ইউজার লগইন

গানের লিরিক এবং একটি বেনামী চিরকূট

কলেজ লাইফে থাকতাম মফস্বলে কলেজের পাশেই টিচার জোনে। কলোনীটার নাম পড়ে গিয়েছিল 'প্রফেসর কলোনী'। আর কলোনীর শেষ প্রান্তেই ছিল 'মেয়েদের হোস্টেল'। আহা মধু মধু! কত চাতক পাখির বর্নিল উপস্থিতি ছিল ঐ কলোনীর প্রবেশ মুখে। আমার মত হতচ্ছাড়া ঐ জোনে ঢুকে পড়েছিল কিছু 'গুড বয়' দোস্তের বদৌলতে। কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল নতুন একটা বাড়ী করেছেন কলোনীতে। অথচ ঐ বাড়ীর টোটাল প্ল্যানটা এত বিশ্রি হয়েছিল যে,কোন ফ্যামিলি ভাড়া থাকতে চাইতো না। এই সুযোগে কয়েকজন গুড স্টুডেন্ট ভাল রেজাল্ট করার আশ্বাসে কিছু শর্তাবলীর মাধ্যমে ঐ 'অকেজো' বাড়ীটা ভাড়া নিয়েছিল। পাড়ার 'রেন্ডম বয়েজ' একবার উদ্যোগ নিলো তারা একটা সাময়িকী বের করবে। আমার তখন জাতীয় পত্রিকার দু'একটা উইক এ্যান্ড ম্যাগাজিনে ছাঁইপাশ বদমায়েশি লেখা ছাপা হয়েছিল। আর 'রেন্ডম বয়েজ' সে খবর পেয়ে তাদের জন্য লেখা দিতে অনুরোধ করলো। আমিও অনুরোধে ঢেঁকি গিলে বসে পড়লাম কিছু লেখার জন্য। শেষতক কিছু না লিখতে পেরে একটা গানের লিরিক (?) লিখে দিলাম। লিরিকটা ছিল এ রকমঃ

রাতের আছে চন্দ্র-তারা

ফুলের আছে মৌ

নদীর বুকে মিটমিট আলো

ছোট ছোট ঢেউ

আমি বন্ধু একলা থাকি

আমার নাইতো কেউ।

দিঘীর জলে দুষ্টু কইন্যা

মারে মাটির ঢিল

আমার বুকের দরজায় বন্ধু

বারোমাসি খিল

কেউতো কাছে এসে

একটু ভালোবেসে

বলেনাতো সোহাগ করে

হবো তোমার বউ।

ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে আমি

কত স্বপ্ন ভাবি

রুপের কইন্যা কাছে আসি

করবে আমায় দাবি

আমার স্বপ্ন ভেঙে

উঠে দেখি জেগে

ফাটা কপাল ফাটা-ই রইলো

আসলো নাতো কেউ।

তো,ঐ সাময়িকী প্রকাশের পর 'রেন্ডম বয়েজ' কলেজ ক্যাম্পাসে সেগুলো বিতরন করেছিল। আমার লিরিক পড়ে অনেকেই পিঠ চাপড়ে দিয়েছিল। আর যারা পিঠ চাপড়াতে পারেনি, তারা দুর থেকে 'মিটমিট' হেসেছিল। আমার পিত্তি জ্বলে যেত। কি ধরনের হাসি রে বাবা! ভালো না মন্দ!
যাহোক,ক'দিন পরে আমার কাছে বেনামী একটা চিঠি এলো। চিঠিটা রিসিভ করেছিল আমার আরেক বন্ধু। ঐটাকে চিঠি না বলে 'চিরকুট' বলাই যৌক্তিক। যাক,চিরকুটটা হাতে পেয়ে আমি মোটামুটি আশ্চর্য! তাতে কোন নাম-ঠিকানা ছিল না। শুধু লিখা ছিলঃ

'এতদিন তোমাকে হাব্লাকান্তই ভাবছি। তুমি তো বেশ লেখো! শুভেচ্ছা জেনো-খারাপ ছাত্রী' ।

আমারতো মোটামুটি ভিতরের সব কল-কব্জা স্থির! কে এই খারাপ ছাত্রী! এমন কাউকে তো আলাদা করে জানিনা! ক্লাসের মোটামুটি বেশিরভাগ সুন্দরীদের দেখছি ছাত্রী হিসেবে নড়বড়ে। কিন্তু,তাদের মধ্যে এই বিশেষ খারাপ ছাত্রীটা যে কে! 'ছাত্রী হোস্টেলের মেয়েরা যখন সামনে দিয়ে যায়,তাদের মধ্যে নওশাবার কথা ভাবি,টুম্পার কথা ভাবী। আবার প্রফেসরদের মেয়ে রুবি,ত্বরীর কথাও ভাবি। শেষে কূল-কিনারা করতে না পেরে হতাশ হয়ে 'চাঁদমুখো' হয়ে থাকা শুরু করলাম। আর বন্ধুরাও চান্সে হোস্টেলের সম্ভাব্য সব মেয়ের লিস্ট ঝোলাতে লাগল। জানিস, রুমা না সেদিন তোর খোঁজ নিলো। বই-টই আনলি নাকি? না তোর ঐ কোবতে জের ধরে। একজন বললো।
আরেকজন ইঙিত দিল-মনে হয় পাখি,ঐ যে কালো বোরকা পরা ইত্যাদি ইত্যাদি।

............................
অনেকদিন পরে কোন এক চাঁদনী রাতে কলোনীর পাশের শান বাঁধানো পুকুর ঘাটে বসে ছিলাম 'চাঁদমুখো' হয়ে। তখন গল্পের ছলে বেরিয়ে পড়লো আমাদের বন্ধু নোমানের ষড়যন্ত্রের স্বীকার আমি। খাটাশ!!!

