মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি-২
সেদিন শুধুই হেঁটেছিলাম। গ্রামের নির্জন পথ লোকে-লোকারণ্য হয়ে উঠেছিল। সারা রাস্তায় মানুষের মেলা বসেছিল। দেখেছিলাম, হিন্দু-মুসলিমের ভেদাভেদ ভুলে সবাই এক কাতারে জড়ো হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল ভুপেন হাজারিকার সে বিখ্যাত গানের আহ্বানে- ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য..’। দেখেছিলাম, মায়ের কোলো ক্ষুধার্ত শিশুটির জন্য সেদিন কেউ কেউ দুধভর্তি পাত্র হাতে, আবার কেউ পানি বা শরবতের পাত্র নিয়ে সারি সারি ঠায় দাঁড়িয়েছিল। যার যেটা প্রয়োজন তা নিয়ে পান করেছে বা করিয়েছে। এ দৃশ্য কখনো ভোলার নয়। চোখকে ফাঁকি দেয়া যায়, কিন্তু স্মৃতিকে ফাঁকি দেয়া মোটেও সম্ভব নয়। যে কোনো ঘটনা-অঘটন স্মৃতিকে একদিন না একদিন জাগিয়ে তুলবেই। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানুষের মধ্যে সহযোগিতার যে ধারা বয়ে যেতে দেখেছি, তার এক ছিটেফোঁটাও যদি এখন আমাদের মাঝে থাকতো, তাহলে এ সবুজঘেরা, শস্য-শ্যামলা দেশটা কতোই যেন সুন্দর হতো। এদেশের মানুষ সোনার ফসল ঘরে তুলে কতোই না সুখ-শান্তিতে কাটাতে পারতো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মূলত এখানেই। ওই চেতনা বিদ্যমান থাকলে, আমরা একে পুরো ভাগে জাগরুক রাখতে পারতাম প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকাল ধরে। এক সময় আমাদের গ্রামবাংলারই ঐতিহ্য ছিল গোলাভরা ধান, পুকুরভরা মাছ আর গোয়ালভরা গরু। এখন ধান তো দূরে থাক, কৃষকের শূন্য গোলা পাওয়াও ভার। ‘মাছেভাতে বাঙালি’ এ তো দিব্যি প্রবাদ বাক্যে রূপ নিয়েছে।
ঢাকা কালীগঞ্জ থেকে ভোর-বিহানে রওনা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সৈয়দপুরের মরিচায় এসে পৌঁছলাম। অনেক কষ্টে একটি নৌকা পাওয়া গেলো। ভাড়া ঠিকঠাক হওয়ার পর নৌকায় উঠলাম। নৌকা চলছে নদীর পাড়ঘেঁষে, আবার কখনো খালের আঁকাবাঁকা পথ ধরে। রাজানগর, শেখের নগর, আলমপুর, আড়িয়ল বিল, ষোলঘর, শ্রীনগর, গোয়ালী মান্দ্রা অনেক মাঠঘাট পেরিয়ে অবশেষে রাতের বেলা গন্তব্যে পৌঁছলাম। নৌকায় ওঠার পর ক্লান্ত শরীর আধো ঘুমের কাছে সঁপে দিয়েদিলাম। নৌকা যখন গন্তব্যস্থল কুমারভোগ পৌঁছলো খুব সম্ভব বাবা আমার ঘুম ভাঙালেন। নৌকা থেকে নেমে পড়লাম। পাড়ার লোকজন ভিড় জমিয়েছে আমাদের দেখার জন্য এবং কুশল জানার জন্য। শরীর তখন ক্ষুধায় কাতর। আমাদের পাড়াতেই বড়বোনের বিয়ে হয়। তাই তিনি সপরিবারে গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। আমরা সেদিন তার বাড়িতেই শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম। রান্না করা খাবার যেটুকু ছিল, ছোট দুই ভাই তা দিয়ে পেটকে সুবোধ দিলাম। আমাদের দেখার সাথে সাথে চুলায় ভাতও বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এটাই গ্রামের রেওয়াজ।
আহা বিকেল থেকে দারুণ একটি লেখা প্রথম পাতায়, অথচ একটা কমেন্টও পড়ে নি

পর্বগুলো একটু তাড়াতাড়ি দিন আহমাদ ভাই। ধন্যবাদ
চেষ্টা করছি। ধন্যবাদ।
চলুক...
দেখি কতোটুকু চলা যায়। ধন্যবাদ।
এই সিরিজ টা মিস হয়ে যাচ্ছে.....তারিখ সহ রোজনামচা আকারে দিলে একটা গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে যাবে। আমার বাবার ডায়েরীর লিংক দিলাম, পড়বেন আশাকরি।
বাবার ডায়েরীতে ১৯৭১
শিশুকালের ঘটনা স্মৃতি থেকে লিখছি, তাই দিনক্ষণ দিতে পারিনি। তবে আপনার বাবার ডায়েরিটি অবশ্যই পড়বো নিজের তাগিদে। ধন্যবাদ।
পড়তেছি কিন্তু...
চলুক...
পড়ছেন ভালো কথা, নিঃসন্দেহে কিন্তুটি লিখবেন, এতে আমি উপবৃত হবো। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আলী ভাই, যদিও জানি অসুস্থতা এবং পারিবারিক কাজে আপনি সাংঘাতিক ব্যস্ত, তবু বলবো পরের পর্বগুলির জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
আপনার অপেক্ষা আমাকে লিখতে আরো উৎসাহিত করবে। ধন্যবাদ।
চলুক।
চলছেই তো ভাই...। ধন্যবাদ।
চলুক। পড়ছি ............
পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আরো চলবে আশা করি।
মন্তব্য করুন