নিশি কেটে গেলে(দ্বিতীয় পর্ব)
নিশি কেটে গেলে(দ্বিতীয় পর্ব)
কবির অবচেতন মন সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগলেও পরিবেশ পরিস্থিতির সকল কিছু কবি চরম ভাবে উপভোগ করছিল। সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্টির সকল স্তরে সকল স্থানে তার সৃষ্টির জন্য উপভোগ্য উপকরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন। শুধু উপভোগ্য মানসিকতায় তাকে উপভোগ করতে হয় এই যা।
সহসা কিছুর একটা ছোয়া যেন কবিকে আনন্দ উপভোগের শেষ স্পর্শটুকু দিল। স্বর্গ মর্ত আকাশ পাতাল বুঝি না, কোথা থেকে অবর্ণনীয় অকল্পনীয় মহীমাময় সমীরণ কবিকে ছুয়ে গেল। এ যেন আজিকার বিভারবির সকল উত্তম উপহারের সেরা উপহার।
এবার কবি ক্ষনিকে অন্তর চক্ষু দিয়ে ছুটে গেলে কবির কবি মহাকবি্র দ্বার প্রান্তে। কি বলছে কবির কবি মহাকবি এমন অনুভুতিতে,
আমার প্রাণের পরে চলে গেল কে?
বসন্তের বাতাস টুকুর মত
সে যে ছুয়ে গেল নুয়ে গেল রে
ফুল ফুটিয়ে গেল শত শত
সে চলে গেল বলে না
সে কোথায় গেল ফিরে এল না
সে যেতে যেতে চেয়ে গেল
কি যেন গেয়ে গেল
তাই আপন মনে বসে আছি
কুসুম বনেতে
সে ঢেউয়ের মত ভেসে গেছে
চাঁদের আলোর দেশে গেছে...।।
বন্ধ আঁখিতে কবি মহাকবির অনুভুতির স্বাদ আস্বাধন করছিল, সাথে সাথে কবির প্রতি কৃতজ্ঞতার পাশাপাশি কবিকে সৃষ্টি কারী সেই মহান সৃষ্টি কর্তার প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলল না। সৃষ্টি কর্তা যদি এই মহান কবিকে বাঙ্গালায় না পাঠাতেন তবে আজকের এই সুখানুভূতি কেন, কত সুখ ভোগ থেকেই না আমি বাংগালী বঞ্চিত হতাম।
বন্ধ আঁখি খুলে কবি এবার পিছন ফিরে দিগন্ত বিস্তৃত অন্ধকারের মহা সমুদ্রে্র প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। একি সৌন্দর্য এই সৌন্দর্যের যে শেষ নেই। যতই এ সৌন্দর্যকে করাযত্ত করতে চান ততই যেন কবি ব্যর্থ হন। কবির আঁখি ক্ষনিকে ব্যর্থ মনঃরথ হয়ে কবির কাছেই ফিরে আসে।আলোর বিস্তৃতি যতদুর দৃষ্টি যায় ততদুর, কিন্তু অন্ধকারের বিস্তৃতি, তার দৈর্ঘ্য প্রস্ত বেধ পরিসীমায় নেয় এ সাধ্য কার। আলো পেতে হলে চন্দ্র সূর্য, বা কৃত্রিম কোন কিছুর সাহায্য নিতে হয়, কিন্তু অন্ধকার, তার তো কারও সাহায্য লাগে না। প্রতিপক্ষের ব্যর্থতায় সে আপন মহিমায় ভাস্বর। প্রতিপক্ষের আগমনে বিনা বাক্য ব্যয়ে নিজের প্রস্থান মেনে নেয় এটাই তার অন্তর ও মনের উদারতা।
না বার বার তাকিয়েও কবি অন্ধকারের সীমা পরসীমা বের করতে পারছে না। যত নিবিড় ভাবে তাকাচ্ছে ততই নিকষ কালো আঁধার তার চোখ দুটোকে কেমন জানি মোহনীয় এক সৌন্দর্যে বেধে ফেলছে। আচ্ছা যে অন্ধকারের এত সৌনর্য তাকে নিয়ে মানুষের আগ্রহ নেই কেন? কেন অন্ধকারকে মানুষ ভয় পায়। আচ্ছা আলোর কল্যাণে আমরা যা দেখতে পাই, যা আহরণ করি অন্ধকারে কি তেমন কিছু নেই, অবশ্যই আছে।
