প্রেম আসে ঝাঁকে ঝাঁকে।
প্রেম কারো কারো জীবনে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে। এক ঝাঁকের প্রেম অপেক্ষা করে আরেক ঝাঁক না আসা পর্যন্ত। এই পোস্ট এমনই এক মহান প্রেমিকের কয়েক খন্ড উত্থান পতনের কাহিনী।
৩০ জানুয়ারী ২০০৯, শুক্রবার
সপ্তাহ শেষে শুক্রবার ভোরে একটু বেশি ঘুমাই। ঘুম ভাঙ্গলো এক বন্ধু ডাক্তারের ফোনে।
>এক ঘন্টার মধ্যে পিজিতে আসো।
>>ক্যান? কি হইছে?
>>একটা মেয়ে দেখবা। আর এক ঘন্টা থাকবে। দেরি কইরো না।
বুঝলাম না মেয়ে কার জন্য দেখুম, তার জন্যে না আমার জন্যে! গেলাম পিজিতে। আমারে নিয়ে দোস্ত গেল এক মহিলা ডাক্তারের রুমে। আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে নিজে কয়েক প্রস্থ ইতং বিতং আজাইড়া আলাপ করলো। বেরিয়ে এসে গেলাম ডক্টরস ক্যান্টিনে। জানতে চাইলো কন্যা দেখে আমার কেমন লাগছে? আমি ইয়েস কার্ড দিলাম। কেন দোস্তর উচিৎ এই মেয়েটিকেই বিয়া করা আমি তারে বুঝাচ্ছি। হঠাৎ দোস্তর মোবাইলে ফোন।
>আমি ক্যান্টিনে। তুমি ক্যান্টিনে আসো।
কিছুক্ষন পর একটি মেয়ে এলো, নাম রীনা; ডাক্তারের কাজিন। তার সাথে বহু বছর আগে একবার পরিচয় হলেও ভুলে গেছিলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই রীনার সামনে ডাক্তার আমারে প্রস্তাব দিলোঃ
>তুমি রীনারে বিয়ে করো।
>>ক্যান? আমি বিয়া করুম ক্যান? ১৫ বছর প্রেম করলা তুমি আর এখন আমার ঘাড়ে গছাইতে চাও ক্যান?
বুঝলাম দোস্ত রীনারে কোথাও গছাইতে পারলে সে ডাক্তার শিমুরে বিয়া করবে।
পরদিন ৩১ জানুয়ারী
স্থান পিজি’র ক্যান্টিন।
ডাক্তারঃ আমি রীনারেই বিয়ে করবো।
>ক্যান? হঠাৎ এই ডিসিশন ক্যান?
>>ওর সাথে অনেকদিন কমিউনিকেশন ছিল না। কিন্তু ওর বোন পিজিতে আসার পর (রোগি হিসাবে) আবার কেমন কেমন লাগতেছে। আমি আসলে ওরে ভালোবাসি।
>তাইলে বিয়া কইরা ফালাও।
>>হুম। তুমি এক কাজ করো। ফেব্রুয়ারীর ৫ তারিখে কচুক্ষেত কাজীর অফিসে বিয়ের ব্যবস্থা করো।
>> ওক্কে, খাল্লাসসসস
৩রা ফেব্রুয়ারী, আবার ফোন।
>শোনো, বিয়েটা এখন হচ্ছে না। বাড়ির কেউ রাজি হবে না।
>> বাড়ির কেউ তো বিয়া করবে না। তুমি আর রীনা রাজি হইলেই তো হয়।
চার ফ্রেন্ড গেলাম জরুরী বৈঠকে।
ডাক্তারঃ শোনো, আমি ডিসিশন নিছি রীনারেই বিয়ে করবো। বাড়ির কথা অনেক শুনছি কিন্তু যারা আমার ভালোবাসারে দাম দেবে না, তাদেরকে আমার দরকার নেই। আমরা বিয়ে করবো ১৩ ফেব্রুয়ারী।
পরদিন গেলাম মিরপুর বেনারসী পল্লী। কেনা হলো জামদানী। আমি কানে কানে বললাম
>শাড়িটা তোমার কাছে নিয়ে যাও, কখন আবার ডিসিশন ক্যান্সেল করো কে জানে?
