খেরোখাতা থেকে-১
ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর পাখা গজিয়েছিল স্বাভাবিক। ক্যান্টনে বসে গরম গরম কথা বলতাম, এক সপ্তাহের মধ্যে মুরগী হিসেবে বড় ভাইদের চোখে পড়ে গেলাম, সেশনাল থেকে বের হওয়ার পথে গুঞ্জনদা (তখন চিনতাম না) পথ আটকে বলল, নর্থ হল-২০২ এ লাঞ্চের পর আসতে। বুঝলাম rag দিতেই ডাকছে, ভাব দেখায়া গেলাম না, মনে ভাব না গেলে করব কি আমারে। পরের দিন দেখি গ্যালারির জানালায় (শুরুর দিকে ওখানেই ক্লাস হত আমাদের) গুঞ্জনদা মনের সুখে বিড়িতে সুখটান দিচ্ছে। আমি এড়িয়ে যেতে চাইলাম, কিন্তু মুরগী পাহারা দেয়া শিয়ালের থেকে পালানো কি এতই সহজ। আমারে ধইরাই ঝাড়ি কালকে আসি নাই কেন? আগরতলা চৌকির তলা অনেক কিছুই দেখানো হইল। হাল্কা ভয় যে পাচ্ছিলাম না তাও না, ঠিক করলাম আজকে যাব, যা হয় হবে।
ক্লাশ থেকে বের হয়ে যাব, পথ আটকালো সেতু ভাই। "এই ছেলে পাইছ কি তুমি? কি ভাব নিজেরে? নেতা হইছ না? মাইরা হাড্ডি গুড়া কইরা দেয়া হবে.............." ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি আমতা আমতা করে তার সাথে নর্থ হলের দিকে আগানো শুরু করলাম, দোতলায় উঠে দেখি ১৫-২০ জন সিনিয়র দাঁড়ানো। আমারে রুমের ভিতর ধুকানো হইল, ধুকায়া তারা বাইরে। আমি ভিতরে ১০ মিনিটের মত একা। পুরা রুমে একটা চেয়ার সেটায় আমি বসা, রুমের চারকোনায় সিগারেটের ভগ্নদেশের স্তুপ (অবাক বিস্ময়ে চিন্তা করতেছিলাম এত বিড়ি মানুষ খায় কেম্বায়?)। আমাকে ভয় পাওয়ানোর বিশাল এবং আংশিক সফল প্রস্তুতি। কেউ এদিকে আসে না। আমিতো টেনশিত হইতেই আছি, কি হয়? কি হয়?
হঠাৎ কইরা সবার একত্রে রুমে প্রবেশ, তারপর তিন ঘন্টা র্যাগ দেওয়ার চেষ্টা। নাদিম ভাই, মেহেদী ভাই (যাদের সাথে পরবর্তীতে ক্যাময়াসে একটা উল্লেখযোগ্য সময় কাটলো) আমাকে মোটামুটি নাজেহাল করে ছাড়লো। মাইরের ভয় দেখায়, পলিটিক্সের ভয় দেখায়, আর আমি রীতিমত ডেস্পারেট, কি করবেন করেন? আমারে বলে, "তোমাকে যদি মাইরা পুইতা রাখি এইখানে কেউ জানবে না? কি করবা তুমি?" আমি বলি ভাইয়া কিছু করতে পারবো না, আপনাদের মারতে ইচ্ছে করলে মারেন আজকে বুঝি বেচারারা কি ফাঁপড়টাতে পড়ছিল!! rag দিতে চায় কিন্তু পোলা ডরায় না কয় কি হালায়! / হাসতে হাসতে শ্যাষ হৈয়া গেলাম ।
শুরু হইল আমার ক্যাম্পাস জীবন, একটু ঝামেলা দিয়েই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ০৩ ব্যাচের এদের সাথেই সময় কাটিয়েছি বেশি, সময়টা কেটেছিল ভালোই। রসি ভাইয়ের কাছ থেকেতো জীবনকে পুরো অন্য চোখে দেখতেই শিখলাম। আমার মুভিখোর জীবনের শুরুওতো তার হাত ধরেই। কত রাত আমি নাদিম ভাই আর রসি ভাই আড্ডা দিয়ে শেষ করেছি কোন ইয়ত্তা নেই, আর নাদিম ভাই গীটার আর গলাতো ছিল উমদা, সাথে রসি ভাইয়ের গল্পের ভান্ডার যা কখনোই ফুরায় না।
