বেশ খানিকটা দেরি হয়ে গেল, কারণ দীর্ঘ একটা মন্তব্য করার মতো সময় করে উঠতে পারছিলাম না। আজকে দেখা যাক - পারি কী না।
১. সিরাজ শিকদার আর তাঁর সর্বহারা রাজনীতির মডেল এমন এক জটিল ব্যাপার যে যেদিক থেকেই বোঝার চেষ্টা করা হোক না কেন, অনেক ব্যাপারই ধোঁয়াশা রয়ে যায়। আপনি নতুন একটা দিক থেকে ব্যাপারটার ওপর আলো ফেললেন, এবং এ থেকে ভিন্ন একটা দৃষ্টি দিয়ে তাঁর দিকে তাকানোর সুযোগ হলো। অনেকেই হয়তো তাদের স্মৃতিকথায় রেখেঢেকে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলেছেন কিন্তু যাকে বলে ফোকাস করা সেটি বোধ হয় আপনিই প্রথম করলেন। এই অর্থে কাজটি গুরুত্বপূর্ণ নিঃসন্দেহে।
২. সিরাজ শিকদারকে আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় কারণ তিনি যে ধরনের রাজনীতির সূচনা করেছিলেন, সেটি আমাদের দেশে অপরিচিত ছিল। যতটা নয় মাওয়ের আদর্শে তারচেয়ে বেশি চারু মজুমদারের নকশালবাড়ি আন্দোলনের আদর্শেই তিনি অধিকতর উজ্জীবিত হয়েছিলেন বলেই মনে হয়। অবশ্য নকশালরা চীনের চেয়ারম্যানকে তাদের চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেই অর্থে চারু মজুমদারের আদর্শে উজ্জীবিত হওয়া আর মাওয়ের আদর্শের অনুসারী হওয়ার ব্যাপারটাকে একই মনে হতে পারে। কিন্তু কর্মপদ্ধতি এবং কৌশলগত দিক থেকে তাঁদের অবস্থানে ছিল বিস্তর ফারাক। মাও তাঁর বিপ্লব সফল করার জন্য কতজনকে হত্যা করেছিলেন আর নকশাল বা সর্বহারা-রা কতজনকে করেছিল তার একটা তুলনামূলক বিচার করলেই মাওয়ের আদর্শের সঙ্গে তারা কতটা নৈকট্য বোধ করতেন সেটি বোঝা যাবে। একদিকে সর্বহারার রাজত্ব প্রতিষ্ঠার ডাক অন্যিদকে এই হত্যাযজ্ঞ তাদেরকে দুর্বোধ্য করে তুলেছিল। সিরাজ শিকদার বা চারু মজুমদার কেন যে বুঝতে পারেননি যে - একজন অত্যাচারি লোকও যদি খুন হয় তাহলে এ অঞ্চলের মানুষের মনে তার জন্যই সহানুভূতি জেগে ওঠে, খুনিদের জন্য নয়। 'শ্রেণীশত্রু খতম'-এর এই উদ্ভট ধারণা তাঁরা কোথায় পেলেন, ভেবে পাই না।
৩. সিরাজ শিকদার মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় একটা নতুন ধরনের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার কথা ভেবেছিলেন বলে মনে হয়। যুদ্ধের সময় চীনের বিরুদ্ধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে দেয় - আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট রাজনীতির বাইরে গিয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা তাঁর আছে। যুদ্ধের পর তাঁর দলের দ্রুত বিকাশ এবং সর্বহারার রাজনীতিতে দ্রোহী তরুণদের বিপুল হারে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারটি তাঁর যুদ্ধকালীন কর্মপদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দেয়। কিন্তু তারপরও কেন এমন করুণ পরিণতি হলো তাঁর এবং তাদের রাজনীতির, সেটি নিয়ে অনেক বিশ্লষণ হলেও এবং নানা পক্ষের ওপর দোষ চাপানো হলেও যে দিকটি সবসময় উপেক্ষিতি থেকেছে, সেটি এই ব্যক্তি-মানুষের জীবন ও সীমাবদ্ধতা। আপনি ঠিক সেখানটাতেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন! খুবই ইউনিক একটা ব্যাপার।