তারপর তাকে যে কিলিয়ে ভূত বানিয়েছিলাম,এখনো প্রফেসর কলোনীর আশপাশে সেই ভূত স্মৃতি হয়ে ঘোরাফেরা করে।

পোস্টটি ১০ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

নুশেরা's picture


হায় হায়, বন্ধু বিভীষণ! Sad

ভাঙ্গন's picture


হাহাহা

হ্যাঁ,বন্ধু বিভীষণ!

 কেমন আছেন আপনি? ভাল আছেন আশা করছি!

তানভীর আযাদ's picture


দারুন।

ভাঙ্গন's picture


ধন্যবাদ রইলো তানভীর আযাদ।

ভাঙ্গন's picture


হেই তানভীর আযাদ।

শুভ  কামনাসহ!Smile

আবদুর রাজ্জাক শিপন's picture


হা হা হা !
ভালই বোকা বানাইছে আপনারে !

ভাঙ্গন's picture


আরাশি ভাই, মেলায় এখনো ঢুঁ মারতে পারলাম না।

চন্দ্রাবতীর সাথে সাক্ষাতো হৈতাছে না। বিরহে কাতর:)

আবদুর রাজ্জাক শিপন's picture


জলদি পইড়া একটা রিভিউ দিয়ালান !

তানবীরা's picture


আমার ভাই এটা এম এস এন যুগে খুব করতো। বন্ধুদের সাথে লাইভ আড্ডা দিয়ে তাদের মনোভাব বুঝে ফেইক মেইল আইডি বানিয়ে মেইল দিতো, চ্যাট রুমে নিকে নিয়ে যেয়ে মেয়ে হয়ে আপন বন্ধুদের সাথে ফেক চ্যাট করতো।

১০

ভাঙ্গন's picture


আমিও ফেইকের কবলে,তানবীরা!Smile

১১

বাতিঘর's picture


পড়ে ব্যাপক মজা পাইছি। এতো কম লেখলে চলেনি মিয়াভাই(আপনেদি আমারেও ডিফিট দিসেন পুষ্টের ব্যাপারে মাইর) ? আপনেগের মতো লেখতারলে ফাডাইলাইতাম ব্লগ ব্লুগ গুল্লি গুল্লি একটা চমৎকার কবিতা চাই পরবর্তী পোষ্টে-বুচ্ছেন(পমিজ, কবিতার ভুল ধরতে গিয়া নিজেই ধরা খামুনা টিসু) ? কোক খান আর হুলস্হূল রকমের ভালো থাকেন। হুক্কা

১২

ভাঙ্গন's picture


হেই,আপনাকে পেলে অন-সুইচড' হই। আপিন অনেক উইটি Smile

দূর দ্বীপের দিকদর্শী বাতিঘর! কবিতা লিখবো,অবশ্যই:)

১৩

নীড় সন্ধানী's picture


Laughing out loud Laughing out loud Laughing out loud Laughing out loud Laughing out loud Laughing out loud Laughing out loud Laughing out loud
চরম ধরা, চরম মজাদার স্মৃতি Glasses

১৪

ভাঙ্গন's picture


ভালো থাকা হোক ,নীড় খুঁজে পান-এই কামনায় নীড় সন্ধানী!Smile

১৫

উলটচন্ডাল's picture


Rolling On The Floor

জটিল ধরা খাইসেন

১৬

ভাঙ্গন's picture


হা হা হা

১৭

মীর's picture


দারুণ! আপনের কাছ থেকে মারাত্মক কিছু গল্পও আশা করছি কিন্তু।

১৮

ভাঙ্গন's picture


মারাত্মক গল্প! হা হা হা

অনেক শুভ কামনা থাকল আপনার জন্য। ছাঁইপাশ লিখার চেষ্টা করি শখের বশে আসলে। সময়টাই বিগ ফ্যাক্টররে ভাই।

এনিঅয়ে, আবারো শুভ কামনা।

১৯

নাজ's picture


ভাগন্তিস ভূত ভূত........

২০

ভাঙ্গন's picture


হ্যাঁ নাজ! স্মৃতিগুলো ভূত হয়ে মাঝে মাঝে আমার ঘাড় মটকে দেয়। Smile

২১

নাজমুল হুদা's picture


খুব সুন্দর করে বললেন তো! কবিতাটাও (নাকি লিরিক) সুন্দর। বন্ধু যেমন ভূত হয়ে আপনার ঘাড়ে ভর করেছিল, ঘাড় থেকে তা নামানোটা তার জন্য কষ্টের হলেও আমাদের চিত্তে আনন্দের সঞ্চার করেছে। আরও লিখুন, আমরা আমোদিত হই।

২২

রায়েহাত শুভ's picture


রুকু??? Sad

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.