অবশ্য রাত ভোর করা আড্ডার কথা আসলে সবার আগেই আসবে মনে হয় তাপসদা, আমার দেখা সবচেয়ে ভাল মানুষদের একজন আর সেইসাথে আমার সবচেয়ে প্রিয় বড়ভাই। কিউ কে হলের ৩৬৫ নম্বর রুমটাতে বেন্সনের প্যাকেট শেষ হয়ে যেত কিন্তু শাবু ভাই, মাসুদ ভাই, নাজমুল ভাই, তাপসদা আর আমাদের আড্ডা শেষ হত না। তাদের সাথে পরিচয়টা ভয়াঙ্ক মজার ঘটনা।
ইন্টার ডিপার্টমেন্ট ডিবেট হচ্ছিল আমাদের ফ্রেশারদের নিয়ে, আমার মত অগাও কেমনে কেমনে জানি ভাল করে ফেলছে, সবাই কনগ্রাটস জানাচ্ছে,আর আমিতো রীতিমত আনন্দে উল্লম্ফ। দেখি তাপসদা বিড়ি টানটে টানটে ব্যানার খুলছে, আমি নিএজ থেকে গিয়ে হাত লাগালাম, কিছুক্ষন পর একটু সহজ হতেই বলে ফেললাম, দাদা একলাই খাবা??? বোঝেন কতবড় বেয়াদপ ছিলাম , খাড়ান, কাহিনী এইখানে শেষ না মাত্রতো শুরু............... মুহ
>) াহা .
দাদা পুরো প্যাকেটটাই হাসি মুখে দিয়া দিল, বেয়াদপী ক্ষমা কইরা, আমি আর দূর্জয় মনের আনন্দে প্যাকেট নিয়া নিচে আসলাম, বিড়ী ধরাইতে যামু দেখি কারো কাছেই ম্যাচ নাই, কি করা যায়? মাথায় শয়তান চাপছিল মনে হয়। গেলাম আবার উপরে। দাদাকে বল্লাম, দাদা একটা কৌতুক শুনবা, আমার তাপসদা খুব কোতুহলো হাসি হাসি মুখ নিয়া বললো, বল।
আমি শুরু করলাম, একদিন এক বাঙ্গালী, এক আমেরিকান আর এক বৃটিশ কে ধরে আনা হইলো, তাদের প্রত্যেককে একটা রুমের ভিতর ১০ বছরের জন্য ধুকায়ে দেয়া হবে, তারা যে কোন একটা জিনিস যত খুশি নিয়ে যেতে পারবে। তো আমেরিকানটা তার জাতস্বভাব অনুযায়ী এক গন্ডা মেয়ে চাইল, তাদের নিয়ে সে হেলতে দুলতে ১০ বছরের জন্য সুমে ঢুকে গেল। বৃটিশ আবার পড়ছে খুব জ্ঞান তাপস, সে হাজার হাজার বইয়ের এক লিষ্টি ধরায়া দিল, সেই বই আসলো সেও সেগুলো নিয়ে মনের আনন্দে নিরুপদ্রব জ্ঞান চর্চার জন্য রুমের ভেতর ঢুকে গেল। এইবার আসলো বাঙালির পালা। তারে জিজ্ঞেস করা হইল সে কি চায়, সে নির্বিকার ভাবে রীতিমত ১০০০ কার্টন বেনসন চায়া বসলো, তো তাকেও তা দেয়া হইল। সে কার্টন নিয়া বিড়ি খাওয়ার আনন্দে রুমের ভেতর চলে গেল। রুমগুলো তারপর ১০ বছরের জন্য সিলগালা।
তো দেখতে দেখতে ১০ বছর শেষ হয়ে গেল। বৃটিশ বাইর হলো সবার আগে, বিশাল জ্ঞানী চেহারা নিয়া, একগাল দাড়ি আর উকুন ভর্তি চুল চুলকাইতে চুলকাইতে, বোঝাই যাচ্ছিল জ্ঞান চর্চা বেশ ভালোই হয়েছে। এরপর বের হল আমেরিকান, ধুকছিলো ৫ জন নিয়া কিন্তু মাশাল্লাহ বের হইছে ৫০ জন নিয়া। সবার শেষে বের হল বাঙালি।
