আলো আধারীতে ঢাকা সেই প্রিয় শহরটি
বিদেশের ঘড়িগুলো কি দেশের ঘড়ির চেয়ে বেশী জোরে ঘুরে ? না হলে এতটা সময় পার হয়ে গেল কিভাবে ? ... এইতো সেদিন মাত্র প্রবাসের পথে পাড়ি জমালাম আর দেখতে দেখতে ১০টি বছর শেষ হয়ে গেল ... প্রতি বছর ঠিক করি এবার যাবো ই যাব ... প্রতি বছরের শুরুতে ঠিক করি , এখন না বছর শেষে যাব , আবার বছরের শেষের দিকে ঠিক করি, এখন তো ঝামেলা চলছে , পরের বছরের শুরুর দিকে অবশ্যই যাব ... এমন করতে করতে প্রায় এক যুগ পার করার পর মনে হলো অনেক হয়েছে নিজের সাথে লুকোচুরি , আর নাহ এবার যাবই যাব ... যেই চিন্তা সেই কাজ , হুট করে টিকিট কনফার্ম করার পর কাজের থেকে বলা হলো ছুটি দেয়া যাবে না ... অর্থনৈতিক টানাপোড়নের এই সময়ে কোনো চাকরী না থাকাটা বিশাল মাইনাস পয়েন্ট ... তাই অনেক করে বলে কয়ে১ মাসের ছুটিটার ব্যাবস্হা করার পর শুরু হলো খবর নেয়া , কে কোথায় আছে এখন ... কার সাথে দেখা হবে , কখন দেখা হবে ... কাছের মানুষগুলো তো বলেই বসলো ১০ বছর পরে ১ মাসের জন্য আসবা ? তাইলে আর আসার কি দরকার ? ... খুব কাছের কয়েকজন তো বলেই বসলো -- দু মাসের কমে যদি দেশে আসিস তাহলে দেখাই করবো না ... সবার মন রক্ষার্থে আবার ছুটির বর্ধনের আবদনে সাড়া দিয়ে আগের ১ মাসের ছুটিও বাতিল করে দেয়া হলো ... তবুও যাব , যে করেই হোক এবার যেতেই হবে ... কোনো কিছুই আমাকে এবার যাওয়া থেকে থামিয়ে রাখতে পারবে না ... বললাম , আমার দু মাসের ছুটি দরকার, কি করতে হবে ? এ দুমাসের বেতন না দিলেও চলবে ... ছোট বসের কথা , এখন যেখানে সপ্তাহে মানুষ ২০ ঘন্টার বেশী কার করতে পারছে না সেখানে তুমি ফুলটাইম কাজ করে যাচ্ছ, এ দু মাসের ছুটি নিলে তো তোমার কাজ ই থাকবে না এখানে ... বললাম -- তাই সই, দেশে যাওয়া আমাকে এবার কেউ আটকে রাখতে পারবে না দিলাম রিজাইন লেটার, আর কিছু ? ... আমাকে জানানো হলো গত ৩ মাসের তোমার বেতন ডিউ ছিলো , নেক্সট মাসে সব একসাথে দেয়ার কথা ছিল কিন্তু নিজে রিজাইন দেয়ার কারনে সেটাও দেয়া হবে না ... আমি বললাম -- দেশে যাবই যাব, না হয় ৩ মাসের বেতন নিলাম না, কি আছে জীবনে ... পরের টা পরে দেখা যাবে , এখন এইসব শোনার টাইম নাই ... দেশের মাটি, দেশের মানুষ আর ওদের অকৃত্রিম ভালবাসা আমায় টানছে ... আমাকে যেতেই হবে ... আর এক মুহুর্তও দেরি করা আমার জন্য অসম্ভব ... অতঃপর ব্যাগ প্যাক করে রেডি সেট গো ....