৩. কোনো মানুষই চব্বিশঘণ্টা বিপ্লবী থাকতে পারেন না, নিজের ব্যক্তিসত্তাও পুরোপুরি বিসর্জন দিতে পারেন না। বিপ্লবের জন্য ব্যক্তিজীবন বিসর্জন দেয়ার চিন্তাকে নিছক একটা ইউটোপিয়া বলে মনে হয় আমার। তাঁরা সেটিই করতে চেয়েছিলেন। ব্যক্তিসত্তাকে, ব্যক্তিসাতন্ত্র্যকে, ব্যক্তির আবেগ-অনুভূতিকে বুর্জোয়া-পেটিবুর্জোয়া ইত্যাকার অভিধায় অভিহিত করে তাঁরা ঠিক কী অর্জন করতে চেয়েছিলেন বোঝা মুশকিল। ব্যক্তিই যদি না থাকে তাহলে বিপ্লবের কী প্রয়োজন তাও বুঝি না।
৪. সিরাজ শিকদার কতটা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন সেটি বোঝা যায় ওই এক সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করার ঘটনার ভেতর দিয়ে। একজন বিপ্লবী, যাঁর প্রয়োজন একটি বিপুল প্রশিক্ষিত-বিশ্বস্ত কর্মীবাহিনী এবং পার্টির বিভিন্ন স্তরে বিশ্বস্ত-পরিক্ষীত নেতা, সেখানে ক্রমাগত তিনি নেতা-কর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হতে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ একা হয়ে গেলেন! আর তখনই বিপ্লবী রাজনীতিক হিসেবে তাঁর পরাজয় ঘটে গেল। বিস্ময়কর লাগে ভাবতে। মেধাবী-প্রতিভাবান মানুষ, নিশ্চিত-নিরাপদ-জৌলুশপূর্ণ জীবনের ডাক ফিরিয়ে দিয়ে তিনি পা বাড়িয়েছিলেন ঝুঁকিপূর্ণ-অনিশ্চিত জীবনের দিকে - মানুষের মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে। তার স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা-সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই আমার, প্রশ্ন আছে কর্মপদ্ধতি নিয়ে। দুঃখও আছে। যদি ‘ভুল’ পদ্ধতি বেছে না নিতেন তাহলে সম্ভবত তিনিই হতে পারতেন এ অঞ্চলের অনুসরণযোগ্য বিপ্লবী নেতা। হয়তো মার্কসবাদ, লেলিনবাদ, মাওবাদের মতো 'সিরাজবাদ' নামে একটা টার্ম যুক্ত হতো বিপ্লবী রাজনীতিতে।
৫. তাঁর এই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া, নিঃসঙ্গ হয়ে পড়া, নেতা-কর্মীদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলার ব্যাপারটা নিয়ে অনেক ভেবেছি আমি। বাঙালি চরিত্রের মধ্যে এমন কি কোনো একটা ব্যাপার আছে যে ক্ষমতা-চর্চার একটা পর্যায়ে তারা এক নায়ক হয়ে ওঠে? এটা শুধু সিরাজ শিকদার সম্পর্কে নয়, অন্যান্য জাতীয় নেতা সম্পর্কেও মনে হয়।
এখন, এই বর্তমানের রাজনীতির দিকে তাকালেও যখন দেখি - বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীরা ক্রমাগতই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন, নেতা-কর্মীদের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারেন না, সব ব্যাপারে একক সিদ্ধান্ত নিতে চান, তখন মনে হয় - অসুখটা আমাদের জাতীয় চরিত্রের মধ্যেই আছে এবং সেটি খুব গভীরে প্রোথিত। সিরাজ শিকদারের ওপর আমাদের নজর পড়ে, কারণ তাঁর এক নায়ক হয়ে ওঠার ব্যাপারটি খুব দৃশ্যমান, কিন্তু মূল ধারার রাজনীতিতেও তো ওই একই ব্যাপার!
