ইউজার লগইন

উচ্ছিস্ট

১)
অবশেষে শাড়িটা না কেনারই সিদ্ধান্ত নেয় সোমা।
আসলে ঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া নয়,দামটা জানা মাত্রই বেড়িয়ে আসে দোকান ছেড়ে। পাঁচ হাজারের শাড়ি তার জন্যে নয়,খুব ভালো করেই জানা আছে।
পাশাপাশি হাটার ছলে স্ত্রীর হাতটা নিজের হাতে নেয় সৈকত।
‘বেশী মন খারাপ হলো?’
‘একদম না।’
‘মিথ্যুক! শাড়িটা তোমার পছন্দ হয়েছিল।’
‘তাতে কি? পছন্দ হলেই কেনা লাগবে?’
‘মন খারাপ কোরো না। একদিন এই শাড়িটা তোমাকে শিওর কিনে দেবো।’
হাসে সোমা,‘তুমি বলেছো,তাতেই হবে।লাগবে না আমার অত দামের শাড়ি।’
‘তাই?’
‘শাড়ি দিয়ে কি হবে?আমার তুমি আছো,আর কিছু চাই না।’
‘বাব্বাহ ম্যাডাম!এত রোমান্টিক ডায়লগ কোথেকে শিখলেন?’
‘যাও!খালি ফাজলামি তোমার।আর কখনও যদি কিছু বলেছি.. ..’
‘কি মুশকিল.. ..আমি আবার কি করলাম.. .. ’
‘কি করলাম মানে?তুমি হচ্ছো একটা মিচকা শয়তান!’
‘স্বামীকে মিচকা শয়তার বললে কিন্তু হাবিয়া দোজখেও জায়গা হবে না,ম্যাডাম!’
‘দরকার নাই আমার দোজখে যাওয়ার... .. ’
হাসি ঠাট্টার তরলতার মাঝেই শাড়ির দোকানটি চিনে রাখতে ভুল করে না সৈকত। ডিসপ্লেতে আবার ফিরে এসেছে শাড়িটা। জর্জেটের শুভ্র জমিনে সোনালি সুতোর কাজ করা,ঝলমল করছে মার্কেটের উজ্জ্বল আলোতে। সত্যিই ভীষণ সুন্দর!
এবং আরও বেশী সুন্দর হয়ে উঠবে,যখন তার ভালোবাসার নারীর শরীরে সজ্জিত হবে। শোভা বাড়াবে তার.. .. ..
সানজানার শোভা বাড়াবে!
হ্যাঁ,সানজানা।
সোমা নয়,সানজানা.. .. সৈকতের ভালোবাসা,এবং স্বপ্ন নারী।
সানজানা.. .. ..সোমার স্বামী পরচয়বাহী সৈকতের প্রেমিকা।
২)
শাড়িটা একবার মাত্র দেখে সানজানা,তারপর সরিয়ে রাখে পাশে।বিছানার সমুদ্র নীল চাদরের মাঝে তাকে দেখায় আলোকিত কোনো পরীর মতো। পবিত্র,অপরূপ,অসাধারণ।
মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে প্রেমিক পুরুষ.. ..
‘শাড়িটা তোমার পছন্দ হয়নি,তাই না?’
জবাব দেয় না সানজানা,সরে এসে মাথা রাখে সৈকতের উন্মুক্ত বুকে। একটু আগে ঘটে যাওয়া শরীরী ভালোবাসাবাসিটার রয়ে যাওয়া রেশটা অনুভব করে যেন।
‘সত্যি পছন্দ হয়নি তোমার?’
‘আমি কি শাড়ি পরি,বলো? কেন আনতে গেলে শাড়ি? তাছাড়া.. .. ..’
‘তাছাড়া কি?’
তাছাড়া এত কমদামী শাড়ি তো আমি পরি না।তুমি তো জানোই.. ..’
কথাটা ঠিক। অগ্যতা নিজেকে একশো জুতা মারতে ইচ্ছা করে সৈকতের। আবার খারাপও যে লাগে না,তা নয়। কত কষ্ট করে টাকা গুলো জমিয়েছিল সে!
প্রত্যেকবারই এমন হয় অবশ্য।
এই যে প্রতি সপ্তাহে একবার সানজানাকে নিয়ে হোটেলে এসে থাকা সারাদিন,মাঝে মধ্যেই দামী রেস্টুরেন্টে লাণ্চ,বিভিন্ন উপল্েয এটা-ওটা উপহার.. .. ..এ সব কিছুর পেছনে যে অর্থটা ব্যয় হয়,সেটা যোগাড় করা মধ্যবিত্ত সৈকতের পে বেশ কঠিনই বৈকি। তবুও চেষ্টার ত্র“টি করে না সে। কিন্তু কেন যেন সবসময়ই মনে হয়.. ..
মনে হয় সানজানার বুঝি কিছু যায় আসে না এসবে।প্রেমিকের কষ্ট কিংবা বিশ্বস্ততা- কোনোটাই বুঝি তার চোখে পরে না।
অবশ্য কিছুণের মাঝে এসমস্তই মাথা থেকে বের হয়ে যায় সৈকতের,যখন আবার কাছে আসে অপ্সরা। ধরা দেয় বাহুডোরে,নিশ্বাসের একান্তে। মুহুর্তের ব্যবধানে সবকিছু ভুলে যায় সৈকতের ভাবনা।
স-অ-ব কিছু!!
সানজানা নামের এই পরী ভালোবাসে তাকে। সত্যি সত্যি ভালোবাসে। জীবন থেকে আর কি-ই বা চাওয়ার আছে তার?