মুখচোখ লাল, বিড়ি ফুকতে ফুকতে মনে হইলো জীবন ফানাফানা করে দিছে। বের হয়াই গালি "শালার পুত, বেকুবের দল বিড়ি দিছস ম্যাচ দেস নাই কেন?" কয় কি হালায়! / হাসতে হাসতে শ্যাষ হৈয়া গেলাম হাসতে হাসতে পইড়াই গেলাম গা হাসতে হাসতে নাইক্কা হাহাহা ।
গল্প শেষ হল, তাপসদা কিছুক্ষন আমার দিকে চেয়ে থেকে একটা কাষ্ঠ হাসি হেসে পকেট থেকে ম্যাচটা বের করে দিলো।
)
>)
এই হল আমার তাপসদা, তারপর আর কোন পর নাই। অসংখ্য রাত আমাদের জীবন দর্শন কবিতা দেশ কতকিছু নিয়ে যে গল্প হত, কিউ কে হলের ছাদটার মত প্রিয় আর কোন জায়গাই আমার ছিল না হয়ত। তাপসদা দু বছর হয় লন্ডন, কবে আসবে জানিনা, ফেরার অপেক্ষায় আছি, আসলেই দাদা তোমার সাথে আবার আড্ডা হবে, আমি তুমি নাজমুল ভাই, রকিব ভাই পরিতোষ (আমরা ডাকতাম পরি) আর মিথুন মিলে সেই জমজমাট বিনোদন আড্ডা
এবিতে স্বাগতম। কিছু টাইপো আছে ঠিক করে দিলে পাঠকদের পড়তে আরাম হবে। আরো একটু ধীরে লিখলে পোষ্টটা আরো জমতো, আমার ধারনা অবশ্য।
ভালো থাকবেন।
ধন্যবাদ, অনেকদিন আগেই রেজিষ্ট্রি করেছিলাম কিন্তু লেখা হচ্ছিল না, আজকে পোষ্টালাম। আর টাইপো আসলে ঠিক করার সময় হয়নি। অফিসে কাজ ছিল না বলে বসে বসে একটানে লিখে ছেড়ে দিয়েছি। পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনে অক্কাল পক্ক ছিলেন, বুঝা যাইতেছে ।
জ্বি ভাই, পুরাই টসটসে পাকা।
এবিতে স্বাগতম
লেখাটা আরেকটু রয়েসয়ে লিখলে ভালো হতো।
যাই হোক পরেরবার হবে।
ধন্যবাদ, ইনশাল্লাহ সামনে রয়ে সয়ে লেখা হবে ক্ষন।
স্মৃতিচারণমূলক লেখা পড়ে ভাল্লাগলো। এবি'তে স্বাগতম।
আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমারো ভাল লাগলো
:\
স্মৃতিচারণ ভালো লেগেছে।
শুভেচ্ছা জানবেন।
ধন্যবাদ।
মডারেশনের খড়্গ তলে কারই ভালো লাগে না। তথাপি আমরা চাইনা কাউকে কষ্ট দিতে। কিন্তু এমন পীড়াদায়ক কাজটা বারবার আমাদের করতেই হয় আপনাদের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভুলের জন্য। একই সময় অন্য একটি ব্লগে আপনার লেখাটি প্রকাশ হওয়ায় লেখাটি প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে আপনার পাতায় রাখা হলো। আশা করছি নতুন নতুন লেখা দিয়ে আমরা বন্ধু'র বন্ধুদের সাথে কথোপকথন হবে।
আমারো ভাল্লাগলো না স্বাভাবিক ভাবে, তবে এই নিয়মটার কারনে হয়তো চাইলেও ওভাবে আর AB তে লেখা হবে না, ধন্যবাদ আপনাদেরকে নিয়মটি সম্পর্কে অবহিত করার জন্য এবং দুঃখিত আন্তরিকভাবেই আপনাদের নিয়মটা ভাঙ্গার জন্য। আশা করি কোন এক সময় AB 'র জন্য আলাদা ভাবে লিখব।
মন্তব্য করুন