একদিন নিমন্ত্রনের দিনে, একদিন না চাইতেই পাওয়ার দিনে...
নিমন্ত্রণ খেতে গেলাম। গৃহস্থ ম্যাডাম বললেন, "ঠিক আছে? আরো লাগবে? লাগলে আরো দিব। কি দিব নাকি আরো?"
আমার তো পেটের অবস্থা খারাপ, বহু কষ্টে বললাম, "না ম্যাডাম, এমনিতেই বায়ুর ঊর্ধচাপ তার উপর এত এত সুস্বাদু খাবারের চাপ সহ্য করা দায়। যদি বেঁচে যায় কিছু তবে প্যাকেট করে দেন। ছুটির দিনে খাওয়া যাবে।"
হাসলে ম্যাডামকে বড় করুণাময়ী মাতৃদেবী মনে হয়। দাঁতের মাঝখানে রোনালদোর মত সামান্য ফাঁক আছে। কোমল স্বরে বললেন, "এখনই তো বাবা খাওয়ার সময়। আরো নাও আরো নাও" এই বলেই একরকম জোর করেই পাতে ঢেলে দিলেন।
মায়ের কাছ থেকে শুনেছি খাবার নষ্ট করা ঠিক না। গরিব মানুষ, তাই নষ্ট করা সাঁজেও না। নিজেকেই গলাধকরণ করতে হল। পেট ভর্তি, নড়া চড়া করার উপায় নেই। ম্যাডামকে তাই একটু জিরোনোর আর্জি জানালাম। ম্যাডাম বললেন, "আমার ছেলে দুইটা তো বিদেশে। তুমি ওদের রুমে বিশ্রাম নিতে পার। সাবধান ওখানে কিন্তু পার্থ আছে। ও কথা বলার সময় কেবল শুনে যাবে।" ভাবলাম এ আর এমন কী! শুনে গেলাম আর কি, এই ভেবে গেলাম বিশ্রাম নিতে।
ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। পার্থ আমাকে জোর করে ওর কথা শোনাবেই। অতি খাবারের কারনে আমার ঘুমে চোখ ঢুলু ঢুলু। একটু চোখ লাগলেই বলে, "আহা! ঘুমান কেন আমার কথাটা শেষ করতে দিন। আহা! আমার কথাটা শেষ করতে দিন।"
ওর বক বক শুনতে শুনতে মাথা ধরল। ওয়াশরুমে যাচ্ছি বলে ড্রয়িং রুমে গেলাম শোফায় একটু হেলান দিয়ে থাকব বলে। ওখানে দেখি আমার সুদর্শনা মণি আপু রয়েছেন। উনি আমাকে দেখেই একটা মুচকি হাসি দিলেন। আমি ভাবলাম যাক সময়টা কিছুক্ষণের জন্য ভালই কাটবে। বসতেই উনি আমার সাথে উনার হাজবেন্ডের গল্প করতে লাগলেন। বিবাহিত মহিলাদের এই এক সমস্যা, খালি হাজবেন্ড না হয় নিজের বাচ্চা নিয়ে গল্প করেন। তারপরও সুন্দর কণ্ঠ শুনতেই মধুর লাগে। কিছুক্ষণ সঙ্গ পেলে মন্দ কী!