৩)
সারাদিন অফিস করে এসে সন্ধ্যায় চুলার ধারে রান্না করাটা ভীষন কষ্টের মনে হয়। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই,করতে তো হবেই। একটা কাজের লোক রাখার মতো সার্মথ্য এই সংসারের নেই। বাড়ি ভাড়া,গ্যাস বিল,পানির বিল,বিদ্যুত বিল,বাজার খরচ । এবং তার উপরে আবার ঘরে অসুস্থ ্শ্বাশুড়ী.. ..
নাহ,সম্ভভব নয়!
তিন ঘন্টা ওভারটাইম করে কান্তিতে শরীরটা ভেঙে আসছে আজ। তবু কষ্ট ভীষণ হলেও মাছগুলো কুটে,ধুয়ে নেয় সোমা। অফিস থেকে ফেরার পথে হঠাৎই চোখে পড়ে গেছে মাছগুলো। সন্ধ্যা বলেই বেশ অল্প দামে পাওয়া গেছে।
পাঁচ ফুট বাই পাঁচ ফুট রান্নাঘরে আগুনের আাঁচে ঘেমে নেয়ে ভালোবাসার মানুষটির জন্যে রান্না করে গৃহিনী। বেগুন দিয়ে পাঁচমিশালী মাছের ঝাল চচ্চড়ি, সৈকতের খুব পছন্দের। এই সংসারটার জন্যে দিনরাত পরিশ্রম করছে যে মানুষটা,তার জন্যে এটুকু কষ্ট তো করাই যায়। বরং এই কষ্ট কিচ্ছু নয় মানুষটার পরিশ্রমের সামনে।
প্রায়ই অফিস থেকে ফিরতে এমন রাত হয়ে যায় তার,তারওপর মাঝেমধ্যেই অফিসের কাজে ট্যুরে যেতে হয় বাইরে হয়। না জানি কিভাবে থাকে সেখানে,কি সব খায়। অফিসের দিনে দুপুর বেলাতেও ঠিকমত খাবার সুযোগটা পায় কিনা কে জানে.. .. ..আহারে মানুষটা!
শ্বাশুড়ী শুনে মুখ টিপে হাসেন।‘চাকরী তো তুইও করিস,বউ। তোর কষ্ট হয় না?’
‘মেয়ে মানুষের আবার কষ্ট কি!’
সবই বোঝেন শ্বাশুড়ী। বোঝেন বলেই হাসেন আবারও। বড় ভালো মেয়ে তার এই বউটা। একটু বোকা। আর সেই জন্যেই বেশী ভালো।
‘সৈকতরে দেখলাম একটা প্যাকেট নিয়ে আসতে। আমারে দেখাইলো।’এমনভাবে বলেন তিনি যেন গোপন কোনো ষড়যন্ত্র করছেন বউয়ের সাথে। ‘একটা শাড়ি আনছে তোর জন্যে।খু-উ-ব সুন্দর!’
‘শাড়ি কেন আনবে?মাসের শেষ.. ..’
‘মাসের শেষ নিয়ে তুই অত ভাবতেছিস ক্যান বেকুব ছেমড়ি? সৈকত ডাকতেছে,যায়ে দেখ!’
তারপরেও সহসা ওঠে না সোমা,মাথা নিচু করে নিঃশব্দে স্বব্জি কাটে। আর চোখ যখন তোলে,শ্বাশুড়ী দেখতে পান মেয়েটার চোখ ভরা সত্যিকারের কষ্টভেজা জল। ভালোবাসার অশ্র“ হয়ে নামবার অপোয়.. ...
‘আমার জন্যে শাড়িটা কিনতে মানুষটা কত কষ্ট করেছে,তাই না আম্মা?’
‘কান্দিস ক্যান রে বেকুব?তুই তো ভাগ্যবতী নারী!’
মাথা নেড়ে সায় দিয়ে শাড়ির আঁচলে চোখের পানি মুছতে থাকে সোমা। সে যে অসম্ভভব ভাগ্যবতী একজন স্ত্রী,এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই তার।