৬. আপনার এই লেখার সূত্র ধরে আরো অনেক দীর্ঘ আলোচনার সুযোগ তৈরি হতো। আমি নিজেই দেরি করে ফেললাম, আর একথা তো জানাই - সময় গেলে সাধন হয় না।
পরিশেষে - এই লেখাটি পরবর্তী কোনো একটি বইতে অবশ্যই যুক্ত করবেন। সম্ভব হলে এখনই ঠিকঠাক করে ফেলুন। প্রয়োজনে আরেকটু ডিটেইল লিখুন। যেহেতু কিছুদিন আগেই সব আবার ফিরে পড়েছেন, এখন লিখতে সুবিধা হবে। এবং সময় গেলে সাধন হবে না।
"আমরা বন্ধু" ব্লগে প্রকাশিত লেখা ও মন্তব্যের দায় একান্তই সংশ্লিষ্ট লেখক বা মন্তব্যকারীর, ব্লগ কর্তৃপক্ষকে এজন্য কোনভাবেই দায়ী করা যাবে না।
পোস্ট প্রদান কারী ব্লগার এবং মন্তব্য প্রদান কারী ব্লগারের পোস্টে অথবা প্রোফাইলে পরিষ্কারভাবে লাইসেন্স প্রসঙ্গে কোন উল্লেখ না থাকলে স্ব-স্ব পোস্টের এবং মন্তব্যের সর্বস্বত্ব সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট ব্লগারের বা মন্তব্য প্রদানকারী ব্লগার কর্তৃক সংরক্ষিত থাকবে। ব্লগার অথবা মন্তব্য প্রদানকারী ব্লগার/অতিথি ব্লগারের অনুমতি ব্যতিরেকে পোস্টের অথবা মন্তব্যের আংশিক বা পূর্ণ অংশ কোন ধরনের মিডিয়ায় পুনঃপ্রকাশ করা যাবে না।
কপিরাইট (c) ২০১১ - ২০১২২ | আমরা ব্ন্ধু ডট কম
বেশ খানিকটা দেরি হয়ে গেল, কারণ দীর্ঘ একটা মন্তব্য করার মতো সময় করে উঠতে পারছিলাম না। আজকে দেখা যাক - পারি কী না।
১. সিরাজ শিকদার আর তাঁর সর্বহারা রাজনীতির মডেল এমন এক জটিল ব্যাপার যে যেদিক থেকেই বোঝার চেষ্টা করা হোক না কেন, অনেক ব্যাপারই ধোঁয়াশা রয়ে যায়। আপনি নতুন একটা দিক থেকে ব্যাপারটার ওপর আলো ফেললেন, এবং এ থেকে ভিন্ন একটা দৃষ্টি দিয়ে তাঁর দিকে তাকানোর সুযোগ হলো। অনেকেই হয়তো তাদের স্মৃতিকথায় রেখেঢেকে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলেছেন কিন্তু যাকে বলে ফোকাস করা সেটি বোধ হয় আপনিই প্রথম করলেন। এই অর্থে কাজটি গুরুত্বপূর্ণ নিঃসন্দেহে।
২. সিরাজ শিকদারকে আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় কারণ তিনি যে ধরনের রাজনীতির সূচনা করেছিলেন, সেটি আমাদের দেশে অপরিচিত ছিল। যতটা নয় মাওয়ের আদর্শে তারচেয়ে বেশি চারু মজুমদারের নকশালবাড়ি আন্দোলনের আদর্শেই তিনি অধিকতর উজ্জীবিত হয়েছিলেন বলেই মনে হয়। অবশ্য নকশালরা চীনের চেয়ারম্যানকে তাদের চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেই অর্থে চারু মজুমদারের আদর্শে উজ্জীবিত হওয়া আর মাওয়ের আদর্শের অনুসারী হওয়ার ব্যাপারটাকে একই মনে হতে পারে। কিন্তু কর্মপদ্ধতি এবং কৌশলগত দিক থেকে তাঁদের অবস্থানে ছিল বিস্তর ফারাক। মাও তাঁর বিপ্লব সফল করার জন্য কতজনকে হত্যা করেছিলেন আর নকশাল বা সর্বহারা-রা কতজনকে করেছিল তার একটা তুলনামূলক বিচার করলেই মাওয়ের আদর্শের সঙ্গে তারা কতটা নৈকট্য বোধ করতেন সেটি বোঝা যাবে। একদিকে সর্বহারার রাজত্ব প্রতিষ্ঠার ডাক অন্যিদকে এই হত্যাযজ্ঞ তাদেরকে দুর্বোধ্য করে তুলেছিল। সিরাজ শিকদার বা চারু মজুমদার কেন যে বুঝতে পারেননি যে - একজন অত্যাচারি লোকও যদি খুন হয় তাহলে এ অঞ্চলের মানুষের মনে তার জন্যই সহানুভূতি জেগে ওঠে, খুনিদের জন্য নয়। 'শ্রেণীশত্রু খতম'-এর এই উদ্ভট ধারণা তাঁরা কোথায় পেলেন, ভেবে পাই না।
৩. সিরাজ শিকদার মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় একটা নতুন ধরনের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার কথা ভেবেছিলেন বলে মনে হয়। যুদ্ধের সময় চীনের বিরুদ্ধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে দেয় - আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট রাজনীতির বাইরে গিয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা তাঁর আছে। যুদ্ধের পর তাঁর দলের দ্রুত বিকাশ এবং সর্বহারার রাজনীতিতে দ্রোহী তরুণদের বিপুল হারে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারটি তাঁর যুদ্ধকালীন কর্মপদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দেয়। কিন্তু তারপরও কেন এমন করুণ পরিণতি হলো তাঁর এবং তাদের রাজনীতির, সেটি নিয়ে অনেক বিশ্লষণ হলেও এবং নানা পক্ষের ওপর দোষ চাপানো হলেও যে দিকটি সবসময় উপেক্ষিতি থেকেছে, সেটি এই ব্যক্তি-মানুষের জীবন ও সীমাবদ্ধতা। আপনি ঠিক সেখানটাতেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন! খুবই ইউনিক একটা ব্যাপার।
