কাপুরুষ - ০১
দূরে একটা গাঙচিল উড়ছে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে, একাকি-নিঃসঙ্গ। মাথার উপরের সূর্যের ঝলমলে আলোকরাশী চোখ ধাঁধিয়ে দিয়ে মুক্তার মত চিকচিক করছে পানিতে, চোখ ধরানো যাচ্ছেনা। প্রায় মিলিয়ে যাওয়া দুরত্বে কয়েকটা মাছধরা ট্রলার দেখা যাচ্ছে। ছোট ছোট ঢেউগুলো কূলে এসে আছড়ে পড়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। দুপুরের এই সময়টায় বীচে লোকজন কম থাকে বলে পরিবেশটা খুব শান্ত। আর কিছুক্ষন পরে এই শান্ত-স্নিগ্ধ ভাবটা আর থাকবেনা, একটানা বয়ে চলা বাতাসের সাথে সমুদ্রের পাড়ে ঠিক যেখানে ঢেউ এসে মিলিয়ে যায় সেখানে বসে এ’কথায় ভাবছিল রুদ্র।
গত রাতে ওরা পিকনিকে এসেছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। সহপাঠী আর শিক্ষকরা মিলিয়ে জনা পঞ্চাশেকের কম নয়। শিক্ষক যারা এসেছেন, প্রায় সবাই সপরিবারে। ভোরে সূর্যোদয় দেখে খানিকক্ষন ছোটাছুটি করে সবাই এদিক ওদিক দল বেধে ঘুরতে গেছে। রুদ্র সেই সকাল থেকেই বসে আছে সৈকতের এই নির্জন স্থানে। সমুদ্রের সাথে আত্নার মিতালী। সকাল থেকে খাওয়াও হয়নি তার। মাঝে একবার সভাপতি স্যার ফোন করে তাকে বীচের ফাকা স্থান খুজতে বলেছে, সমুদ্র স্নানের জন্য। কারন সাথে বেশ কিছু মেয়ে রয়েছে।
আধা ঘন্টা পরেই ওরা আসলো, দল বেধে হৈ হৈ করতে করতে। ছেলেরা দৌড় দিয়ে লাফিয়ে পড়লো জলধীর বুকে। মেয়েদেরও যে সে ইচ্ছা করেনি তা নয়। সাথে স্যার আর তাদের স্ত্রীরা না থাকলের ওরাও হয়তো দৌড় দেবার ইচ্ছাটা দমিয়ে রাখতোনা। রুদ্র বসেই ছিল। অনু স্যার আর তার স্ত্রী পাশ দিয়ে যাবার সময় তাকে ডাকলো-
কি নামবেনা সমুদ্রে ?
ঠিক এটাই চাচ্ছিল রুদ্র। তার ভিতরের প্রবল ইচ্ছাটাকে কেউ একটু উস্কে দিক। ধীরে ধীরে সেও নেমে গেল পানিতে, তবে সবার থেকে একটু দুরত্ব বজায় রেখে।
সমুদ্রের পানিতে মাতম তুলে সবাই লাফালাফি করছে। স্যার আর তাদের স্ত্রীরা একটু পাশে সরে গিয়েছে এদের তান্ডবে। আজ যেন সবাই শিশুর মত আচরন করছে। মেয়েদের সাখে পাকামিও চলছে সমানে। জলের তলে একটু আধটু ছোঁয়া খুব দোষের নয়। একটু দুরে পানির মধ্যে নোঙর করা নৌকার উপরে বসে ঢেউয়ে দুলতে দুলতে এইসব দেখছিল রুদ্র। প্রায় ঘন্টাখানেক পানিতে থাকার পরে সে নৌকায় উঠেছে। কিছুক্ষন পর এক স্যার জানালো সবাইকে সমুদ্রস্নান শেষ করতে।
সবার হুটোপুটিতে ওখানের পানি ঘোলা হয়ে গিয়েছিল, আর কূলের কাছে পানি একটু ঘোলা থাকে। তাই প্রায় সবাই একটু গভীরে সরে গিয়ে পরিস্কার পানিতে ডুব দিয়ে আসছিল। রুদ্র টুপ করে নৌকা থেকে পানিতে নামলো। সাতরে গিয়ে বেশ দুর থেকে পরিস্কার পানিতে গা ধুয়ে এলো। তীরে এসে সে দাড়িয়েছে মাত্র। আরশী ডাকলো তাকে-
রুদ্র, আমাকে একটু ঐ পরিস্কার পানিতে নিয়ে যাবি? আমি সাতার জানিনা।
না।
বেশ কড়া গলায় জবাব দিল রুদ্র। আরশী পায়ের কাছ থেকে বেশ খানিকটা বালি রুদ্রের গায়ে ছুড়ে দিয়ে বললো-
এবার?