পরিশিষ্টঃ
হ্যাঁ,সেই শাড়িটাই। শুভ্র জমিনে সোনালি সুতোর কাজ করা.. .. যে শাড়িটা সৈকত কিনেছিল তার ভালোবাসার নারীর জন্যে। সানজানার জন্যে।
আর সানজানার ভালো না লাগাতে যে উচ্ছিস্ট শাড়িটা সে এনে দিয়েছে স্ত্রীকে। হাজার হোক পয়সা দিয়ে কেনা জিনিস। তাছাড়া এমন উচ্ছিস্ট উপহার আরও অনেক আছে সোমার কাছে। এমনকি গত বিবাহ বার্ষিকীতে দেয়া নাকফুলটা পর্যন্ত।
সোমা অতসত বোঝে না। শাড়িটা স্পর্শ করে নিজের স্বামী-ভাগ্যে নিজেই বিস্মিত হয়। আর শাড়িটির পেছনে ভালোবাসার পুরুষটির কষ্টের কথা ভেবে ভেবে নীরবে চোখের পানি ফেলে।
স্বামীর ভালোবাসার সামনে নিজেকে বড় বেশী তুচ্ছ মনে হয়.. ..
স্বামীর উচ্ছিস্ট ভালোবাসার সামনে!!

পোস্টটি ৯ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

শওকত মাসুম's picture


পরিশিষ্টটা কি দরকার ছিল? ওটা ছাড়াই তো গল্পটা ভাল হচ্ছিল।
ভয়ে আছি, দেবেন তো ইংরেজি বর্ণে উত্তর। আমি আবার এই বর্ণ পড়তে পারি না।

রুমানা বৈশাখী's picture


apnader shomossha ki vai??????/ Shock keu jodi kisu ekta na pare......ta ke jinish ta ayotto korar time deya lage...naki??? Puzzled
ami vai oto gaayni manush na,boka shoka balika Tongue ........amr ekta jinish shikte onnk time lage........banglay lekha deya shikhsi.......apatoto etai birat ghotona....... Smile

রুমানা বৈশাখী's picture


ooooooooooooo.........
porishishto ongshei golpo tar ashol kahini....... Wink

রশীদা আফরোজ's picture


যে মেয়ে শিক্ষিত, চাকুরি করে তাকে এতোটা বোকা দেখানো কি ঠিক হল?