৩. কোনো মানুষই চব্বিশঘণ্টা বিপ্লবী থাকতে পারেন না, নিজের ব্যক্তিসত্তাও পুরোপুরি বিসর্জন দিতে পারেন না। বিপ্লবের জন্য ব্যক্তিজীবন বিসর্জন দেয়ার চিন্তাকে নিছক একটা ইউটোপিয়া বলে মনে হয় আমার। তাঁরা সেটিই করতে চেয়েছিলেন। ব্যক্তিসত্তাকে, ব্যক্তিসাতন্ত্র্যকে, ব্যক্তির আবেগ-অনুভূতিকে বুর্জোয়া-পেটিবুর্জোয়া ইত্যাকার অভিধায় অভিহিত করে তাঁরা ঠিক কী অর্জন করতে চেয়েছিলেন বোঝা মুশকিল। ব্যক্তিই যদি না থাকে তাহলে বিপ্লবের কী প্রয়োজন তাও বুঝি না।
৪. সিরাজ শিকদার কতটা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন সেটি বোঝা যায় ওই এক সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করার ঘটনার ভেতর দিয়ে। একজন বিপ্লবী, যাঁর প্রয়োজন একটি বিপুল প্রশিক্ষিত-বিশ্বস্ত কর্মীবাহিনী এবং পার্টির বিভিন্ন স্তরে বিশ্বস্ত-পরিক্ষীত নেতা, সেখানে ক্রমাগত তিনি নেতা-কর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হতে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ একা হয়ে গেলেন! আর তখনই বিপ্লবী রাজনীতিক হিসেবে তাঁর পরাজয় ঘটে গেল। বিস্ময়কর লাগে ভাবতে। মেধাবী-প্রতিভাবান মানুষ, নিশ্চিত-নিরাপদ-জৌলুশপূর্ণ জীবনের ডাক ফিরিয়ে দিয়ে তিনি পা বাড়িয়েছিলেন ঝুঁকিপূর্ণ-অনিশ্চিত জীবনের দিকে - মানুষের মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে। তার স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা-সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই আমার, প্রশ্ন আছে কর্মপদ্ধতি নিয়ে। দুঃখও আছে। যদি ‘ভুল’ পদ্ধতি বেছে না নিতেন তাহলে সম্ভবত তিনিই হতে পারতেন এ অঞ্চলের অনুসরণযোগ্য বিপ্লবী নেতা। হয়তো মার্কসবাদ, লেলিনবাদ, মাওবাদের মতো 'সিরাজবাদ' নামে একটা টার্ম যুক্ত হতো বিপ্লবী রাজনীতিতে।
৫. তাঁর এই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া, নিঃসঙ্গ হয়ে পড়া, নেতা-কর্মীদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলার ব্যাপারটা নিয়ে অনেক ভেবেছি আমি। বাঙালি চরিত্রের মধ্যে এমন কি কোনো একটা ব্যাপার আছে যে ক্ষমতা-চর্চার একটা পর্যায়ে তারা এক নায়ক হয়ে ওঠে? এটা শুধু সিরাজ শিকদার সম্পর্কে নয়, অন্যান্য জাতীয় নেতা সম্পর্কেও মনে হয়।
এখন, এই বর্তমানের রাজনীতির দিকে তাকালেও যখন দেখি - বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীরা ক্রমাগতই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন, নেতা-কর্মীদের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারেন না, সব ব্যাপারে একক সিদ্ধান্ত নিতে চান, তখন মনে হয় - অসুখটা আমাদের জাতীয় চরিত্রের মধ্যেই আছে এবং সেটি খুব গভীরে প্রোথিত। সিরাজ শিকদারের ওপর আমাদের নজর পড়ে, কারণ তাঁর এক নায়ক হয়ে ওঠার ব্যাপারটি খুব দৃশ্যমান, কিন্তু মূল ধারার রাজনীতিতেও তো ওই একই ব্যাপার!
৬. আপনার এই লেখার সূত্র ধরে আরো অনেক দীর্ঘ আলোচনার সুযোগ তৈরি হতো। আমি নিজেই দেরি করে ফেললাম, আর একথা তো জানাই - সময় গেলে সাধন হয় না।
পরিশেষে - এই লেখাটি পরবর্তী কোনো একটি বইতে অবশ্যই যুক্ত করবেন। সম্ভব হলে এখনই ঠিকঠাক করে ফেলুন। প্রয়োজনে আরেকটু ডিটেইল লিখুন। যেহেতু কিছুদিন আগেই সব আবার ফিরে পড়েছেন, এখন লিখতে সুবিধা হবে। এবং সময় গেলে সাধন হবে না।