প্লেনটা ওড়ার পর থেকেই নীচের সারি বাধা ঘরগুলো ছবির মতো আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসতে থাকে মনের মাঝে বুনতে থাকি কতশত স্বপ্নের স্কেচ ... মেঘের ভেলায় চড়ে যেন ছুটে চলেছি সেই স্বপ্নের মাতৃভুমিতে , আমার সব প্রিয়জনের কাছে ... বার বার ঘড়ি দেখি আস সময় হিসেব করি ... ১৪ ঘন্টা ... সাড়ে ১৩ ঘন্টা ... ১৩ ঘন্টা ... এভাবে চলতে চলতে একসময় হিসেবটা মিনিটের কাটায় এসে হাজির হয় ... তখন যেন আর সময় কাটতেই চায়না ... মনে হয় যেন প্লেনটা খুব আস্তে চলছে, আরেকটু জোরে চললে কি খুব সমস্যা হতো ? ... দেশে থাকতে বাসের মামুকে যেমনে বলতাম -- কি মামু ঠেলাগাড়ী চালাও নাকি ? পাইলট মামুকে কি ঐ কথা বললে মাইন্ড খাবে ? ... আবার নিজেকে সান্তনা দেই ... সমস্যা নাই, এইতো পৌছে গিয়েছি বলে , আমার প্রিয় দেশের মাটিতে , আমার প্রিয় সব মুখের কাছে ... এক সময় জানালা দিয়ে নিচে তাকাই , এটাই কি আমার ফেলে যাওয়া সেই ঢাকা শহর ? ... কিন্তু এত অন্ধকার ক্যান ? ... লোডশেডিং হবে হয়তো ... ইশ , প্রানোচ্ছল মানুষগুলো এ অন্ধকারে কি কষ্টেই না আছে , তবুও কি ... নিজের দেশ তো ...রাতের বুক চিরে জ্বলে থাকা বাতিগুলো আস্তে আস্তে স্পষ্ট হতে থাকে ... আর বুকের ভিতর বাজতে থাকে শত শত আনন্দের ডংকা ধ্বনী ...
একট নির্দিষ্ট সময়ের পর ... আবার সেই স্হান, সেই বোর্ডিং কার্ড হাতে নেয়া , ইমিগ্রেশন পার হয়ে সকলের আড়ালে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রবাসের পথে এগিয়ে যাওয়া ... নাহ, এ যাত্রায় যেন বিচ্ছেদের কষ্ট নেই , নেই সেই পুরোনো প্রিয় মুখগুলোর ছলছল চোখের কাতর চাহুনীর সেই আর্তচিৎকার -- অত দুরে আর যাসনে আমাদের ফেলে ... তাইতো আমি কিছু প্রিয় মানুষের মুনাফা বিহীন অতি মুল্যবান সময়ের খরচের আত্মগ্লানী নিয়ে অপরাধীর মত পালিয়ে যাই ... চির চেনা সেই শহরটি আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসে ... ঝলমলে আলোর মাঝেও আজ যেন সেখানে অন্ধকারের ছায়া দেখতে পাই ...
এই কথাগুলো আগেও অনেক জনের মুখে শুনেছি টুটুল ভাই , তবে বিশ্বাস করিনি , এবার যখন নিজে চোখে দেখে আসলাম ..... আর কি বলবো
শুরু থেকেই চাইছিলাম যেন শেষে এসে এটা পড়তে না হয়...
ভালো থেকো অন্তু
চাইলেই কি আর সব চাওয়া পূরণ হয় নুশেরাপু ?
কিছু প্রিয় মানুষের মুনাফা বিহীন অতি মুল্যবান সময়ের খরচের আত্মগ্লানী নিয়ে অপরাধীর মত পালিয়ে যাই ... চির চেনা সেই শহরটি আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসে ... ঝলমলে আলোর মাঝেও আজ যেন সেখানে অন্ধকারের ছায়া দেখতে পাই ... সবাই কম বেশী পলাতক, নিরাশার কাছে পরাজিত - তাই আত্মগ্লানি পরিত্যাজ্য ।
কিন্তু তা কি সহজে পরিত্যাগ করা যায় ?
না, সহজে করা যায় না ।
সেটাই তো অনেক বড় সমস্যা
কোন দেশে থাকেন ভাই, এরকম অবস্থা? বেতন দিবে না .........