অতিথি's picture


valobashar sathwe shikkha r boka hoyar ki relation apu moni???
amio to educated.....chemistry te honours korchi......ami to je boka,se bokai thk gelam..... Sad

baparta boka-chalaker na,baparta valobasha........shei valobasha,ja amder manushder vorosha korte shekhay onner upore......vorosha kora onnay noy....... Smile

রশীদা আফরোজ's picture


বুঝলাম।

রুমানা বৈশাখী's picture


apu moni........
ekhane baparta ki boka ba chalaker ba shikkhar??? amio to chemistry te honours kora.bt ami to je boka,shei bokai thk gelam Sad
golpota valobashar apu....shei valobashar,ja mader valo banay. abar mondo-o.je valobashay shekay vorosha korte....... Smile

Tanvir Ahmed's picture


Hi Rumana- Cheleder ato kharap dekhano ki thik holo? Shobar moddhei to bhalo mondo ache tai na??

অতিথি's picture


ekhane chele-meye bivajon kotha thk elo bolen to????
eta manusher golpo,manusher jeboner......real world a amra keu-e black ba white na,grey shade er.......ekhaneo tai.....ja shotto.....

r ekta kotha ase.....
jodi purushti ke apnar kharap manush hoy thake,tahole oi premika meyeti......se ki valo???

১০

রুমানা বৈশাখী's picture


keno personally nicchen bolen to???
ekhane valo-mondoer kichu nai.......tachara manush-e to valo hoy,abar manush-e mondo.......real life a amra keu-e black ba white noi,grey shade er......ekhaneo tai.........
jodi purush choritro ti kharap hoy thake,tobe tar je premika...se ki valo??? jodi ta na hoy....tahole nari-purusher bivajon kmn kore elo???

১১

রন্টি চৌধুরী's picture


ভাল।
তবে আকারের কারনে মনে হয় অনেক কিছু নিজের মত করে বলতে গিয়েও থেমে গেছেন ।তাই গল্পের খসড়ার মত মনে হল। বড় আকারে লিখলে আরও ভাল হবে।

১২

রুমানা বৈশাখী's picture


khub-e mojar ghotona..............login korte vule gesi......bt anonde commt er ans disi........ekhon dekhi oi gula othiti commt hishbe chole ashce....

modarator vaiya commnt gula delete koren plz............

১৩

মামুন হক's picture


গল্পটা ভালো। কষ্ট করে বাংলায় লেখাটাও শিখে ফেলুন।

১৪

রুমানা বৈশাখী's picture


shikhtesi...........bangla shikhte koshto kisher.........likhi to bangla tei.eai unicode,avro.......eai shob bujhi na r ki.........kmne ki korbo laptop a...etai prob......

১৫

তানবীরা's picture


আলাদা করে পরিশিষ্টের বোধ হয় দরকার ছিল না। গল্পটা আরো একতু ডালা পালা অবশ্যই মেলতে পারতো।

সুন্দর হয়েছে

১৬

রুমানা বৈশাখী's picture


onnnnk bochor age lekha golpo....
ki je kori apu....tabalet size er golpo lekhar jonne amr durnam ase Sad ...et to tao tablet er chaite boroi hoise Smile .....thik-e bolsen,ro detail er dorkar silo.....

১৭

রাসেল আশরাফ's picture


গল্প ভাল হয়েছে।

১৮

রুমানা বৈশাখী's picture


Smile

১৯

মীর's picture


মেয়েরা এত বোকা, এটা অসম্ভব।

সাধারণত সোমারা এখন ঝাঁটা দিয়ে ঝেঁটিয়ে এসব আপদ বিদায় করে। Wink

যাই হোক, গল্প অতি উপাদেয় হয়েছে।

(এরকম গল্প পুরোনো হলেও চলবে।)

২০

রুমানা বৈশাখী's picture


Wink

২১

নাহীদ Hossain's picture


অসম্ভব ভাল লাগলো লেখা ....... Applause

২২

রুমানা বৈশাখী's picture


Big smile

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.