চল।
বিরক্তির সুরে বলেই সামনে হাটলো রুদ্র।
হাটু পানি যেতেই আরশী বললো- আমার হাত ধরে নিয়ে চল, আমি সাতার জানিনা।
খানিকক্ষন চুপ করে থেকে আরশীর হাত ধরে গভীর পানিতে যেতে লাগলো রুদ্র। বুক সমান পানিতে এসে রুদ্র আরশীকে ডুব দিতে বললো। আরশী আরও গভীরে যেতে বললো। গলা পানিতে দাড়িয়ে আরশী আর রুদ্র। তীর থেকে বেশ দুরে। আরশী আরো গভীরে যেতে চাই। সে সাতার জানে বলে প্রতিবাদ জানিয়েছে রুদ্র। আরশী বলেছে-
আমাকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে যা।
আরশীর মুখের ভাব বদলে গেছে। তার সব সময়ের সরল হাঁসি ঠিকই ঝুলে আছে ঠোটে। কিন্তু তার চেহারায় তার সরলতা ছাপিয়ে যেন আর কিছু প্রকাশ করছে। পানির নিচেই রুদ্রের দুই হাত শক্ত করে ধরে আছে সে। ধীরে ধীরে সে রুদ্রের বুকের কাছে সরে এসেছে। সরে যেতে চাইলে আরশী দুইহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রুদ্রকে। বেশ কসরত করে তাকে সরালো রুদ্র।
কাচের মত সচ্ছ পানিতে এই প্রথম আরশীর দিকে তাকালো রুদ্র। সাপের মত আকাবাকা দেহের কোমর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। তার কাচা সোনা রাঙা শরীরের আভা পোশাকে ঢাকতে পারছেনা। পানিতে ভেজার কারনে তার পোশাক ভেদ করে তার গুপ্ত যৌবন উকি ঝুকি না দিয়ে নিলজ্জর মত আত্নপ্রকাশ করতে বাকি রাখেনি কণা পরিমান।
কূলের সবাই শুকনো কাপড়ে শরীর মোছায় ব্যস্ত। কেউ কেউ হোটেলে ফিরে গেছে। এদিকে কারও খেয়াল নেই। আরশী একবার ওদিকে তাকিয়ে দুম করে রুদ্রকে জড়িয়ে ধরেই ঠোট উচিয়ে বললো- একটা কিস কর। আরশীর চোখে-মুখে কামনার বিষবাষ্প বইছে। নির্লিপ্তভাবে রুদ্র কিছুক্ষন আরশীর দিকে চেয়ে থাকলো। আরশী চোখ বুজে আছে।
ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে আরশী। চেহারা, ফিগার আর স্মার্টনেসে তাকে হারাতে পারে এমন মেয়ে ক্যাম্পাসে খুব কমই আছে। ছাত্রীও বেশ ভালো। সবসময় তার মুখে একটা সরল হাঁসি ঝুলে থাকে। ঐ হাসিঁতে যে কেউ তার প্রেমে পড়ে যায়। অসংখ্য প্রেম প্রস্তাব সে ছুড়ে ফেলেছে। রুদ্রের সাথে তার প্রমের সম্পর্ক নয়। রুদ্র ক্লাসের প্রথম সারির ছাত্র নয় বরং শেষ সারিই তার বেশি পছন্দের। আরশীর সাথে সে ক্লাসের আর পাঁচটা মেয়ের মতই মিশেছে। কোন বিশেষত্ব নেই। আরশী তার প্রতি দুর্বল কিনা তা কোনদিন ভেবে দেখেনি রুদ্র।
মূহুর্তে এইগুলো ভাবলো রুদ্র। বাহুর মধ্যে আরশী, একটু ঠোট ঝোকালেই চুম্বন। আরশির অবস্থা তখন- “তুমি পা ডোবালেই আমি নাইতে নামি”। মানুষ প্রকৃতির বিশালতার সামনে দাড়ালে আচরন বদলে যায়। আরশীরও তাই হয়েছে।
রণে ভঙ্গ দিলো রুদ্র। আরশী সাতার জানেনা জেনেও নিঃশব্দে আরশীকে ছেড়ে দিয়ে কূলে উঠে আসলো রুদ্র। একবারও পেছনে ফিরে চায়নি সে। সোজা সৈকত বেয়ে হাটতে লাগলো। গায়ে ভেজা টি-শার্ট আর পরনে ভেজা ট্রাউজার, গন্তব্য অজানা।





রুদ্র আরেকজনের হিরুর নাম। লালমোহন গাঙ্গুলী ওরফে জটায়ুর গুইন্দা হিরু প্রখর রুদ্র
নাম বদলানি হইপে না। বহুত আলসেমী কইরা লেখচি। নাম বদলানির খাটুনি করতারবোনা
মাগার পানিতে ফেলে দিয়া গেল কেন ?