চোখ কটমট করে তাকাল। বললাম, ইটস ওকে ম্যান। তোমার সুখই আমার সুখ।
এয় কয়দিন বানিজ্য মেলা ও মার্কেটে ধুমায়া কেনাকাটা হলো। ডাক্তর ঘুরে রীনা লগে, আর আমি ঘুরি রীনার মামাতো বোনরে লগে, পুরাই মাগনা। ইয়ে দিল আশিকানা ইয়ে দিল.........
অবশেষে এলো সেই দিন, বিয়ের দিন ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০০৯, রোজ শুক্রবার।
সকালে ফোন, দোস্তর কন্ঠ> শোন, বিয়েটা তুমি ক্যান্সেল করে দাও।
>>ক্যান? আবার কি হইলো? আবার ক্যান্সেল ক্যান?
>আছে, ঝামেলা আছে। সকালে বড় ভাই ফোন করে বলছে, ‘তুই যদি ওই মেয়েরে বিয়ে করিস, তাইলে আমাদের সাথে তোর সম্পর্ক শেষ। মাও কান্নাকাটি করতেছে।
খোঁজ নিয়ে জানলাম রীনা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেছে। কোথায় গেছে কেউ জানে না। ফোন অফ। সন্ধায় অজানা এক নম্বর থেকে ফোন দিয়ে আমাকে পিজিতে যেতে বললো। যেয়ে দেখি রীনা ডাক্তারের পা জড়িয়ে কাঁদছে।
পরদিন ভ্যালেনটাইন্স ডেঃ সন্ধ্যায় জানলাম ডাক্তার সারাদিন সুপ্তি নামের একটি মেয়ের সাথে ডেটিং করেছে। সুপ্তি আমার বন্ধুর ছোট বোন এবং আমার ছোট ভাইয়ের বান্ধবী। তাই আগেই ডাক্তারকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তাহার রচনা করিল ধুমাইয়া প্রেমের ধ্রুপদী গাথা!
দিন কয়েক পরের কথা। হাকিম চত্ত্বর দিয়ে যাচ্ছি। দেখি ডাক্তার সুপ্তির সাথে আড্ডা দিতেছে। মেজাজ আর ধইরা রাখতে পারলাম না। বসলাম দুইজনের মাঝে। ডাক্তার এই জীবনে কতজনরে বিয়ের মূলা দেখাইয়া প্রেম করছে এবং পরে ভাইগা গেছে তার একখান নাতিদীর্ঘ ইতিহাস তুইল্যা ধরলাম। ডাক্তার আমার এহেন নিমকহারামি দেইখ্যা পরিপূর্ণ টাস্কিত হইয়া অফ থাকিলো। সুপ্তি ডাক্তার পাত্র হাত ফসকায়া যাওয়ায় মন খারাপ করে মনে মনে আমারে বকতে বকতে হলে ফিরলো । সেই রাতে ডাক্তার ফোন দিলো।
>তোমার সাথে তো আর বন্ধুত্ব রাখা যায় না। এইটা কি ঠিক কাজ করছো? তোমারে বন্ধু মনে করছিলাম কিন্তু তুমি আজ যা করলা তাতে আর সম্পর্ক রাখা যায় না।
১৪ বছরের বন্ধুত্বে ছেদ হইলো। এখন দেখা সাক্ষাত হইলে হাই হ্যালো পর্যন্ত শেষ।
মনের দুক্কে কোবতে লেখলাম
হায় রে কাল নাগিনী নারী
তোর লাগি বন্ধু গেল ছাড়ি।।
এক বছর পর। ফেব্রুয়ারী ১৩, ২০১০ শনিবার সন্ধ্যা।
শাহবাগ মোড়ে বন্ধু ডাক্তারের সাথে দেখা। সাথে অতীব সুন্দরী হিংসা জাগানিয়া এক নারী। দোস্তর কপাল দেইখা মেজাজ খারাপ হয়া গেল। একসাথে গেলাম নীলক্ষেত কয়েকটা বই কিনতে। কিছুক্ষন কয়জনে ঘুরলাম। খাইলাম। আবার শাহবাগ মোড়ে ফিরে এসে ডাক্তার মেয়েটিকে একটা রিক্সায় তুলে দিয়ে বিদায় দিচ্ছে
>মনে আছে তো, কাল কিন্তু স্পেশাল ডে। ওই শাড়িটা কিন্তু পড়ে আসবে।
মেজাজ টাওয়ারের উপ্রে দিয়া গেল।
সুন্দরীকে বিদায় দিয়ে দোস্ত আমাদের নিয়ে এলো পিজির বটতলায়। তিন দোস্ত বইসা আঙ্গুর খাইতেছি। হঠাৎ ডাক্তারের মোবাইলে ফোন। কোন একপর্যায়ে ডাক্তারের কন্ঠে শুনলাম
>ভাই, বয়স তো হলো। চাকরি পাইলাম, এফসিপিএস করলাম। এখন কন্যা টন্যা একটা দেখেন.....
