেলেন। বাড়ি ওয়ালাকে যখন বলা হল, আমার সাথে যে ছেলেটি থাকত সে ছেলেটি খুন হয়েছে। বাড়িওয়ালা বলল কোন ছেলেটি, ও ঘরে তো আপনি একা থাকতেন। এবার তার আত্না খাঁচা ছাড়া হবার উপক্রম। আরে ওই যে ছেলেটি এইচ এস সি পরীক্ষা দিতে এসেছে। আপনার কেমন জানি আত্নীয় হয়। বাড়ি ওয়ালা বলল আমার কোন আত্নীয় থাকলে আমি জানব না। যথারিতি বাড়ির গৃহিনীকে জিজ্ঞাসা করে উনার কাছ থেকেও একই উত্তর পাওয়া গেল। এবার ডোম মহাশয়ের পাগল হবার যোগার। উনি বললেন আপনাদের বিশ্বাস না হলে চলেন, গিয়ে দেখবেন। এমন বসচায় অনেক লোক জড়ো হয়ে গেল। তারা সবাই মিলে চলল মৃত ছেলেটিকে দেখার জন্য।
কিন্তু একি কোথায় ছেলে কোথায় মরা লাশ। এমনকি ছেলেটি যে টেবিলে পড়াশুনা করত সে টেবিল খাতা বই কোন কিছুই নেই। বাড়ির লোকজন উনাকে অপ্রকৃতিস্থ লোক মনে করে কিছু না বলে সবাই চলে গেল। ডোম ভাবতে লাগল, এও কি সম্ভব যে ছেলেটিকে নিয়ে সে একসাথে থেকেছে, খেয়েছে, ঘুমিয়েছে, তার কোন অস্তিত্বই নেই। জল জ্যান্ত একটা মানুষ খুন হল। তার লাশ তো দুরের কথা তার হদিস নেই। তবে কি তার পেশাই তার শত্রু বা তার জানের দুশমন হয়ে গেল। সে আবার সেই হুজুরের বাড়ি গেল। হুজুর তাকে এ বিষয়ে ভাবতে মানা করে দিল। শুধু বলল ওকে নিয়ে তুমি বেশী কিছু ভাববে না, তুমি তার কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাবা না। সে আসলে কোন ছেলেই ছিল না। এবার আপনার একটু ভেবে দেখুন তো আপনারা যারা বোর্ডিং বা হোস্টেলে থাকেন, আপনাদের সাথে যদি এমন একটি কান্ড ঘটে যে যার সাথে আপনি দীর্ঘ দিন থেকেছেন বাস্তবে তার কোন অস্তিত্বই নেই ,সে হঠাৎ হাড়িয়ে গেছে, আপনি কি রকম মানষিক অবস্থার সন্মুক্ষীন হবেন। তিনি ডোম হলেও তিনিও মানুষ তারও আবেগ অনূভূতির একটা সীমা আছে। যাক হুজুর তাকে কিছু পানি পড়া দিল। তবুও তাকে স্বাভাবিক হতে এক মাস সময় লেগে গেল।
মাস খনেক পর সে আবার কাজে যোগদান করল। তাকে তো কিছু একটা করে খেতে হবে। কয়েকদিন পর একটি লাশ আসল। লাশটি একটি বেওয়ারিশ লাশ, তবে মাডার কেস তা নিশ্চিত। কিন্তু কোথায় তার বাড়ি পুলিশ অনেক খুজা খুজি করেও তার কোন হদিস পেল না। সরকারি কাগজ পত্রাদির ফর্মালিটিজ শেষ করে যখন সে ডোম ঘরে প্রবেশ করল, তখন রাত প্রায় সাড়ে আটটা। অনেকদিন পর আজ সে আবার লাশ কাটা ঘরে প্রবেশ করছে। দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলল। তবে আজ এক ধাক্কায় কেন জানি দরজাটা খুলল না। কয়েকবার ধাক্কা মারার পর দরজা খুলল। এগিয়ে যাছে, ডোম এগিয়ে যাচ্ছে তার কাজ করার জন্য, যে কাজ তাকে তার বিবি বাচ্চা সকলের রুটি রুজি দেয় সে কাজ করার জন্য। খাটে শোয়ানো সাদা কাপড়ে ঢাকা লাশের কাপড় সরাল। একি, এ সে কার লাশ দেখছে। এতো সেই ছেলেটির লাশ। তার এতদিনের রুমের বাসিন্দা রুম মেটের লাশ। রুম মেট হলেও সে যে তার সন্তান তুল্য। হায় খোদা আমি জীবনে কত লাশের পোস্ট মর্টেম করছি। আমার তো কখনো এমন হয়নি। আজ আমার কেন এমন হচ্ছে। আমার হাত কেন চলছে না। কিন্তু আমি তো শুধু দ্বিখন্ডিত লাশ দেখেছিলাম। এ তো দেখি মাথাও শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন। হায় খোদা এমন দিনও তুমি আমাকে দেখালে!
কিন্তু কি আর তার কর, আমি ডোম আমার পেশা লাশ কাটা। আমাকে দুর্বল হলে চলবে কেন? আমার এত দিনের পেশাগত সুনাম আমি ক্ষনিকের আবেগে শেষ করতে পারি না। আমার কাজ আমাকে করতেই হবে। সে তার সকল কর্ম শেষ করে যথাযত কতৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
যাবার পথে আবার সে শ্বশান ঘাট। শ্বশান ঘাট বরাবর তখনও পৌঁছেনি। একটি বিরাট লম্বা সাপ রাস্তার এপার থেকে ওপার পর্যন্ত আড়াআড়ি পড়ে আছে। মরা না জিবিত ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। এখন পার হবে কিভাবে, নাকি ফিরে যাবে? নাহ থাক জমিন দিয়াই হেটে যাই। যেই না জমিনে নামছে এক বিশাল সাইজের শুয়োর তার দিকে তেড়ে আসছে। ফিরে দেখে সাপটি মাথা ঘুড়িয়ে তার দিকে আসছে। দোয়া ইঊনুস পড়তে চাচ্ছে কিন্তু মনে করতে পারছে না। এবার পিছন দিকে দৌড়ানোর পরিকল্পনা করল। যেই পিছন দিকে ঘুরেছে। প্রথম দিনের সেই মস্তক বিহীন কঙ্কাল গুলো তাদের যুদ্ধে লিপ্ত, কিন্তু পরাস্ত দল তার দিকে পিছু হটছে। এবার কোত্থকে সেই দ্বিতীয় দিনের মেয়ে মানুষটির কান্না। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। খেপা শুয়োরটা তার কাছে এসেই মহিষ বনে গিয়ে সেই কিশোর বাচ্চাটিকে গুতানোর ভঙ্গিতে তার উপর চড়াও হল। কিন্তু সে আর কিছু মনে করতে পারল না। অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। (শেষ)
২৫/০৭/২০১৩ খ্রীঃ
ভাল লাগলো গল্প।
ধন্যবাদ ভাইয়া
মন্তব্য করুন