বিশদ বাঙলায় রবীন্দ্র সন্ধ্যা অতঃপর রবীন্দ্র ভাবনা...
১
রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত জম্মবর্ষ উপলখ্যে সম্প্রতি বিশদ বাঙলায় হয়ে গেল অসাধারন এক সংগীতানুষ্ঠান। পরম দ্ক্ষতায় রবীন্দ্রশিল্পী মার্গারেট বেবী সাহা ও আইরিন সাহা দুই বোন রবীন্দ্রগানকে উপস্থাপন করলেন অন্য উচ্চতায়। শিল্প সংস্কৃতিকে একদম সামনে থেকে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে বিশদ বাঙলাকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ২৫ জনের মত শ্রোতার পুরো অনুষ্ঠানটির প্রত্যেকটি মূহুরর্তই ছিল মনমুগ্ধকর। মূলত সাধাসিধে আনুষ্ঠানিকতাই ছিল এর মূল আকর্ষন। কোন ধরনের ভারী বাদ্যযন্ত্র ছিল না কিংবা ছিল না শিল্পী শ্রোতার মধ্যে দূরুত্বের ব্যবধান। শুধু মাত্র তবলা আর হারমোনিয়ামে সূরের মূর্ছনায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন দীর্ঘদিন ধরে রবীন্দ্রসংঙ্গীতে সাধনা করে আসা দুই বোন। শ্রোতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুই বিদেশী রবীন্দ্র ভক্তও। অলিয়েসঁ ফ্রাঁসেজ এর ডিরেক্টর স্যামুয়েল বেনেথ ও অস্ট্রেলিয়ান এমেলি প্লাংকেট। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করছিলেন "বিশদ বাঙলার" আলম খোরশেদ ভাই। আলম ভাই বার বার বলছিলেন, শিল্পী মার্গারেট বেবী সাহা ও আইরিন সাহা এর নিবৃত্তে রবীন্দ্র সাধনা করে যাওয়ার কথা। গানের অনুষ্ঠানটি শেষে মনে হয়েছে, উনি বাড়িয়ে কিছু বলেননি।
রবীন্দ্রনাথ শ্রুতি মধুর বাংলা ভাষার বর্নমালা ব্যবহার করে রচনা করেছেন তার সৃষ্টি গুলো। হয়তবা রবীন্দ্রনাথের গানের লিরিক ও সুরের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে মানুষের মৌলিক অনুভূতির যোগসূত্র। ঠিক মত প্রচার প্রসার হলে রবীন্দ্রনাথের গান গুলো হতে পারে পৃথিবীর সঙ্গীত। মার্গারেট বেবী সাহা ও আইরিন সাহা এর মত শিল্পীদের শুধু মাত্র কন্ঠ সাধনার মাধ্যমে রবীন্দ্রগানের উপস্থাপনার দক্ষতা দেখলে এই ধারনা সাবারই কাছে যৌক্তিক মনে হবে।
বিশদ বাঙলায় সংঙ্গীতানুষ্ঠানে বাম থেকে শাখওয়াত, আইরিন সাহা ও মার্গারেট বেবী সাহা
শিল্পীদের গান চয়নের ব্যাপার গুলো মধ্যে হয়ত বিশেষ্যত্ব থাকে। কারন অনুষ্ঠানের সব গানই মনে হয়েছে খুবই জীবন্ত ও ধারাবাহিক আর বৈচিত্রে ভরপুর। দর্শকের অনুরোধের কিছু গানও গেয়ে শুনান শিল্পীরা। স্যামুলে বেনেথ অনুরোধ করেন তার প্রিয় "আজ ফাগুন লেগেছে বনে বনে" গানটির জন্য। মোটামুটি নিচের গান গুলো গেয়ে শুনিয়েছেন তারা।
# ওগো, তোমার চক্ষু দিয়ে মেলে সত্য দৃষ্টি (প্রেম)
# বাইরের ভুল **
# না চাহিলে যারে পাওয়া যায়(প্রেম)
# আহা তোমার সাথে প্রানে **
# তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে(পূজা)
# আজ সবার রঙে রঙ মেশাতে হবে **
# দুই হাতের কালে **
# ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে (প্রকৃতি|ফাল্গুনী)
# একি এ সুন্দর শোভা(পূজা)
# মধু-গন্ধে-ভরা মৃদু-স্নিগ্ধছায়া নীপ-কুঞ্জতলে(প্রকৃতি)
# ও অকূলের কূল(পূজা)
# আমায় দাও গো বলে(পূজা)
# তিমিরো নিবিড়ো রাতে**
# চিরদিন কেন পাই না**
# সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে(পূজা ও প্রার্থনা)
# হে ক্ষণিকের অতিথি(প্রেম)
# তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম(প্রেম)
# পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে(প্রকৃতি)
# যে পথ দিয়ে গেলি সেই পথ এখন ভুলে গেলিরে**
# কেমন করে আমায় বাঁধিবে যদি **
# আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে(পূজা)
২
রবীন্দ্রনাথের লেখা নিয়ে বলার মত জ্ঞান গভীরতা ব্যাক্তিগত ভাবে আমার নাই। তবে খোলা চোখে তার লেখার মধ্যে সুদূর ভবিষ্যত নিয়ে ইংঙ্গিত গুলো চোখে পড়ার মত। যেমন....
"আজি হতে শতবর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি
কৌতূহলভরে--
আজি হতে শতবর্ষ পরে
...................................."
যদিও রবীন্দ্রনাথের সময়ে কল্পবিজ্ঞান লেখার চর্চা তেমন হত না। হলে হয়ত রবীন্দ্রনাথের কোন সাইয়েন্স ফিকশন পেয়ে যেতাম। তার পরেও তার কবিতার দর্শন আর বর্তমানে প্রচলিত কল্পবিজ্ঞানের দর্শনের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নাই। আমার সাথে কেউ একমত হবে কিনা জানি না, শেষের কবিতার নিচের লেখাটি খুবই অবাক করার মত...
" কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও ?
তারি রথ নিত্যই উধাও
জাগাইছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন--
চক্র পিষ্ট আধাঁরের বক্ষ-ফাটা তারার ক্রন্দন।
ওগো বন্ধু,
সেই ধাবমান কাল
জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেলি তার জাল-
তুলে নিল দ্রুতরথে
দুঃসাহসী ভ্রমনের পথে
তোমা হতে বহু দূরে।
মনে হয় অজস্র মৃত্যুরে
পার হয়ে আসিলাম
আজি নব প্রভাতের শিখর চূড়ায়;
রথের চঞ্চল বেগ হাওয়ায় উড়ায়
আমার পুরনো নাম।
ফিরিবার পথ নাহি;
দূর হতে যদি দেখ চাহি
পারিবে না চিনিতে আমায়।
হে বন্ধু, বিদায়।
.............."
লাইন গুলো একটু অন্যভাবে দেখলে কবিতাটি অনেকটা কল্পকাহিনীই হয়ে যায়। যেমন, চক্র পিষ্ট আধাঁরের বক্ষ-ফাটা তারা আসলে কৃষ্ণ গহবর। এই বক্ষ-ফাটা তারার আসেপাশের সময়ের ধ্বনি আমাদের পরিচিত সময়ের মত না। হয়তবা কোন দ্রুত মহাকাশযানকে তুলে নিয়েছে কৃষ্ণ গহবরের আকর্ষনের মায়া। এর মধ্যে সময়কে এতই শ্লথ মনে হবে অজস্র মৃত্যুকে পর করে আসার অভিজ্ঞতার মত। আকর্ষনের সেই মায়া থেকে ফিরে আসার সম্ভবনা সামান্যই। তাই বন্ধুকে বিদায় !
সুনীল চন্দ্র সরকারকে একটি চিঠির উত্তরে রবীন্দ্রনাথের লেখা কিছু অদ্ভুত তথ্য আছে...
"....আমাদের বাইরে বিশ্বপ্রকৃতির একটি চিরন্তনী ধারা আছে, সে আপন সূর্য-চন্দ্র আলো-আধাঁর নিয়ে সর্বজনের সর্বকালের। জ্যোতিষ্ক-লোকের ছায়া দোলে তার ঝর্ণার ছন্দে। জীবনে কোন বিপুল প্রেমের আনন্দে এমন একটা পরম মুহূর্তে আসতে পারে যখন আমার চৈত্যন্যের নিবিড়তা আপনাকে অসীমের মধ্যে উপলব্ধি করে-তখন বিশ্বের নিত্য উৎসবের সঙ্গে মানবচিত্তের উৎসব মিলিত হয়ে যায়, তখন বিশ্বের বানী তারই বানী হয়ে উঠে..."
সম্ভবত সময় ফ্রেমের উর্ধ্ব উঠে যারা দেখেন তাদের কাছে মহাবিশ্ব কিংবা মানুষ ভিন্ন কিছু নয়। মজার ব্যাপার হল তারা আকারে ইঙ্গিতে বলতে ভালোবাসেন। কেউ হয়ত গনিতের ভাষার আশ্রয় নেয় কেউ হয়ত কবিতার ভাষার। এরাই আসলে ভবিষ্যতের মানুষ!
বাহ্ দারুণ করে বলেছেন তো।
চমৎকৃত হলাম...
অনেক দিন পর আপনাকে পাওয়া গেল...
নিয়মিত চাই
দারুণ লিখেছেন!
কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও নিয়ে পরের বিশ্লেষণটা কি আপনার? যদি তাই হয় তবে মুগ্ধতা রেখে গেলাম। এবং রবীন্দ্রনাথের কর্ম নিয়ে আরো লেখা পড়ার প্রত্যাশা রাখলাম।
অনেকদিন পর এলেন দারুণ একটা লেখা নিয়ে। নিয়মিত লিখেন।
এবার চট্টগ্রাম যেয়ে বিশদ বাংলায় যাওয়ার খুব ইচ্ছা হয়েছিল। যাওয়া হলো না, কেবল রাস্তার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম।
@মীর ভাই__তাই ??
ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
@টুটুল ভাই__আসলেই চমৎকৃত হওয়ার মত গেয়েছেন তারা। অনিয়মিত হওয়াই আমার নিয়ম কিভাবে নিয়মিত হই। সত্যি কথা বলতে মাথার মধ্যে আইডিয়া কমে গেছে, লিখা আর হয়না
তবে মনে রাখার জন্য ধন্যবাদ
ভালো থাকুন।
@লীনা আপু__হ্যাঁ, বিশ্লেষনটা আমার। এইটা লিখে ভয়ের মধ্যে ছিলাম, কেউ না আবার অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী বলে বসে
আপনার মুগ্ধতায় আসস্ত্ব হলাম
রবীন্দ্র কর্ম নিয়ে খুবই কম জানি...দেখি সামনে এমন কিছু চোখে পড়লে নিজের মত করে কিছু ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে দিব
ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।
@জয়িতা আপু__ভালো কিছু মাথায় আসলে লেখার চেষ্টা থাকবে। মনে রেখেছেন বলে অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
@মাসুম ভাই__ইচ্ছে থাকলে উপায়! এইবার না হয় রাস্তাটা চিনলেন, সামনে কোন এক সময় ঘুরে আসবেন
ভালো থাকুন।
দারুণ লিখেছেন! মুগ্ধতা রেখে গেলাম।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য। ভালো থাকুন।
মন্তব্য করুন