হুমম আমারো মনে হয় প্লেন চলে না, কঠিন কষ্টকর জার্নি হলো উড়োজাহাজ জার্নি। আজকাল সীটের পিঠে টিভি লাগায় দিয়ে এটারে একটু কমিয়েছে
তারপর পিছনে ফেলে আসা নিয়তি প্রবাসীদের।
ভালো থাকুন অন্তত
তানবীরা আপু, আমি আপনার প্রতিবেশী, আমি নিজেও আপনার মতই ডাচ ভাষায় কথা বলি , তাইলে বুঝেন আমি কৈ আছি, ব্যাপারটা একটু কমপ্লিকেটেড ছিলো তাই এমনটা হইসে , আর আমি নিজেও ছেড়ে দিসি , যাবই যাব বলে জিদ উঠে গেসিলো ... ফলাফল তো পড়লেন ই ... প্লেনের কাহিনী আর কি বলবো , মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত সুপার সার্ভিস ছিল, এর পরে যে ছোট প্লেন ঢাকায় গেল সেটা আর মুড়ির টিনের মধ্যা খুব বেশী একটা পার্থক্য খুজে পেলাম না ... অনেক অনেক শুভকামনা আপনার জন্য
প্রতিবেশি মানে কি? এন্টওয়ার্পেন? নাকি হল্যান্ডের অন্য কোন সিটি? যোগাযোগ করেন যদি কোন অসুবিধা না থাকে।
এমন ঘটনা ইউরোপে শুনি নাই। সমবেদনা আপনার জন্যে
হে হে হে , ধরে ফেলেছেন ... এ্যান্টর্প রিজিওনেই থাকি ... নিজের জিদের জন্যই ওটা পাইনি , তার জন্য অবশ্য আমি অনুতপ্তও না, নিজের বদরাগের জন্য অনেক কিছু খুইয়েছি জীবনে , এখনো অনেক ঝামেলা করি, এখানে বেতনের ব্যাপারটা আসার কারন ছিলো , দেশের মানুষগুলোর জন্য নিজের পাওনা বেতন পর্যন্ত না নিয়ে হাজার মাইল পাড়ি দিলাম আর দেশের মানুষগুলোর কাছে এখন টাকা ছাড়া অন্য কোন কিছুর দাম নেই । অনেকে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল , এখানে কোনোভাবে ব্যাবসা করা যায় কিনা, অনেকে পার্টনার বানানোর জন্য, আর কিছু পাবলিক তাদের এম এল এম ব্যাবসায় ঢুকানোর জন্য দেখা করেছে , হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন শুধু পাশে ছিল নিঃস্বার্থভাবে ... এই দুঃখ কখনো ভুলার না ...(ফেবু ইউজ করলে এ্যাড করে নিয়েন, এই নামেই আমাকে পাবেন )
লেখাটা স্পর্শ করে গেল মনের গভীরে।
আপনার ভাল লাগা মন ছুয়ে গেল
আসলেই মন ছুয়েছে লেখাটা।
অনেক ধন্যবাদ মাসুম ভাই
এত করে বল্লাম দেখা কইরেন, করলেন না।
দুনিয়ার যত আকাজের মাঝে যে একটা শুভ কাজ করে গেছেন, তার জন্যে সাত খুন মাফ করলাম।
ভালো থাইকেন।
এহ ! যাকে মেসেজ দিসিলা তারে ধরো গিয়া,এবার তোমাদের ক্যাম্পাসে যে কত্তবার গেসি তার হিসাব নেই ... যাক, পরের বার দেখা হবে ঠিকাছে ?
অনেক ভাল থেক
তাই নাকি? কত খারাপ চিন্তা করেন!!

আম্রা তো ম্যাসেজ পাঠায়ে অপেক্ষায় আছি। কি কয়, তখনো তো ঘটনা জানি না। পরে আপনে যাওয়ার আগের দিন/ তারো আগের দিন কয়, ওয় তো যাইবো গা। ব্যাস্ত। আর অসুস্থও আছিলো। এইবার দেখা নাও হইতে পারে!!!
দাঁড়ান, পাইয়া নেই। এমন ঝাড়ি দিমু..
হ ! এইটা ঠিক, চরম ব্যাস্ত আছিলাম , তারেও ঠিকমতো সময় দিতে পারি নাই ... তার উপরে তিন সপ্তাহের মত হসপিটালে শুয়ে কাটাইসি , এর পরে হাটার মত শরীরে শক্তি ছিলো না ... তারে ঝাড়ি দিবা ঠিকাছে, কিন্তু এর পরে সে যদি রাগ কইরা পরের বারের মিটিং এ ভেটো দেয় তাইলে আমার কইলাম কিছু করার নাইক্যা, বুইঝো
শেষ প্যারায় এসে সবগুলো কষ্ট জমাট বেঁধে গেল।
মন্তব্য করুন