ভাল লাগার মানুষ্টিকে যখন আঁখি বন্ধ করে কল্পনায় অন্ধকারে দেখি তার রূপ, রস গব্ধ আমাকে কি মাতাল করে না। আমি যখন একই কায়দায় নিজকে রাজা বাদশা বা কোন কিছুর নায়ক হিসেবে ভাবি আহা তা কি কম সুন্দর।
অন্ধকারের এসব স্বরূপ নিয়ে ভাবতে ভাবতে কবি যেন ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে গেছে। পা আর চলছে না। এটা একটা পুকুর পাড়। হালকা গুল্ম লতা ও বালিয়ারির মাঝে কবি বসে পড়েছে। ক্লান্তিতে বসে থাকতে পারছে না। গুল্ম লতা বালিয়াড়ির বিছানায় শুয়ে পড়েছে। আহা কি স্বাদ, আহা কি আনন্দ। কি সুখ। চিত হয়ে শুয়ে অন্ধকার আকাশের দিয়ে তাকিয়ে কিছু তারা নিহারিকার এদিক ওদিক ছুটে চলা,আর শূন শূন বায়ুর শব্দ আর ক্লান্তি, কবিকে নিদ্রা মায়ের দৌড় গোড়ায় নিয়ে এসেছে। কিন্তু কবির চেতনা শক্তি একটুও কমেনি। কবি ভাবছে, এত দামী বিছানা, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ, সাধের কুল বালিশ এত কিছু সাথে নিয়েও নিদ্রা মায়ের কুলে এসে এত আদর পাইনি। আজ খালি হাতে এসেছে তাও মা এত সুন্দর ভাবে আহবান করছে কেন, আর এ আহবানে এত সুখ কেন? কবি আর পারছে না। ক্ষনিকে নিদ্রা মায়ের সুখের ঘরে প্রবেশ করলেন।
আমরা মনুষ্য জাতি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কতটুকু সময় নিদ্রামায়ের ডেড়ার ঘরটি হতে বাইরে থাকতে পারি। সারা জীবনে ৬০ ভাগ না তার থেকেও বেশী আমি জানিনা। তবে নিদ্রা মায়ের দেশ তার দেশের বাসিন্দা সকলে এত আপন,যেন সকলে একই মায়ের সন্তান।
এখানে কেউ কাউকে হিংসা করে না। কেউ কাউকে মারে না। কেন করবে, এখানে তো কারও কিছু প্রয়োজন নেই, এখানে মুক্তির চেয়েও মহা মুক্তি।
মুক্তির আনন্দ যেন ফুরতে চায় না, তাই কারও যেন বিশ্রামেরও কোন অবকাশ নেই,
এখানে আসার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট হল, যে যত কম সামানা নিয়ে আসবে সে তত মজায় থাকবে। লোভাতুর এ পৃথিবীতে মানুষের আকাঙ্ক্ষা বা চাওয়া পাওয়ার কোন শেষ নেই। যার যত আছে তার তত চাই। আর এই চাওয়ার মাত্রা যার বেশী নিদ্রা মায়ের কোলে আসতে তার গাট্টি বচকার পরিমাণও তত বেশী, তার মায়ের দেশে আসতে যেমন দেরী হয়,তেমনি তার স্বাদও সঠিক ভাবে আস্বাদন করতে পারে না। আর যারা এই সব সামানার থেকে দূরে থাকে তারা প্রাণ ভরে উপভোগ করে নিদ্রামায়ের দান নিদ্রার স্বাদ।আহ্ কি স্বাদ!!!
সেপ্টেম্বর,২০, ২০১৪ খ্রীঃ
খুলনা,
মন্তব্য করুন