বসন্ত আসতে তখনও কয়েক ঘন্টা বাকী। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে গুনতে থাকলাম জীবনে কতগুলো বসন্ত গেল.........
ছবি যুক্ত করতে পারলাম না। সো স্যাড!
এই লোক কী মানসিক রোগের ডাক্তার নাকি?
গাইনোকোলজিস্ট।
লেখকের সমস্যা কি? আঙ্গুর ফল দুস্প্রাপ্য ঃ( ?
মজা করলাম ভাই।
জ্বি ভ্রাতা, আঙ্গুর সর্বদাই দুষ্প্রাপ্য।
আপনেও লাইগা যান মিয়াভাই। কয়েকটা সিম্পল টেকনিক ফলো করলেই হল। (আমারে জিগাইয়েননা টেকনিক, আমি জানলে অন্যগ্রহে থাকতাম এতদিনে!
)
কইবেন না মানে? অবশ্যই টেকনিক কইতে হইবে; নইলে ব্লগ ছাইড়া যামুগা..।
এইটা আর কিছুনা, রাধারমনের গানের মত, প্রেম নিলো গো শ্যামের বাঁশি মন নিলো কালায়:D
লেখা মজার হৈছে। চালায়া যাও দু.স্ব।।
এই ব্লগ এত স্লো যে লেখে মজা নাই।
আপ্নের খবর কি?
তোমার বাসার ড্রয়িং রুমে যদি সোফা না থাকে তুমি কী তোমার আম্মারে বলো, আম্মা আব্বা ছুটি থেকে আসলে আব্বারে কই বসতে দিমু? আমাদের বাসায়তো সোফা নাই। নিজেদের বাসায় অনেক সমস্যা থাকে এইটা নিয়া আফসোস কইরা কাম কি, নিজেরা নিজেরা আছি এইটাইতো বেশ।
যদি হও সুজন, তেঁতুল পাতায় ন'জন।
বাই দ্য ওয়ে, তোমারে মনে হয় আগে আপনি বলতাম। অনুমতি নিয়া নিলাম। এবার থেকে তুমি বলবো।
আমার কোন খবর নাই। আমার খবর এখন আমার কাছেও এসে পৌঁছায়না।
আগেই 'তুমি' করে বলতেন, এখন 'আপনি' শুরু করেছেন.....
হাহাহহা। তুমি কয়েকবছরবপরপর যদি ফোন করো আমি কি ভুইল্যা যাইনা আগে তুমি না আপনি বলতাম
এইটাই বাস্তব। ভদ্রলোকের দাম নাই।
শ্লা'র জীবন!
আসলেই ভদ্রলোকের দাম নাই।
একটা কবিতা
"যে জন ভূবনে মনের হরষে করিছে লুলকবাজি
ইহধামে তাহার বেগম হৈতে কেহ নাহি হবে রাজি"
(শব্দার্থ: লুলক- লুল ফেলে যে পুরুষ)
মিছা কথা।
যে জন ভূবনে মনের হরষে করিছে লুলকবাজি
ইহধামে তাহার বেগম সব নারী হবে রাজি
জগত জুড়িয়া রঙিন চশমার মেলা
কাজে দেয় না খালি বিয়া করিবার বেলা
জটিলসসসসস
রঙিন চশমা ভালা পাই । প্রেম করার খায়েশ হয় মাঝে মাঝে......।
হালিম, মোহোনারে কিনতু কইয়া দিমু...
প্রেম করার খায়েশ হয় মাঝে মাঝে......।
ছি, আপ্নে এত্তো খ্রাপ?
ইয়ে শেষের পার্ট বোল্ড কইরা তো দিলেন ১২ তা বাজায়া!! পড়তে কষ্ট হয়!
ঠিক কইরা দিছি।
ডাক্তার তো প্রেমের ইসকুল খুলতে পারে একটা। আমরা নাহয় ছাত্রই হইতাম
জটিল কইচেন বস!
নজ্রুল ভাইয়ের লগে সহমত
আমিও সহমত।
মন্তব্য করুন