এটা ওটা বলতে বলতে ইতিহাসে চলে গেলেন। আমার আবার ইতিহাসে মহা বিরক্তি। উনি আমাকে বিসিএসের কুইজ করতে লাগলেন। বলতো মুক্তিযুদ্ধে শহীদের প্রকৃত সংখ্যা কত? ত্রিশ নাকি তিন লক্ষ? বইতে পড়েছিলাম। এখনো মনে আছে- আমি বললাম ত্রিশ লক্ষ আপু। ভাবলাম আপু আমার প্রশংসা করবেন, তা না। তিনি আমাকে বললেন, "এই পর্যন্ত কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পেরেছে সংখ্যা কত?" আমি তো টাসকি খাইলাম। কয় কি! সারাজীবণ ত্রিশ লক্ষ জানলাম এখন হঠাৎ তিন লক্ষ হল!! বয়সে অনেক বড় তাই আমতা আমতা করে বললাম, "কিন্তুক, মুক্তিযুদ্ধে যে পরিমাণ ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে, যে পরিমাণ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যত লোক মরেছে তার পরিমাণ তো সংখ্যা দিয়ে বুঝা যায় না। তাছাড়া নিউজপেপারে প্রতিদিন গড়ে যে পরিমাণ নিহতের সংখ্যা দেয়া হয়েছে তা হিসাব করলে ত্রিশ লক্ষ থেকে আরো বেশী হয়ে যায়।" আপু আমার দিকে চোখ বড় করে করে তাকিয়ে আছেন। ভাবগতিক ভাল না দেখে ম্যাডামের কাছে গেলাম বিদায় নেয়ার জন্য।
ম্যাডাম খুব ব্যস্ত মহিলা। এই বৃদ্ধ বয়সেও নিজের জেল্লা ধরে রেখেছেন। দেখলাম উনি সার্টিফিকেট টাইপের কিছু নিয়ে ব্যস্ত। একটা ঘরের পুরো দেয়াল সার্টিফিকেটের স্তুপ। ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন, "এগুলা আস্তিকতার সনদ। নাও তোমারটা নিয়ে যাও।" আমি বললাম "ম্যাডাম আস্তিকতার সনদ কি এভাবে দেয়া যায়?" ম্যাডাম লাস্যময়ি নারী। মুচকি হাসলে তাঁর গালে টোল পড়ে। মুচকি হেসে বললেন, "বাবা, আল্লাহ না চাইলে যেমন একটি পাতাও নড়ে না, তেমনি আমি না চাইলে এই আস্তিকতার সনদও বিলি হয় না।"
মনে মনে তৌবাস্তাগফিরুল্লা বলতে বলতে আমি বের হয়ে আসছি। এমন সময় দেখলাম লাল দাড়িওয়ালা চাচা সাথে কেডস পড়া জয়নুল ভাই ও পাপিয়া আপু বাসায় ঢুকছেন। আমি বললাম, "ইয়া মাবুদ, তুমি মালিক, তুমি বাঁচাইছ।" মণি আপুর সাথে কথা বলার সময় পাপিয়া আপু থাকলে যে আমি এতক্ষণ কই থাকতাম!! তবে খুশির খবর হচ্ছে আমার আস্তিকতার সনদ পেয়েছি এবং বোনাস হিসেবে ছুটির দিনেও খাওয়ার জন্য কোর্মা-পোলাও নিয়ে এসেছি।
শান্ত ভাইয়ের সার্টিফিকেট যোগাড় করেছেন?
সেই কবে
ইস, কতদিন দাওয়াত খাইনা!
লাগবে দাওয়াত? দিবো দাওয়াত? আরো দিবো নাকি?
সার্টিফিকেট পাওয়া যাইবো তো!
আমার একটা দরকার
আবার জিগায়! একদম ম্যাডামের টিপসই সহ সহি সার্টিফিকেট।
দাওয়াত খাইতে গেলাম না তাই সনদও পাইলাম না
আমারে কেউ দাবাত দেয় না
এক্টুই নয় খাতাম, বুনাস হিসাবে আস্তিকতা নিয়া আতাম...
কেনু? দাওয়াত দিয়ে হরতাল খাওয়াইতেছে না?
হাসতে হাসতে উষ্টা খাইলাম । সার্টিফিকেট আম্মো পাইছি এক্টা । নামের বানাম কিঞ্চিত ভুল তাই ঠিকঠাক করতে হপে । কখন কুথায় কাজে লাগে কে জানে !!
অভিনন্দন।
আপনে তো ভাল স্যাটায়ার লিখেন।
এত কম লিখেন ক্যান?
আগেও অন্য ব্লগে বেশ কয়েকটা লিখেছিলাম। তবে এখানে যেহেতু নতুন পোষ্ট দিতে হয় তাই আর দিই নাই।
পড়ার জন্য ধন্যাপাতা।
ভাল লাগছে। তয় ঘটনায় ফেলুদা নাই কেন?
মিসটেক
মন্তব্য করুন