চিন্তাইলাম।
কবি ওখানেই নীরব !
ফেলে দিয়ে চলে গেলো!!!! ব্যাটা ছাগল।
দুই জনেই রুদ্র। আজকাল কি এ নামটা চালু নাকি?
আসলে লেখার সময় এই নামটাই মনে আসলো। রুদ্র নামে আর কেউ লেখে ফেলেছে সেটা আগে জানতাম না। তবে মেয়ের নাম "আরশী" দিয়েছি অনেকক্ষন ভেবে। আর কোন নাম পছন্দ হয়নি। হা হা হা...........
ফেলে দিয়ে চলে গেলো!!!! ব্যাটা ছাগল।
====================
আসলেই ব্যাটা ছাগল। সাথে গরুও !!!
আরশী ম্যাডাম ভুল নম্বর এ ডায়াল করেছেন...রুদ্র সাহেবের মনে হয় আগে থেকেই বালিকাবন্ধু আছে...নয়তো রুদ্র সাহেব বড়ই ভাল লোক ছিলেন......
যাই হোক তারপর...
বড়ই গিয়ানী মন্তব্য !!!
ধন্যবাদ
অনু স্যার আর তার স্ত্রী পাশ দিয়ে যাবার সময় তাকে ডাকলো-
কি নামবেনা সমুদ্রে ?
ঠিক এটাই চাচ্ছিল রুদ্র। তার ভিতরের প্রবল ইচ্ছাটাকে কেউ একটু উস্কে দিক।
.............................
তার মানে নায়কের আবার সাধিলে খাইবো টাইপের ব্যাপার আছে। আরশী তারে সঠিকভাবে উস্কানি দিতে পারে নাই। শাস্তি হিসেবে পরের পর্বে তারে হিমালয়ে সাধু বানাইয়া পাঠাইয়া দেওয়ার দাবি জানাই, যাতে ভয়ে নামতে না পারে।
..........................................
প্লট দারুণ, বিন্যাসও। শুধু চোখে লাগলো তীরের বদলে কূলের ব্যবহার। নদীর সঙ্গে যা যায়, সাগরে কেনো জানি বেশ বেমানান।
দারুণ মন্তব্য। "সমুদ্রের পানিতে মাতম তুলে সবাই লাফালাফি করছে"--- মাতম শব্দটার সঙ্গে মনে হয় শোকের প্রকাশ জড়িত। আনন্দের সঙ্গে কলরব বা কোলাহলই ভালো যায়।
==============================
চলুক।
অমি ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আপনার উপদেশগুলো নেক্সট টাইম মাথায় রাখবো।
হাঃহাঃহাঃ দারুন শুরুয়াত ।

আমার ডিপার্ট্মেন্ট অন্যডা।
)
প্রেম কাহিনী সবার হাতে উঠে না। আপনের হাতে উঠবে মনয়।
(আমি হালায় বহুতবার টেরাই দিয়া শেষে ক্ষেন্ত দিছি।
তয় পরথম পর্বেই মুনইতেছে কাহিনী জম্পে
পরের পর্বের অপেক্ষায় লাইলাইলাম
ইহা প্রমের কাহিনী নয়। জাষ্ট রুদ্রের কাপুরুষতার ধারাবাহিক মাত্র
প্রেম স্পন্দিত বুকে মনে হয় আমিই রুদ্র ;)
নুশেরান্টি প্রেমের জায়গায় ভালবাসা বানাইতে কৈতারে ;)
এই গল্পে শব্দটা প্রেমপিরিতি টাইপের না হয়ে হবে "প্রতিরোধ"
হাহাহাহাহা
হোহোহোহোহো
আপ্নে আসলেই বস :)
রুদ্র হইতে বেশ খানিক বলদ হইতে হয়। আপনি হইতারলে টিরাই করেন।
এই ঘটনা কি আরোও সামনে টানার দরকার আছে?
তার চেয়ে রুদ্রের জীবনের নানান কাপুরুষতার সিরিজ বানাই এটা। কি বলেন আপনারা?
এটা সামনে টানা বা প্রতি খন্ডে একটা কাপুরুষতা। আপনাদের যা মর্জি ......
পিয়াল ভাইর মন্তব্যে ঝাঁঝা
মন্তব্য করুন