... প্রত্যাশা পূরনের সন্ধিক্ষনে দাড়িয়ে ...
ব্যালকনিতে দাড়িয়ে প্রতিদিন ছোটবেলার খেলার সাথীদের সাত সকালে কাধে স্পাইডারম্যান ব্যাগ ঝুলিয়ে যেতে দেখতে দেখতে মনে হতো , একদিন আমিও ওর মত স্কুলে ভর্তি হবো , একসাথে ক্লাস করবো , স্কুলে কত্ত আনন্দ করবো , বাসায় এসে হুমড়ী খেয়ে বাড়ীর কাজ শেষ করে খেলা করবো ... ঐ সাদা সার্ট আর নীল প্যান্টের স্কুল ড্রেসটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় ছিলো , অমন স্কুল ড্রেস পরবো বলে আবদার করতেই পরের দিন আব্বু অফিস থেকে ফেরার পথে আমার জন্য ঠিক ঐরকম ড্রেস কিনে এনেছিলেন ... সেই স্কুল ড্রেসটি আমার আজো পরা হয়নি ...
আবাহনী মোহামেডানের ফুটবল মানেই আমাদের বাড়ী মিনি স্টেডিয়াম হয়ে ওঠা ... সারাদিন আমি মোহামেডানের আর পাশের বাড়ীর বন্ধু মামুনের আবাহনীর ফ্ল্যাগ বানানো , লান্চ আওয়ারে আব্বু অফিস থেকে আগমন , আর খেলা শুরু হওয়ার আগেই আমাদের ড্রইংরুমের আনাচে কানাচে ভরে যাওয়া দুই দলের সাপোর্টার ... খেলা শুরুর আগে থেকে রাত অবধি আজকের ম্যাচ, আগের ম্যাচগুলোর পরিসংখ্যান আর ভবিষ্যতের রেজাল্ট নিয়ে তুমুল হট্টোগোল আর ডিনারে বসে আম্মুর রান্না করা ইয়াম্মী খাবার গুলো খেতে খেতে মনে হতো আহ ! ফুটবলার হতে পারলে না জানি কতই ভাল হতো ... কি মজা করে খেলতে পারতাম ... মনের এই গোপন ইচ্ছেটা বেশিদিন লুকিয়ে রাখতে পারিনি ... কথায় কথায় আম্মুকে জিনিসটা বলে দেয়ার পরের দিনই জার্সি সহ এ্যাডিডাস এর ফুটবল বাসায় হাজির হয়ে গিয়েছিলো ... সেদিন অনেক আয়োজন করে আব্বুর সাথে ফুটবলে পাম্প করিয়ে খেলার উপযুক্ত করে তোলা হয়েছিলো ... রাতে ঘুমোনোর সময় ও সেদিন আমি সারা রাত ফুটবল খেলেছিলাম ... কিন্তু আজো সেই জার্সি নতুনের মতই রয়ে গিয়েছে , আর ফুটবল আমার হাতে , কিন্তু এখনো এতে আমার একটা কিক ও দেয়া হলোনা ...
শীতের রাতে পাশের মাঠে এলাকার ছেলেরা কোর্ট কেটে , বাতি জ্বালিয়ে কুয়াশার চাদর ছিড়ে ব্যাডমিন্টন খেলতো ... ওদের খেলা দেখতে দেখতেই ব্যাডমিন্টনের সব নিয়ম কানুন শিখে ফেলেছিলাম , যেটুকু বুঝতাম না সেটা আব্বুর লাইব্রেরীতে থাকা খেলাধুলার আইনকানুন বইটি থেকে পড়ে বুঝার চেষ্টা করতাম ... আব্বুর র্যাকেট টা হাতে নিয়ে কতই না কসরত করেছি , কতভাবে স্ম্যাশ করা যায় সেটার প্র্যাকটিস করেছি, এই দেখে আব্বু একদিন তার অনেক শখের র্যাকেট টা আমার হাতে দিয়ে বললেন ... এটা আজকে থেকে তোমার ... র্যাকেট টা হাতে পেয়ে আমার কি আনন্দ, যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছি , মন চাইলো এক্ষুনি গিয়ে বাইরের মাঠের সবাইকে আব্বুর এই অনেক শখের জিনিসটা দেখিয়ে বলি ... দেখ সবাই এটা আমার র্যাকেট , আমি এটা দিয়ে আব্বুর মতই চ্যাম্পিয়ন হবো ... সেদিন থেকে আজ অবধি র্যাকেট টা আমার ঘরেই ঝুলছে ... কিন্তু এখনো আমার চ্যাম্পিয়ন হওয়া হলো না ...
মা বাবা রা তাদের সন্তানের কষ্ট টা ঠিকই টের পান, তাই বুঝি একদিন আব্বু বলেছিলেন , দেখ ... সব ঠিক হয়ে যাবে , তোমার সব স্বপ্ন পূরণ হবে ... তুমি স্কুলে যাবে, তুমি মস্ত বড় ফুটবলার হবে অথবা হবে ব্যাডমিন্টন চ্যাম্প .... কখনো মনোবল হারাবে , কখনো হার মানবে না , কখনো নিজেকে অসহায় মনে করবে না , মনে রাখবে ... আর কেউ না থাকুক আমরা দুজন তোমার সাথে আছি ... সবই বুঝি, কিন্তু কবে ? ... আর কতদিন আমাকে অপেক্ষা করতে হবে ? ... কবে শেষ হবে এই দুর্বিষহ "দু চাকার" জীবন ? ...
.
এটা কি গল্প না জীবনী?
খুবই ছুঁয়ে যাওয়া। আশাকরছি গল্প, গল্প আর গল্পই এটা।
ভালো থাকুন
গল্পটা অন্তুর না হলেও অন্য কারো নিশ্চয়ই ..
লেখা ভাল লাগল। কষ্ট পাওয়ার দিন ফুরোবে শিগগিরি।
শুভকামনা মন ছুয়ে গেল ...
বাস্তব গল্পের চেয়েও কঠিন, বাস্তব গল্পের চেয়েও সুন্দর । জীবন গল্পের মত নয়, জীবনের বাস্তবতা তা-ই, যা বাস্তব ।
অনন্ত দিগন্ত, শুভ কামনা ।
অসাধারণ বলেছেন হুদা ভাই।
আম্মা বলতেন "সিনেমা দেখার টাইম আছে!? জীবনটাই বড় সিনেমা।" আমাদের জীবনের কাছে গল্প সিনেমা তো নস্যি। পার্থক্য শুধু.. এই জীবন সিনেমার সব দৃশ্য দেখানো যায় না, সব সংলাপ বলা যায় না।
@ বকলম -- ঠিক বলেছেন আপনার আম্মু
একেবারে কঠিন সত্য কথাটি কি সুন্দর সহজ ভাষায় বলে দিলেন ...
বাহ্। দারুণ লিখেছেন।
অনেক শুভকামনা রইলো
সব ইচ্ছে পূরণ হোক , সব স্বপ্ন সত্যি হোক ।
তাই যেন হয়
প্রত্যাশা পূরণ হোক। ব্যাডমিন্টন খেলার প্রসঙ্গটা স্মৃতিকাতর করলো খুব।
অনেক শুভকামনা নুশেরাপু ...
মন্তব্য করুন